![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৫ |
উন্মুক্ত গোপন
পেসমেকার ঠিকঠাক বসে গেছে। অপারেশন সাকসেসফুল। কিছুক্ষণ বাদেই বেডে দেবে, অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এমনই জানালেন ডাক্তার অরবিন্দ চৌধুরী।
-- ওর
জ্ঞান ফিরেছে তো ডাক্তারবাবু?
-- পেশেন্টকে
অজ্ঞান করা হয়নি। লোকাল অ্যানাসথেসিয়া করে অপারেশন করা হয়েছে। নো প্রবলেম।
খবরটা শুনে গত দু ঘন্টার দমবন্ধ করা অবস্থাটা হালকা হয়ে উঠল তানিয়ার। সে ভাবল, বেডে দেওয়ার পর রাজীবের সঙ্গে দেখা করে বাইরে বেরিয়ে একটু টিফিন করে আসবে।
তার ছোট হাতব্যাগটার ভিতরে ফোনটা গোঁ গোঁ করতেই তানিয়া ব্যাগ খুলে দেখল
ফোনটা সাইলেন্ট মোডে ছিল। পাঁচখানা মিসড্ কল হয়ে রয়েছে। পাঁচখানা কলই করেছে প্রদীপ্ত।
ফোনটা রিসিভ করবে কিনা ভাবছিল। শেষপর্যন্ত ফোনটা রিসিভ করে বলল, হ্যাঁ বলো।
-- কি
ব্যাপার? কতবার
ফোন করে যাচ্ছি অথচ ফোনটা রিসিভ করছ না কেন?
-- সাইলেন্ট
মোডে ছিল তাই ধরতে পারিনি।
-- ফোনের
সাথে সাথে তুমিও কি সাইলেন্ট হয়ে যাচ্ছ নাকি!
-- প্রদীপ্ত, ডোন্ট বী
সিলি!
তানিয়ার কন্ঠস্বরে এক ঘোলা তরঙ্গের ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ পেল প্রদীপ্ত।
একটু থমকে গিয়ে বলল,
-- সরি
ম্যাডাম, সরি।
তা এবার বলো তো তোমার স্বামীর কী হয়েছিল? বাঁচবে নাকি...
-- প্রদীপ্ত
ইউ শাটআপ!
তানিয়া ফোনটা কেটে দিল। তার কপালের দুদিকের শিরাগুলো দপদপ করে উঠল।
বেশ কিছুদিন পর তানিয়া তার বুকের ভিতর একধরনের তীব্র চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল। সে বুঝে উঠতে পারছে না, এই ব্যথা ভোরবেলা রাজীব যখন বুকের তীব্র যন্ত্রণায় অসহায়ের মতো বিছানায় তার পাশেই শুয়ে শুয়ে কাৎরে উঠে বলেছিল, তানি, আমি আর পারছি না, আমাকে বাঁচাও, তার জন্য? নাকি কিছুক্ষণ আগে প্রদীপ্তর অচেনা নখ দাঁত বেরিয়ে আসার যে পরিচয় সে পেল, তার জন্য?
হঠাৎই তার সামনে দিয়ে ট্রলিতে শুইয়ে রাজীবকে বেডে দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে যেতে একজন নার্স বলল, ম্যাডাম আসুন, পেশেন্টকে বেডে দেওয়া হবে। তানিয়া ট্রলির পিছন পিছন যেতে থাকে। বেডের কাছে গিয়ে ট্রলিটা দাঁড়াতেই দুজন মেল-নার্স রাজীবকে তুলে বেডে শুইয়ে দিল। নার্সরা চলে যেতেই তানিয়া রাজীবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছো এখন?
তানিয়ার প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষন ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে থেকে
একটু মুচকি হেসে বলল,
ভালো। প্রদীপ্তকে জানিয়েছ তো?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন