মসলিনের সন্ধান এবং অশোক তাঁতী
(১)
শুনেছি ব্রিটিশ সংগ্রহশালায় খুঁজলে
এখনও দুচারটে মসলিন পাওয়া যাবে। দক্ষ কারিগররা তা তৈরি করতেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে
আদরণীয় ছিল, অর্থনীতির ভাষায় বাজার ছিল। বাজার অর্থনীতি বড়
গোলমালের ব্যাপার, আদার ব্যাপারী হয়ে সে ব্যাপারে না গিয়েই মসলিনের সন্ধান করাটাই
আমার কাছে সহজ মনে হওয়াতে প্ল্যাস্টিকের থলি হাতে প্রান্তিকা পাঁচমাথা মোড়। কিছুদিন
আগেও এক দোকানদার লিটিল ম্যাগাজিনের বিপুল সম্ভার রাখতেন। স্থানীয় লেখকদের /
দুর্গাপুরের লেখকদের প্রকাশিত বই সাজিয়ে রাখতেন এবং তা বিক্রিও করতেন। এখন রাখেন
না। সেই বইয়ের দোকানের পাশে আর একটা বইয়ের দোকানে লিটিল ম্যাগাজিন এবং বাজারি
পত্রপত্রিকা বিক্রি হতো। সেই দোকানদার আবার সামান্য পয়সায় পত্রপত্রিকা বাড়িতে নিয়ে
পড়বার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। পাশের সেই বইয়ের দোকান বিক্রি হয়ে
গেছে, সেখানে জ্যান্ত মুরগী কেটে ছাল ছাড়িয়ে প্ল্যাস্টিকে ভরে খদ্দেরকে দিচ্ছেন ।দোকানে
সাজানো হাঁস মুরগী দেশি বিদেশী মুরগী কৃত্রিম এবং দুর্গন্ধ! মাঝে একটাই বইয়ের
দোকান, সেই বইয়ের দোকানের অন্যপাশে জ্যান্ত খাসি কেটে ঝুলিয়ে ‘ম’!
প্ল্যাস্টিকের থলি শুনলে বা পড়লে
দেখনপ্রবণ মানুষেরা ছ্যাঃ ছ্যাঃ করতে পারেন। আবার তাদের মতো গণ্যমান্য মানুষদের
বলতেও পারি না ছ্যাঃ ছ্যাঃ করবেন না, বাস্তব অবস্থাটা বুঝুন, এখন সুতির কাপড়
পাওয়াই যায় না। আগে পাতি মধ্যবিত্তরা ছেলেদের পুরাতন প্রায় পরিত্যক্ত প্যান্ট কেটে সেলাই করে বাজারের থলি বানাতেন। মা মাসিদের অনেকে
সূচে সুতো লাগিয়ে টুকিটাকি সেলাইকর্ম করতেন। অনেকে আবার বেনাচিতি বাজারে নাচন
রোডের উষা কোম্পানির সেলাই মেশিন কিনে নিয়ে যেতেন। সেলাই টেলাই করতেন। এখন
সে সবের বালাই নেই। এখন হোমমেড কিছু নেই, সব বাজারি! অবশ্য মেজাজটা রাজারই রয়ে
গেছে। বাজারি গল্প রাজার গল্প দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বাজারি পত্রিকায় যারা লেখেন
যারা বাজার করেন তাদের আঁশটা গন্ধ পাওয়ার জন্য কী অসম প্রতিযোগিতা! ফেসবুকে ফোলানো
বুক নিয়ে মনোতোষ সরকার। সার্কাসের শরীর প্রদর্শন থেকে
পান্তাভাত এবং ছাঁচি পেঁয়াজ। শতবর্ষজীবি হওয়ার গোপন কৌশল। প্রতিদিন অসংখ্য গল্প
লেখা হয়। প্রতিদিন খবরের কাগজে, দৈনিক সংবাদপত্রে, গল্প
লেখা হয়, অর্ডারি গল্প। অনেকেই পড়ে। বাজারি চাহিদা অনুসারে লেখা গল্প অমরসাহিত্য হলে
আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বাস্তবকে আড়াল করে রাখাই সেইসব গোলগল্পের প্রধান উদেশ্য।
অশোক তাঁতী বলছেন, “আমরা সবাই
জানি ছোটগল্প জন্ম হয়েছে শিল্প বিপ্লবের পর। তাই শিল্পের কথা আরো বেশী করে ছোটগল্পে আসা উচিৎ ছিল।
বিদেশী বা বাংলা সব ভাষাতেই। বিদেশী গল্পের কথা সঠিক ভাবে জানি না। কিন্তু বাংলাতে
সত্তরের দশকের আগে পর্যন্ত গল্পের প্রধান বিষয় নর-নারীর প্রেম। এটা কেমন
সামঞ্জস্যহীন বলে মনে হয় না?” দুইটি বইয়ের একটা মৃত, অতীত, অন্যটা ‘ম’য়ের দিশেহারা।
এটাও একটা গল্প!
আগ্রাসী বাণিজ্যিক পরিমণ্ডলে গল্পের
পরিবেশটাও পালটে গেছে। গোল নয়। এবড়ো খেবড়ো। জ্যামিতিক ছন্দের সাথে তার
মিল নেই। সব দেখুনে। নাচুনে। পরিবেশ দিবসে একটা গাছ লাগিয়ে অনেকেই সেলফি তুলে
ফেসবুকে প্রমাণ করবার চেষ্টা করেন তিনি কতখানি প্রকৃতিপ্রেমী। তাঁর লাগানো গাছের কী হল সেটা গোরুতে খেল না ছাগলে খেল সে
ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যান সেটা যেমন বাস্তব সত্য, তেমনি সত্য সেলফিতে তুলে রাখা ফটো
শতবর্ষ পরে প্রমাণ করতেই পারে জনৈক হরিদাস পাল কত বড় উচ্চচেতনা সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। আমি। আমিই
সব। আমি কত বড় সাহিত্যিক! লেখক! বাংলা বাজারে লেখকদের কোন মূল্য নেই! ফুটো কড়ি। অচল।
তবুও সচল আত্মপ্রচার। নিজের পয়সায় পত্রপত্রিকা ছাপিয়ে বাজার দাপিয়ে দৌড়ে বেড়ানো
বিভ্রান্ত মানুষদের, প্রকৃতিপ্রেমী সাজা সহজ। কেউ খোঁজও নেয় না।
প্রত্যেকেই অনেক অনেক বড়। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি প্রকৃতিপ্রেমী অথচ!
খুঁয়ে তাঁতী হয়ে তসরের খোঁজ না
করে মসলিনের খোঁজে আমি সেদিন গিয়েছিলাম প্রান্তিকা পাঁচমাথা মোড়ের বইয়ের দোকানে। হতাশ। সে
আর বিক্রি করে না স্থানীয় লেখকদের বই। এক বিজ্ঞাপনে পড়েছিলাম ‘রাঢ় বাংলার
উল্লেখযোগ্য কিছু প্রবন্ধের বই – অশোক তাঁতী – রাঢ়
বাংলার কারখানার গল্পঃ বিষয়চেতনা ও নির্মাণ’। খুঁজলাম। পেলাম না। অশোকবাবু
বেঁচে থাকতে খোঁজ নিইনি। সেটা আমার দুর্বলতা। ব্যর্থতা। ব্রিটিশরা আমাদের সবথেকে
দামী মসলিন ধ্বংস করলেও তার নমুনা সংরক্ষিত করে রেখেছে। আমাদের কোন সংগ্রহশালা নেই
যেখানে অশোকবাবুর মসলিন তুল্য লেখাগুলোর নমুনা সংরক্ষিত থাকবে!
আমার সাথে অশোক তাঁতীর যোগাযোগ কোন
কালেই ছিল না, খুব স্পষ্ট কথা নেই বললেই চলে। তবে আমি অশোকবাবুকে শ্রদ্ধার
চোখেই দেখতাম। দেখি। তবে দেখা হলে হাসি বিনিময় হতো। যে হাসিতে অনেক না বলা কথা
থাকত। গল্প লেখকদের শ্রদ্ধা করবার মানুষের সংখ্যা খুব খুব কম। সভাসমিতিতে আসন আলো
করে বসে থাকবার জন্য তাঁরা নির্বাচিত হন না। প্রচার করবার কেউ নেই।
বছর দুইতিন আগে মাত্র একবার অশোক
তাঁতী এক কবির বাড়ি থেকে বা কবির কাছ থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে আমাকে ফোন করে দুর্গাপুর ব্যারেজের
দক্ষিণতীরে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর সাদর
আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সেই গল্পপাঠের আসরে গিয়ে আমি ধন্য। তিনি তাঁর মিষ্টি হাসি দিয়ে
আমাকে গ্রহণ করেছিলেন। আমি বিভিন্ন লেখকের নিজ মুখে তাদের লেখা গল্প শুনেছিলাম।
দুর্গাপুরে গল্পপাঠের আসর হয় খুব কম। হলেও আমার মত গেঁয়ো পাঠকের সেই গল্পপাঠের
স্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ থাকে না। জটিল কুটিল সদা পরিবর্তনশীল জগতে গল্প শুধু শুনলে
হয় না তাকে যথাযথ ভাবে মনের
বীজতলায় রোপণ করতে হয়। বীজতলা তৈরি না থাকলে বীজ সূর্যের আলো দেখে পাখা মেলে না।
(২)
অশোক তাঁতী এক জায়গায় নিখছেন,
“নিখাদ অভিজ্ঞতাই কি সাহিত্য? অবিকৃত
অভিজ্ঞতার সম্ভাব্যতা কতটা? নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও অনেকানেক
অভিজ্ঞতার সম্মিলিত উচ্চারণ, যা এক জটিল রাইজোম্যাটিক প্রক্রিয়ায় জড়ো জীবিত বস্তু
সকলের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য জগৎ। কোনো একজন মানুষের পক্ষে তাবৎ অভিজ্ঞতা অর্জন অলীক
কল্পনা। লেখক এর ব্যতিক্রম নন। তিনি অন্যের অভিজ্ঞতা আহরণ করেন, তাকে অক্ষর দান
করেন এবং আশা করেন সেই অভিজ্ঞতার অংশভাগ
হবেন পাঠক। এই তৃস্তরীয় অনুশীলনের গুরুত্বপুর্ণ মাধ্যম হল ভাষা।
আহরণ রূপদান, আস্বাদানের সঠিক সমন্বয় ভাষায় চলমানতা ছাড়া অসম্ভব। কবিতাতে, আকারের
জন্য, অভিজ্ঞতায় তীব্রতা সমন্বিত হওয়া সহজ। ছোটগল্পে অভিজ্ঞতা ভেঙে টুকরো করে
অবিকৃত অভিজ্ঞতা রূপদানের জন্য ভাষার যে বিচলন প্রয়োজন, তার যথার্থ প্রয়োগ... কেমন
হওয়া উচিৎ। ... সনাতন পাঠ অভিজ্ঞতা সেখানে ধাক্কা খেতে খেতে নতুনতর আস্বাদনে
সমৃদ্ধ হয়। গল্পের শৈলী, বিষয়বস্তু ও ভাষা নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে”।
বিংশশতকের নয়ের দশকে
‘কল্প বিভাস’ পত্রিকায় অশোকের ব্যতিক্রমী গল্প লেখক হিসাবে আত্মপ্রকাশ। তাঁর লেখা
উল্লেখযোগ্য গল্প ‘গাছ’। এক বৃদ্ধ এবং গাছের ভালোবাসার কাহিনী। আর
এক উল্লেখযোগ্য গল্প ‘দধীচির হাড়’। এই গল্পের বিশ্লেষণ অশোকবাবুর লেখাতেই পাওয়া
যায়। তিনি লিখছেন, “প্রাণী, অপ্রাণী দ্বন্দ্বময় উপলব্ধি ভাঙতে ভাঙতে পরমাণুতে
পরিণত করার যে উদ্দেশ্যহীনতা এবং অনিশ্চিয়তা, তা ভেঙে দেয় প্রচলিত ক্যাননগুলোকে
এবং বিকৃত অভিজ্ঞতা শেষপর্যন্ত অ-যৌক্তিকতাতে বিলীন হয়। জড় ও জীবিত বস্তু পরস্পরের
মধ্যে ভাব বিনিময় করে, মানুষের ব্যবহার ও কার্যক্রম যন্ত্রে পরিণত হয়, এবং মানুষের
সেই জড় সত্তা ও জীবিতসত্তা পরস্পর ভাব ও বাক্য আদানপ্রদান করে।”
অশোকবাবুর লেখা প্রায় ২০০খানি
হাইকু, অসংখ্য ছোটগল্প, গোটা চল্লিশের অণুগল্প, দুইদুটি উপন্যাস ছাড়াও
প্রবন্ধ ‘রাঢ়
বাংলার কারখানার গল্পঃ বিষয় নির্মাণ’, সবগুলো পড়বার সুযোগ হয়নি। পাতি
মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকার পর কিনে বই পড়া বিলাসিতা। অপকর্ম! আমাদের
শহরে পাঠাগার নেই। থাকলেও তারা আটকে আছেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের সাহিত্যে। ধর্মগ্রন্থে। পুরাণে।
ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক লেখকের বই কিনে পড়া সম্ভব নয়। স্থানীয় লেখকদের বই কিনতে
চাইলেই পাওয়া যায় না। ভালো লেখকদের সম্মান জানিয়ে কোন সংস্থাও তাদের বই প্রকাশের
উদ্যোগ নেয় না। বাণিজ্যিক স্বার্থ না থাকলে মুখে সেলোটেপ। কিছু প্রকাশক তো রীতিমত
শিকারী। ভালো কুঁকড়া পেলে জবাই। প্রতারকদের কালো হাত এবং প্রতারিতদের কান্নার গল্প
লেখা হয় না। এত প্রতিকুলতার মধ্যেও অশোকবাবু নিজের বই প্রকাশ করেছিলেন। আমি অশোকবাবুর
কয়েকটা গল্প পড়েছি।
শ্রেডিংগারের প্রেমিকা
গল্পটা
পড়ে মুগ্ধ। প্রশ্ন কেন মুগ্ধ! উত্তর খুঁজছি। কত ছোট্ট একটা গল্প অথচ তার বিস্তার
আকাশের সীমানা ছুঁয়েছে। ঝুরোগল্প! শ্রেডিংগারের প্রেমিকার “বেলিফুল একটুও পছন্দ হয়
না। বড় ভোঁতা। শুনলেই মনে পড়ে – বিকেলে ফেরিওয়ালার ডাক, রাবীন্দ্রিক সময়ের কিছু
প্রাচীনার আলসেমি।” রবীন্দ্রনাথ এক আবেগ, বাঙালিয়ানা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের
বদ্ধ সমাজের সাহিত্য।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময় বড় উত্তাল। বেঁচে থাকবার জন্য ইঁদুরদৌড়।
একজন
উঠতি লেখিকা তার বিবাহিত বরকে লালন পালন হয়ত আর্থিক সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবেই
করেন। করতে বাধ্য হন। সেটাই তার জীবনে সব নয়। লেখিকার নিজের একটা মন আছে, মনের খিদে আছে। ক্ষুধার্ত মনকে তৃপ্তি
দেওয়ার প্রচেষ্টায় তিনি সদা সচেষ্ট। “কুয়াশায় কলম ডুবিয়ে লিখতে তার লেখিকার খুব ভালো লাগে।
কবিতারা আবছায়া মেখে উড়াল দেয়”।
অপ্রকাশিত বেড়াল
গল্পে “পোষ্টমডার্নের ভেতর
দিয়ে সমীর রায়চৌধুরী কয়েকটা বেড়াল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। ম্যাকাভিটি থেকে মা ষষ্ঠী
সবার বেড়াল সেখানে ছিল। কিন্তু এই বেড়ালটা সেখানে ছিল না। এটা শুয়েছিল আমার পায়ের কাছে।
রান্নাঘর, বারান্দা, বা অন্য যে কোনো জানালা থেকে বেড়াল ঢুকলেও আর কখনো বেডরুমের জানালা
দিয়ে কোনো বেড়াল সোজা আমার বিছানায় আসেনি। এই বেড়ালের হদিশ সমীর পাননি। তখন সমীরের
সাথে আমার আলাপ হয়নি। আলাপ হলে বেড়ালের স্মৃতিটা সমীরকে দিতাম কিনা ঠিক নেই।”
গল্পের পাঠক,
আশা করা যায়, সাহিত্য গোল বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে এসেছেন। অশোকবাবু নিশ্চয় সে কথাই
ভাবতেন বলেই সমীর রায়চৌধুরীকে গল্পের এক চরিত্র করেছেন।
এপিটাফ
এপিটাফ গল্প পড়লে “মনে হল আমিও একটা আইসক্রিম খাই। মায়ের হাত ধরে থামলাম
রাস্তার পাশের দোকানে। সামনে লেটেস্ট মডেলের একটা ঝকঝকে মোটরবাইক রাখা। মাকে
বললাম, বড় হয়ে এমনি একটা বাইক আমার চাই। দোকানদার আমাকে বাইকের ওপর বসিয়ে দিল।
সুন্দর মখমলের সিট। ঝকঝকে আয়নায় রাস্তার লোকের হেঁটে যাওয়া।
পেছনে তাকাতেই
হাওয়া বদলে গেল। শুনশান। সেই দোকানের গায়ে মাকড়সার ঝুল। রঙচটা সাইনবোর্ড। ঠিকানা লেখার জায়গাতে
খাঁ খাঁ শূন্যতা। খোলা কোলাপ্শিবল
গেটের আধখানা নেই, বাকি আধখানাতে একটা তালা ঝুলছে। সামনে একই জায়গাতে একটা পুরনো
বাইক দাঁড়িয়ে। সামনের চাকা মাটির ভেতর অনেকটা গুঁজে আছে। পেছনের চাকা নেই, সিটের
ফোম ছিঁড়ে ঝুলন্ত”।
চমকে যেতে হয়।
উপন্যাসের ভিতরে
খুব
সম্ভবত অশোক তাঁতীর শেষ প্রকাশিত লেখা। এক অসাধারণ। চলন্ত
ট্রেনে লেখকের সামনে একজন পাঠিকা লেখকের লেখা উপন্যাস পড়ছে। “আগে লোকে দূরপাল্লার ট্রেনে চাপলে সঙ্গে একটা উপন্যাস, নিদেন পক্ষে মোটা
কোনো ম্যাগাজিন নিয়ে যেত। বেড়ানো মানে হোল্ডলে রম্যানি বীক্ষ্য। এখন দুচোখ
মোবাইলে। সেখানেই সব সুন্দরের দর্শন। শুধু এই মহিলা। ট্রেনে চাপার পর বইতে চোখ!
আমারই লেখা। সুন্দরী পাঠিকা কার না ভালো লাগে। কিছুটা পড়ার পর খোস গপ্পো করা যাবে
ভেবে একটু ঝিমিয়ে নেবার কথা ভাবলাম। আর এখন…
বাঁ হাতে
কলার চেপে আছে। -এই শালা আমাদের নিয়ে যা ইচ্ছে করেছিস, আমরা কি পুতুল?”
এইটিই ওনার শেষ লেখা বুধবার, ১৪এপ্রিল,
২০২১ ২১এপ্রিল ২০২১, অশোক তাঁতী চলে যান…