কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

শতরূপা সান্যাল

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৭


আলবেলা মৌসম

রুমি আমাদের খেলার সাথি। রোজ বিকেলে খেলার মাঠে রুমি খেলতে আসত। আমরা জোড় বেঁধে বেঁধে একটা মজার খেলা খেলতাম। আমি সব সময় চাইতাম রুমি আমার জুটি হোক। তখন কতই বা আমাদের বয়স। ছয় কি সাত হবে।

রুমি ছিল সাহেবদের মত সাদা। চুল, চোখের পাতা, ভুরু সবই সাদা। লাল টুকটুকে ফ্রক পরে ওকে পরীর মত লাগতো। আমরা বলতাম রুমিমেম।

আমার মনের রাজ‍্যের প্রথম অধিশ্বরী ছিল রুমি। একবার মাঠে আছাড় খেয়ে পড়ে আমার হাঁটু কপাল সব কেটে ছড়ে এক-সা। রুমিমেম ওর টুকটুকে নরম হাতে আমার ক্ষতগুলো মুছে দিয়েছিল। আমি মনে মনে বলেছিলাম, বড় হয়ে আমি রুমিকেই বিয়ে করব।

রুমি আর আমি একসঙ্গে বড় হচ্ছিলাম। সবাই বলত, রুমিমেম আসলে ফর্সা না। ও অ‍্যালবিনো। এটা নাকি এক ধরনের জন্মগত সমস্যা। অথচ আমি রুমির মধ্যে কোন সমস্যা তো দেখিনি! একদিনের জ্বর পর্যন্ত হয়নি ওর। অ‍্যালবিনো শব্দটা শুনে থেকে মনের মধ্যে একটা গান বাজতো – “আলবেলা মৌসম, কহতে হ‍্যায় স্বাগতম”। আমি গাইতাম – “অ‍্যালবিনো মৌসম, কহতে হ‍্যায় স্বাগতম”। রুমিমেম হি হি করে হাসত।

তারপর তো আমার শুরু হল উচ্চ শিক্ষার জন্যে দূরে দূরে থাকা। কলেজ, হস্টেল, পরীক্ষার চাপ, বিদেশে যাওয়া। সত‍্যি সত্যি মেমসাহেবদের দেশে এসে রেবেকার সাথে বন্ধুত্ব হল। রেবেকা খাঁটি মেম। আমার বৌ হয়ে গেল একদিন ।

বৌ নিয়ে অনেক বছর পর দেশে ফিরলাম। মা বাবা নেই। পাড়াটাও বদলে গেছে। বাড়িটা বিক্রি করে দিতেই আমার আসা। পাড়ার বড়রা দেখা করতে এলো। আমাদের বন্ধু দলের মেয়েদের সবারই বিয়ে হয়ে সংসার হয়েছে। দূরে দূরে চলে গেছে তারা। সমবয়সী ছেলেরাও সকলেই প্রতিষ্ঠিত। কেউই আর এখানে থাকে না। শুধু রুমিই এখনো এখানে রয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ও বিয়ে থা করেনি?

উত্তর পেলাম, ওর বিয়ে হয়নি। বাপ চেষ্টা করেছিল অনেক। আসলে, ও তো অ‍্যালবিনো…

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু কিছুই যেন কানে ঢুকছিল না। একটা ছবি ভেসে উঠছিল মনে, রুমিমেম হিহি করে হাসছে আর আমি গাইছি - “অ‍্যালবিনো মৌসম কহতে হ‍্যায় স্বাগতম…”


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন