![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৫ |
ঢেউ
ঢেউ ভাঙছে শব্দ করে। সুনীতা সেদিকে তাকিয়ে আছে, তার শ্বাস ওঠাপড়া করছে দ্রুত। রুমের ভেতর অনিন্দ্য একটানা কথা বলে চলেছে ফোনে, তার চিৎকার ছাপিয়ে আসছে বাইরে।
সুতপাদি বুদ্ধিমতি মেয়ে, ঠিক বুঝে যাবে অনিন্দ্য সঙ্গে করে
কাকে নিয়ে গেছে। আগেও কি বোঝেনি? ওইসব প্রবলেম
সে কী করে সলভ করবে? গরীবের ঘোড়ারোগ থাকলে চলে না। কিন্তু অনিন্দ্য কী শুধু ফ্ল্যাটটায়
থাকতেই দেবে, না মান্থলি কিছু দেবেও? কিছুটা সে নয় জোগাড় করে নেবে এদিক ওদিক ব্যবস্থা
করে, ওই ঢপের চাকরিটা আছে তো। আহ! ঢেউগুলোও এবার ক্লান্ত হয়ে পড়ছে তার মত। বালিতে এসে
ছড়িয়ে দিচ্ছে দেহ। এককাপ চা বলবে কি আবার? গলাটা ছাপিয়ে বাইরে
আসছে, ঘরের ভেতর কঠিন ঢেউ ভাঙছে যুক্তি তর্ক আর গল্পের। সুনিতা হাই ভাঙতে ভাঙতে গেয়ে উঠল, সুহানা সফর অউর
মৌসম হাসিন’…
স্যান্ডউইচ
স্যান্ডউইচের প্লেট আর ফলের রসটা ঝড়ের গতিতে টেবিলে নামিয়ে দিয়ে মিলটনের সাইড বক্সটা হাতে ঝুলিয়ে নিল শিখা। বাম হাঁতের ফোনটায় তার চোখ যাত্রী আপে। এ সময় পরপর আকাঙ্ক্ষা মোড় থেকে সেক্টর ফাইভের ক্যাবগুলো প্যাসেঞ্জার তোলে। আজ মুম্বাই থেকে বস আসছ, কিছুতেই দেরি করা যাবে না। ওদের ব্রাঞ্চের টার্গেট রিচ হয়নি, শিখাদের লোন সেকশন তো একেবারে ধুঁকছে!
-কাল মা আর শমি আসবে। শমির ডাক্তারের ডেট পড়েছে। অলোক প্লেটের স্যান্ডউইচ তুলে অর্ধেক মুখে পুরলো।
-কাল আসবে? ওমা, আর আজ বলছ? গতকাল
তো রবিবার ছিল! জানতে যখন একটু বাজারটা করে রাখতে পারলে না! শিখার গলাটা চড়ল।
-মেয়োনিজ দাওনি না স্যান্ডউইচে?
পানসা লাগছে! অলোক চিবোতে চিবোতে বলল। তারপর বলল, ওরা ডাক্তার দেখাতে আসছে, খেতে আসছে
না এখানে! কিছু একটা করে দিও!
-কিছু একটা করে দেব? বাহ! মা নিরামিষ
খান, শমি মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারে না। বুবলিকে নিয়ে এলে তো কথাই নেই। বলে দিলেই হয়ে গেল, না! তারপর সব কথা
তো - শিখা ঠক করে মেয়োনিজের বক্সটা রাখল টেবিলে।
অলোক মেয়োনিজ মাখাতে মাখাতে বলল, অত ভাবলে অফিস ফেরত কিছু এনে নিও। আমার আজ ছুটির পর
হেডমাস্টারের সঙ্গে মিটিং আছে, ফিরতে দেরি
হবে।
শিখা দড়াম করে দরজাটা টেনে দিয়ে
সিঁড়ি ভাঙছে জোরে জোরে। দাঁড়াবার সময় তার আর নেই। কাল তাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের মুখটা
আজকের অলোকের মতই ছিল।
তার গায়ে চিড়বিড় করছে এক অসহ্য
রাগ! বেচারা দরজাটাই শুধু টের পেল।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন