![]() |
কবিতার কালিমাটি ১৪৭ |
নদীর কাছে গেলে
যেখানেই যাই আমার সামনে পড়ে থাকে পরাজয়,
ব্যর্থতা হতাশার খড়কুটো, অশ্রু
অক্ষর;
সূর্যডোবা বিকেলে নদীর কাছে গেলে
কেবলই শুনতে পাই নৌকো গলুইয়ের কান্না
গান;
হেমন্তের পাতাঝরা হিমেল বাতাসে
ভাঙা জানালায় শুধু উড়ে আসে
হাহাকার ধ্বনি;
এত দুঃখ নিয়ে তবে আমি কী ভেসে যাব
নিশীথ অন্ধকারে
নদীর বেনোজলে?
আর তখনই দেখি - ফুটফুটে জোছনায়
দীঘল আকাশের আয়নায় ভেসে ওঠা মায়ের
হাসিমুখ
তার দু'হাতে ধরা অভয় মুদ্রা, আশীর্বাদ।
রূপকথা স্বপ্ন
প্রতিটি নির্মাণের পিছনে লেগে থাকে
নুন ঘাম শ্রম
প্রতিটি ভাঙনের গায়ে ফুটে ওঠে
বিন্দু বিন্দু অশ্রুশিশির
আর প্রতিটি ভালবাসার পিছনে
জেগে থাকে রূপকথা স্বপ্ন
হেমন্তের প্রান্তরে
যেভাবে এসেছি একদিন সেভাবেই নীরবে চলে যাব
সূর্যাস্তে নির্মিত অন্ধকারে
ওই দূরদিগন্তের নক্ষত্রের গ্রামে;
হেমন্তের আদুল প্রান্তরে শুধু ফেলে
যাব
অশ্রুর অক্ষর
আর হলুদ ঝরা পাতায় লিখে যাব
এই জীবনের অপূর্ণ সাধ - আহ্লাদ;
আমাকে খুঁজে পাবে না আর কোনদিন
জন্মদিনের ভোরে।
অনন্তের পথে
মেঘ বাদল রাত্তির আকাশে যখন মৃত নক্ষত্রের
চোখ থেকে
নীরবে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু অশ্রুজল
তখন খাঁ... খাঁ... শূন্য বুকের
ভিতরে মৃত্যুর
বাসনা জেগে ওঠে হঠাৎ;
সাঁই - আমাকে দেখাও অনন্তের পথ
জীবনের উপান্তবেলায়
আমি চলে যেতে চাই সূর্যাস্তের গ্রামে।
কোলাহল থেকে
জীবনব্যাপী সমস্ত নিন্দা কুৎসা অপবাদের
কোলাহল থেকে
পাখির মত অনেক দূরে থাকি;
প্রতিদিন দেখি -
ভোরের সূর্যের লালটিপ আলোমাখা
ঘাসে ঘাসে পড়ে আছে
স্মৃতির মলিন অক্ষর ভালবাসার
বিবর্ণ পালক খড়কুটো;
জন-কলরব থেকে সহস্র যোজন দূরে থাকি
তবু সূর্যডোবা ম্লান জোছনায়
দেখি - মরা চাঁদের চোখে লেগে আছে
আমারই চোখের বিন্দু বিন্দু জল।
হলুদ দুপুরে
ভালবাসা যেন হলুদ দুপুরে নদীর জলে নাইতে নামা
কিশোরীর টলটলে পানপাতা মুখ
মাটির উঠোনে ভোর শিশিরের জলে
জেগে ওঠা ফরসা পায়ের চিহ্ন;
ভালবাসা যেন পুরনো বইয়ের ভাঁজে
গোপনে
লুকোনো গোলাপী চিঠি ময়ুর পালক
মধ্যরাত্তিরে কান্না জলেভেজা বিরহী
আনমনা
রাখাল বাঁশি বালক;
ভালবাসা যেন মায়ামৃদঙ্গ অলৌকিক
জোছনায়
বহুদূর থেকে ভেসে আসা নিশিডাক
হৃদয়পুরে নীরবে ঝরে পড়া অশ্রুজল
মনস্তাপ।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন