কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

ইশরাত তানিয়া

কে আছ এ্যাবসার্ড সচেতন

 
বিশাল পাথর যখন গড়িয়ে পড়ছে, হাওয়ার খোঁজে বেরিয়েছিল কামু ভেবেছে আকাশটাকেও ফাঁকতালে দেখে আসা যায় ঐ যে কী এক বিশাল সমুদ্র! কখনও  তার মাঝ বরাবর ভেঁপু বাজিয়ে ঢেউ কেটে স্টীমার এগিয়ে যায় ছোটখাটো ডিঙি  নৌকোও দেখতে বেশ লাগে সেদিন সাগর আর ডাকল না অগত্যা পাহাড়ের খোঁজে পা বাড়ালো কামু আদতে সে যোগী সংসারের মায়া ত্যাগ করেছে বহু আগে তাবলে সে জটাধারী নয় গেরুয়া বস্ত্র নেই কেউ তেমন মান্যিগন্যিও করে না গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না - সে তো জানা কথাই    

জন্ম ইস্তক স্বপ্ন ছাড়া বাস্তবে কামু পাহাড় দেখেনি তবে পাতালপুরীর নির্জনতা থেকে উঠে আসা অটল অনড় এক হিমাদ্রির কথা শুনেছে সে পাহাড়ের নাম আশা শুনেছে তো এন্ড্রোমিডার কথাও সেখানে কে যায়? নক্ষত্রপুঞ্জ কি আর বাড়ির কাছে? পৃথিবীও যে কতটা সীমিত! বিশেষ করে এর প্রকৃতির সম্পদ, যা কিছু  অনবায়ণযোগ্য এ পৃথিবী একবার পায় তারে তারপর শেষ হলেই শেষ ভূপৃষ্ঠে অন্তত নতুন কোনো সাগর, পাহাড়-পর্বতের কথা সহসা ভাবাই যায় না ভূগর্ভের খবর তেমন জানা নেই চড়াই বাইতে গিয়ে কামু পৌঁছে গেল রুখুসুখু পাথুরে মাটির উপত্যকায় গায়ে পায়ে অনাবৃত অংশটুকু ধুলোধূসর ওর পা বেয়ে উঠছে একটি পিঁপড়ে

বুনো ঝোপঝাড়ে অনাদরে ফুটেছে সুগন্ধী ফুল লাল গোলাপি রিবন হয়ে সবুজ পাতার চুলে ঠিক তখনই একটি মুখ শ্রান্ত, গম্ভীর পরিশ্রমী শরীর নেমে আসছেআশার শীর্ষবিন্দু থেকে গ্রীক দেবতার মতো সুপুরুষ নেমে আসছে যেহেতু, একটি উচ্চতায় সে পৌঁছতে পেরেছিল বেশ সমীহ জাগে কামুর মনে কোনো অর্জনই অসংগতি হতে পারে না পরিশ্রম যেমন নিস্ফল হয় না কোনোদিনই  

কামু এগিয়ে যায় লোকটির দিকে সুপুরুষ একটু থামে কামুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে বলে - ভারবাহী যে, তাকেই ফলভোগী হতে হবে এমন তো নয়
এই সেরেছে, এ যে দেখছি মন পড়তে পারে! মনে মনে বলে কামু তবকে মোড়া পান ফতুয়ার পকেট থেকে বের করে সাধে লোকটিকে নিজেও এক খিলি মুখে পোরে পান সাজানো হয়েছে মিহি সুপুরি আর জর্দায় বলে, নেমে যাচ্ছেন, দেখা  হলো পাহাড়?
কাজে আছি যে পাথরটি গড়িয়ে পড়ছে, সেটিকে তুলতে হবে চূড়োয় ওপাশে ফেলে দিলে তবেই কাজ শেষ 
- সে কি, পাথর যে পড়ে গেল, ইশ! একটুর জন্য কাজটা হলো না
- ও আমার অভ্যেস হয়ে গেছে আমি সিসিফাস সহস্রবার পাথর ঠেলে উঠিয়েছি বারবার নেমে গেছে গালের ভেতর পান ঢুকিয়ে এই তথ্য জানালো লোকটি শেষ কবে পান খেয়েছে তার মনে পড়ে না পানে এলাচ দেওয়া
- ওহ! কী অমানবিক পণ্ডশ্রম!
- বলতে চাওট্র্যাজেডি’?  
- সে তুমি এ্যাবসার্ডিটি টের পেয়েছ বলে পানের পিক ফেলে কামু পাথর পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই ধরে ফেলেছ এই অসঙ্গতি বার বার অকার্যকর হওয়া জেনেও পাহাড়ে বিরামহীন পাথর ঠেলে যাওয়া এই তো জীবনের এ্যাবসার্ডিটি
- আমি বলি এ একআনন্দ 
-হুঁ
- দেখো, পাথরের অণু-পরমাণুতে দিনে দিনে মিশে গেছে কত শিশির, বীজ-পাতা পাহাড়ের ধুলোকণায় বৃষ্টিরোদ্দুর, আলোআঁধার এ সব কিছুই  বিনির্মাণ করে  একেকটি নতুন জগৎ সেও তো এক পরম পাওয়া

পরিশ্রম নিষ্ফল হয় না কোনোদিনই মৃত্যুতেই শুধু প্রচেষ্টার অবসান কিন্তু এ  কেমন আনন্দ? সিসিফাস আবারও এগিয়ে যাচ্ছে পীড়নের দিকে ঘৃণার দিকে নিচে থিকথিক করছে বাজার অর্থনীতি বহুজাতিক কম্প্যানিগুলো যে পাথরের আকার আয়তন বাড়িয়ে দিচ্ছে না, কে বলতে পারে? ভাবতে ভাবতে লোকটিকে ছেড়ে যোগসাধনায় বসে কামু মাথার ওপর দিয়ে টিয়ের ঝাঁক উড়ে গেল ট্যাঁ ট্যাঁ করে পা বেয়ে উঠে আসা পিঁপড়েটা এবার কামড়ে দিল গোড়ালির একটু ওপরে ধ্যানস্থ কামু চিনচিনে ব্যথাটুকু অনুভব করে না   

পাথর তখনও গড়াচ্ছে মুদিত চোখে সে দেখে পাথরটি সমতলে আছড়ে পড়ে ভেঙে চৌচির অমনি ধুলোবালুর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো অপরূপ কন্যা চোখে তীব্র বিদ্যুৎ আর গভীর প্রজ্ঞার ছায়া কোমরে রূপের ঝাপটা বিদিশার নিশার মতো দীঘল চুলের ভারে অন্ধকার নামেএতদিন কোথায় ছিলেন?’- বিলোল কটাক্ষে, বাক্যবাণে কাবু সিসিফাস বলল - ‘নাটোরে না না, বিরামহীন প্রচেষ্টায়পাহাড়ের পাদদেশে হঠাৎ সমুদ্রবাতাস ভাগ্যিস, কামু পাহাড়ে গিয়েছিল! চোখ মুদেছিল!      
     
হলো তো! কোথাকার পুরাণ, দর্শন, কাব্য মিলে জগাখিচুড়ী পাকালো!  এ্যাবসার্ডিটির চূড়ান্ত যাকে বলে পাথর ভেঙ্গে মাইলস্টোনঐতিহাসিক মিলনস্থল লিখে রাখে কেউ পথের পাশে ফলকে    




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন