কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৪


বাউল বর্ধন


শহরে রোদের মুরলিধরন দেখে ভালো লাগে। তুষারপাতের লক্ষণ নেই। বাসায় যাব এমন সময় খেয়াল করলাম, রাস্তার পাশে বর্ধনদা একাকী দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবছেন।

পাশে গিয়ে দাঁড়াই। মৃদু স্বরে বললাম; কী ভাবেন বর্ধনদা?

জবাব দিলেন না, মৃদু হাসলেন। হাসির তরঙ্গটুকুন ছোট্ট সুন্দর।

বললাম; দাদা, বর্ধন আর গোবর্ধনের মাঝে পার্থক্য কী?

বিনয়ের স্বরে বললেন: আপনাকে আরেকদিন কইছিলাম…

লজ্জা পেলাম পুনরায় একই প্রশ্নের জন্য।

বর্ধনদাকে রাগিয়ে দেবার জন্য বললাম; দাদা বিয়েতে কি কি যৌতুক নিয়েছিলেন, মনে আছে?

উনি রাগলেন না। আস্তে হাঁটছেন। এত আস্তে হাঁটেন তিনি, আপনাকে তাঁর সঙ্গী হতে হলে হাঁটা ধীর করতে হবে। বললাম;

: ছেলের বিয়েতে কন্যাপক্ষের কাছ থেকে নাকি ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়েছিলেন? (অবশ্যই এটা আমার বানানো, চাইছিলাম দাদা রেগে উঠুক)

মুখ ফুটল ভদ্রলোকের।

:ছেলেকে নিয়ে ৮০ জায়গায় মেয়ে দেখেছি। ছেলের কোনো মেয়েকে পছন্দ হয় না। শেষে আমরা তো সবাই ক্লান্ত। আর পারব না। পরে… আপনি শুনে অবাক হবেন যে মেয়ে তো আমার বাড়ির সাথেই…  ছেলে আর তার ছোট ভাইকে বললাম, তোমরা গিয়ে দেখে এসো। আমি আর যেতে পারব না। শুধু মত দিলেই হবে। আমরা বিয়ে দিয়ে দেবো।

ভিক্টোরিয়া সড়ক ধরে আমরা শম্বুক হাঁটছি। বর্ধনদা বক্তা, আমি শ্রোতা। একটা দোকানের সামনে এসে থামলেন, জানালেন যে তিনি পান কিনবেন। আমিও থামলাম। কিছু না বলে চোখ নাচালাম। অর্থ হলো, তারপর কী হলো?

বর্ধন: সেই মেয়ের বয়স ১৫। গ্রামের চপলা হরিণী। বরই গাছে উঠে খিলখিল হাসে  আর আমার দুই ছেলেকে গাছ থেকে বরই ছুঁড়ে মারে। দুই ছেলে মহানন্দে বরই খায় আর মুগ্ধ হয়। ১৯ বছর বয়সী ছেলের মন এইখানেই গেঁথে যায় পাকা বরইয়ের সুঘ্রাণে। ছোটছেলে ছুটে এসে আমাকে জানায় যে বড়দার এখানে মন মজেছে।

খরগোশের মতো আমার কান খাড়া, বর্ধনদা যৌতুক নিয়ে দেখি কী বলেন! দোকনটার সামনে দাঁড় করিয়ে ভেতরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলেন, হাতে তাঁর ছোট একটা বয়াম। আমাকে দিয়ে বললেন;

: নাগা মরিচের আচার। ভাতের সাথে একটু একটু মিশিয়ে খাবেন, ভালো লাগবে… ঝালে যৌবন ঠিক থাকে…

ঝালে আমার ভয় আছে, তবুও যৌবন ঠিক রাখার চকচক লোভে আচারের বয়ামটা  নিলাম। তিনি আবার হাঁটছেন, সাথে আমিও কচ্ছপগতি…

: মেয়ে পক্ষকে বললাম আমরা ১১ গাড়ি বরযাত্রী আ্‌সব। কিন্তু বিয়ের দিন কথা রাখতে পারিনি, ১৮ গাড়ি গিয়ে হাজির…

মিনমিন করে এবার বলার চেষ্টা করলাম বানানো ৩ লাখ টাকার যৌতুক প্রসঙ্গটুকু। উনি থামলেন, গুনগুন করে গেয়ে উঠলেন;

ধরো মনের ভিতর রঙমহল বানাইলা

মোকাম চিনাইলা গো দয়াল আমারে

ওরে কিসের অর্থ কিসের কড়ি…

আমি বর্ধনদার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, এই লোকটা একসময় বাউল শাহ আব্দুল করিমের সাথে গানে ডক্কি (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) সঙ্গত করতেন।

ঝলমলে রোদ উঠল আবার। তাঁর গান থামল।

 


1 কমেন্টস্: