কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৭


এইচ-আই-ভি

শুনেছিলাম, যুধাজিত খুব অসুস্থ। এতটাই অসুস্থ যে ঘর থেকে বেরোতে পারে না। কী হয়েছে যুধাজিতের? যার কাছ থেকে খবরটা পেয়েছিলাম, সে কিছুই জানাতে পারেনি, কেননা সে যার কাছ থেকে জেনেছিল, তারও জানা ছিল না। ভাবলাম, একবার দেখতে যাওয়া প্রয়োজন। একসময় আমাদের পাড়াতেই থাকত। আমরা সমবয়সী বন্ধু ছিলাম। কিন্তু পাড়া ছেড়ে চলে যাবার পর যোগাযোগ আর নেই। আমরা কেউ কারও খবর রাখিনি। কিন্তু যেদিন তার অসুস্থতার খবরটা পেলাম, মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। মনে হলো, একবার  দেখে আসা দরকার।

তা একদিন সত্যি সত্যিই গেলাম। বাড়ির ঠিকানা জানা ছিল না, শুধু অঞ্চলের নামটা জানতাম। খুঁজে খুঁজে পৌঁছলাম। একটা তিনতলা বাড়ির ওপরতলায় একটা ঘরে বিছানায় শুয়েছিল যুধাজিত। দেখে আমি চমকে উঠলাম, একী চেহারা হয়েছে! একসময়ের টানটান স্বাস্থ্যবান শরীরের একি পরিণতি! যুধাজিত চিনতে পারল। হাসল। বলল, প্রবাল তুই এসেছিস! আয়! সারাদিন একাই পড়ে থাকি। কেউ তো আর আসে না! তুই এসেছিস, খুব ভালো লাগছে।

আমি বললাম, কিন্তু তোকে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। জিজ্ঞেস করলাম, তোর বউ কোথায়?

যুধাজিত চুপ করে থাকল।

-ঘরে নেই?

-না, নেই।

-কোথাও গেছে?

-আমার কাছে থাকে না।

শুনে অবাক হলাম। অসুস্থ যুধাজিতকে ফেলে রেখে চলে গেছে! আশ্চর্য!

-তাহলে তোকে কে দেখাশোনা করে? কে রান্নাবান্না করে খেতে দেয়?

যুধাজিত জানালো, সেসব ব্যবস্থা নিকিতা, মানে তার বউই করেছে। রান্না করার আর দেখাশোনা করার  জন্য লোক রেখেছে। তাদের পারিশ্রমিক সেই দেয়।

ব্যাপারটা কেমন যেন জটিল মনে হলো আমার। অস্বস্তিও হচ্ছিল। অনেকদিন হলো আমাদের মধ্যে যোগাযোগ নেই। কবে বিয়ে করল নিকিতাকে, বিয়ে করে নিকিতা তাকে ছেড়ে গেলই বা কেন, যুধাজিতেরই বা কী কঠিন অসুখ হয়েছে?

সরাসরি প্রশ্নটা করেই ফেললাম, তোর হয়েছেটা কী বল তো! কী অসুখ?

যুধাজিত একটু দোনামনা করে বলল, তুই আবার ভয় পেয়ে যাবি না তো?

বললাম, মানে? কী বলতে চাইছিস তুই?

-আসলে কী জানিস, অনেকেই ভয় পায় অসুখটা ছোঁয়াচে মনে করে। কিন্তু এটা ছোঁয়াচে নয় একেবারেই। মেডিক্যাল সায়েন্স তাই বলে।

-বুঝলাম না!

-আমার এডস হয়েছে, মানে রক্তে এইচ-আই-ভি পাওয়া গেছে।

চমকে উঠলাম। ভয় পাবার মতোই অসুখ। না, ছোঁয়াচে নয়, আমি জানি। কিন্তু এই অসুখ তো প্রাণঘাতী! যুধাজিত কীভাবে এমন অসুখের শিকার হলো? তাহলে কী…

প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঝড় তুলল। যুধাজিত হয়তো তা অনুমান করে বলল, না রে! তুই বিশ্বাস কর, আমি  জেনেবুঝে অবৈধ সম্পর্ক করিনি কারও সঙ্গে, নিষিদ্ধপল্লীতেও যাইনি কখনও।

-তাহলে?

যুধাজিত বলল, ঘটনাটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল আমার ও নিকিতার। কিন্তু নিকিতা নাকি বেঁকে বসেছিল। তার অন্য প্রেমিক ছিল। তাই বিয়ের পর নিষ্কৃতি পেতে আমার অজান্তে একদিন এক মহিলাকে আমাদের বিছানায় এনে তুলেছিল। আমি তাকে নিকিতা মনে করে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলাম। পরে জেনেছিলাম, সেই মহিলার রক্তে এইচ-আই-ভি ছিল।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন