কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

ডঃ মারী লুই ফন ফ্রানৎস

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

ম্রিলের কাহিনী (A tale of Mrile: Africa)

মূলগ্রন্থঃ রূপকথায় পুরাবিন্যাসের ধাঁচেরা (Archetypal patterns in fairy tales)

ডঃ মারী লুই ফন ফ্রানৎস

(অনুবাদঃ মৌমিতা ঘোষ)

 


    

লেখক পরিচিতিঃ মারী লুই ফন ফ্রানৎস ইয়ুঙের সবথেকে ঘনিষ্ঠতম বিশ্বস্ত সহযোগী ও শিষ্যা। ইয়ুঙিয়ান মনস্তত্বের বহু প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। রূপকথা নিয়ে ইয়ুঙের রচনাটি হল The Phenomenology of the Spirit in Fairytales. ইয়ঙ সর্বদাই মনে করতেন রূপকথা যৌথ নির্জ্ঞানকে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করার এক অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। রূপকথার মধ্যে বহুপ্রাচীনকাল থেকে প্রবাহিত চেতন ও অবচেতন অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। রূপকথার মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণটি বেশ অভিনব। এই গ্রন্থে সাতটি বিভিন্ন দেশের রূপকথা ও তার মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন ফন ফ্রানৎস। তার মধ্যে আফ্রিকান রূপকথাটি বেছে নিয়ে অনুবাদ করা গেল। এই গ্রন্থটি ছাড়াও ফ ফ্রানৎসের রূপকথার উপর উল্লেখযোগ্য বই, The psychological meaning of Redemption Motifs in Fairy tales, Mother Archetypes in Fairytales etc

এবার একটি আফ্রিকান গল্পের উপর আমরা নজর দেব। এটিম্রিলের গল্প’ রূপে পরিচিত। পূর্ব আফ্রিকার বান্টুদের একটি উপজাতি অঙ্গের মধ্যে এটি প্রচলিত। গল্পটি অনেকটা নিম্নরূপ:

জনৈক ব্যক্তির তিনটি পুত্র সন্তান ছিল। এদের মধ্যে জ্যেষ্ঠপুত্র যার নাম ছিল ম্রিলে। সে তার মায়ের সাথে কলোকসিয়া বীজ সংগ্রহে যেত। এইরকম একপ্রকার বীজ দেখে ম্রিলে বলেছিল “আরে এ একটা বীজ নাকি? এটা তো আমার ছোট ভাইটির মত মিষ্টি।” ম্রিলের মা জিজ্ঞাসা করল “কীভাবে একটা বীজ একটি মানব শিশুর মত সুন্দর হতে পারে?” কিন্তু ম্রিলে একটি গাছের কোটরে বীজটাকে লুকিয়ে ফেলে বলল “মসুরা কিরিবিরি চকামবিঙ্গো নকাসঙ্গা”। আর তার মায়ের সাথে বাড়ি ফিরে গেল । আসলে সে কী বলল তা বোঝা অসম্ভব। এমনকি তার কথা যে বোঝে তার পক্ষেও তার এই কথা বোঝা দুরূহ।

পরদিন ম্রিলে ঐ গাছের কাছে গিয়ে কোটরে উঁকি মেরে দেখল যে, বীজটি সত্যিই একটি ছোট্ট শিশুতে পরিণত হয়েছে। এবার থেকে ম্রিলে তার মায়ের রাঁধা খাবারের যেটুকু অংশ তার প্রাপ্য তা গোপনে দিয়ে আসতে লাগল ঐ শিশুটিকে। এতে সে নিজে দিনে দিনে রোগা হয়ে যেতে লাগল। তা দেখে তার মাতা পিতা তার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠল, আর অবাক হয়ে ভাবতে লাগল খাবারটা যাচ্ছে কোথায়?

ম্রিলের ছোট ভাইরা দেখল যে সে খাবার লুকাচ্ছে, তাই তারা একদিন তার পিছু নিয়ে দেখল সে খাবার কী করছে? তারা দেখল ম্রিলে তার খাবার একটি শিশুকে দিয়ে দিচ্ছে আর তারা মা বাবাকে জানাল “সে একটি ফাঁপা গাছের কাছে গিয়ে সেই কোটরে খাবার দিচ্ছে এবং মনে হয় সেখানে একটি ছোট বাচ্চা আছে”। তারপর তারা তাদের মা’কে সেখানে নিয়ে গেল এবং মা দেখল যে সত্যই সেখানে ঐ গাছটির ভিতরে একটি শিশু আছে। তার মা সেটিকে হত্যা করল।

এত কিছু ম্রিলে জানত না। তাই সে পরেরবারও গাছের কাছে খাবার নিয়ে গেল আর শিশুটিকে মৃত দেখল। বাড়ি ফিরে সে কাঁদতে আরম্ভ করল। তার পরিবারের লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা “ম্রিলে তুমি কাঁদছ কেন, সে শুধুমাত্র উত্তরে বলল “উফ! আমার চোখে ধোঁয়া লেগেছে।” বাড়ির লোকেরা তাকে বলল ঘরের অন্য দিকে গিয়ে বসতে। সে তাই করল কিন্তু একটানা কেঁদে চলল। সে এখনও কাউকে তার কাঁদার কারণ বলতে পারল না। এখন সবাই বলল, “যাও, বাবার চেয়ারটা নিয়ে উঠানে গিয়ে বোসো”।

এবার সে তার পিতার চেয়ার নিয়ে তার কুঁড়ে ঘরের বাইরে গিয়ে বসল আর বলল “চেয়ার চেয়ার চেয়ার তুমি দড়ির মত লম্বা হয়ে উপর দিকে উঠে যাও যেমন দড়িতে আমার বাবা মধুভাণ্ড ঝোলায় গাছ থেকে”। চেয়ারটা প্রায় ৫০ মিটার উপরে উঠে গেল। তারপর থেমে গেল। এবার ম্রিলে আবার ঐ একই কথা বলল চেয়ারের উদ্দেশ্যে। এইসময় তার একটি ছোট ভাই তাকে দেখতে পেল। সে সকলকে ডাক দিল। সে চিৎকার করে বলতে লাগল যে ম্রিলে স্বর্গে চলে যাচ্ছে।

তার মা বাইরে এসে বলল, “ফিরে এসো, ফিরে এসো ম্রিলে, বাছা আমার!” তার মা বার ছয়েক এইভাবে তাকে ডাকল। কিন্তু ম্রিলে জবাব দিল “আমি ফিরব না, আমি ফিরব না মা, আমি আর ফিরব না, আর আমি ফিরব না”। তারপর তার ছোট ভাইরা এসে বলল “ম্রিলে ফিরে এস, ঘরে ফিরে এসো!” কিন্তু ম্রিলে উত্তর করলে “আমি আর কিছুতেই ফিরব না।” তারপর তার বাবা এসে বলল “ম্রিলে এই যে খাবার! এই তো তোমার খাবার।” কিন্তু ম্রিলে উত্তর করল “আমি তো আর খাবার চাই না বাবা। আমি আর খাবার চাই না”। তারপর তার জাতির সব লোক এসে বলল, “ম্রিলে তুমি তোমার ঘরে ফিরে এসো”। তার কাকা এসে ডাক দিল “ম্রিলে, তুমি তোমার ঘরে ফিরে এসো”! কিন্তু ম্রিলের সেই এক বক্তব্য “আমি ফিরব না কাকা, আমি আর কিছুতেই ফিরব না”। আর তাই সে হারিয়ে গেল, তাকে আর দেখা গেল না।

এরপর ম্রিলে কাঠুরিয়া, দানাশস্য চাষি, গোপালক প্রভৃতি বহুজনের সাক্ষাৎ-সান্নিধ্যে এল। সে তাদের চন্দ্রলোকের রাজার কাছে যাওয়ার পথ কোথায় তা জিজ্ঞেস করল। উত্তরে তারা বলল, যদি সে তাদের কাজে একটু করে সহায়তা করে তবে তারা তাকে সেই রাস্তা দেখিয়ে দেবে। ম্রিলে সেই মত কাজ করল আর এইসব লোকের সহায়তায় সে তথাকথিত চন্দ্র-রাজার কাছে যাবার পথ ধীরে ধীরে জেনে গেল।

চন্দ্র রাজার কাছে এসে ম্রিলে দেখতে পেল, এখানকার লোকেরা আগুনে পাক না করা খাবার খাচ্ছে। তাই সে জিজ্ঞেস করল “কেন তোমরা আগুন দিয়ে রান্না করা খাবার খাও না”? তারা বলল “আগুন আবার কী বস্তু?” শুনে ম্রিলে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল আগুন সম্পর্কে তোমরা কিছুই কি জানো না?” “আগুন দিয়ে রান্না করা খাবার অনেক বেশি সুস্বাদু”। তাই! চন্দ্র রাজা তাকে বলল “আমরা তোমাকে অনেক গবাদি পশু দেব, যদি তুমি আমাদের অগ্নি সহযোগে কিভাবে রান্না করতে হয় শেখাও”। তখন ম্রিলে সেখানকার লোকজনকে অনেক কাঠ জোগাড় করে আনতে বলল। তারপর একটি ছিদ্র তৈরি করার যন্ত্র ঘষে ম্রিলে আগুন জ্বালাল। কয়েকটা কলা সেই আগুনে পুড়িয়ে ম্রিলে চন্দ্র রাজাকে তা দিয়ে বলল “এটা এখন আরও বেশি ভালো খেতে লাগছে না?” খেয়ে চন্দ্ররাজা ভারী খুশী হল। তারপর ম্রিলে সেখানকার লোকদের রান্না করা মাংস খেতে দিল। তারাও খুব খুশী হল খেয়ে। তারপর চন্দ্র-রাজা চন্দ্রলোকের সকল বাসিন্দাদের একত্রে ডেকে বলল “এটি অন্যলোকের মহৌষধ। এই ওষুধ তোমাদের লোকের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছে। সাধারণভাবে বিশ্বাস ছিল যে, মৃত ব্যক্তিদের আত্মারা চন্দ্রলোকে গতি পায়। এক্ষেত্রে ম্রিলের পূর্বপুরুষরাও চন্দ্রলোকের বাসিন্দা। তাই ম্রিলের থেকে প্রাপ্ত ওষুধ তার মৃত পূর্বপুরুষদের গণভুক্তদের লোকের ওষুধ।

তারপর চন্দ্রলোকের লোকেরা ম্রিলেকে প্রচুর সম্পদ দান করল। এবার ম্রিলের বাড়ির জন্য মন কেমন করা শুরু হল। সে বাড়ি ফিরতে চাইল। তাই সে চেষ্টা করল একদল পাখির মাধ্যমে তার জাতির লোকেদের তার আসার আগাম খবর পাঠাতে। পাখিরা এতে খুব মজাদার ভাবে কিচির মিচির করে উঠল। কিন্তু কোনও পাখি শেষ পর্যন্ত গেল না। শেষ পর্যন্ত একটি থ্রাশ পাখি রাজি হল আর সোজা নিচে গিয়ে ম্রিলের জাতির লোকদের জানাল “কাল বাদে পরশু ম্রিলে এখানে আসবে। এক চামচ চর্বি রেখে দিও তার জন্য”। এরপর থ্রাশ ফিরে এসে ম্রিলেকে বলল সে তার কাজ করেছে। কিন্তু ম্রিলে তা বিশ্বাস করল না। তাকে সে আবার পাঠালে। এবার পাখিটা ম্রিলের বাড়ি থেকে একটুকরো কাঠি মুখে করে তুলে আনল ম্রিলের বিশ্বাস উদ্রেক করতে।

এবার ম্রিলের বিশ্বাস হল যে পাখি গিয়ে তার জাতির লোকদের তার আসার আগাম খবর দিয়েছে। তাই সে বাড়ির পথে তার দীর্ঘ যাত্রা আরম্ভ করল। এই দীর্ঘ যাত্রায় সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। একটি ষাঁড় এসে তাকে বলল “যদি তুমি ক্লান্ত হয়ে যাও তবে আমি তোমায় পিঠে করে নিয়ে যাব। কিন্তু পরিবর্তে তুমি আমার জন্য কি করবে? তুমি কখনও আমার মাংস ভক্ষণ করবে যখন আমাকে জবাই করা হবে”? ম্রিলে উত্তর দিল “না। আমি কখনোই তোমার মাংস ভক্ষণ করব না”। এবার সে ষাঁড়ের পিঠে উঠে বসল আর গাইতে শুরু করল, “আমার অনেক সম্পদ হয়েছে। এই সমস্ত গবাদি পশুগুলি আমার”।

তারপর সে বাড়ি ফিরল। তার বাবা মা তাকে প্রচুর চর্বি মাংস ভোজন করাল। অনেক দিন পরে ষাঁড়টা বুড়ো হয়ে গেলে তার বাবা ষাঁড়টাকে জবাই করল। তার মা বলল “যে ষাঁড় নিয়ে এত ঝঞ্ঝাট পোয়ানো হল সেই ষাঁড়ের মাংস কি আমার ছেলে খাবে না?" তাই সে কিছু চর্বি আলাদা পাত্রে রেখে ময়দার সাথে মেখে খাদ্য প্রস্তুত করে ম্রিলেকে পরিবেশন করল। যেই ম্রিলে ঐ খাবারটি মুখে দিয়েছে মাংসটি বলে উঠলআমি তোমাকে আমার পিঠে করে বয়ে এনেছিলাম তবুও তুমি আমাকে ভক্ষণ করছ? যেমন তুমি আমাকে খাচ্ছ সে তুমিও একদিন ভক্ষ্য হবে”। ম্রিলে বলল “মা আমি তো তোমাকে ষাঁড়ের মাংস আমাকে দিতে মানা করেছিলাম”। কিন্তু যখন সে খাবারে দ্বিতীয় কামড় দিল তার একটা পা মাটিতে ডুবে গেল। সে তার মাকে একই কথা বলল। আবার সে খাবারটা খেতে গেল আর পুরোটা খেয়ে ফেলল। সহসা সে সম্পূর্ণভাবে মাটিতে নিমজ্জিত হল। এখানেই গল্পটা শেষ হল।

বিশ্লেষণঃ

গল্পের শুরুতেই দেখতে পেলাম যে ম্রিলে একটি কলোকসিয়া বীজ গোপনে সরিয়ে রেখে লুকিয়ে রাখল একটি গাছের কোটরে। জাদুমন্ত্রে সে এটাকে একটি শিশুতে রূপান্তরিত করল। তার মা সবকিছু জেনে ফেলে ঐ শিশুটাকে হত্যা করল। গল্পের সমগ্র ট্র্যাজেডি এই ঘটনার সূত্রে এগোতে লাগল।  

এইটিই এইধরনের গল্পের সার্বিক চরিত্র। অন্য একটি আফ্রিকান রূপকথা “শুভীনের গল্প”তেও আমরা একই জিনিস দেখতে পাই। সেই গল্পে শুভীনও গোপনে একটি শিশুকে জাদুমন্ত্রে জন্ম দেয়। তার বাবা মা ঐ শিশুটির খোঁজ পায়। যদিও এটিকে তারা হত্যা করে না। তারা এটিকে শুভীনের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। তারপর শুভীন এটার জন্য এত কান্নাকাটি আরম্ভ করল যে তার মা বাবা তাকে এটা খুঁজে দিল ও তার কাছে এটিকে রাখতে সম্মতি দিল। এই শিশুটি পরে নামজাদা ঔষধ-প্রদানকারী বৈদ্য এবং আরও পরে সে দেবতুল্য হয়ে উঠল। এইভাবে শুভীনের রূপকথা থেকে আমরা দেখতে পেলাম বীজ-শিশুর মধ্যে কতখানি সম্ভবনা থাকতে পারে।

সবার প্রথমে একথা আলোচিত হওয়া জরুরী যে এই ধরনের বিষয় শুধু আফ্রিকান রূপকথাতেই মেলে না। গ্রিসের একটি রূপকথা “ব্যাঙের গল্প”তেও আমরা দেখতে পাই যে একটি বালিকা গোপনে একটি ব্যাঙের খোঁজ পায়। সে এটিকে দুধ এনে খাওয়ায়। ব্যাঙটি তাকে মুকুট, অলঙ্কার, সোনা উপহার দেয়। মেয়েটির মা ব্যাঙের খোঁজ পেয়ে সেটিকে মেরে ফেলে। ফলত মেয়েটিও মারা যায়। সুতরাং, আবার দেখা যাচ্ছে যে মা তার সন্তানের গোপন ঐন্দ্রজালিক সঙ্গীকে মেরে ফেলছে। ম্রিলেই কেবলমাত্র ধীরে ধীরে বিশ্রীভাবে ফুরিয়ে গেল, শেষ হয়ে গেল কিন্তু ব্যাঙের গল্পের ব্যাঙকে হত্যা করার সাথে সাথে মেয়েটি মারা পড়ল। এই গল্পগুলি থেকে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে একটি শিশুর কী পরিণতি হতে পারে যার এরূপ কোনও মায়াময় সঙ্গী থাকে; তা সে বীজ-শিশু হোক বা ব্যাঙ হোক বা অন্য কোনো দৈবিক ঐন্দ্রজালিক সঙ্গী হোক।

একথা সবার জানা যে একটি ১ বা দেড় বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশু একটি পুতুল বা খেলনা জন্তুর সাথে একাত্ম বোধ করে। এটা যেন তাদের কাছে স্বর্গীয় ধন হয়ে ওঠে। এটা ছাড়া তারা ঘুমোতে পারে না। এটা কাছে না থাকলে তারা রাত্রে ভয় পেয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে এই বস্তুগুলি শৈশবের আত্মনের প্রথম প্রক্ষেপিত বস্তু প্রতিভূ (first projected object form) হলেও পরবর্তী কালে একটু বড় হয়ে  এদের আর খুব একটা মূল্য ঐ শিশুদের কাছে থাকে না। তারপর বেড়ে উঠতে উঠতে তাদের ঐ প্রিয় খেলনার স্থান নেয় অপর কোনো খেলনা। এইভাবে তারা যখন বিদ্যালয়ে যাবার বয়সে উপনীত হয় আর বুঝতে পারে যে ঐসব খেলনার মধ্যে কোনও প্রাণ নেই—তারা ‘মৃত’; তখন ঐ খেলনাগুলির প্রতি মায়ামুগ্ধতা কেটে যায় একেবারে। কিন্তু অতি শৈশবে সব শিশুরই একটা সম্পর্ক স্থাপিত হয় ঐরূপ খেলনাগুলির সঙ্গে যেন ওগুলি তাদের কাছে দৈবী মায়া, তাদের আত্মনের প্রতিভূ ,তাদের দ্বিতীয় সত্ত্বা। যেভাবে তাদের মা তাদের সাথে কথা বলে, তারাও সেইভাবে তাদের পুতুল বা টেডি বিয়ারের সঙ্গে কথা বলে, তারা তাদের সঙ্গে তাদের খাবার ভাগ করে নেয় এমনকি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাগুলিও তাদের বলে থাকে।

শিশুদের জীবনে এইরূপ দ্বিতীয় সত্ত্বার আবির্ভাব সর্বজনীন ও চিরন্তন। অনেকটা তা তাদের কোনও দৈবীসত্ত্বাযুক্ত ভাই বা বোন থাকার সামিল। এটা ঘটার কারণ যে শিশুরা যৌথ অবচেতনের জগতে বাস করে, যেহেতু তাদের আমিত্ব তখনও অবধি নির্মিত হয় না, ঐ অবচেতনের বস্তু—যা তাদের দ্বিতীয় সত্ত্বার মতো—তাদের কাছে সবকিছু হয়ে দাঁড়ায়। তাদের স্বপ্নগুলিও হয় পুরাবিন্যাসের(archetype) মতো। তাদের এক পা যেন কোনও শাশ্বত সত্ত্বার ঘরে রাখাই থাকে; তারা মোটেও সাধারণ মানুষ হয়ে জন্মায় না। তাদের শাশ্বত সত্ত্বাই তাদের সর্বদা ঘিরে রাখে। তাদের দ্বিতীয় সত্ত্বার পিছনে লুকিয়ে থাকে তাদের সময়হীন শাশ্বত ব্যক্তিত্ব।

আদিম সমাজগুলিতে বিশেষত আফ্রিকায়, বিশ্বাস করা হয় যে প্রতি ব্যক্তিরই একটি করে চিরন্তনী, অজর, অমর দ্বিতীয় সত্ত্বা আছে। অনেক সময় প্লাসেন্টা বা অমরাটিকে শিশুর দ্বিতীয় সত্ত্বা ধরা হয়। এটি জন্মের পর যখন বেরিয়ে আসে মায়ের শরীর থেকে তখন এটিকে রোদে শুকিয়ে শিশুর গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হয় মাদুলির মত। এটি শিশুটির দ্বিতীয় সত্ত্বা, যা কোনও ভৌতিক বা দৈবিক জগতে বাস করে তারই প্রতিরূপ; যা এখন তাকে সারা জীবন সঙ্গ দেবে। কিন্তু যদি কখনও কোনও ব্যক্তি তার দ্বিতীয় স্বরূপকে অরণ্য বা এরূপ কোনও নির্জন স্থানে সাক্ষাৎ করে তখন বুঝতে হবে যে তার মৃত্যু আসন্ন।

এইরকম বিশ্বাস ইউরোপেও প্রচলিত যে একটি মানুষের জীবিতাবস্থা তার অর্ধসত্ত্বা দিয়ে নির্মিত। বাকি অর্ধেক থাকে পিতৃলোকে। মৃত্যুকালে ওই সত্ত্বা এসে ডেকে নিয়ে যায় ইহলোকের সত্ত্বাটিকে। তখন ব্যক্তি দুই অর্ধসত্ত্বার পুনর্মিলন মারফৎ পূর্ণ সত্ত্বায় পরিণত হয়। তাই কোনও ব্যক্তি তার দ্বিতীয় সত্ত্বার সহিত সাক্ষাৎ করল মানেই, ইউরোপীয় বিশ্বাসানুযায়ী, তার মৃত্যু তার কাছে উপস্থিত।

এবার অদ্ভুতভাবে দেখা যাচ্ছে যে খেলনা নিয়ে খেলার বয়স পেরিয়ে যাবার পর ম্রিলে ঐ বীজ-শিশুর সৃষ্টি করছে। এর অর্থ ম্রিলে একটি অসাধারণ বালক যে পরবর্তীকালে  ওঝার ভুমিকা নিতে পারত। আদিম সমাজে দেখা গেছে পরবর্তী কালের বিখ্যাত বৈদ্য তার বাল্যকালে পরলোকের বা ভৌতিক জগতের সঙ্গে সংযোগ রাখতে পারত এবং আরো পরে তাদের দীক্ষা বা উপনয়নের সময় এইসব পরিচিত সাহায্যকারী বিদেহী আত্মার সঙ্গে তারা পুনরায় যোগাযোগ করত। এইসব বিদেহী আত্মাগণ হয়তো তাদের পূর্বপুরুষ কিংবা কোনও মায়াজগতের প্রাণী যাদের সাহায্য ছাড়া কেবলমাত্র নিজের উপর ভরসা করে ওঝা কিছুতেই রোগনিরাময়কারী আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারত না।

কিন্তু ওঝা/বৈদ্যের আত্মবিশ্বাস আর অহং আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই। কিন্তু এই ঔষধ প্রদায়করা আর পাঁচজনের থেকে ভিন্ন তাদের লব্ধ প্রতিভার জন্য যার দ্বারা সহজেই তারা অবচেতনের স্তরে লুকিয়ে থাকা সাহায্যকারী আত্মাদের আহ্বান করে একত্র করতে পারত। তাদের সাথে সম্বন্ধ নির্মাণ করতে পারত। এই যৌথ অবচেতনের সাথে আর পাঁচজন তাদের সকল সম্বন্ধ ঘুচিয়ে বসে বিদ্যালয়ে যাবার বয়সে আসার সাথে সাথে, যে বয়সে এসে পৌঁছলে বাচ্চারা আর কিছুতেই রূপকথা বা পুরাকথা শুনতে চায় না। এই সময় থেকে আত্মনিমগ্নতার (egocentrism) স্তরে যেতে থাকে তারা। এখন তারা যানবাহন, যন্ত্রপাতি এসবেই আকৃষ্ট হতে থাকে। তাদের রূপকথার জগৎ ছেড়ে তারা বড় হবার জগতে—বড়দের জগতে পা বাড়ায়।

এবার দেখা যায় বড় হবার পর, তাদের কেউ কেউ যা হোক করে অবচেতনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে। তাদের এই প্রবণতা কোনওভাবে বাধা প্রাপ্ত হলে অবচেতনার স্তর বিধ্বংসী চেহারা নিয়ে উপরে উঠে আসে আর তাদের উন্মাদ করে তোলে বা তাদের অকালমৃত্যু ঘটে।

পরলোকের সঙ্গে সংযোগের বিষয়টি কখনো ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি ভাগ্যাধীন। দুর্বল ব্যক্তিত্ব এর চাপ সইতে না পেরে উন্মাদ হয়ে যায় বা মারা যায়। কিন্তু দৃঢ় ব্যক্তিত্ব যাদের তারা এই দ্বৈত সত্ত্বার সাথে মানিয়ে নেয়। যারা পারে তারা যেমন এই পৃথিবীর সঙ্গে অনায়াস তেমন পরজগতে তাদের চিরন্তনী সত্ত্বার সম্বন্ধেও সর্বদা ওয়াকিবহাল।

বিখ্যাত মনোবিদ ইয়ুং তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছিলেন যে বাল্যকালে তিনি নিজে বুঝতে পারেন তাঁর নিজের মধ্যে দ্বৈত সত্ত্বা রয়েছে। যদি প্রথম সত্ত্বা তাঁর স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে পাঠরত বালক সত্ত্বা হয় তবে দ্বিতীয় সত্ত্বা তাঁর চিরন্তনী সত্ত্বা। আর এই চিরন্তনী সত্ত্বাকে অবিকৃত রেখেই বিদ্যালয়ে যাবার বয়সে তাঁর সাধারণ বালক সত্ত্বা—পার্থিব আমিবোধ গড়ে ওঠে।

এবার যদি দেখা যায় কোনও কোনও দ্বৈতসত্ত্বাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এমন একটি সমাজে জন্মেছে যারা বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসকে ধরে রাখে আর পরজগতে বিশ্বাস করে তবে সেই সমাজে ঐ দ্বৈত সত্ত্বা বজায় রাখা এমন কিছু ব্যাপার নয়। কিন্তু ম্রিলে বা শুভীন যে সমাজে জন্মেছে সেই সমাজের ব্যক্তিরা পরলোকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগকে সুনজরে দেখে না। শুভীনের গল্পে তাদের বলতে শোনা যায় যে কোনও সাধারণ মানুষ বীজ থেকে মানবশিশু সৃষ্টি করতে পারে না। এই ছেলেটি নির্ঘাত জাদু জানে। এতে লোকজন ভয় পেয়ে যায়। এমনকি তারা শুভীনকে হত্যা করতে চায়। ম্রিলের গল্পেও ম্রিলের মা-এর মনেও একই রকম ভীতি দেখা যায়। উপরে উপরে দেখলে মনে হয় তার পুত্রের না খাওয়া রোগা হয়ে যাওয়া নিয়ে সে উদ্বিগ্ন। গভীরে এর চাইতেও বেশি কিছু আছে। তিনিও বুঝেছিলেন মন্ত্রসৃষ্ট বাচ্চা ঘোর অমঙ্গলস্বরূপ। তাই তিনি ওটাকে হত্যা করেন।

পরজগৎ সম্বন্ধে আমাদের মধ্যেও একই বিষয় লক্ষ্য করা যায়। বাবা-মায়ের নিজেদের অবচেতনের সঙ্গে যোগাযোগ সংক্রান্ত কোনও ধারণা না থাকলে তারা তাদের সন্তানদের এই জাতীয় অতিসাধারণ আচরণ বুঝে উঠতে পারেন না; এবং তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। এ যেন সেই মুরগির গল্প যে অনায়াসে হাঁসের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায়; বাচ্চাদের নিয়ে খুশী মনে হ্রদের পারে চড়ে বেড়ায়; এর মধ্যে কোনও বাচ্চা জলে নেমে সাঁতরালে সে ভয়ঙ্কর মানসিক চাপে পড়ে যায় আর ভাবতে থাকে এতো হবার কথা নয়।

সারা জগৎ জুড়ে এই চলছে। অতিসাধারণ বাচ্চাদের বাবা মায়েরা তাদের ভগবৎপ্রদত্তক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের হয় অস্বাভাবিক ভাবে নয়তো ভাবে তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ। তারা ছুটে যায় শিশু রোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে। আমরা তাদের বলি “আপনাদের শিশু ঈশ্বরপ্রদত্তক্ষমতাসম্পন্ন অতিসাধারণ একটা প্রাণ, যে ক্ষমতা আপনাদের কারও মধ্যে নেই।”

ইংরেজিতে ব্ল্যাক শিপ বলে একটি প্রবাদ প্রতিম শব্দ আছে। কোনও পরিবারে সম্পূর্ণ অন্যরকম কোনও সদস্য থাকলে তাকে ব্ল্যাক শিপ বলা হয়। সমস্ত রকম পারিবারিক ব্যর্থতার দায় তার উপর চালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে হয়তো দেখা যায় ঐ সদস্য মোটেই খারাপ কোনও মানুষ নন। উল্টে পরিবারের অন্য সদস্যদের চাইতে অনেক বিষয়ে চৌখস। মানসিকতায় তাদের চাইতে অনেক উচ্চে থাকা এই সদস্যকে তারা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। সেভাবেই ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা সম্পন্ন শিশুকে বাবা মা তাদের নিজস্ব বিচার বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতে পারে না।

আফ্রিকান এই গল্পগুলিতে যে ব্যাপার দেখা যাচ্ছে তা হল আফ্রিকান পিতামাতাদের জাদুবিদ্যাসম্পর্কীয় ভীতি। শুভীনকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা সরাসরি জাদুকর ভেবেছিল। ম্রিলেকে ম্যাজিশিয়ান ভাবা হয়নি ঠিকই কিন্তু একইরকমের ভয় থেকেই তার মা বীজশিশুকে হত্যা করেছিল।

এইসব জাতিগুলি অলৌকিকগুলিকে কালা জাদু না শুভ জাদু তা মোটেও বিচার করত না। তাদের আপত্তি ছিল যে কোন প্রকার জাদুবিদ্যা নিয়েই। একইরকম ভয় আমাদেরও রয়েছে। অন্যরকমের কোনও শিশু জন্মালেই আমরা বিচার করি না তাঁর মধ্যে কোনও কিছুর অভাব রয়েছে না সে অনেক বেশি কিছু নিয়ে জন্মেছে।

অন্যরকম কোনও কিছু দেখলেই লোকজন ভয় পেয়ে যায়। তারা জানে না কীভাবে এই অন্যরকমকে তারা বুঝে উঠবে বা তার সাথে সম্বন্ধ পাতাবে। তারা প্রথম থেকেই তাই অন্যরকমকে নঞর্থক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। বহু ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের বাল্যকালে একই অবস্থা হয়েছিল।

একজন সুইস কাঠুরিয়ার জীবনী থেকে জানা যায় যে তিনি বাল্যকাল থেকেই গাছের গুঁড়ি কুঁদে অপূর্ব সব ভাস্কর্য্য নির্মাণ করতে পারতেন। তাঁর কৃষিজীবী পরিবার মোটেই ঐ ব্যাপারটা মেনে নিতে পারত না। তারা তাঁকে অলস ফাঁকিবাজ ইত্যাদি মনে করত যদিও তিনি উদয় অস্ত চাষের কাজে পরিশ্রম করতেন। তার কাছে সর্বদা একটা ছুরি থাকত। কাজের অবসরে তিনি ছুড়ি দিয়ে মনের মত শিল্প নির্মাণ করতেন কাঠ-কুটো যা পেতেন তার উপর। আর পাঁচজন নামী ভাস্করের মত নিজেকে বিশাল কিছু ভেবে বেলা এগারোটা অবধি বিছানায় শুয়ে থাকতে পারতেন না তিনি। উপরন্তু চাষের কাজের পরিশ্রম করতেন। অবসর পেলে কি সন্ধ্যায় কি রবিবার মেতে উঠতেন কাঠ খোদাইয়ে আর শুধুমাত্র এই কারণেই তাঁর পরিবার তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল।



১৯ বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে পালান। গ্যালোন স্ট্রীটের টগেনবার্গে একটি কৃষিজীবী পরিবারে স্থান পেলেন তিনি। তারা তাঁকে চাকর রূপে নিয়োগ করল ও পারিশ্রমিক দিতে থাকল। তারা তাঁর কাঠ খোদাইয়ের ঝোঁক সম্পর্কে জানলে তাঁকে খোদাই করার অনুমতি দেন। ২০ বছর বয়সে তিনি একটি ভগ্ন বাড়ি কেনেন। বিবাহ  করেন। বাড়িটিকে সারান আর বাড়ির যত আসবাবপত্র নিজের হাতে খোদাই করে নিজ হাতে নির্মাণ করেন। এই ভাবে ভাস্কর্য্য শিল্পী রূপে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। আজীবন কঠোর পরিশ্রম তিনি করেছেন। কিন্তু তাঁর স্বাধীনতা ছিল সৃষ্টিকর্মে। ক্রমে তিনি সুইজারল্যান্ডের নামজাদা শিল্পীতে পরিণত হন। অথচ তাঁর অন্যমাত্রার ভাস্কর্য্য কর্মগুলি তাঁর মা বাবাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তাঁরা বুঝতে পারেননি কেন তাদের ছেলে পকেটে ছুরি নিয়ে ঘোরে আর কাঠ পেলেই অদ্ভুত সব নকশা খোদাই করে। তাদের কাছে তিনি ছিলেন স্থুলভাষায় "অস্বাভাবিক"। তাদের মতে, “এসব না করাই ভালো”।

ইয়ুঙের মতে নারীর মধ্যস্থিত পুরুষ সত্ত্বা কখনো কখনো ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। যেমন এইসব মায়েদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ইয়ুং নিজে বলেছেন যে তিনি যখন ১৬ বছরের ছাত্র তখন রসায়ন ও ভৌতবিজ্ঞান পড়ার সুবিধার জন্য একাধিক চার্ট প্রস্তুত করে দেওয়ালে সাজান। তাঁর মা আপত্তি করে বলেন: “এর কি আদৌ দরকার আছে?” এই কথাটাই তিন দিন ধরে তাঁর পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটায়। তিনি ঠিক করেন তিনি আর মায়ের কথা শুনবেন না আর ঐ চার্ট অবলম্বন করে পড়া আরম্ভ করেন। কিন্তু বাস্তবিকই মায়ের বাক্যটি তাঁকে তিনদিনের জন্য যেন মানসিকভাবে অথর্ব করে দিয়েছিল।

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন