কালিমাটি অনলাইন / ১৩২ / ত্রয়োদশ
বর্ষ : পঞ্চম সংখ্যা
অনেকেই মন্তব্য করে থাকেন, ইদানীং সময়টা খারাপ যাচ্ছে তাঁর। অর্থাৎ তিনি যা কিছু করছেন অথবা করতে চাইছেন, তা ঠিকঠাক হচ্ছে না, বা তাঁর মনোমত হচ্ছে না। বলা বাহুল্য, ব্যাপারটা একান্তই ব্যক্তিগত। সাধারণীকরণ বা জেনেরালাইজেশন করে কথাটা বলা যায় না। কেননা, অন্য অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাপারটা অন্য ঘটছে, তাঁরা হয়তো মনোমত সাফল্য লাভ করছেন। এবং তাই তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই মন্তব্য করতে পারেন যে, সময়টা তাঁদের পক্ষে অনুকূল অর্থাৎ সুসময় চলছে তাঁর। সুতরাং বলা যেতেই পারে যে, সময়ের ভালো এবং খারাপ, এটা নিতান্তই আপেক্ষিক ব্যাপার এবং অবশ্যই তুলনামূলক। কিন্তু যদি আমরা ব্যক্তিগত ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে বৃহত্তর সমাজের প্রেক্ষাপটে সময়ের কথা ভাবি, তাহলে নিঃসন্দেহে সময়ের মূল্যায়ন স্বতন্ত্র হবে।
আমাদের স্বল্প অথবা দীর্ঘ জীবনকালে আমরা অর্থনৈতিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক পারিপার্শ্বিকতায় কখন ভালো বা খারাপ অবস্থায় ছিলাম এবং আছি, এটা অবশ্যই বিতর্কের ব্যাপার। বস্তুত সমস্যাহীন, টানাপড়েনহীন, সন্ত্রাসহীন সমাজব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিতি আমাদের এখনও হয়নি, অতীতেও কারও জীবনযাপনে তা হয়নি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন প্রতিকূলতার ঘূর্ণাবর্তের মধ্যেই আমাদের যাপন এবং সেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই। সুতরাং এই পারিপার্শ্বিকতায় সমষ্টিজীবনে ভালো সময়ের প্রসঙ্গই অর্থহীন এবং অবান্তর।
প্রতিদিনের সংবাদপত্র, রেডিও সংবাদ, টিভি সংবাদ বহন করে নিয়ে আসছে সারা বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা হিংসা অস্থিরতার যাবতীয় সংবাদ। সন্ত্রাসবাদীদের নৃশংসতা, যুদ্ধবাজদের গণহত্যা, সাম্প্রদায়িকদের তান্ডব, সমাজবিরোধীতত্ত্বদের ঘৃণ্য আচরণ ও কার্যকলাপ সাধারণ জনসাধারণকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। আমরা কেউ আজ নিরাপদে নেই, শাসকশ্রেণী নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। বিশেষত কোনো কোনো শাসকশ্রেণীর প্রশ্রয়ে ও মদতে জনজীবনের সর্বত্র বিরাজ করছে অরাজকতা। সভ্যতা বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে, যখন বিজ্ঞানের গভীর অনুশীলন ও প্রযুক্তিচর্চা নেহাতই শৈশবস্থায়, তখন তৎকালীন জীবনযাত্রায় যে আদিম মানসিকতা ছিল, আজ সভ্যতা এতটা অগ্রসর হবার পর, যখন প্রযুক্তির জয়যাত্রা এক অকল্পনীয় উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ঘটেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন, তখন কি আমাদের মানসিকতা পেছোতে পেছোতে আদিম যুগের মানসিকতা থেকেও ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে? আমরা কি দুর্বৃত্তদের ঘড়ির কাঁটা পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার ষড়যন্ত্রের শিকার?
ইদানীং কাউকে ভালো থাকার শুভকামনা জানালেও সংশয় জাগে, আদৌ কি কেউ ভালো আছে, ভালো থাকতে পারছে? সম্ভবত নয়। এজন্য সময়কে দোষারোপ করা অহেতুক। বরং দোষী করা যেতে পারে এই বিশ্বে বসবাসকারী এক শ্রেণীর মানুষকে, যারা এই নষ্ট সময়ের জন্মদাতা, তার পোষক ও পরিচালক।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন