ফ্রম জেমস বন্ড, উইথ ইডিওলজি
তৃতীয়
পর্ব
“দেয়ার ইজ আ ম্যান কলড বন্ড”
“He
[Bond] exemplifies what Nietzsche extolled as a ‘fusion of a Stoic and a
frivolous appearance of happiness, characteristic of noble cultures’...In Bond,
as Anthony Burgess observed, the ‘gusto is controlled: the banquet of the
senses is a reward for dangerous work performed on behalf of a free world.’”১
এখানে উদ্ধৃতি একটি,
কিন্তু উক্তি দু’টি। প্রথমে নীৎশের উক্তি, শেষে অ্যান্টনি বার্গেস-এর। আপাতত
বার্গেস-এর পর্যবেক্ষণটিকে নেওয়া যাক। জেমস বন্ড একক দক্ষতায় একা হাতে সমস্ত ‘ফ্রি
ওয়ার্ল্ড’-এর হয়ে কিছু ‘ডেঞ্জারাস’ কাজ সমাধা করে। একটি বৃহত্তর জগতের হয়ে একা
কিছু কাজ সম্পাদন করার মাধ্যমে বন্ড-এর মিথিক ইমেজ, লার্জার-দ্যান-লাইফ ইমেজ তৈরি
হয়। বন্ডকে ক্রমশ শুধুমাত্র কোনো একটি দেশের নয়, বরং একটি ভাবধারার, এবং সেই
ভাবধারায় বিশ্বাসী সমস্ত মানুষ, দেশ ও সভ্যতার প্রতীক ও রক্ষাকর্তার মোড়কে মুরে
ফেলা হয়। ‘ফ্রম রাশিয়া, উইথ লাভ’ গল্পে শত্রুপক্ষ বন্ডের এই বৃহত্তর ইমেজকেই আক্রমণের ও ধ্বংসের বিষয়বস্তু
সাব্যস্ত করে। ঠিক এখানেই, এই বিন্দুতেই, ‘ফ্রম রাশিয়া,
উইথ লাভ’ হয়ে ওঠে বন্ডের সমস্ত গল্পের মধ্যে
সর্বাপেক্ষা রাজনৈতিক। বুর্জোয়া ফ্রি ওয়ার্ল্ড-এর শত্রু কম্যুনিস্ট রাশিয়া বন্ডের
সামাজিক সম্মান নষ্ট করে মানুষ-বন্ড নয়, বরং বন্ডের লার্জার-দ্যান-লাইফ মিথিক
ইমেজকে হত্যা করতে চায়। তাদের মতে ব্রিটিশদের শক্তি লুকিয়ে আছে বিভিন্ন মিথ-এর
মধ্যে:
“…the myth of Scotland Yard, of Sherlock Holmes, of the Secret Service…this
myth is a hindrance which it would be good to set aside…Have they no one who is
a hero to the organization? Someone who is admired and whose ignominious
destruction would cause dismay? Myths are built on heroic deeds and heroic people.
Have they no such men?”
অবশ্যম্ভাবীভাবে
উত্তরটা হচ্ছে: “There
is a man called Bond.”
‘ফ্রম রাশিয়া, উইথ লাভ’-এ মোট ২৮টি চ্যাপ্টার দু’টি ভাগে বিভক্ত। একটিই অক্ষরেখা, কিন্তু দু’ই
প্রান্তে দুই গোষ্ঠী। তারা ধীরে ধীরে, একই কক্ষপথে, একে-অপরের দিকে অগ্রসর হয়ে
রাজকীয় যুদ্ধে মিলিত হয়। প্রথম ১০টি চ্যাপ্টার— ‘দ্য প্ল্যান’— রুশদের ভয়ঙ্কর
স্বভাব, ভয়ঙ্কর চিন্তা-ভাবনা ও বন্ড-বিরোধী ভয়ঙ্করতর পরিকল্পনার বিবরণ। এই অংশে
খলনায়কেরা বন্ডকে ঘিরে তার দিকে অগ্রসর হয়, গোপনে, ধীরে ধীরে। বিপরীত গতিপথে,
দ্বিতীয় অংশে, ‘দ্য এগ্জিকিউশন’ শিরোনামের অধীনে, বন্ড রুশদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে
ধীরে ধীরে তাদের দিকে অগ্রসর হয়। সঙ্গম বিন্দুতে একটি রাজকীয় যুদ্ধ জন্ম নেয়। এই
যুদ্ধটি ব্যক্তিগত স্তরে সংঘটিত হলেও এক মহাকাব্যিক গুরুত্ব লাভ করে বন্ডের
লার্জার-দ্যান-লাইফ মিথিক ইমেজের জন্যেই।
বন্ডের লার্জার-দ্যান-লাইফ বা মিথিক
ইমেজকে ধ্বংসের রুশ পরিকল্পনাটি ইমারতি আকার পায়। কিন্তু সেই ইমারতের ভিতটি ওই
লার্জার-দ্যান-লাইফ ইমেজ দিয়েই গঠিত! এ এক অদ্ভুত প্যারাডক্স! রুশরা ব্রিটিশ
সিক্রেট সার্ভিসকে বিশ্বাস করায় যে এক রুশ মহিলা এজেন্ট বন্ডের একটি ফটোগ্রাফ দেখে
তার প্রতি অপার প্রেমে ভাসমান। এখন বন্ড যদি তার প্রেম স্বীকার করে নিজে গিয়ে সেই
ডুবন্ত মেয়েটিকে উদ্ধার করে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসে তবে সে KGB-এর ব্যবহার করা এক অত্যন্ত গোপন ও
মূল্যবান যন্ত্র বন্ডের হাতে তুলে দেবে। স্পেক্টার যন্ত্র। যৌতুক হিসেবে দেবে। এই
সমগ্র বিষয়টির মধ্যে যে অবাস্তবতা রয়েছে তা বন্ডের উপরওয়ালা ‘এম’-এর কাছে একদম
সাদামাটা লাগে, স্বাভাবিক মনে হয়। তার মতে, যে সমাজ বিভিন্ন রকমের ইমেজের দ্বারাই
তৈরি, এবং যেখানে বিভিন্ন রকমের ইমেজ চারিদিকে আপাত-ভাসমান, সেখানে ওই রুশ মহিলা
এজেন্ট-এর এইরূপ ব্যবহার ভীষণই বাস্তব, ভীষণই ‘কমন’:
“Suppose you happened to be a film star instead of being in this particular
trade. You’d get draft letters from girls all over the world stuffed with
Heaven knows what sort of rot about not being able to live without you and so
on. Here’s a silly girl doing a secretary’s job in Moscow…And she gets what I
believe they call a “crush” on this picture [of Bond], just as secretaries all
over the world get crushes on these dreadful faces in the magazines.”
এক্ষেত্রে,
একজন ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে বন্ডের কাজ হবে তার নিজের ঐ বিশেষ ইমেজের সাপেক্ষে
নিজের ব্যবহারকে, এবং কার্যকলাপকেও, গতিরূপ দেওয়া। একজন ব্যক্তি থেকে একটি ইমেজে
নিজেকে অনুবাদ করাই বন্ডের দায়িত্ব ও কাজ। অতএব, ‘এম’-এর আদেশ ঘোষিত হয়:
“It is with an image she has fallen in love. Behave like that image.”
এই জীবন্ত রক্ত-মাংস
থেকে প্রাণহীন প্রতিকৃতিতে রূপান্তর, আসল থেকে নকলে পরিমার্জিত পরিবর্তনের মাধ্যমে
বন্ড তার মূলবিন্দু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। সে এক বর্তমান-কালের চরিত্র
হয়ে ওঠে— কোনো বিশেষ অতীতহীন, কোনো বিশেষ শ্রেণী-ইতিহাস বা আঞ্চলিক ইতিহাসহীন। সে
এক বৃহত্তর আধারে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে যে আধার বর্তমান সময়ে স্থবির, জঙ্গম। সে কোনো
‘টাইপ’ চরিত্র নয়। তার শ্রেণী-ইতিহাস তার নিজের কাছেই এক বিদ্রূপে পরিণত হয়:
“EYE AM A SCOTTISH PEASANT AND EYE WILL ALWAYS FEEL AT HOME BEING
A SCOTTISH PEASANT.”২
আসলে
বন্ড হচ্ছে সেই ‘নতুন শ্রেণীর’ মানুষ যারা প্রকৃত অর্থে ‘শ্রেণীহীন’, অথচ তারা
নিজেদের একটি প্রতিকৃতি বা ইমেজ গঠন করে এবং সেই ইমেজকেই ‘শ্রেণী’ হিসেবে কল্পনা
করে বহন করে চলে নিরন্তর:
“image of affluence, fashion, modernity, and classlessness. These ‘New
Aristocrats’ are creators of images.”৩
সেই
সময়ের ইতিহাসে, বাস্তবে, অনেকেই এই ‘নব্য অভিজাত’ গোষ্ঠীভুক্ত ছিল যারা অতীত থেকে
নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ‘নিউ অ্যারিস্টক্রেট ইমেজ’ গঠন করে, এবং সেই ইমেজের উপর
ভিত্তি করে জীবন ধারণ করত। ক্রিস্টোফার বুকার-এর চর্চার বিষয় ছিল ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর
ব্রিটিশ জীবনে এই ‘নব্য অভিজাত’ ব্যক্তিগণ। এর উল্লেখ পাওয়া যায় ডেনিং-এর লেখায়:
“Booker cites pop singers (the Beatles, Mick Jagger),
photographers (David Bailey), interior decorators, spy novelists (Deighton),
actors (Michael Caine, Connery), and fashion designers. Though they may have come from working-class,
lower-middle-class and northern backgrounds, the effect of the aristocracy of
images was to efface their origins.”৪
আধুনিক যুগে বুর্জোয়া শ্রেণীর দু’টি
মূল দণ্ড হল উৎকর্ষ ও ক্ষমতা। বুর্জোয়া তন্ত্রের এই যমজ শিশুর ধাত্রী হিসাবে এক
নতুন ডিসকোর্স নিযুক্ত হয়— ‘নিও অ্যারিস্টোক্রেটিক ডিসকোর্স’। নীৎশিয়ান
হিরোয়িজম-এর অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্যই হল আদি অভিজাত শ্রেণীর সঙ্গে সম্পৃক্ত
জাঁকজমকপূর্ণ জীবন-প্রণালীকে বনবাস থেকে ফিরিয়ে এনে সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ওই
বিশেষ জীবন-প্রণালীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য তাদের উৎকর্ষ— রুচির, পঞ্চেন্দ্রিয়ের,
জীবন-যাত্রার মানের। এই উৎকর্ষের প্রমাণ বন্ডের শৌখিন গাড়ি, উন্নত টেকনোলজির
ব্যবহার। হাইডেগার-এর বিশ্লেষণে টেকনোলজি হল Technê। একদম প্রাথমিক
স্তরে। এই Technê এক একান্ত গাঁটছড়ায় আবদ্ধ হয়ে আছে Wissen বা উইসডোম-এর সাথে। এই Technê হল
মানুষের উন্নত শৈল্পিক সত্তার প্রকাশক।৫ অর্থাৎ, উৎকর্ষের দলিল। এই একই প্রেক্ষিতে বিচার করলে জেমস বন্ডের ‘এক্সকুইজিট
কিউলিনারি ডিমান্ডস’-এর কারণগুলোও স্পষ্ট হয়। বন্ডের “shaken, not stirred” Dry
Martinis এর মতো উৎকৃষ্ট মদের প্রতি আকর্ষণ, অথবা তার উৎকৃষ্ট
প্রাতরাশ খাওয়ার অভ্যাস— সবই এই ‘নিও অ্যারিস্টোক্রেটিক ডিসকোর্স’-এর অংশ, এর
প্রান্তিক ফল। ‘ফ্রম রাশিয়া, উইথ লাভ’-এ বন্ডের প্রাতরাশের নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়:
“The
single egg, in the dark blue egg cup with a gold ring round the top, was boiled
for three and a third minutes. . . Then
there were two thick slices of deep yellow Jersey butter and three squat glass
jars containing Tiptree ‘Little Scarlet’ strawberry jam; Cooper’s Vintage
Oxford marmalade and Norwegian Heather Honey from Fortnum’s. The coffee pot and
the silver on the tray were Queen Anne, and the China was Minton, of the same
dark blue and gold and white as the egg-cup.”
বিভিন্ন
টুকিটাকি সমেত এই বিলাসবহুল প্রাতরাশের বর্ণনার এক বিশেষ উদ্দেশ্য আছে: নিম্নবর্ণ
এবং প্রলেতারিয়েত শ্রেণী থেকে ‘নিও অ্যারিস্টোক্র্যাট’ বন্ডের তফাৎ করা, তার উৎকর্ষ
প্রমাণ করা। যদিও নীৎশে বলেছেন,
“‘predominance of suffering over pleasure’ or the opposite (hedonism):
these two doctrines are already signposts to nihilism.”৬
কিন্তু
এই ধরনের হেডোনিজম নীৎশের মানস-পুত্র প্রফেট জরাথুষ্ট্রের দাবিসনদের ফলাফল বলে মনে
হয়—
“The best belongs to me and mine; and if we are not given it, we take it:
the best food, the purest sky, the most robust thoughts, the fairest women!”৭
তবে, এক্ষেত্রে, বন্ডের হেডোনিজম ভীষণ
শৃঙ্খলাবদ্ধ, সুষম। ফলে নিহিলিজম-এর সঙ্গে তার কোনো সংঘর্ষ ঘটে না। আসলে বন্ড কোনো
অর্থলোভী হেডোনিস্ট নয়, বরং সে একজন পিউরিটান হেডোনিস্ট, এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে
চলা হেডোনিস্ট- ‘আ পিউরিটান হেডোনিস্ট উইথ আ পারপাস’।
আলোচনার এইরকম পরিস্থিতিতে
দাঁড়িয়ে এই তৃতীয় পর্বের একদম শুরুর উদ্ধৃতিটিতে ফেরা যাক আবার। দু’টি
উক্তি আছে। দ্বিতীয় উক্তিটি নিয়ে এর আগে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এবারে প্রথম উক্তিটি
নেওয়া যাক। নীৎশে ‘উইল টু পাওয়ার’ গ্রন্থের ৪১ পৃষ্ঠায় ‘noble
cultures’-এর প্রয়োজনীয় গুণাবলীর বর্ণনা করেছেন।৮ এই
গুণাবলীর হুবহু প্রতিফলন ঘটে বন্ডের মধ্যে—
“He
[Bond] exemplifies what Nietzsche extolled as a ‘fusion of a Stoic and a
frivolous appearance of happiness, characteristic of noble cultures’.”