কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

অর্ঘ্য দত্ত বক্সী

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

সত্যান্যাস

 


অথবা

গোদার দেখে ৩৮৬টি মনোলগ

গায়ের জোরে বলা উপন্যাস

 

A social media studies

যে বাজার থেকে মুক্ত সে মুক্ত

 

ঋণ, অনুপ্রেরণা ও কৃতজ্ঞতা

 

তরুণ গোদার

সর্বপ্রিয়ানন্দ

কপিল শর্মা শো

মৌমিতা ঘোষ

চন্দ্রিল

নিখিল ব্যানার্জি

অর্ণব নাথ

এবং

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব

 

উৎসর্গ

ঋতস্বিনী দত্ত বকসী

 


 

 (এই লেখাটি লেখার একটাই উদ্দেশ্য। যদি একে উপন্যাস বলা যায় তবে যে কোন সাক্ষর ব্যক্তি কলম তুলে নিতে প্ররোচিত হবেন! দীর্ঘদিন না লিখে হাতে জং ধরে গেলে, ব্রেন বেশি কাজ না করলে আর পড়ার অভ্যাসও পুরোপুরি চলে গেলেও কীভাবে উপন্যাস লিখতে হয় তারই এটি একটি উদাহরণ! মূল ইন্সপিরেশন অবশ্যই তরুণ GODARD—BREATHLESS! সেই ২০০৭-এর পর কাকতালীয়ভাবে আবার প্রথম পর্যায়ের গোদার দেখতে বসে মনে হল, আরে! সবাই সিনেমা বানাতে পারে, সবাই উপন্যাস লিখতে পারে তা সে যতই স্মার্টফোনে ক্ষয়ে যাক না কেন মেধা! যখন হাতে রইল শুধুই সোশ্যাল মিডিয়া, তখন ফর্মে ও কন্টেন্টে যা হয় তাই হল উপন্যাস, নিরক্ষরদের উপন্যাস! ব্যাস, সকলেই একটি করে অন্তত উপন্যাস লিখুন! কারণ আপনাদের সকলের কাছেই একটি করে স্মার্টফোন আছে! এতটুকু মেধার আবশ্যিকতা নেই আর উপন্যাস পড়তে বা লিখতে গেলে। কারণ ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ইউটিউব স্ক্রলিং বা সামান্য সর্বপ্রিয়ানান্দ বা চন্দ্রিলের লেকচার ৯০% সাধারণ বাঙালি শোনেন। দরকার নেই প্রখর রাজনৈতিক বোধ বা নিউজ চ্যানেল ও খবরের কাগজের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদে থাকলেও; উত্তর আধুনিক সাহিত্য তত্ত্বগুলি না জানা থাকলেও যে দিব্বি একটি উপন্যাস শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হয়ে লেখা যায় এবং তা ছাড়া যে আর উপায়ও নেই… সগর্বে বলি আমি নিরক্ষর ও নিরীক্ষিত উপন্যাসে এসেছি।  

উপন্যাসটি লেখার সময় খাতার প্রতিটি নতুন পাতা এক একটি নতুন অধ্যায়। সুতরাং যে কোনও পাতা থেকে যে কোনও পাতায় চলে যাওয়া সম্ভব। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর টাইম স্প্যান। পরে এডিটিং এর সময় আরো যাতে সেন্ট্রিফিউগাল হয়ে যায় সেদিকেই নজর রাখা হয়েছে। কারণ ডাইভারসিটি অফ কন্টেন্ট। সোশ্যাল মিডিয়ার বিয়েভিয়ারাল থিয়োরিগুলি মাথায় রাখা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে নিউজ ফিড! তাই একে উপন্যাস বলা যায় কিনা তা নিয়েও তর্ক হয়েছে অতি নিকট বৃত্তে।) 



পর্ব – ৪

 

সুমিদির মাথার সঙ্গে শুয়েছিল ছৌরভ! সেটা যে আমি জানি এই অপরাধে অন্ধকার আবছায়া ঘরে সুমিদির আমার দিকে তাকানো চোখ যে কোনো মহিলা গ্রে হাউন্ডের থেকেও বাস্কারভিল। তোর শুতে দোষ নেই, আমার জানায় দোষ! এবং সব মেয়ের ক্ষেত্রেই তাই। তাদের গোপনীয়তা জেনে ফেলা আমার পক্ষে তার কাছে যথেষ্টাতিরিক্ত অপরাধ! অথচ দেখো, মলয়, বাবীন, সৌবিমল যত বুড়ো হয়েছে তত বেশি পারভার্ট হয়েছে। ফুটোয় মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছে। (এবং আমি ঠিক করেছি এ লেখ্যকথ্যে কোনো তৎসম রাখবো না)

টিউবলাইট জ্বললো আগের বাক্যটি লিখে!

- মাথা কেটে পাঠাচ্ছি যত্ন করে রেখো। মাথা নামক শেষ বেঁচে থাকা যৌনাঙ্গটির প্রয়োগ করতে চাইছি, যত্ন করে চুদতে দাও! সরাসরি লোলচর্মের যৌনাঙ্গ অফার! শুরুর ‘ৎ’ এর মতো এইসব এন্টেটিকে আজ তো করুণা হয়। নাকি উপল যা বলছে তাই ঠিক? মদ গাঁজা মেয়ে মানুষের নেশার উপর বেদান্তের নেশা ওভারডোজ হয়ে যাবে না তো? বউ বলল, বউ শব্দটা তুমি আজীবন তিতাস একটি নদীর নাম-এর কিশোরের শেষবার ‘বউ’ বলে ওঠার মতোই জীবন্ত ডাকো। এভাবেই ডেকো! আমি জানবো পাগলটা আমার!

#

#

অংশুমান কর খবরের কাগজে লিখেছেন, বিনয়ের জীবনী লিখতে গিয়ে তিনি আমার রাধাকেলোতত্ত্বকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। অবশ্য আমার ‘বিনয় পিটক’ ও তাঁর বিনয়জীবনী গ্রন্থের প্রচ্ছদচিত্র এক। একই প্রকাশনীর বই তো। আর্জুনি বলল, প্রতিবাদ কর। আমি বললাম, এই স্বীকৃতিটা ওপেন সিক্রেট থেকে আমায় মাটিতে পা দেওয়ালো। ওপেন সিক্রেট নিরালম্ব বায়ুভূত করেই রাখতে চেয়েছিল, বিনয়ের মহৎ ঔদার্য (খানকির ছেলে আমার ছেলে এই স্বীকৃতি দানের ঔদার্য) আমার প্রথম প্রকাশকের আচরণে প্রতিফলিত হয় নি। বাংলা প্রকাশনা জগত কবে বুঝবে, লাভ বা মুনাফা সাহিত্যবান্ধব নয়। মুনাফা করে গান, সিনেমা, পেন্টিং। বই মাত্রই প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিরোধী। হ্যাঁ, শুভ, অন্যরকম লেখা বলতে সেই লেখা বোঝায় যে কীনা নির্গুণ।

#

#

- হেইয়ো হে, এত স্পর্ধা? তবে রে জগাই! সাত জার্মান জগাই একা, কল অফ ডিউটি ভিডিও গেমে তবুও জগাই জেতে!

বলাই বাহুল্য, আমি একটা লেখা লিখছি। শুধুই লেখা। যার ঢাল তরোয়াল নেই, কামান দুর্গ নেই, ব্যাক আপ অস্ত্রশস্ত্র রাজনৈতিক ব্যানার নেই, অর্বাচীন অসংলগ্ন, বৃত্তায়বতাবিহীন, লেখা তো লেখা, ব্যাস। তার প্রতিটি নতুন নতুন পাতায় একটি করে নতুন নতুন লেখা। শুরু হচ্ছে। শেষ হচ্ছে না। যতগুলো খাতার নতুন নতুন পাতা, ততগুলো আলাদা লেখার সংকলন। আপনি হে মহান পাঠক, ধৈর্য্যহীন পাঠক, যেকোনো পাতা থেকে যে কোনো পাতায় চলে যান, এই লেখাটির কন্টিনিউটি পাবেন। কারণ এ লেখা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিক্টদের জন্য!

 

হাতে রইলো হপস্কচ উপন্যাসটি, প্রতিটি পাতাই এখানে নতুন অধ্যায়, হাতে রইলো তারও উপর পাকামি হচপচ্, নিকোর পারার না কবিতা, আর রইলো শার্পকাট, নির্মোহ, পাঠক প্রত্যাশী কদাচ নয়। নির্বিকার। হে পাঠিকা, হে মেহেক, দেবাদৃজা, শুভস্মি, ঈশপনিষদ মৈত্রী, তোরা সোমনাথিয়া কেন রে ভালবাসিস? অর্গাজম হয়? হ্যাণ্ডসাম সোমকে দেখলে যৌন আকর্ষণ হয়? আমি জানি মহাকাব্য বলছে নারী পুরুষের থেকে যৌনতা শতগুণ উপভোগ করে। কিন্তু শোন। আমি অনুভব করতে চাই। রিঅ্যাক্ট নয়। রেসপন্ড করতে চাই। এই প্রাণহীন বোরিং লেখা, ছ’টা ধায় ধায় ধায় ধায় ধায় ধায়, আমার নাম আছে তো একটা, কাঁচা একটা আমি আছে। লেটস্ মার্ডার হিম! দ্য অথর ইস ডেড, লং লিভ দ্য অথর!

#

#

আর তাহলে গানটা হারমোনিয়াম শুনছিল, চেয়ার গাইছিল, গায়ক টিকিট কাটছিল?

তাও নয়, তাহলে কান গাইছিল, চেয়ার বাজাচ্ছিল। চোখ শুনছিল।

তাও নয়! টিকিট বাজাচ্ছিল, গায়ক শুনছিলো, আর চেয়ার গাইছিল?

তাও নয়? জগন্নাথ দড়ি টানছিল, ভক্ত পুজো নিচ্ছিল, রথ প্রণাম করছিল?

তাও নয়, তাহলে শুনে রাখো একমাত্র বস্তু-- চৈতন্য! একমাত্র কাল-- চৈতন্য! একমাত্র স্থান-- চৈতন্য! কার্যের কারণ আছে, কার্য আবার পরবর্তী কার্যের কারণ। একমাত্র কার্যকারণ চৈতন্যে লীন হয়! আর সবকিছু যা আপেক্ষিক তাই অন্যের মুখাপেক্ষী! যদি কোনো অ্যাবসিলিউট ফ্রেম থাকে তাহলে তা আমি-ই! আমিই ব্রহ্ম!

আজ তো ডোভার লেন আমার সময়ে গায়, বাজায়! আর আমার (অ)থিয়োরি এক রাগ এক দিন! মানে সারাটা দিন একটাই রাগের যাবতীয় কম্পোজিশান শোনা! বাল, সে ভোর না সন্ধ্যে, বসন্ত না প্রদীপ এসব ভাবি না। সে সুর! তাকে রাগ করার মতো সহজে পাবো দরকারে, পাবো তো? এ প্রশ্নে শুধু একমাত্র ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনি যাবতীয় অবসর শিকেয় তুলে! ঘুম থেকে উঠে! ৫৪ মিনিটের রাগ হলে ৫৪ মিনিটই আমার কনন্সেন্ট্রেশন প্র্যাকটিসের মহৎ সুযোগ। তবে মনে রাখবেন ইট ইস দ্য সেম মাইণ্ড যা দিয়ে আমি আবার সোশ্যাল মিডিয়া সার্ফিংও করি!

#

#

আমি আমাকে ছাড়া আমার হৃদয়ের কাছাকাছি আর এক ফেলো কমরেডকে চিনি, যারও সাইকোসিস অনসেট করেছে। আমায় ও নভেম্বরের শেষ দিনে ফোন করে বলে, ৫ বছর আগে প্রকাশিত ওর ‘নভেম্বরের লেখা’র সব কপি পাঠকের থেকে ফিরিয়ে নিতে। বউ পাশে শুনছিল। বলল, পাগল! আমি বললাম, ওর দোষ হল ব্যক্তিগত লেখা। নাম স্থান তারিখ উল্লেখ করে লেখার বিপদ আজ ওর থেকে শিখলাম। এছাড়া আর কিছু নয়। বুড়ো মস্তিষ্ক বিকৃত সুমন বলছেন, আমি আমার সব কাজ ডিসওন করলাম! বলছে, “আমি বিছানায় আজও সক্রিয়”! মাথা খারাপ হয়ে গেছে, প্রাণপণে চাইছে কেউ পস্কো বা মি টু লাগাক, যদি প্রমাণিত হয় তিনি আজও ৭৫ এ সক্ষম! প্রাণপণে চাইছেন, পুওর সোল, শুধু খেয়ালটা গাইছেন! ওটা কিন্তু একটা ফেনোমেনন।

আমার বন্ধুটির কথা বলছিলাম। তার সঙ্গে পাখিদের, কুকুরের, গাছেদের, শস্যদের খুব ভালো সম্পর্ক। একেবারে মাই ডিয়ার! তবুও বারবার কীটনাশক খাচ্ছে। সন্তান নাইনে পড়ে। মুশকিলটা ইগোর। যে একদিনে ৬০টা কবিতা অবধি লিখেছে সে আজ পেন ধরতে পারছে না। রাত জেগে লড়াকু ছবি সেই ক্ষয়িষ্ণু বর্ধমানই একমাত্র পারে। যার কাছে কবিতা ছবি হয়, লিটারারি থিওরি ছবি হয়, উপন্যাসও ছবি হয়, আর শুধু ছবিই হয়, প্রচ্ছদ নয়। প্রয়োগের লোভহীন! তাকে কোন আশিস শুভময় কম্পিট করবে? সে আজ আটকেছে বলে তাকে বললাম, কিছুদিন ক্রিয়েটিভিটির ইগো থাক। আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল। যার ইগো নেই, যার যৌনতা নেই, তার সমস্যাও নেই। এ বিষয়ে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠন কোনো সাহায্য করতে পারে কী?

#

#

দেহই আমি। দেহবোধই অজ্ঞান। এই আমার নখাগ্র অবধি আমার দেহ – ইহাই লিমিটেশন এবং ভয়ের মূল। দেহবোধ যতক্ষণ পাপপুণ্য তোমার। যেকোনো উপায়ে, যেভাবে পারো দেহাতীত হও।

ওদের প্রতিটি অবচেতন চিন্তাও ঠাকুরকেন্দ্রিক। ঠাকুরকে বলো। আর খুব জোরাজোরি করলে, খুব কাঁদলে যাও মাকে গিয়ে বলো। এ ওদের চালাকি নয়! ইহা সূর্যোদয়ের বাস্তব। এবং মিশনের একটি স্বীকৃত রামছবি আছে। দিবানিশি রামনাম জপ করি। রামের ইচ্ছায় আউটডোর পাবলিক প্লেসে মদ খাচ্ছিলাম। রামের ইচ্ছায় থানায় ধরে নিয়ে গেল। রামের ইচ্ছায় পুলিস ঘুষ নিল। এখন রামের ইচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছে। রাম – পৃথিবীর পবিত্রতম সগুণ শব্দ! কে রামমন্দির, কোথায় আরএসএস জানি না। আমার রামে নাথিং পলিটিক্যাল অ্যাবাউট ইট। আমার স্কুল যাওয়ার পথে বিরাট হনুমান মূর্তিটার মুখ ঠিক একটা রাগী গোরিলার মতো। মনে হয় যেন সাদা পাথরের মাড়োয়ারি রামের দারোয়ান একটা দেহাতি গোরিলা। আমার স্কুলের একটা কেলেকুচকে ছোট ছোট চুলের বাচ্চার নাম দিয়েছি – কিংকং। ও আড়ালে আমায় নাইজেরিয়ান বলে ডাকে। এমত আমাদের সব স্যার ম্যাডামেরই খেপচুরিয়াস নাম আছে। শুধুমাত্র আমিই তা জানি। আমার ছাত্ররাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড—বইয়ের, বৌয়ের, মিউজিকের পর! ওরা আমায় ঠকাবে না! আমি ওদের মানস বাবা! ক্লাস ১ থেকে যে ব্যাচ ক্লাস ৪ অবধি পড়াচ্ছি, ওরা জাস্ট আমার মেয়ের সমতুল! ওরা আমায় কখনো ভুলবে না! আর এই সুযোগে যতটা পারলাম উদার মুসলিম মেয়ের ফৌজ বানিয়ে তুললাম! ওদের ধর্মকে আমার দেওয়া গিফট এটাই!

#

#

- সহজ পাঠ কে লিখেছে?

- অম্লান স্যার।

ওরে গাড়ল, সহজ পাঠ অম্লান স্যার লিখেছে!

চোখ বড় বড় করে – তাহলে স্যার আপনি!

- চোপরাও। এবং হেড টিচারের বাড়ির সমস্যার অবদমিত জীঘাংসা বাচ্চাদের উপরে চরিতার্থ করার একাধিক ভিডিও আজ প্রয়োগ করার পর্যায়ে পৌঁছেছে।

    

Colossus, GOYa

 


একদা আমি বলছিলাম, আমি তো খুব অসুস্থ! আমায় একটু কনসিডার করবেন! আমি কী করে জানব ১০৫ দিন ছুটি নেওয়ার মেডিক্যাল কাগজ উনি পড়ে দেখেননি! তাই বললাম সিওপিডি-র কথা। কেকা বলল, ও আমিও লিখিয়ে নিতে পারি! বললাম সাইকোসিসের কথা! অতঃপর…

কেকাদি - পাগোল কোথাকার!

অর্ঘ্য - কে পাগোল?

কেকাদি - আমার বর পাগোল, ছেলে পাগোল, আমার স্কুলের মাষ্টার পাগোল।

অর্ঘ্য - আমি রাজদরবারে নালিশ জানাবো (নিজের ছেলেকে পাগল বলছে, দ্যাখ, নিজেকে বাঁচাতে)।

কেকাদি - আমি মিটিং করবো, মিছিল করবো। আমি একশো লোক জড়ো করতে পারি পাঁচ মিনিটে!

অর্পণদা - করবেন না। এটা কি একশো দিনের কাজ! পোঁদ মারা যাবে। ফটো তুলে মালা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

কেকাদি - ওসব আমি বুঝি না। আমাদের বাংলার সিলেবাসে ছিল না।

মদিরাদি - বেশ মিছিল করো। তবে মিছিলে শিক্ষানুরাগী না চেটে দিলে তোমার তো আবার মিষ্টি লাগে না!

কেকাদি – আব্রাম, আব্রাম! কোথায় ভাই! মিছিলে যোগ দাও তো ভাই। এরা আমার পিছনে লেগেছে।

আব্রাম - তোমার পেছনে আমার লাইফ টাইম সাবক্রিপশন নেওয়া আছে। কার এত গাঁড়ে দম!

মদিরাদি - এই তুই যা তো!

 

স্কুল বাহাদুর বেড়ালঃ

স্কুল পরিচালন কমিটির মিটিং, 01.02.2025, সময়ঃ দুপুর ১২ টা।

 

আমার বক্তব্যঃ

 

১। কেকাই ঝগড়ার উৎসঃ আচ্ছা মদিরাদি, অর্পণদা, অম্লানদা, মমতাদি তোমাদের সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলা আছে? নেই! রান্নার দিদিরা, তোমাদের সঙ্গে? তাও নেই! হেড টিচার কেকার সঙ্গে সবার, প্রত্যেকের গণ্ডগোল। বাইরের হাইস্কুলের টিচার স্কুলে বৃত্তি পরীক্ষা নিতে এলে তাকে কাঁদিয়ে ছেড়ে নাইটমেয়ার দেখানো (ভাগ্য ভালো সে আপনার নামে এফআইআর করেনি!) রাঁধুনিদের সঙ্গে নিত্য ঝামেলা সংকীর্তন ১২টা বাজলেই (নিরক্ষর রাঁধুনি সামলাতে পারে না, বি.টেকের পিছনে লাগতে এসেছে)। বাচ্চাদের অভিভাবকের সঙ্গে এত চরম দুর্ব্যবহার যে তারা টিসি নিয়ে দূরবর্তী স্কুলে চলে যাচ্ছে। এবং ব্যক্তিগত হতাশা রাগ চরিতার্থ করা বাচ্চাদের উপর নৃশংস অত্যাচার করে! ঝগড়া না করে কেকা থাকতে পারে না! আমার সিগারেটের নেশা, কেকার ঝগড়ার!

২। প্রশ্ন আমার ছুটির! আমি সরকার প্রদত্ত ছুটির অধিকারের মধ্যে থেকে ছুটি নিচ্ছি! আমি মদিরাদি কি আপনার ছুটি থেকে ধার করে নিচ্ছি কি ছুটি! আর ম্যানেজ করা ছুটি? কেউ ৩ টাকা ঘুষ নিল, কেউ ১ টাকা। দুজনেই সমান পাপী! সব পাখিই মাছ খাবে আর মাছরাঙার দোষ হবে, না? কে মাই বাজিয়ে বলবে যে আমি পুরো সৎ?

        ৩। পার্সোনাল ম্যাটারঃ কখনও কারো ফোনের কল লিস্ট দেখতে চাওয়া, কখনও কোনো নিডি টিচার বা প্যারা টিচার আর্থিক সাহায্য চাইলে নির্লজ্জের মতো তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অপমান করতে থাকা। নিজের এক্তিয়ার বিষয়ে জ্ঞান শূন্য!

৪। সব ধরনের অফিসিয়াল লেখা আর অনলাইনের কাজ যেহেতু করে দেওয়া হত তাই মাথাটা শুধুই পিছনে লাগার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।

৫। আর কথা পালটানো! কথা অস্বীকার! কার নামে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছি নিজেকে বাঁচাতে আর তার কি পরিণতি হবে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র না ভাবা! দুদিন অন্তর কথার ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তন! সকলে কনফিউসড! ২০২৫ থেকে নতুন মিলিটারি শাসন, এমার্জেন্সি! নতুন নতুন নিয়ম বানানো (নিয়ম বানানো যায় না, ফলো করতে হয়।) কাল থেকে ভারত দুর্নীতিমুক্ত দেশ হয়ে যাবে মিত্রো… বাল কি বাতে বললেই কাল থেকে মুক্ত! বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি থাকা দরকার, সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে! কেকা জানে না, রাজনৈতিক নেতারা আগে জলে ডুবিয়ে নিশ্বাস বেরোনোর ঠিক আগে সেখানেই তুলে এনে বলেঃ দেখলি তোকে বাঁচালাম!

৬। আগের স্কুলের হেড বিচের বগলের গন্ধে সব সার্কুলারে হাত দেওয়া যেত না আর এই কেকার ২১ বছরের চাকরিতে এটা জানা নেই যে কম্যুটেড ১ দিনেরও নেওয়া যায়! তার ধারণা ছিল মেডিক্যাল শেষ না হলে কম্যুটেড নেওয়া যায় না! ওনার কাছে রুলস একটাই, ডেইলি অ্যাটেণ্ডেন্স। কার কি এফিসিয়েন্সি, কি আউটপুট এসবের বিন্দুমাত্র বিচার নেই। স্কুল মানে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ১১টা ৪টে রোজ আসতে পারলেই তুমি শিক্ষারত্ন! শোনো, তুমি চরম অযোগ্য হেড টিচার! মুজিবরদার বলা হয়ে গেছে, আজ আমি বললাম, অন্যরা কবে বলবে তার অপেক্ষায় রইলাম!

 

প্রতি

মাননীয়া প্রধান শিক্ষিকা,

বাহাদুরী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়,

 

বিষয়ঃ বিদ্যালয়ের Village Education কমিটির সদস্যগণের স্পষ্ট নাম ও পদ অবগতকরণ এবং ০১.০২.২০২৫ তারিখে বিদ্যালয়ের VEC কমিটির মিটিঙে বহিরাগত ও অপরিচিত এক ব্যক্তির অভব্য আচরণ ও ভয় প্রদর্শন বিষয়ক।

         

মাননীয়া,

আপনি অবগত আছেন যে ০১.০২.২০২৫ শনিবার দুপুর ১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মধ্যে এক VEC কমিটির আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই মিটিঙে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের সম্পূর্ণ অপরিচিত ও বহিরাগত একাধিক ব্যক্তি লুঙ্গি ও টিশার্ট জাতীয় পোশাক পরে উপস্থিত ছিলেন। তদ্‌মধ্যে একটি যুবক মিটিঙের পূর্বে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অর্ঘ্য তাঁরই স্কুল প্রাঙ্গণের মধ্যে শিক্ষকের পরিচয় তাকে দিতে বলে ও কোনোরূপ উস্কানি ছাড়াই অভব্য ব্যবহার ও ভীতি প্রদর্শন করে। এবং পরবর্তীতে মিটিং বসলে সে তাতে যোগও দেয়। সেই প্রসঙ্গ মিটিঙে উত্থাপন করা সত্বেও কমিটির চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি কোনরূপ পদক্ষেপ নেন নি।  

এমত পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজ কর্মক্ষেত্রেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ও কর্মক্ষেত্রে আসতে ভীতিবোধ করছেন।

আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি অবিলম্বে শিক্ষকগণের ভীতি দূর করার জন্য ব্যবস্থাগ্রহণ করুন ও ব্যক্তিটিকে শনাক্ত করুন। এবং জানান যে কার নির্দেশে সে আমন্ত্রিত হয়েছিল ও কে তাকে অপমান করতে প্ররোচনা দেয়! এছাড়াও VEC কমিটিতে কারা রয়েছেন, তাদের নাম ও পদ সহকারী শিক্ষকদের অবিলম্বে লিখিত জানান।   

           

                     ধন্যবাদান্তে,                               

                                                                             আপনার আস্থাভাজন,

                                                                   সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকাগণ

#

#

 

মদিরাদি বলল, ৫ বার অটো পালটে আসি। আমি তো মাইকে করে পাড়ায় জানিয়েছি আমার আসার সময় অনিশ্চিত, বহুদিন আগেই মানবিক আবেদন করেছি।

অর্পণদাঃ পাড়ার লোক কী করবে? এস.আই অফিসে অ্যাপ্লাই করো যে বাড়ির কাছাকাছি স্কুল দিতে। ওটাই তোমার দেরি করে আসার ছাড়পত্র!

কেকাদিঃ প্রতি ৩ লেটে ১টা সিএল ডিসেম্বর থেকে আমার স্কুলে বলবৎ হল। মদিরাদি ডিসেম্বরে তোমায় ৩টে কম্যুটেড অ্যাপ্লাই করতে হবে! অর্ঘ্য, ৩১শে ডিসম্বরের অনুপস্থিতির জন্য তোমায় কম্যুটেড অ্যাপ্লাই করতে হবে!

অম্লানদাঃ কেউ না এলে তার ক্লাস অন্যে নিলে আপনাকে প্রোভিশনালের খাতা বানাতে হবে!

কেকাঃ তা কেন! ১১টা থেকে ৪টে কেউ বসে থাকবে না। দরকার হলে ৮ জন ছাত্রের ক্লাসে ২ জন টিচার যাবে!

আমিঃ বাস্তব ও সর্বসম্মত পদ্ধতিতে চলুন। আমার ক্লাসে দুজন বাঘ থাকবে না!

কেকাঃ তাহলে তো একটা শিম্পাঞ্জি এক্সট্রা! এস.আইকে বলি একটা নিয়ানডার্থাল তুলে নিতে! (সবটাই ব্যঙ্গের ছলে, সারকাস্টিক, অপমানজনক টোনে।)

অথচ প্রলয়দা চলে যাওয়ার পর একজন টিচারের জন্য আমি সাইকোসিস অনসেট নিয়েও এস.আই অফিসে আবেদন করতে গেছি। স্টপগ্যাপ টিচারের জন্য।

 

মার্চ, ২০২৪,

কেকাঃ অর্ঘ্য, নতুন টিচার আসছে। তার কাছে তো তোমার সম্মান রাখতে হবে। ইমিডিয়েট স্কুল জয়েন করো।

আমিঃ যা শ্ললা! আমার জন্যই তো স্টপগ্যাপ টিচার আসছে! আমি জয়েন করব মানে?

কেকাঃ স্কুল জয়েন করে ভোটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে যাও!

আমিঃ আপনি নিয়ম জানেন না! আগে থেকে ছুটিতে থাকলে কোনো ডিউটি দেওয়া যায় না! দিদি আপনি ভুল করেছেন! আসলে হেড টিচার হয়েই আপনি ভুল করে ফেলেছেন!

অর্পণদাঃ স্কুল কারো বাবার থেকে পাওয়া সম্পত্তি নয় যে এটাকে আপনি দুই নম্বর মেসবাড়ি বানিয়ে তুলবেন!

 

#

#

 The third of may 1808, Goya


     

স্বপ্ন সিরিজ ২:

খুব ভোরবেলা। হুইস্কির ঘোর কাটেনি। আব্রাম বাড়ি চলে এল। খুব ধমক চমক দিয়ে প্রবল আপত্তি সত্বেও আমাদের লাক্সারি ট্যুরিস্ট বাসটা নিয়ে সেই বিরাট কালো প্রাসাদে নিয়ে গেল যেখানে প্রেমদা আর আব্রামের মধ্যে ভোট হচ্ছে। হ্যাং ওভারই কাটেনি তায় ভোর সাড়ে পাঁচটা! ভোট দিতে বসলাম।

দেখলাম কোশ্চেন পেপার! মাল্টিপল চয়েস! অঙ্ক, ইংরিজি, বাংলা, পরিবেশ, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। কিন্তু অদ্ভুতভাবে খাতার মাঝ বরাবর উপরদিকে সাদার উপর কালো কালিতে লেখা প্রশ্ন (যা ন্যাচারাল) আর নিচের দিকে কালো কাগজে সাদা কালিতে লেখা প্রশ্ন (যেমন ব্ল্যাকবোর্ডে)। একই প্রশ্ন কিন্তু। আমি অবাক হয়ে গেলাম। পরে তা নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। বরং নেগেটিভ মার্কিং আছে কিনা এটা জানার জন্য উদগ্রীব হলাম। কোনো ইনভিজিলেটর নেই। আমি একবার প্রেমদার সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু একবার আব্রাম ছাড়া আর কেউ হলে এল না। আমাকে ঘিরে অনেক পরিচিত ও অপরিচিত সুন্দরীরা বসেছেন। তারা বহু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন। তাতেই মজে গেলাম।

অত্যন্ত সহজ প্রশ্ন। ১৫ মিনিটে উত্তর দেওয়া হয়ে গেল। স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী সাদা পাতা কালো কালি নর্মাল অর্থাৎ উপরের অংশের কোশ্চেন পেপারেই উত্তর করলাম। আমার দেখাদেখি সব ম্যাডামরাও তাইই করল! আমার মাথায় খটকা থেকেই গেল।

খাতা জমা দেওয়ার পর বহুক্ষণ কেটে গেল। বিকেল গড়াতে চলল। এবার রেজাল্ট ঘোষণা হবে বলে আমরা অডিটোরিয়ামে গিয়ে বসলাম। জায়ান্ট স্ক্রীণে রেজাল্ট ফুটে উঠলঃ

প্রেমদাঃ ১৩ টি ভোট

আব্রামঃ ১১২ টি ভোট!

প্রায় পুরো অডিটোরিয়াম একসঙ্গে তীব্র প্রতিবাদ করে উঠল। কারণ এ ক্ষমতার কাছে প্রেমের পরাজয়! অন্তত আমার কাছে। আমার কলেজের বন্ধু নিলয় বলল, অর্ঘ্য, যতই তুমি লেখো, পড়ো, নাম্বার তোমার ১১২! অরূপরতন বলল, আহারে, অশুভ সংখ্যার ভোট সংকলন! বর্ত্মান বলল, ছাপ্পা নয়, এ ছাপার দোষ!

আমরা যাই হোক, চেঁচামিচি করছি। আব্রাম স্টেজে উঠে কয়েকবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে আবার কয়েকবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, যারা সাদা পাতায় কালো অক্ষরে লেখা কোশ্চেন সেটে এক্সাম দিয়েছ, তারা সবাই আমাকে ভোট দিয়েছ।

--ব্ল্যাকবোর্ড সেটে মার্ক করার হোয়াইনারই প্রোভাইড করা হয়নি। অর্পণদা বলল।

--কোনো ক্লিয়ার ইনসট্রাকশান ছিল না কেন? ইয়াসমিনদা।

হৈহল্লা পড়ে গেল। মাঞ্ছিনা ম্মাবোনা পড়ে গেল। আমি বললাম, এ আবার কী? এক্সামের মার্কস কোতো? র‍্যাঙ্কিং কি?

ইন্দ্রদীপদা বলল, আগে টস হয়েছিল কে সাদা কে কালো পাবে?

কোথাও প্রেমদাকে দেখা গেল না। সবাই প্রেমদার স্টেটমেন্ট চাইলো। সব মেয়েরা হায় হায় করতে লাগলো। রেজাল্ট পাস হয়ে গেল। আব্রাম কাঁধ ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে এসে বলল, বিজয় উৎসবের করব বলে কদিনের জন্য বাসটা নিচ্ছি। বাবা বলল, ও বাস আর ফেরত পাওয়া যাবে না।

ছৌরভ বলল, নৎ ভজেৎ!

স্কুলে এলে মিডিয়াকে চা খাওয়াতে অন্তত আমি তো রাজি নই।

কিন্তু স্কুলে মিডিয়া আসবে কেন!

আব্রামের ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে স্কুল পরিচালন কমিটির মিটিঙে ভয় দেখানোটা কাজ করল না! উলটে আব্রামকেই গুণ্ডা সমেত মিটিঙের মধ্যেই লেজ গুটিয়ে পলায়ন করতে হল শুধু যুক্তির তোড়ে… তখন আখতার (টিএমসির জেলা পরিষদ সদস্য) স্কুল চলাকালীন দোতলায় এসে বলল,

- বেরিয়ে যাও, স্কুলে তালা দেব! সব বাচ্চা ছেড়ে দাও! আজ মিড ডে মিল হবে না!

তারপর আমারই স্কুলে অন ডিউটি আমাকে মারতে এল! যার বাঁচানোর কথা সেই হেড দিদি নিজেই তাকে ডেকেছেন! মার খেতাম সেদিন! এ আর এমন কী অভয়া কাণ্ডের পর! আখতারের পিছনে ওর জনা ৬ ৭ ছেলে দাঁড়িয়েছিল! কেন যে মদিরাদি আটকাল! নাহলে পরের দিন মিডিয়া আবার মিনি অভয়া কাণ্ড দেখত! কীসের জোরে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান চলাকালীন কেউ সেটা বন্ধ করে দিতে পারে! কীভাবে একটি স্কুলে স্কুল চলাকালীন কেন্দ্রিয় মিড ডে মিল প্রকল্প বন্ধ থাকতে পারে!

ইন্দ্রদীপদা অপশন দিয়েছিল। প্রলয়দাও।

দুটো টিভি চ্যানেল বাইট নেবে ফোনে। তুমি কথা প্রিপেয়ার করে নাও। ভয় পেও না। আখতারেরও প্রতিপক্ষ আছে। সেও ৫ মিনিটে ৫০০ লোক জড়ো করতে পারে। আর করতে পারে না, করবে। মিডিয়া হওয়ার পর। পরশু স্কুলে সে যাবে। তোমাদের পক্ষে।

ব্যাপারটা তৃণমূল ভবন অবধি গড়াতে পারে।

ব্যাপারটা পাণ্ডে ও রায় বাড়ি অবধি গড়িয়েও ছিল।

ব্যাপারটা গড়িয়েছিল রাত আড়াইটে অবধি।

ব্যক্তিগতস্তরে আমি যোগাযোগ করি আজকাল (পূর্ব কর্মক্ষেত্র) ও এইসময় (প্রিয় দাদার কর্মস্থল) এর সঙ্গে। যাদবপুর ও অন্যান্য প্রফেসরদের সঙ্গে। সে বিনিদ্র রাত আমার আর আখতারের ছিল। কিন্তু সকলেই আমায় শান্ত হতে বলে। যতক্ষণ না বাবা…

কিন্তু তারপরও তবুও সেই বাবা’ই বললেন, তোমার লড়াইটা কেকার ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে, আখতারের বিরুদ্ধে নয়। আর সকল শত্রুকেই, সে যতই বড় শত্রু হোক একবার ক্ষমা করে দিতে হয়। এবং আমি বরাবর নিজের ক্ষমতায় লড়ার পক্ষপাতী, কারো ব্যাক আপের ভরসায় নয়। এবং আমি কারো স্বার্থসিদ্ধির ক্রীড়নক হতেও রাজি নই। “শত্রুর শত্রু আমার মিত্র”তায় শুধু একটাই কন্ডিশন আছে, বন্ধুত্বের আনকন্ডিশনাল ভালোবাসা নেই। অ্যান্ড আই লাভ অর্পণদা।

#

#

 

যানবাহন অধ্যায়। পরিবেশ বই।

- গাড়ির কটা চাকা?

- চারটে।

- ট্রেনের কটা চাকা?

- চারটে।

- ধুর, অসংখ্য স্যার।

- তাহলে পাম্প দেয় কীকরে?? (এটি চুটকি নয়, বাস্তব ক্লাসরুম।)

- ঠিক আছে, কালকে গুণে এসে বলবে।

- স্যার, অগুনতি চুলের মতো।

- হ্যাঁরে, তোর মাথায় কটা চুল?

- স্যার, দেড় হাজার হবে।

- বাবা, তোকে কে গুণে দিল?

- আরো কম হবে, না স্যার।

- কালকের হোমওয়ার্ক CWSN মইদুলের মাথায় কটা চুল গুণে বলা। নাহলে দেওয়াল বেয়ে উঠতে হবে।

 

Play –> Played

Learn –> Learned

এই একই নিয়মে তাহলে Go –> Goed!

 

এতো কিছুই নয়, জাহিরার ফুল, খরগোশ, গোরু, আকাশ সব কিছুর রং কালো। এবং ওর হিউম্যান ড্রয়িংগুলোয় কেউ অ্যাজ ইউজুয়াল রোগা নয়, মোটা! ওর হাতের লেখায় কোনো দাড়ি কমা থাকে না। যেন উহারা উত্তর আধুনিক গদ্য। চিন্তা হয়। মেয়েটি যত বড়ো হবে, আমার ক্লিনিকাল আই বলছে, আরো অ্যাবনর্মাল হবে।

#

#

সময় এসেছিল সময়ে একটা, যখন ঠাকুরের “তোমাদের চৈতন্য হোক” ছবি বিকৃতবোধ জাগাতো মনে। অপবিত্র বিকৃত হয়ে গিয়েছিলেন দিব্য ত্রয়ীর ছবি। তখন আমাকে নিয়ে ঠাকুর আর মা’র তীব্র দাম্পত্যকলহ হতো। মা কিছুতেই ঠাকুরকে আমার মনে বিকৃত হতে দেবেন না। মাকে বারবার প্রার্থনা করেছিলাম, বাঙালি থাকবো না যদি ঠাকুরের ছবি মানসে বিকৃত হয়। শেষাবধি ডাকাতপড়া তামসিক ডোপামিন ভক্তিতে ঠাকুরের কাছে গিয়ে অপরোক্ষ অনুভূতি চাইলাম। দেখলাম ঠাকুরের কাঁধ ঝুঁকে পড়েছে। বুঝলাম, এই মাহেন্দ্রক্ষণেই তামসিক ভক্তির তামরসের নেশা কেটে গেল। কিছুদিন পর সব যথাযথ, সব স্বাভাবিক। আমার সব সিদ্ধাই কেটে গেল। শুষে নিল ছৌ।

#

#

অব তো শাওন তুমে জানে না দুঙ্গি/সদা রঙ্গিলে মম মধুশাল/মৃগনাভতে!

যশরাজের গলায় শুনেছিলাম। এখন কোন রাগ মনে পড়ছে না। হয়তো মিয়া কি মলহার। ভীমসেন মেশানো গাম্ভীর্যে। সুরটা রিনরিন করছে কালবৈশাখী। রাগের গ্রামারও জানি না, অনুরাগও জানি না। শুনি। সুখশ্রাব্য হর্ষের রাগগুলি শুনতে শুনতে সুর মুখস্থ হয়ে গেছে। তবু চালাকি আছে! ডিফারেন্স বিটুইন অরডিনারি ম্যান এন্ড এক্সট্রা অর্ডিনারি ম্যান লাই্স ইন্টু দ্য ডিগ্রির অফ কনসেনট্রেশন। রবীন্দ্র বা বিদেশী ব্যান্ড … পুরো কথা শোনার, ফলো করার সচেতনার আলসেমি! তাই রাগ ও তার সুরবাহার। বুঁদ হয়ে থাকি নিখিলে, আলি আকবরে, চৌরাশিয়ায়, বিসমিল্লাহি রহিম, বিলায়েত, সাহিদ পারভেজে।

- কিন্তু এটা প্রচন্ড রাগ!

সাইকিয়াট্রিস্ট অবাক হয়ে শুনলো যে, আমার খেতে বসে ডালের চাখনা কলকাতা ডার্বি আর মাছের ঝোলের আলু ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল! ঝটপট একগাদা অবশেসনের ওষুধ লিখে দিল। তবুও আজও দ্বিতীয় পদে মৃগনাভতে! কোথায় যেন শুনেছি। যশরাজ আর কিশোরী আমনকর বড্ড বেশি শোয়ি! বরং বেসিক ফান্ডার পিয়া কী নজরিয়া – ইমন - ভীমসেন যোশি – সাঁথিয়া সাঁথিয়া সুলভ বা নচিকেতার পাগলা জগাই সুলভ প্রথম লাইনের মেলোডির রহমান শুনছো? আমার আছে মৃগনাভি সভ্যতা! নাম শুনেছো?

মাঃ গ্রীক রোমান মেসোপটেমিয়া মিশরীয় হরপ্পা শুনেছি। মৃগনাভি আবার কোন সভ্যতা?

- একটি কাল্পনিক সভ্যতা যারা মার্গ সংগীত আবিষ্কার করেছিল। দৃশ্য বর্ণ গন্ধ শব্দ পরস্পর আলাদা কিছু নয়। শব্দের রঙ আছে, বর্ণের দৃশ্য আছে, দৃশ্যের গন্ধ আছে, বর্ণের স্বর আছে ব্যঞ্জন আছে, রামধনু আছে, জাতিগোত্র আছে, বর্ণের জাষ্ট কী নেই বলো তো? শব্দ ও আলোক পরিপূরক। ভারতীয় মার্গ সংগীত তো শব্দ আর আলোর তীব্রতার থিসিস পেপার। ওয়েদার, ক্লাইমেট, স্পর্শের শীতে তাপে নাতি ও নেতিতে সকলই শব্দ তন্মাত্র। এবং বিশ্বাস করেন বিলায়েৎ খাঁ, ভৈরব থেকে সকল রাগ ও ভৈরবী থেকে সকল রাগিনীর উদ্ভব। ঠকে গেছি ফেসবুক ফিড ও ছোটবেলার গানের মাষ্টার ভুল শিখিয়েছিল যে, “জাগো মোহন পেয়ারে” ভৈরবী! পড়ার মাষ্টার ভুল শিখিয়েছিল যে, একমাত্র কমা দিয়েই বাক্য কন্টিনিউ হয়। এরর। ফোর্সড এরর! মিসগাইডেড, মিসইনফ্লুয়েন্সড্। নষ্ট আত্মার LED, তিরচ্ছানবিজ্জা, হনুমান চরিত মানস বা সূত্র হনুমান, বইয়ের তিন চারটি নামকরণ একটি মুদ্রাদোষ আমার। দেখেছি নাম ও প্রথম প্যারাগ্রাফ পাল্টিয়ে একই লেখা বহু ম্যাগাজিনে ছাপা যায়। আর সম্পূর্ণ ভাঁওতাবাজির কাউন্সিলারকে বললাম…

- কোটস তো মুঝে ভি আতা হ্যায়। জ্যায়সে ডর কি আগে জিত হ্যায়, কভি কভি হারকে কুছ পানা পরতা হ্যায়, হারকে জিতনে ওয়ালো কো বাজিগর কহতে হ্যায়, জো জিতা ওহি সিকন্দর … উস কি মা কি ভোসড়া।

১৭ তে প্রেমে পাগল আমাকে দেখে এক কাউন্সিলর বাবাকে বলেছিলেন, আগে সুস্থ হোক, তারপর তো পড়াশুনা! পেলাম ২০০৩-এ H.S.-এ ৭০%। সাইকিয়াট্রিস্টরা অত্যাচার করে করে ভুল ওষুধ দিয়ে দিয়ে জোর করে সাইকোটিক বানিয়েছে। বলেছি, সন্দেহ হয় লোকে ঠকায়, বেশি দাম নিচ্ছে। বলেছে, আমার ফিজটা না ১০০ টাকা বেড়ে গেছে! অগর ইয়ে বাত হুয়া তো দো বাত হোতি হ্যায়, ১ হুয়া তো ঠিক হ্যায়, মগর ২ হুয়া তো দো বাত হোতি হ্যায়… স্টাইলে ৪৫ মিনিট ধরে চেটে এক মহিলা ৩০০ টাকা ফিজ নিয়েছে ৯০০ টাকা! একজন কাউন্সিলারের ফিজ ৯০০ টাকা! কেউ কেউ নানাভাবে বলাবার চেষ্টা করিয়েছে যে, আমি যেন বলি যে আমি আসলে বি.টেক নই। বা আমি পড়াশুনায় বেশ ভালো বিশ্বাসই করতে চায়নি কেউ কেউ। আমি এমন রিহ্যাব জানি যেখানে সুস্থ মানুষকে আগে পৈশাচিক-পাশবিক অত্যাচার করে আগে সাইকোটিক বানিয়ে তারপর তার চিকিৎসা শুরু করা হয় স্রেফ টাকার জন্য! যেখানে ডোপামিন ইনহিবিটর দেওয়ার খুব খুউব দরকার সেখানে ব্যক্তিগত রিরাংসা মেটাতে দেওয়া হয় স্ট্রং ডোপামিন সিরাপ! শুধু দেওয়া হয় না স্লিপিং পিল। দেওয়া হয় না আশ্বাস। দেওয়া হয় শুধু ভার্বাল থ্রেট। হোমলেসনেস ট্রিগার করলে বলা হয় “মনে হয় বেশ্যাপল্লী চলে গিয়েছিল”! বেসিক ডিগনিটিটুকু কেড়ে নেওয়া হয়।

এই হল কলকাতার বর্তমান মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থার হালহকিকত। এ সমাজে চাইল্ড রেপিস্টের সম্মান আছে, মাতৃ হন্তারকের সম্মান আছে, সমাজবিরোধী সন্ত্রাসবাদীদের সম্মান আছে, নেই শুধু মানসিক রোগীদের! অদ্ভুত উন্মাদ সমাজ এই…

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন