কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৫


মাটি

সবাই বলে অসুখ সবাই বলে ভিমরতি কিন্তু এই ভিমরতি নিয়েই নানান ছোটবড় ধাঁধা পার করে কর্তা এই একটু আগে আশি বছর ডিঙিয়ে গেলেন আজ পৃথিবীতে তাঁর একাশিতম বছরটির প্রথমদিন, আর এ বৃদ্ধাশ্রমটা হল এগারতম, কর্তা অবশ্য বৃদ্ধাশ্রম বলেন না, বলেনআশ্রম অর্থাৎ এর আগে দশ দশটা আশ্রম তিনি বদল করে করে থেকেছেন এত বদলের কারণ কাউকেই তিনি দর্শান না রাস্তা ফাঁকা পেয়ে লরিঅলারা যেমন সার বেঁধে লরি রাখে, ইমারতের দোকানিরা ইঁট সুরকি বালি ফেলে রাখে, ইদানীং উৎসাহ আর অনুদান পেয়ে তরুণরা যত ক্লাব করেছেএও বোধহয় তেমনি ছেলে বউ মেয়ে জামাই নাতি-নাতকুড়োদের নিয়ে প্রথম প্রথম যেখানে থাকতেন সেখানে এক একটা ঘরে তখন এক এক রকম সুন্দর সুন্দর গন্ধ ভেসে বেড়াতকোনো ঘরে রহস্য আধ্যাত্মিকতার গন্ধ, তো কোনোটায় চপ-কাটলেট/ দই-ইলিশ আবার কোনোটায় বিয়েবাড়ি করকড়ে ফুলশয্যার গন্ধ … দিনভর সেখানে হৈচৈ আড্ডা আমোদ,  সেসব ছেড়ে তিনি এখানে এই বৃদ্ধাশ্রমে কেন চর্বিতচর্বন কর্তা ত্যাগ করেছেন কবেই

মনে হচ্ছে  আশ্রমটাও আগে আগে পৃথিবীর আহ্ণিক গতির সঙ্গে নিয়মমাফিক সামঞ্জস্য রাখত, কিন্তু এখন যেন সেই যোগাযোগ একটু কোথাও ক্ষীণচারিদিকে গাছপালা মাকাল-লতা ধুঁধুল, ভিত ঘেঁষে ত্যাড়াব্যাঁকা অশথ্থ পেঁপে ডুমুর আরও কি কি সব অজানা গাছ ঘন হয়ে জন্মেছে। অযত্নে অনাদরে তারা গ্রামের ছেলেদের মত স্বাস্থ্যবান তাহলে শুক্লপক্ষের শেষরাতে টয়লেটে যাবার পথে অস্তগামী চাঁদের নিচে টুবুটুবু শুকতারা, আর তারও নিচে তিনটে উড়ন্ত জোনাকি দেখে আবার কি কর্তা সকাল হলেই খবরের কাগজ দেখে ঘেঁটে অন্য আশ্রমের খোঁজ করতে চাইবেন? এই এক প্রশ্ন। কয়েকজোড়া কাঠবেড়ালি বেজি ধেড়ে ইঁদুর একটা দাঁড়াশ, কুলেখাড়ার জঙ্গলে গোপনে যারা বাস করে, উপক্রমণিকা ড্যশ কমা সেমিকোলনের মত (চাই বা না চাই) গল্পে সল্পে থাকেই যেমন…, কেউ জানতেও চায় না দেখতেও চায় না বরং এড়িয়ে যায় টোটালি, তাদের বাসা এখানে কর্তার একদম নাগালের মধ্যে, মন কেমন করা আপন আপন ভাব একটা। যদি শেষমেষ থাকেন এখানে ভাবটাকে তারপর বুকে বয়ে নিয়ে সোজা চলে যাওয়া এক্কেবারে মৃত্যুর দোরগোড়া অব্দি…

লাস্ট যে আশ্রমটায় ছিলেন কর্তা, মাত্র ঘন্টা দুই ছিলেন সেখানে। তারপর কতৃপক্ষর কাছে ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে এখানে উঠে এসেছেন বিকেলে। এখানের সবকিছু মন্দ নয়, ভালই। সক্কাল সক্কাল খবরের কাগজ তাঁর চাই জেনে এরা ভোরবেলাতেই সেটা হাতে পৌঁছে দেবে আগাম জানিয়েও দিয়েছে।

বিকেল থেকেই মেঘ ছিল। এখন রাত কত কে জানে! তুমুল বৃষ্টি পড়ছে, অশথ্থ-এর ডালে কয়েকটা কাক  দেখেছিলেন এসেই… কাচ্ছা-বাচ্ছা সমেত ওগুলো নিশ্চই এখন ভিজছে! ঘুম জড়ান চেতনায় ভ্রম হল কর্তা বুঝি নিজের পাশে কাকের বাসায় শুয়ে ভিজছেন … সকালের খবরের কাগজ যেখানে কখনও আসেই না…

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন