কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

তমাল রায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৭


ওয়ারফ্রন্ট থেকে সামান্য দূরে

তারপর জানো, টয়ট্রেন চলে গেলে আবার নিঝুম সব। আলো আছে টিম টিমে। কুয়াশাও অনেক। কিন্তু ওই যে বরফ পড়া শুরু হলেই যে যার বাড়ি। আর নইলে যে সকলে মিলে গুলতানি। সেটা আর নেই। কার্ফু নামলে যেমন হয় আর কী! সাঁজোয়া গাড়ি চলেছে সার দিয়ে। বুটের আওয়াজ। হাত ওপরে তুলে হেঁটে  যাওয়া। ক্যাপ ফাটার মত আওয়াজ। গুলি চলছে হয়ত। বাস জ্বলছে, পুলিশের গাড়িও। ইতিউতি দুঃস্বপ্নেরা শেল্টার নিচ্ছে, পাহাড়ের আনাচে কানাচে। মন্দ পাহাড় থেকে ভালো পাহাড়ে, যে রোপওয়ে, তাতে পর্যটক, মানে এরা পরিযায়ী সত্য-মিথ্যা। কিছু পর এরাও নামবে পাহাড়িয়া দোলাচলে। তখন হয়ত বৃষ্টি নামবে, বনধের পাহাড় জুড়ে। আপাতত নিপাতনে সিদ্ধি। থম থম করছে চোখ মুখ। হাই ফিভার আসলে, ফিভার এফ এম এ বেজে উঠবে, চোলি কা পিছে কেয়া হায়... কু কু কু কু…

তছরুপ হবার আগেই সে রওয়ানা দিয়েছিলো ট্রেনে। ট্রেন আবার বর্ডার পেরিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসবে -  খাবার, পানীয়জল, আরও দু সেট করে খাঁকিউর্দি। মাঝে বাফার স্টেট। তারপর ওয়ারফ্রন্ট। খোঁড়া মেয়েটা প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ধরতে না পেরে, লাইনের মাঝেই দোপাট্টা খুলে ওড়ায়। ট্রেন থামেনি। থামার কথাও নয়। কেবল গার্ড হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিয়েছিলো। তেমন কিছুই নয়। স্রেফ এক প্যাকেট জুঁইফুল। যেতে যেতেই হয়ত শুকিয়ে যাবে। গায়ে লেখা সোলজারের নাম, আর ব্যাটালিয়ন নং। দুধারে অজস্র পুরুষ আর মহিলা। শিশুও আছে কিছু। কারও নাক দিয়ে সিকনি পড়ছে। কারও বা পেট উঁচু। আগামী স্টেশনে অপেক্ষা করে আছে আরও অজস্র মানুষ। আর তো তিনটে মোটে স্টেশন। তারপরই...

চলন্ত জানলার রডে আপাতত বসে একটি পাখি। ট্রেনের গতি স্লথ তাই হয়ত খানিক কামরার মধ্যে ঢুকে উড়লো। ধাক্কা খেল, সার দিয়ে রাখা বন্দুকে। তারপর উড়ে গেল বাইরে। যাবার আগে পিচিৎ করে খানিকটা পাইখানা করে দিয়ে গেল। ভেতরে গান চলছে,চেনা একটা সুর, কিন্তু ঠিক মনে পড়ে না। পরের স্টেশনে ট্রেন থামতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ল অপেক্ষমান জনতা। মাইকিং হচ্ছে। ফুল ছুঁড়ছে লোকজন, কী উন্মাদনা। ওরা বিশ্বাস করে, এ দেশ তাদের মাতৃভূমি। আর কে না জানে, মা কখনও হারে না। যারা যুদ্ধে সমস্তটুকু দিয়ে লড়ছে, তারা অবশ্যই বীর সন্তান দেশ মাতৃকার। এতক্ষণ সবাই খুব ধন্য ধন্য করছিলো। প্রশস্তিমূলক কথায় ভরে গেছিলো, স্টেশন চত্বর। এমনিতে এসব স্টেশনকে, কেউ খেয়ালই করে না। কিন্তু এখন তো অন্য ব্যাপার। তাই... পোয়াতি মেয়েটা কি কুক্ষণে কেঁদে উঠলো কে জানে! এখন ভাবগম্ভীর পরিবেশ  সকলের চোখেই জল। কুমারী মেয়েটা তার ইউ এস জি রিপোর্টটাই প্যাকেটে ভরে দিলো। ট্রেন ছেড়েছে। এখন স্লো বিটে প্যাট্রিওটিক সং বাজছে। ট্রেন এগোচ্ছে, সামনে কিছু দূরেই তো ওয়ারফ্রন্ট...

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন