কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

 



হাইকু থেকে

 

অনেকগুলো হাইকু লিখেছে অশোক অশোক অর্থাৎ অশোক তাঁতী, যাকে বেশ কাছ থেকে দেখেছি আমি, দীর্ঘ দশ বছরের সখ্যতা একই সঙ্গে যিনি এই মাটি আর মহাকালের অংশবিশেষযখন কেউ কিছু লেখেন, কবিতা বা গদ্য, প্রবন্ধ ইত্যাদি তখন ধরেই নেওয়া হয় যা লেখা হয়েছে সবই কাল্পনিক, সবই কুহেলিকা প্রহেলিকার আলাপ, নির্দিষ্ট কিছু পাঠক তা পড়বে - যেমন জীবনানন্দ যখন লেখেন – ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’- এর মায়া মমতা আজো স্পর্শ করে আছে আমাদের তবু আপামর মানুষ বলবে এ হল বানানো জগৎ, সবটাই উচ্ছাসের আতিশয্য যে কবির দেশভাগ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চাক্ষু অভিজ্ঞতা থাকে এই কবিতার সাথে সম সাময়িক রাজনৈতিক সামাজিক বা মনস্ততাত্বিক কি এমন যোগযোগ আছে? কিংবা কোনো চেতনা বিশেষ বা বিপ্লব বা নির্দিষ্ট  কোনো মোটিভেশনের সামান্যতম যোগসূত্র আছে কি? উত্তর হল- কোনো যোগসূত্র নেই কারণ প্রভূত ডামাডোলের সময় নিবিড় ভাবে একান্ত ভালোবাসার কথা উচ্চারণ করতে পারাটাই সবচাইতে বড় বিপ্লব, কয়েকটি মাত্র সহজ সাধারণ শব্দ, কিন্তু সেগুলো এমনভাবে লেখা হবে যাতে আদিম শক্তি উঠে আসে সেখান থেকে, কিছু জীবন্ত অনুভূতি হবে পাঠকের, আর সেইসঙ্গে কবিতার মধ্যে থাকবে কিছু অনিশ্চয়ের অংশ ঠিক এটাই করেছে অশোক ২০১২ সালে প্রথম যে হাইকু লেখেন-

The glass-heart shattered

Still, a butterfly is

Drifting-

Under the bright crimson sun.

(25/8/2012, 2:58pm)

 

Two torn dolls are enjoying

A beautiful shower

On a green weed bed.

Happy friendship day.

(5/8/2012, 11:02pm)


She left

Her voice decided

To live with me.

(14/8/2012, 9:26am)

বাসো (মাৎসু বাসো, ১৬৪৪-৯৪, জাপান) মূলত পাঁচ পংক্তির হাইকু লিখতেন, অনেক সময় দুজন মিলেও লিখতেন। একজন তিন লাইন, অন্য দুজন অন্য দুই লাইন, সুতরাং কবিতার মধ্যে খুব স্বাভাবিক ভাবেই পরস্পর বিরোধী দুইটি ভাব থাকতই তা সত্বেও আপাত বিরোধী এই দুই ভাবের অন্তর্নহিত একটা সমন্বয় ঠিক ফুটে উঠত এইখানেই কবিতার ও কবির পারমিসিভ আয়রনি হাইকু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- ‘এ ছবি দেখার কবিতা, গান গাওয়ার কবিতা নয়’।

কিগো (জাপানী কানজির চৈনিক উচ্চারণ) ভাষায় হাইকু উচ্চারণ হয় অক্কু বা হক্কু কাই ওই, এদো সাঙ্গিন, ইনাকা নো কুবাসে, টোকিওয়া নো কুবাসে, ফুয়ু নো হি, কাশিমো কিকো ইত্যাদি এবং বাসোর কাব্য সংগ্রহযার মধ্যে উদ্ধৃতি উপমা অধ্যাস এবং দ্ব্যর্থবোধক ভাব রয়েছে কিন্তু বাস্তবে অর্থাৎ প্রযুক্তিলালিত মানুষ প্রজাতি পাখির চোখব্যতীত আর সমস্ত কিছুই বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী যখন কবিতা শুধু কবিতা হয়েই থাক, নাই বা রইল তাতে কবিতা-ব্যকরণের মূল্যায়ণ হাইকু লিখবে এমন কিছু মনে মনে নির্দিষ্ট করে রাখেননি অশোক বা লেখালেখি আমাদের কাছে জীবন মরণ সমস্যা কখনই ছিল না, কিংবা সত্যি কথা বলতে কি জীবন ও মরণের নিজস্ব কোনো সমস্যা নেই যদি না তার সাধারত্বকে অতিরঞ্জিত করা তোলা হয় রোজ কিছু না কিছু লেখা রোজ নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ারই মত,

A white lemon bud

Like an adloscent girl

Cackle at the sun.

(14/9/2012, 10:12am)

 

Our unuttered talk dies down

As the setting sun

Descended-

I have lost you in the dark.

(15/9/2012,9:16am)

 

I shriek out the truth of love

And lost hundred year old warmth.

Pure love dissolves into laughter.

(15/9/2012, 10:46pm)

মোট আড়াইশোটা হাইকু লিখেছেন অশোক যেখানে নিজস্ব মনন সমসাময়িক বোধ এবং বলা বাহুল্য কবিতার প্রতি একনিষ্ঠতা দেখা তো গেছেই উপরন্তু একটা নতুন আবিষ্কার দিনে বারোঘন্টা অফিস করার পর অনেক জীবনই দুঃসহ ট্রমার শিকার হয়ে পড়ে (এ নিয়ে সোশ্যালে বিস্তর ভিডিও আপলোড হয়), তাদের কাছে হাইকু, অশোক অথবা মাৎসু বাসো দিগন্ত উন্মোচন করে দিতে পারেন অবশ্যই

A rose lying alone

On the table,

After the pompous celebration.

(17/9/2012, 9:15am)

 

We share a nice sunshine-

Devided by poles of the earth,

And an agitated blue sea.

(8/10/2012, 9:21am)

কেন অশোক ২০১২ সালকেই বিশেষভাবে হাইকু লেখার জন্য বেছে নিলেন তা বলা মুশকিল, কারণ এর আগে তিনি কতকগুলো প্রবন্ধ লিখেছিলেন একটানা, তাও আবার কল-কারখানার জীবন প্রতিতী আনুষাঙ্গিক ও শিল্প-বিপ্লবের মিথস্ক্রিয়ার উম্নুক্ত পরিসর, যেখানে দেখা যায় সজীব নির্জীব সত্বার বহুত্ব ইত্যাদি সেইখান থেকে নিজেকে উপড়ে তুলে এনে কবিতায় হাইকুতে প্রতিস্থাপিত করা ও কিজন্য সে কথা উনি হয়ত নিজেও একদিন বলতেন,  অশোকের অকালমৃত্যু সেই চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিয়ে গেছে ছোটো ছোটো বক্তব্যগুলি পরপর সাজিয়ে মোবাইলে যেমন যেমন সেন্ড করতেন, সময় ও সাল তারিখ উল্লেখ করা হল সেজন্যে-

 

We dipped sugar in the fuming tea

Looking at the same morning sun-

Sitting in the garden of the far away cities-

(7/7 /2013, 7:10am)

 

My wax doll is silent

As I have no reason to adore you-

(30/12/2014, 11:05am)


No no for me.

I must be thou

Born as the statue in the cathedral silence.

(12/2/2015, 9:15pm)


O moon! Kiss once

How long should I exchange a death

Like a golden dream.

(4/4/2015, 10:47pm)

বাঁধাধরা পথে শিল্পীর জীবন ও জীবনবোধ কোনওটাই চলে না, কিন্তু সৃষ্টির তাগিদে অর্জুন-অভ্যাস কতটা ও কখন কখন ওয়াটার প্রুফ ফায়ার প্রুফ ভাইরাস প্রুফ ভার্চুয়াল প্রুফ ইত্যাদি হবে কোনও জ্যাঠামশাই তা নির্দিষ্ট করতে পারেন না, স্ট্রেট সেটে তা হাইকু হোক, টঙ্কা (আধুনিক জাপানি কবিতা) হোক, পাঠক শ্রোতা যদি হয় গ্রীষ্ম বর্ষা জোনাকি ঝিঁঝিঁ ধর্ম সমাধি মৃত্যু।

I have written your name in the snow

Now, ice start melting

I come to the river mouth

For the bubble-

 

(1/12/2016, 8:25am)


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন