কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

অমলেন্দু চক্রবর্তী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৪


বাষ্পজল


অভিনয় বোঝার পর এ্যামেচার থেকে যাওয়া ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো লাগে। তাই বাণিজ্যিক দিকটি ভাবতেই হল। শুরু হল সিরিয়াস মহড়ার প্রস্তুতি। সুধাময় সেনাপতি। এক মাদ্রাজি ঘরের ভৃত্য। দশক্লাস পাশ দিয়ে বাড়ি ছেড়েছে গরীবি দূরীকরণের অভিপ্রায়ে। গ্রামের ছেলে উচ্চারণে পরিস্কার এখনো  নয়। তবুও আগ্রহ আকাশ ছোঁয়ার। এই মহড়ার আনন্দে চাঁদা করে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। সুধাময়ের ফন্দিফিকির কিচ্ছু না, ডিমের ঝোলভাত। সুধাময় একজন ভালো পাচক কিনা! মেঝেতে সতরঞ্জি বিছিয়ে মুখস্থ ও প্রম্ট্ দুই  মিলিয়েই রিহার্সাল্ শুরু হল, সুধাময় খুন্তি-হাতা নাড়াতে-নাড়াতে রিহার্সাল দিতে লাগল। টিকিট কেটে দর্শক সুধার অভিনয় দেখবে কী ভাগ্য কী ভাগ্য! এরকম ভাগ্য ক’জনের হয়? সুযোগমতো আয়নার সামনেও। আলো মঞ্চ সংলাপ শব্দ ভয়েস মডিউলেশন জ্যামিতিক চালঢাল দর্শকের মনোনিবেশ ঈগল চোখের বখরা বাজার এক মিলিত সীমিত সময়ের বজ্রা-ভ্রমণ্রত। হাসি-কান্না, অহংকার-অভিমান, প্রেম-প্রণয়-ভালোবাসা, হিংসা-দ্বেষ। কয়েক ঘন্টার নির্মাণে আরেক  জাগতিক সমস্ত মঞ্চের জাদুঘর।

অনেক চেষ্টা কর সে নিজে ভালো অভিনয় করার জন্য। প্রফেশন মানেই ষোলআনা ঢেলে দিতে লাগে। দুদ্দাড় পড়াশোনা শেক্সপিয়ার ব্রেখেট গিরিশ ঘোষ এইভাবে বহু নাট্যকার নাট্যব্যক্তিত্বের তৌর-তরিকা হাসিলের দিবারাত্রি। হল্ বুকিং, এ্যাডভান্স টিকিট বিক্রি, সমস্তর পর উপার্জন কত হল! সবার মধ্যে ভাগ  বাঁটোওয়ারা, পরের শোয়ের প্রিপারেশন। এইভাবেই বেশ চলছিল। কিন্তু নারীবর্জিত নাটক আর কতদিনই বা চলে? হায়ার করে করে কাজ তবুও চলছিল। কিন্তু! এই কিন্তু যে কেন পিছু ধাওয়া করে? নাটকের নাটকীয়তা  যেন বা! সময় যেন হঠাৎ খুব জোর দৌড় শুরু করে দিয়েছে। ঝড়ের মতো করে সেই  ঝড়তান্ডবে কে কোথায় ছিটকে গেল। তারপর শুরু হলো জীবিকার লড়াই, পছন্দ মতো নয়। ঐ যে সময় কারো দাওয়াতে বসে অপেক্ষা করে না। লাট খাই, কেবল  লাথ ঝাড়তে আসে গোঁত্তা মারে গুঁড়ি দিয়ে গুঁতোয়, বাড়ি মেরে মেরে বিদ্ধস্ত করে,  বিদ্রোহ করে, বিশ্বস্ত বিবেক দংশন করে, অবশ্য জীবনকে ভালো করে চিনিয়ে দেয় চেনার অছিলায়। সঠিক চেতনার চেনাকে। অনেক নিয়ে চলে যায়, আবার অনেক নতুনের সন্ধান দেয়। হারানোর ব্যথা যেমন হয়, আনন্দের উৎস‌ও সেখানেই। যুক্তির দাবিতে পাহাড় দেখতে ভালোই লাগে, বাস্তব কিন্তু প্রকৃতিগত প্রকৃতিরত।

ব্যথাগুলো সব ব্যথার ভিত গড়ে তোলে গণিতের মতো করে অন্ত থেকে অনন্তের শূন্যতায়। হয়ত তাই বলে ‘শরীর সাগর তার তিনভাগ জল, একভাগ স্থল। আর স্থলভাগই সবুজের আড়ত, শরীর কেবল তাকে লুকিয়ে রাখে। জাগতিক রাখে সবার জন্য। সব জল আর জল্পনার জল হয়ে বয়ে বেড়ায় শরীর জুড়ে। ধুয়ে ধুয়ে সব অভিনয় জলবত্ ঘাম প্রস্রাব অশ্রু বাষ্পজল রং বেরঙের। জলবায়ু ক্রিয়েশন বদলে বদলে আমরা শোষণ করে চলেছি হটড্রিঙ্ক সফটড্রিঙ্ক আমাদের পাঁশ  অথবা আঁশ। প্রাণবায়ু প্রাণজল যত ভালোবাসা মৃত্যুর কাছাকাছি জলীয়বাষ্প হয়ে হয়ে হয়ে হতে হতে হতে বিন্দু বিন্দু বিন্দু…


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন