কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

রোমেনা আফরোজ

 

ব্যক্তিগত গদ্য

দুরভিসন্ধি

 



কয়েকদিন ধরে  আকাশ মন খারাপ করে বসেছিল জানালার পাশে। শুধু জানালা নয়, সর্বত্র তার বিচরণ। তারপরেও বৃষ্টি নামেনি। কিসের যেন অপেক্ষায়, একটা নামি নামি ভাব নিয়ে সবাইকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছিল সে। আজ যখন আপনার আমন্ত্রণ নিয়ে ডাকপিয়ন এলো তখন বৃষ্টি হাজির! তারপরেও আমন্ত্রণ রক্ষা করতে চৌকাঠ পার হতে দেখি, ভোরের পথঘাট  ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। আমিও অনুভূতির প্রাবল্যে ভিজে যাচ্ছি ততোধিক।

কোনোমতে মাথায় ছাতা নিয়ে এ-ঘাট, ও-ঘাট করে হাজির হলাম আপনার শহরে। তখন আমার হাত বরফের মতো হিমশীতল। উষ্ণতা পাবার লোভে সমুদ্রের মত ফুঁসে আছে নিঃশ্বাস। তখন আমি আপনার মধ্যে অন্ধকারের মতো আচ্ছন্ন। আচ্ছন্নতার গল্পগুলো কোথা থেকে শুরু হয় জানেন? পা থেকে। পা থেকে কপাল পর্যন্ত গড়ায় কবিতা। কোথাও একটু থামে। পুনরায় শুরু হয় দুরভিসন্ধি। জানালায় উঁকি দেয় বেহায়া বাতাস৷ এমন বৃষ্টি, অসহযোগ আন্দোলন, অসহায় প্লাবনে আপনার চোখে নামে ভাতঘুম। নিদ্রার কোলে মাথা রেখেও কেঁপে উঠে দেহখানি। যেন পৃথিবীর সকল ঝড়-ঝঞ্ঝা ধারণ করে  যন্ত্রণায় কাতর।

আমি ইনটেনসিভ কেয়ারের সেবিকার মতো সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলাম। লক্ষ করছিলাম, আপনার ক্লান্তি। ক্লান্তির চরমে ওঠে আপনি বুঝি নির্বিঘ্নে  ঘুমের একটা আশ্রয় খুঁজছিলেন!

দুপুরবেলা বৃষ্টি লক্ষ্মী মেয়ের মত গৃহে ফিরে গেলো। ওদিকে ঝকঝকে রোদ নিয়ে আপনি গমন করলেন রন্ধনশালায়। দু'কাপ গরম কফির মধ্যে ডুবে গেলো টোস্ট। অতঃপর নিখুঁত হস্তে পরিষ্কার করলেন কাবার্ড।  মুহূর্তে ডাস্টবিনে জমে গেল বিগতদিনের ধুলোবালি। দক্ষ হাতে চুলায় চাপালেন স্পেগেটি। আমিও পাক্কা  গৃহিণীর মতো ছুঁয়ে দিলাম বাসনকোসন, পরমাত্মা।

কলেজে ছুটির ঘণ্টা বাজলে যেমন এক দৌড়ে বাড়ি ফিরেছি, আজকাল তেমনভাবে ঘর টানে। গৃহহীন মানুষরা বোধহয় ফেরার অপেক্ষায় রাস্তা মাপে। আমি মাপি আপনার বুক। একটা বুক কত বিস্তৃত হলে আশ্রয় পাওয়া যায়, সেই হিসাবটা কেউ দেয়নি। তাই আপনার কাছেও জানতে চাইনি। তবুও বৃষ্টি নামে। যার মাথার উপর ছাদ নেই তাকে পোড়াতেই বুঝি এমন বৃষ্টি নেমেছিল আপনার শহরে!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন