কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

অভিজিৎ বসু

 

সমকালীন ছোটগল্প


হাড্ডির টুকরো

হঠাৎ করেই এলোমেলো। উদাসীন দুঃখ ঘরদোরদের শেখাচ্ছে প্রতারণার গল্প। কীভাবে মানুষের ছায়া ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছায়াকে? আহারে ছায়ার গভীরে ছায়া। পূজাখোলা মন্দির থেকে একটু দূরে মাঝে মাঝে থাকা হয়। কার মুখ যেন বুকের ভেতরে সার্কাস পার্টির আদলে এক সুন্দরী নর্তকী লিখে চলেছে আখ্যান।

ইমোশন সেন্টিমেন্ট হয়তো একঘন্টা হাতে রেখে ভুল সুরে পাঠ। মাঝে মাঝে মনে হয়, এ এক অভিশাপ। পাশে থাকব সাথে থাকব মোহ কেটে গেলে হয়তো সত্যি বলতে বলব, হাওয়া বদলে গেছে ডার্লিং। কেউ পারফেক্ট নই। আমি তুমি আপনি।

জা পল সার্ত্র, লুই আরগঁ, চার্লি চ্যাপলিন, জা ককতো, জেমস জয়েস - শালা মাথাটা যাবে একদিন! বেখাপ্পা সভ্যতার মুখোভঙ্গি সত্যজিৎ রায়, চার্লস ডিকেন্স। আগুনের তাপে ঝলসে যাচ্ছে শরীর।

সভ্যতা নিজেই অপরাধ করতে থাকে। ঋত্বিক ঘটক শিল্পের সূক্ষ্ম কনফিউশান। জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকারে বাজারি লেখকের মতো বলা লেখা একটা আর্ট। আর এটা মার্কেটিং করা আরও বড় শিল্প।

যুদ্ধ, সংঘর্ষ, ভালোবাসা ফড়িংয়ের জন্য মনখারাপ সবকিছু ব্যবসা। বিটোফেন, পাবলো পিকাসো, ফ্রাসোয়া তুফো - হাওয়া ঘুরপাক খাচ্ছে। খুব পরিচিত সাংবাদিক, তাকে বলেছিলাম, বিষণ্ণ এক মেয়ের গল্প। ইদানিং আমাকে দেখলে সেলুনের ভেতর ঢুকে যায় সে। আমিও স্রেফ একটা মিথ নিয়ে গল্প বানাব, তুক্ক করোটির ভেতর কাটাছেঁড়া করব অজানা ভূমির ইতিহাস। তুমি ডার্লিং পান খাওয়া ঠোঁটে গুনে গুনে প্রতিদিন চারবার চুমু খাবে।

: বলো ঠিক আছে!  

: পাগল!

: আমি তো পাগল! সবাই জানে। বিনয় মজুমদার পাগল ছিলেন?

: জানো না!

: জানি। তোমার ব্লাউজের সাইজ যেন কত?

: ছত্রিশ।

: এই একটা সংখ্যা মনে থাকে না।

অবদমিত মানুষ, হতদরিদ্র মানুষ, সীমানার ভেতর দিয়ে হাঁটা। সাইলেন্ট কমেডি, স্টুডিও সিস্টেম। দিগন্তের মানুষের কাছে ফিরে আসে দুঃসহ প্রহরগুলো। সত্তা উপহাসের বস্তু, বিষাদের রহস্য কী? প্রহসন!

সকালে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়েছি। আমার বাম পাশের দিকটায় দু একটা দোকান খোলা। তিনটে পরোটা, পনের টাকার ডালভাজি অর্ডার করে আরেকটু সামনের দিকে ঝুকে দাঁড়াই। এত সকালে সবাই কত্ত ব্যস্ত! বুকের বাম দিকে আঙুল দিয়ে দেখি, কেমন যেন ব্যথা করে!

ছত্রিশ সাইজের জন্য রাতে ঘুমুতে পারিনি। ভোরবেলার দিকে চোখটা লেগে এসেছিল। কতরাত ঘুমোই না এখন। দুচার রাত না ঘুমোলে কিছু যায় আসে না। বুকের বাম পাঁজরের কাছে পান খাওয়া ঠোঁটের স্পর্শ। সকালবেলা শালা এমন করছে কেন? বুকের ভেতর যা করার করুক। শালা একটু মুডটা ঠিক করব, কিন্তু চারটে কুকুর এত হল্লা করছে! সকাল সকাল বাবা তোমাদের কী হলো? কার কথা কে শোনে? ওরা এখন অন্যজগতে আছে। তারা তেড়ে যাচ্ছে আরেকটা কুকুরের দিকে। কুকুরটা একা। চেষ্টা করছে দূরে পালানোর। সবাই একজনকে তাড়া করছে, সে শালা কী করবে? বসে বসে বৈশাখীরাঙা মেয়েদের দেখবে? সকালের তীব্র টান।

কুকুরটা দৌড়াচ্ছে। সামনে বিনির্মাণের এক মেকানিজম। তার সামনের দিকে চোখ। আর পিছনে চারটে কুকুর। ছুটছে সবাই। একটা সময় একলা হয়ে যাওয়া কুকুরটা দূরে অনেক দূরে চলে যায়। তাড়া করা কুকুরগুলো ফিরে আসে পিছনে। তারপর সবাই মিলে ঝাপিয়ে পড়ে, কিছুটা গোস্তলাগা হাড্ডির ওপর। সবার কী মহব্বত!

দু একটা দোকানের তালাচাবি খোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আর পরোটা, ডালভাজি অর্ডার করেছিলাম, সে হাঁক দিতে শুরু করেছে, খাবার রেডি!

খাবার নিয়ে ফেরার পথে ভোরের স্বপ্নটার কথা মনে আসে। ছুরিবেঁধা সুন্দরীর মরে যাওয়ার সময় ছেঁড়া  টুকটুকে লাল একটা ব্লাউজ। হয়তো বা ছত্রিশ সাইজ। টেবিলের ওপর প্লেটের পাশে আছে একটু গোস্ত লাগানো খটখটে হাড়ের কয়েকটা টুকরো। আর হাড়ের টুকরোর পাশে এলোমেলো পানের বাটা।

গভীর রাত আসতে এখনো ঊনিশ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। ঊনিশ ঘন্টা...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন