প্রতিবেশী
সাহিত্য
বিট
জেনারেশনের মহিলা কবি ডেনিসে লেভেরটভ-এর কবিতা ( ১৯২৩ - ১৯৯৭ )
(অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী)
ঘোষণা
আমরা দৃশ্যটা জানি : ঘর,
নানাভাবে সাজানো,
প্রায় সব সময়েই এক বক্তৃতার
টেবিল, একটা বই; সব সময়
দীর্ঘ লিলিফুল।
বিশাল ডানা মেলে পবিত্র
মহিমায় নেমে এলেন,
দৈবিক দূত, দাঁড়িয়ে বা
মাথার ওপরে ঘুরছেন,
যাকে উনি চেনেন, এক অতিথি।
কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে
ভীরু আনুগত্যের কথা। কেউ বলেনি
সাহস
উৎসারিত তেজোময়তা
তাঁর অনুমতি ছাড়া সামনে
যায়নি। ঈশ্বর অপেক্ষা করছিলেন।
উনি স্বাধীন
গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান
করতে, বাছবার অধিকার
যা মানবিকতার অঙ্গ।
কোনো ঘোষণা কি নেই
এক বা অন্য ধরনের বেশিরভাগ
জীবনের?
অনেকে অনিচ্ছায় পরম নিয়তি
বেছে নেয়,
তাদের কার্যকর করে বিরূপ
গর্বে,
বুঝতে না পেরে।
বেশিরভাগ সময়ে সেই মুহূর্তগুলো
যখন আলো আর ঝড়ের পথ একজন
পুরুষ বা নারীর অন্ধকার থেকে বেরোয়,
তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়
আতঙ্কে, দুর্বলতার ঢেউয়ে,
বিষণ্ণতায়
আর অসুবিধা লাঘবে।
সাধারণ জীবন চলতে থাকে।
ঈশ্বর তাদের যন্ত্রণা
দেন না।
কিন্তু সিংহদুয়ার বন্ধন
হয়ে যায়, লোপাট হয় পথ…
উনি একজন শিশু ছিলেন যিনি
খেলা করতেন, খেতেন, বানান
করতেন অন্য শিশুদের মতন
- কিন্তু অন্যদের মতন,
দয়া ছাড়া কাঁদতেন না,
হাসতেন না
বিজয়ে নয় আনন্দে।
সমবেদনা ও বুদ্ধি
মেশানো ছিল তাঁর মধ্যে,
অবিভাজ্য।
আরও যুগান্তকারী নিয়তির
জন্য ডাক পড়ল
অন্যান্যের চেয়ে বিশেষ
সময়ে,
উনি পেছপা হলেন না,
কেবল জিগ্যেস করলেন
সহজভাবে, “কেমন করেই বা
এটা হতে পারে?”
আর গম্ভীরমুখে, সৌজন্যে,
দেবদূতের উত্তর হৃদয়ে
মান্যতা দিলেন,
তক্ষুনি বুঝতে পারলেন
তাঁকে যে অদ্ভুত মন্ত্রিত্ব
উপহার দেয়া হচ্ছিল :
তাঁর গর্ভে ধারণ করতে
হবে
অনন্ত ওজন আর ভারহীনতা;
বইতে হবে
গোপনে, সীমিত অন্তরে,
নয় মাসের অনন্তকাল; ভেতরে
রাখতে হবে
কোমল অস্তিত্ব,
ক্ষমতার যোগফল-
এক মৃদু মাংসে,
আলোর যোগফল।
তারপর জন্ম দিতে হবে,
বাতাসে ঠেলে বের করতে
হবে, এক মানব-শিশুকে
অন্য সকলের মতন যার প্রয়োজন
দুধ আর ভালোবাসা-
কিন্তু তিনি ছিলেন ঈশ্বর।
উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ায়
ক্ষয়রোগে মৃত ইউকালিপটাস
গাছগুলোর মাঝে,
ক্রিসমাসের তুষারে মরচে-পড়া
গাছ আর ঝোপের মাঝে
ক্ষেত আর পাহাড়তলি পাঁচ
বছরের খরায় হাঁপিয়ে-ওঠা,
এক ধরনের বাতাসি শাদা
ফুল নিয়মিত ফুটেছে
পুনরায় ফুটেছে, আর ফিকে
গোলাপি, ঘন গোলাপি ঝোপ-
এক সূক্ষ্ম আতিশয্য। তাদের
মনে হল
অতিথিরা আনন্দে এসে পড়ছেন
পরিচিত
উৎসবের দিনে, বছরের ঘটনাগুলো
সম্পর্কে অবিদিত, দেখতে পাননি
চটের পোশাক অন্যেরা পরে
ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আমাদের কয়েকজনের, মনপরা
উপত্যকা ভালো সঙ্গ দিচ্ছিল
আমাদের লজ্জা আর তিক্ততার
পাশাপাশি। আকাশ চিরকেলে-নীল
প্রতিদিনের সূর্যোদয়,
আমাদের বিরক্ত করছিল হাসাবার বোতামের মতন।
কিন্তু ফুটে থাকা ফুলগুলো,
সরু ডাল আঁকড়ে
উড়ন্ত পাখিদের চেয়েও বেশি
সতর্ক,
ভেঙে পড়া হৃদয়কে উৎসাহিত
করছিল
এমনকি তার নিজের ইচ্ছের
বিরুদ্ধে।
কিন্তু
আশার প্রতীক হিসাবে নয়
: ওরা ছিল ফালতু
অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের
প্রতিরোধ
-আবার, আবার- আমাদের নামে;
আর হ্যাঁ, তারা ফিরছিল
বছরের পর বছর, আর হ্যাঁ,
সংক্ষিপ্ত সময়ের নির্মল আনন্দে উজ্বল হয়ে উঠছিল
অন্ধকার আলোর বিরুদ্ধে
শয়তানি দিনগুলোর। ওরা
আছে, আর ওদের উপস্হিতি
স্তব্ধতায় অনির্বচণীয়
- আর বোমাবর্ষণ হচ্ছিল, ছিল
সন্দেহ নেই আরও হবে; সেই
শান্ত, সেই বিশাল শ্রুতিকটূতা
যুগপৎ। কোনো কথা দেওয়া
হয়নি, ফুলগুলো
তো পায়রা নয়, কোথাও রামধনুও
ছিল না। আর যখন দাবি করা হল
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, তা
মোটেই শেষ হয়নি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন