কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

অচিন্ত্য দাস

 

ভ্রমণিকা

 



‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি’ – তবু কাজে-অকাজে (পারিবারিক কারণে বা স্রেফ বেড়াতে) নেই নেই করে বেশ কটা দেশে পা ফেলার সুযোগ হয়েছে। তার বহু স্মৃতি বেমালুম মুছে গেছে ঠিকই তবু কিছু দৃশ্য-শ্রবণ-উপলব্ধি কোনো কারণে বা স্রেফ অকারণে মনে জায়গা দখল করে বসে আছে। এই ডিজিটাল যুগে অবশ্য পৃথিবীর কোন প্রান্তই অদেখা-অজানা নয়, বরং ফোন বা কম্পিউটারের পর্দায় ইচ্ছে করলেই মুহূর্ত্তের মধ্যে গুপী-বাঘার মত যেখানে খুশি পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই এই দেশে এই আছে, ওই দেশে তাই আছে, এসব বিশদভাবে লেখার দরকার ফুরিয়েছে। তবু ভ্রমণ-আলেখ্য আজও লেখা হয় এবং তা অনেকেই পাঠ করে। আসলে একই দৃশ্য, একই যাত্রাপথ এক একজনের মনে এক একরকম ছাপ ফেলে। তাছাড়া প্রত্যক্ষ দেখার ভেতরে কিছু অপ্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত অনুভূতি মিশে থাকে যা হাজার সামাজিক মাধ্যমের অডিও-ভিডিও ঘাঁটলেও পাওয়া যাবে না।

এরকম কিছু ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অনুক্রমিকভাবে লিপিবদ্ধ করছি। অবশ্য পাঠকবর্গকে ধৈর্যের পরীক্ষা যাতে না দিতে হয় তাই লেখা যতটা সম্ভব স্বল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়াস করব। ছোট-বড় যাই হোক, লেখার শিরোনাম রাখা বহুদিনের রেওয়াজ। কণার ভগ্নাংশ যদি কণিকা হয়, ছোট উপন্যাস উপন্যাসিকা, তাহলে স্বল্পকায় টুকরো ভ্রমণ বৃত্তান্তকে ‘ভ্রমণিকা’ বলা যেতেই পারে।

ভ্রমণিকার প্রথম কয়েকটি লেখা আলাস্কার কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে। পর্ব শুরু করছি ‘স্বর্গের দিনরাত্রি’ আলেখ্যটি দিয়ে।

(প্রথম পর্ব)

স্বর্গের দিনরাত্রি



আলাস্কা জায়গাটির ইতিহাস আর ভূগোল দুটোই অদ্ভুত ধরনের। বুঝিয়ে বলছি। আলাস্কা উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত জুড়ে। এর একদিকে কানাডা দেশ আর বাকি সীমানাগুলি জলবেষ্টিত। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, বেরিং সাগর আর সুমেরু সাগর। কমলালেবুর বোঁটার দিকে কোয়াগুলো যেমন একে অন্যের কাছাকাছি সেঁটে থাকে, পৃথিবীর তুঙ্গে মানে খাড়া উত্তরদিকের ব্যাপারটাও তাই। মানচিত্রে বোঝা যায় আলাস্কায় এসে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ আর রাশিয়ার দূরত্ব খুব সামান্য, মহাশক্তিধর দুটি দেশের মাঝখানে শুধু একটু জল যার নাম বেরিং প্রণালী। ‌আগে এখানে একটা প্রাকৃতিক সেতু ছিল যার ওপর দিয়ে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ সাইবেরিয়া থেকে আমেরিকা মহাদেশে এসে বসতি করে। আলাস্কা রাশিয়ারই অংশ ছিল – বেশিদিন আগে নয়, এই ১৮৬৭ সালে আমেরিকা রাশিয়া থেকে ভূখণ্ডটি কিনে নেয় স্রফ সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলারে। এখনকার হিসেবে তা একশ তিরিশ মিলিয়ন মানে মাত্র এগারশো কোটি টাকা। তখন রাশিয়া বা আমেরিকা, কারোরই জানা ছিল না যে আলাস্কাতে সোনা ও তেলের বিরাট ভাণ্ডার রয়েছে। ১৮৯০ সালে সোনা পাওয়া যেতেই ‘গোল্ড রাশ’ মানে দুঃসাহসিক স্বর্ণ-অভিযান শুরু হয়। এ সোনা খনিতে নয়, জমির ওপরেই ঢেলার আকারে পাওয়া যেত! এর ফলে কিছু কিছু বসতি গড়ে ওঠে। লোক চলাচল শুরু হয়। রুশ শাসকেরা তখন নিশ্চয় হাত কামড়াচ্ছিলেন!!

আলাস্কা মার্কিন-যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি তাদের উনপঞ্চাশতম রাজ্য বা প্রদেশ। প্রতিকূল জলবায়ুতে এখানের লোকসংখ্যা খুবই কম। তবে আকার-আয়তনে আলাস্কা আমেরিকার সর্ববৃহৎ রাজ্য! তা গোটা আমেরিকার সিকি ভাগ মতো হবে বোধহয়! মার্কিন ম্যাপের ওপর আলাস্কা যদি তুলে এনে বসানো যায় তাহলে এরকম দেখাবে।

এই ছবিটা অ্যাঙ্কারেজের একটা দোকানে টাঙানো ছিল। আলাস্কার তিন-চারটে শহরের নাম জানি – কেচিকান, জুনো (রাজধানী), ফেয়ারব্যঙ্কস, অ্যাঙ্কারেজ। গিয়েছিলাম অ্যাঙ্কারেজে আর তারপর একটু এদিক সেদিক। দুপুরের দিকে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই জ্যাকেটটা ভালো করে জড়িয়ে নিলাম। তাপমাত্রা তিন ডিগ্রির বেশি নয় আর জোর হাওয়া বইছে। এরকম ঠাণ্ডা বাতাস বোধহয় সরাসরি উত্তর মেরু থেকেই আসছে! হাওয়া যে দিক থেকে আসছে সেদিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল। টানা তুষার-স্নাত পাহাড়ের সারি। যতদূর দেখা যায় পাহাড়ের নিচের দিকটা ঘন অরণ্যে ঢাকা।

খিদে পেয়েছে সবারই তাই প্রথম গন্তব্য কাছাকাছি রেস্তোঁরা। গাড়িতে যেতে যেতে ভাবছিলাম, মার্কিন যুক্তরাজ্যের রাজনীতি, সমাজজীবন এসব নিয়ে নানরকমের মতামত এবং মতবিরোধ আছে। থাকবেও। কিন্তু একটা কথা মানতেই হয় – এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। রাস্তাঘাট প্রশস্ত ও অতি-পরিছন্ন। তার সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা চমৎকার হওয়াতে এখানে ঘুরে বেড়ানো বা প্রকৃতি উপভোগ করার বাড়তি একটা মজা আছে।

রংচঙে ছবিটবি দিয়ে সাজানো রেস্তোঁরায় ঢুকেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। রঙীন জামাকাপড়ে সেজেগুজে অনেক লোক খেতে এসেছে – সকলেই খুশির মেজাজে। ঠাণ্ডা হাওয়াতে অনেকটা হাঁটাহাঁটি হয়েছে তাই গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই নতুন দেশে এরকম জমজমাট রেস্তোঁরায় এসে জল চাইব? না না, কিছুতেই নয়। কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ওয়েটারকে বললাম এখানে কী কী বিয়ার পাওয়া যায় দেখাও তো। সে একটা কার্ড এনে দিল তাতে গোটা ত্রিশ রকমের বিয়ার, একটারও নাম শুনিনি। পড়ে উচ্চারণও করতে পারব না। হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম, “এখানকার স্থানীয় বিয়ার কোনটা?”

সে গোটা দশেক দেখিয়া দিল। মহামুশকিল। বললাম, “যেটা ভালো সেটা দাও।”

আগেও দেখেছি এদেশে এরকম চলে না। কিছু চাইলেই তার সাত-সতেরো রকমফের দেখিয়ে বলবে ‘কোনটা?’ উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলবে, “এটার মধ্যে এটা না ওটা?” সে বলল, “গাঢ় না হালকা?” কিছু একটা বলতেই আরও বাছাবাছির প্রশ্ন। “জোরালো না কম-তেজি?”, “তেতো না কম তেতো” …

আমি আর না ভেবে যা-হোক একটা বাছাই করে মেয়েটিকে বললাম, “আমি এটা চাই – এবার নিয়ে এসো। মেয়েটি তাও গেল না। এবার কি গেলাসের রং জিগেস করবে! তা না। মেয়েটি বলল, “আইডি চাই”। বললাম, “আবার আইডি কেন?”

মেনু কার্ডের ওপর লাল দিয়ে লেখা ছিল “আঠারো বছরের নিচে হলে পানীয় দেওয়া আইনত নিষেধ” – লাইনটি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মেয়েটি!

আমার অবচেতন মন চমকে উঠল। এই স্বর্গসম দেশে আমি নিজে এসেছি তো?  না কি ওপারে চলে যাবার পর আমার আত্মা আবার জন্মগ্রহণ করে বালকবয়সে আলাস্কায় হাজির হয়েছে! নয় তো সত্তর পেরিয়ে যাওয়া মানুষকে এ মেয়েটি আঠারো বছরের কম দেখছে কেন?

আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম। সে হেসে বলল, “না, না, এখানে কড়া নিয়ম আছে অ্যালকোহল দিলে আইডি প্রমাণ নিতে হবে”। ‘আ’ তে আলাস্কা, ‘আ’ তে অ্যাঙ্করেজ। ‘আ’ তে আধার কার্ড হলেও তা আর আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে চালাবার চেষ্টা করলাম না। জামার ভেতরের পকেট থেকে পাসপোর্ট বাড়িয়ে দিতে সে পাসপোর্টের ছবি তুলে নিয়ে বিয়ার আনতে গেল। যাক এবার তেষ্টা মিটবে।

বাইরের ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা নেই, বরং বেশ একটা ওম রয়েছে। সকলে আনন্দে মশগুল। খিদে পেয়েছে, তেষ্টাও। সামনে পানীয়সহ বিজাতীয় কিন্তু সুস্বাদু খাবার। মনে হচ্ছিল একেই বলে স্বর্গসুখ!

খাবার পর আমরা সোজা সিওয়ার্ড নামে একটা জায়গার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। সেখানে থাকাকালীন তিনটে দিনে একাধিক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যার কথা পরের পর্যায়গুলিতে বলা যাবে। সিওয়ার্ড থেকে ট্রেনে ফের অ্যাঙ্করেজে ফিরে এলাম।

অ্যাঙ্করেজ শহরটি ছোট কিন্তু ভারি সুন্দর। আমাদের চোখে একটু অপরিচিত রকমের সুন্দর। যেমন হোটেল থেকে বেরিয়েই একটা জলাশয় বা লেক। টলটল করছে স্বচ্ছ জল। তার একতীরে বাঁধা আছে সারিসারি … না, না নৌকা নয়, জলে ওঠানামা করা ছোটছোট উড়োজাহাজ। বড়সড় জল-ফড়িং এর মত দু-একটা ফরফর করে উড়ে যাচ্ছে অথবা নামছে। রাস্তায় লোকজন বা মানুষজনের তেমন ভীড় নেই। এ শহর নিজের মেজাজে নিজের খেয়ালে চলে। তাড়াহুড়োর কোন ব্যাপারই নেই। রাস্তার লোকেদের ভাব যেখানে যাচ্ছি সেখানে একসময় তো পৌঁছব, ব্যাস তাহলেই চলবে। সমুদ্রতীরের দিকের আকাশে মাস্তুলের জটলা – বোঝা  যায় মাছ-ধরা নৌকো ভীড় করে আছে। অন্যদিকে চিরহরিৎ বৃক্ষের ঘন অরণ্য টপকে তুষার ঢাকা টানা পাহাড়ের সারি।

আলাস্কা জায়গাটি পৃথিবীর অনেকটা উত্তর দিকে হওয়াতে গরমকালে দিনের আলো থাকে অনেকক্ষণ। সূর্যদেব ডোবেন সাড়ে এগারোটা নাগাদ আর বারোটার পর ক্যালেণ্ডার মাফিক তারিখ পালটে গেলেও গোধূলির আলো থেকে যায়।

কটকটে দিনের আলোর মধ্যেই নৈশভোজের জন্য একটা রেস্তঁরায় ঢুকলাম। এদের হলঘরটা বেশ বড়। মূলত মেক্সিকান খাবার পাওয়া যায় আর রেস্তোঁরার মালকিন মেক্সিকো থেকে এসে বহুদিন এদেশে আছেন। আমাদের চেহারা দেখেই বোঝা যায় যে আমরা এদেশের মানুষ নই। বিদেশি দেখে মহিলা নিজেই এলেন আমাদের সঙ্গে আলাপ-সালাপ করতে। দেখলাম মহিলা অনেকটা আমাদের দেশের মাঝ-বয়সী মাসী-পিসীর মতো। কথা বলতে ভারি ভালোবাসেন। আর এনার মাতৃভাষা ইংরেজি নয় বলে এনার ইংরেজি উচ্চারণ বাঙালিদের মতো মোলায়েম। তাই একটা আপন আপন ভাব টের পাচ্ছিলাম – বেশ  আড্ডা জমে গেল।

“তোমরা কোন দেশ থেকে এসেছ?”

“ভারত”।

“ওহ, আমি ঠিকই আন্দাজ করেছিলাম। তা কীরকম লাগছে আলাস্কা?”

“খুব ভালো, দারুণ। তোমার এখানের খাবার আর মার্গারিটা পানীয়ও আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে!”

মহিলা খুব খুশি। আরও অনেক গল্প করলেন – ইনি নিজে কী অবস্থায় এদেশে এসেছিলেন। তারপর প্রচণ্ড খেটে জীবিকার জন্য লড়াই করে কীভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।

বললাম, “তোমার রেস্তোঁরা তো বেশ ভালো চলছে দেখছি। টেবিল তো প্রায় সবই ভর্তি!”

“হ্যাঁ, আমাদের এখানে অনেকেই আসতে ভালবাসে। তোমাদের মতো নতুন অতিথি মানে ট্যুরিস্টদেরও পাই।” অড্ডার মধ্যে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে। এখন তো গরমকাল, প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই সূর্যের আলো। কিন্তু শীতকালে যখন শুধুই রাত্তির তখন তো তোমার রেস্তোঁরায় কেউ আসে না নিশ্চয়। ভ্রমণকারিরাও তো শীতকালে কেউ থাকে না। শীতকালে কি তাহলে ব্যবসা বন্ধ রাখো?”

“না না, তা নয়। আসলে তখন এ শহরের কলেজ, অফিস, প্রতিষ্ঠান সকলেই ঘনঘন পার্টি দেয়। প্রতিদিনই আমরা ব্যস্ত থাকি”

“বল কি, অত শীতে অত অন্ধকারের সময় সকলে পার্টি দেয়! কেন?”

“দিনের পর দিন সূর্যের আলো না দেখলে মানুষের মন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। বহু নারী-পুরুষ অবসাদে ভোগে।  এমনকি শিশুরাও! আলোহীন শীতের অবসাদ ব্যাপারটা একদম ভালো না। মানুষ পাগল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে! এরকম ঘটনা অনেক হয়েছে। মিলেমিশে হৈচৈ করে মন ভালো রাখার জন্য ঘনঘন পার্টি করে লোকে…”




আমার চোখ সিনেমার ‘প্যান শট’এর মত এ টেবিল ও টেবিল ঘুরে কাচের জানালা দিয়ে বাইরে চলে গেল। এদেশে এসে পর্যন্ত খুশির হাওয়া বয়ে যেতে দেখছি সর্বত্র। মনমরা বা গম্ভীর মেজাজে বসে আছে এমন কাউকে এ শহরে এখনো দেখিনি। টেবিলে টেবিলে বিয়ার, টেকিলা, লাল মদ, মার্গারিটা। সঙ্গে সুখাদ্য। সকলেই উচ্চস্বরে আনন্দ করছে, মন খুলে হাসছে। এই রাত সাড়ে নটাতেও বাইরে বিকেল। অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভায় সেজে পৃথিবী বসে আছে ঘননীল আকাশের নিচে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান মনে পড়ল – ‘অসীম আকাশ, শুধু নীল ঘননীল নীলাকাশ / সেই নীল মুছে দিয়ে আসে রাত, পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে…’ এখানে কিন্তু সে ঘুম ছ’ ছ-মাসের জন্য! ভাল্লুকেরা একপেট খেয়ে ছ-মাসের জন্য ঘুমোতে যায়। সারা শীতকাল ঘুমিয়ে থাকার পর গরম পড়লে আড়ামোড়া ভেঙে ওঠে। মানুষ অন্য প্রাণী, তারা তা পারে না। সূর্যালোকহীন দীর্ঘ প্রহরে তারা অবসাদে ডুবতে থাকে। ঢাক-ঢোল-কাঁসি বাজিয়ে তাদের মন সুস্থ রাখার চেষ্টা করা হয়। এ প্রহরের এ মুহূর্তের সুখী ছবির আড়ালে পলকে দেখলাম অদ্ভুত এক সরীসৃপ যেন গুড়ি মেরে বসে আছে। তার চোখে শীতল কুয়াশাময় দীর্ঘ রাত্রির পূর্বাভাস।

ভাবছিলাম শুধু আলাস্কা নয় – সব স্বর্গেই রাত্রি আসে। আসবেই। মানুষের জীবনের ব্যতিক্রমহীন নিয়ম বলতে এটাই। এই রকমই হয়ে এসেছে চিরটা কাল, এই রকমই হয়।

(ক্রমশ)

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন