কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

নাজনীন খলিল

 

কবিতার কালিমাটি ১১৪


চোখগুলো বেঁচে উঠুক



এমন নয় যে

চাঁদে হাত রাখলেই দুইহাত সোনালি হয়ে যাবে;

বরং জ্যোৎস্নার তপ্ত আগুনে পুড়ে যেতেও পারে।

 

সূর্যালোকে দাঁড়ালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে

রাতের আঁচড়ের দাগগুলো।

যখন

হাসির আড়ালে মানুষ লুকিয়ে ফেলছে কান্নার চিহ্নগুলো;

তখন

আমি বলছি - এটা হয়তো মৃতদের কোন শহর।

 

কখনো কখনো

মানুষের চোখগুলো মাছেদের মতো নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।

যেসব চোখের দিকে তাকালেই শবদেহের কথা মনে পড়ে

কতটুকু বেঁচে আছে তারা?

 

একটি কালো দাঁড়কাক টেলিফোনের তারে

একবার ডেকে উঠতেই কে যেন বললো,

আজ কেউ আসতে পারে!

উত্তরকোণে কাক ডাকলে অতিথি আসে।

 

এমনধারা কাকতত্ত্বে বিশ্বাসী নই।

তবু অপেক্ষায় থাকি - কেউ আসুক।

আসুক।

আর উন্মত্তমৃদঙ্গের তালে জাগিয়ে তুলুক এই প্রাণহীননগরীকে।

নিস্পন্দ চোখগুলোতে একইসাথে ফিরুক

নোনাজল আর অক্ষরের কারুকাজ।



তিমিশিকারির হার্পুন



শেষরাতে ঝিঁঝির গুনগুন সুর থেমে গেলে

এক উত্তাল সমুদ্রের ছবি আঁকি।

 

সম্পূর্ণ ছবির জন্য চাই আরো গাঢ় নীল রঙ

আরো উন্মত্ত সমুদ্র দর্শন

চাই

উদগ্র মাতাল ঘোরের সন্তরণ, অশান্ত ঢেউয়ের চূড়ায়।

 

মাঝসমুদ্রের গভীরে নোঙ্গর ফেলেছে তিমিশিকারির জাহাজ।

হার্পুনে বিদ্ধ নীলতিমি;

লাল রক্তস্রোতের ধারা মিশে গেছে নীল ঢেউয়ের লহরে।

 

তরঙ্গনিনাদে বাজে শিকারের উল্লাস

আরো লক্ষ্যভেদি হার্পুন

আরো

আরো - রক্তের ধারা।

 

এমন তীব্র উচ্চারণের ছবি আঁকতে চাইনি।

আঁকতে চেয়েছি সবুজ উপকূল ঘেঁষা এক শান্ত সাগরের ছবি

যেখানে

বালুকাবেলায় ঢেউগুলো রেখে যায় ভোরের স্নিগ্ধ স্পর্শ-আদর।

 

তুলিটাই

টেনে নিল এক প্রবল মাঝসমুদ্রে;

যেখানে রক্তস্রোত আর হাঙ্গরের ভয়।

 

রংধনুর ছবি



রংধনুর গায়ে হাত রেখে

আবার জুড়ে দিচ্ছি সূর্য বিচ্ছুরণের আলো

এবং জলকণাগুলো।

 

ধনুকের ছিলা থেকে ছিটকে গিয়েছিল যে রঙ,

ছড়িয়ে গিয়েছিল মেঘের আনাচ কানাচে;

আবার ফিরছে তারা বর্ণচ্ছটার আলোকিত উৎসবে।

 

মানুষ জল ভালবাসে, ভিন্নার্থে তরল।

এই যে গ্লাসে গ্লাসে ঢালা হচ্ছে রক্তাক্ত পানীয়

এবং আইসকিউব;

কারো কারো চুমুকের সাথে ভেসে উঠবে স্বদন্ত হাঙ্গরের ছবি

তবু

ভয় চেপে রেখে নিঃশেষে পান করে নেবে সবটুকু ফেনিল অমৃত।

 

মানুষ জল ভালবাসে

তবু

জলের গন্ধ চেনে না হরিণের মতো। বৃথাই

রংধনুর প্রতিচ্ছবি খুঁজে ঝর্ণার স্রোতে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন