কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৫


অচেনা বৃত্ত

কারণটা ভাবার জন্য বাইরে আসতেই কার্শিয়াং-এর অপরিচ্ছন্ন আকাশ -- এগোলেই উত্তরমুখী ঢাল, উপত্যকায় বিস্তারিত - হিমঝরা  অন্ধকারে -- তোতন – যা তাকে ডাকার নিমিত্তে ব্যবহৃত -- সিগারেট ধরালো। দূরে ধাপে ধাপে শহর, প্রকৃতির অপার মুগ্ধতা তবু মুগ্ধতা রহিত। হতচকিত তোতন। তাকে বার করে দিয়ে রমেশের ঘরের দরজায় খিল দেওয়া, সেখানে চিৎকার ও মারামারি। কেন স্বাতী তোতনকে – অফিস থেকে টাকা চুরির দায়ে চাকরি চলে যাবার কথা, মাঝরাতে মদ খেয়ে বৌ পেটানোর কথা, তার চেয়েও গুরুতর, ‘এই দেখ তোতন’ -- তোতন দেখল স্বাতীর মোমসুলভ পিঠে বেল্টের কালশিটে আদর -‘তুই আমাকে কলকাতা নিয়ে চল তোতন, এখানে থাকলে মরে যাবো’ -  বলল। রমেশের চোখে ভাসছে  স্বাতীর খোলা পিঠের আয়নায় তোতনের মুখ আর স্বাতীর চলে যাবার মরিয়া প্রয়াস। নিজের কানে শুনল যে! যদি মাংস আনতে গিয়ে হঠাৎ ফিরে আসা, যা তোতনকে ঘিরে, স্বাতীর সাথে একলা থাকার কৌতূহল, ভিতরে ভিতরে পাকিয়ে ওঠা আবর্জনার এই ঘূর্ণিপাক রমেশকে বলে না দিত - ‘তাড়াতাড়ি ঘরে যা রমেশ,  কত কি যে ঘটতে চলেছে সেখানে’ অথবা - যেন কিছু দেখে ফেলবে, ভয়ে শিউড়ে উঠল রমেশ। তোতন তার বিশেষ বন্ধু, বাজারে  যেতেই হবে। আজ এসেছে  সে - অর্থ  হয়  কাল  সারাদিন ওরা দুজন একসাথে থাকবে, কি হয়, কি হয় -- হৃৎপিন্ড হাপর টানছে, বাজার কো মারো গোলি, বলে ছুটলো সে বস্তির দিকে। রমেশের বিয়ের পর এই প্রথমবার এলো তোতন, কাল সকালে থাকবে না ভেবে, প্রাণের বন্ধুকে মাংস    খাওয়াবে ভেবে, সে বাজারের দিকে  গিয়েও যেতে পারল না, ফিরে এলো। দরজা আবজানো, কিন্তু ভয় তাকে আটকায়, তাই দরজায় কান পাতলো। অবোধ্য যত চুপিসার কথা – একপ্রকার টলতে টলতে ফিরে যায় রমেশ, যখন ঘরে ঢুকলো মদে টইটুম্বুর সে। পাহাড়ে তখন মৃত্যুর স্পর্শের মত ঠান্ডা -- তোতন খেতে বসেছে, স্বাতীর শালটা তার গায়ে। একটু দম নিয়ে – ‘তুই ঘর থেকে বেড়িয়ে যা  তোতন’ -- বলে সযত্নে তার কিটস ব্যাগ, আর কাঁধঝোলা বারান্দায় রেখে এল। অতপঃর লাথি মারল ভাতের থালায় — ছড়িয়ে পড়ল ভাত মেঝেতে, যেন  নিম্নবর্গের চোখের জল!

সিগারেটের ছ্যাঁকায় আঙুল জ্বলে যায়, তবু যেন সে আরামের। এরই মাঝে -- আঙ্কেল, আপনাকে বাবা ডাকছে। একটি ছোট মেয়ের ডাক, পিছনেই গোপাল ভান্ডারী, বিকেলেই আলাপ বললেন, এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তোতনবাবু, দাঁড়িয়েই থাকতে হবে। আজ আমার ঘরে চল। কাল দেখা যাবে।

ঘুমিয়েই থাকে তোতন, যদি না গোপাল ভান্ডারী ডেকে তোলে তাকে। ‘তোতনবাবু উঠে পড়, এখুনি চলে যাও  এলাকা ছেড়ে। আমি শিলিগুড়ি যাবার গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। লাগেজও তুলে দিয়েছি। পুলিশকে খবর দেয়া হয়ছে, এসে পড়ার আগেই তাই’ -- হতভম্ব তোতন, কথা বলার সাহস নেই তার। ... গাড়ি স্টার্ট দিল।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন