![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৭ |
বিদেহীঘটিত
মুম্বাই নিবাসী পার্সি তরুণ মঈন এলিফ্যান্টা গুহায় যাবার পথে গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার ফেরিঘাটে অপেক্ষারত এনরিকো নামের এক বিদেশিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তাদের মধ্যে আলাপ হয়। মাঝবয়সী মহিলা নিজেকে পর্যটক বলে পরিচয় দেয় এবং মঈনকে এলিফ্যান্টা গুহায় তার যাত্রাসঙ্গী হতে অনুরোধ করে।
মহিলা একা, বয়স মঈনের চাইতে অনেক বেশি। সুস্বাস্থ্য ও সুদর্শন চেহারার মঈন কথাবার্তায় সতত অভিজাত শ্রেণীর প্রতিনিধিস্বরূপ - একথা শুনে তার মুখে কোন ভাবান্তর দেখা যায়নি। কিন্ত মহিলার বাচনভঙ্গি ও চোখের ভাষায় এমন কিছু ছিল - মঈন একপ্রকার রাজি হয়ে যায়। ব্যাপারটা এনরিকোর নজর এড়ায়নি কিন্তু তার ঠোঁটে ভেসে উঠেই মিলিয়ে যাওয়া সুক্ষ হাসিটা মঈনের নজর এড়িয়ে গেল।
এলিফ্যান্টায় পৌঁছোবার পর মঈন মহিলার পিছনে এবং আমি মহিলার সুক্ষ হাসিটির পিছু নিলাম। স্পিডবোট থেকে নেমে এনরিকো মঈনের বাঁদিকে দাঁড়ায় এবং তার বাঁ হাতের তালুর উপর মঈনের ডানহাত রেখে - মৃদু অথচ কঠিন উচ্চারণে - যা একবার শুনলে মানুষের গা হিম হয়ে যায় – মঈনকে সেটা চেপে ধরতে বলে। তখন আমি লক্ষ্য করি, এনরিকোর বাঁ-হাতের শিরাগুলোর রঙ অবিকল হাইড্রেটেড কপার সালফেটের মত নীলচে সবুজ। মহিলার হাতে হাত রাখতেই মঈনের সমস্ত শরীরের ভিতর দিয়ে যেন বিদ্যুত খেলে গেল, এমনতর একটা শীতল বোধে মঈনের চোখ ঘুমে জড়িয়ে এল। চেতনার এই আদান প্রদানের সাক্ষী কিন্তু এক বিদেহী ছাড়া আর কেউ রইল না।
এক নম্বর গুহায় যেখানে বিশালাকার শিবমূর্তি আছে সেখানে পৌঁছে এনরিকো মঈনের হাত ছাড়িয়ে নেয় এবং নিজেও যেন একটা নিশ্চল পাথর, এমত দাঁড়িয়ে পড়ে। মঈনকে বলে, তুমি চলে যাও, আমি এখন এখানে থাকব। হতভম্ব মঈন পালিয়ে বাঁচল।
গুহা থেকে বেরিয়ে মঈন একটা খাড়াই পাহাড়ের গা বেয়ে টলতে টলতে উঠতে থাকে এবং একটা বেদি দেখে সেখানে বসে পড়ে। পরে ওদের দুজনকে একটা পরিত্যক্ত গুহায় দেখা যায়। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তেমন ছিল না। প্রকৃত ঘটনা, যা দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায় সেটা এরকম - প্রায় ঘুমিয়ে পড়া মঈন হঠাৎ টের পেল এনরিকো এক হিংস্র বাঘিনীর মত তার উপর উপগত এবং দুজনে চূড়ান্ত সঙ্গমে লিপ্ত। এনরিকোর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার আপ্রাণ প্রয়াস মঈনের ব্যর্থ হওয়ায় সে অসাড় অবস্থায় পড়ে রইলো। বলাই বাহুল্য, বেচারা বিদেহী পরবর্তী দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
পাঁচটার শেষ ফেরিতে মঈন ফেরেনি। এনরিকোকে একাই ফিরতে হল। দু চারজন পর্যটক যারা এনরিকোকে সকালে মঈনের সাথে দেখেছিল তাদের একজন সাহস করে এ কথা তুলতেই এনরিকো মৃদু হেসে বলে মঈনের তাড়া থাকায় সে আগেই ফিরে গেছে।
সেদিন রাতেই বাড়ির লোক মঈনের খোঁজ
করে কিন্তু ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় কিছু জানা যায়নি।
দিন তিনেক পর এলিফ্যান্টার সেই
গুহাটি থেকে একটি মৃতদেহ পাওয়া যায়, যা মঈনের বাড়ির লোকও সনাক্ত করতে পারেনি। ঘটনা
এনরিকোর অগোচরেই থেকে যায়।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন