কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

অরণ্যা সরকার

 

কবিতার কালিমাটি ১১৪


অঙ্কগল্প

 

যোগ চিহ্নেরা আর সরব নেই। একজন অন্যরকম যোগের জন্য একটু মন কেমন আছে সংখ্যার। ঋণ আছে। উড়ে এসে জুড়ে বসায় তার মত মায়া কেউ দিতে পারেনি। খাঁ খাঁ দিনের গদ্যে সে যে কি ছায়াগ্রন্থি বেঁধে দিত! সংখ্যা, গুণের আঙুলে আঙুল জড়িয়ে তুমুল উচ্চতার ডেরা থেকে দেখেছে মৌচাকের ভর্তি হয়ে ওঠা আর কত পুনর্জন্ম। মুখস্থে মুখস্থে পূর্ণ হয়ে উঠেছে ওর সফলতার ভল্ট।

 

গল্প কি এটুকুই? এরপর স্বাদকোরকেরা জামা পরে। বদলে বদলে পরে। নতুন সূত্রেরা লালাক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। কিছু  বদহজমও আসে। সাহসী বিয়োগেরা তখন আন্তরিক। সংখ্যা ওদের খাতির করে সঙ্গে রাখে। স্বস্তি বাড়ে। ক্রমশ  বিয়োগদের সঙ্গ বেশ পছন্দ হতে শুরু করে সংখ্যার। ছাঁটা গাছের মত ছিমছাম  দিনকাল সে উপহার দিতে শুরু করে। ভাগেরাও সংখ্যার সান্নিধ্য পেয়ে খুব খুশি। সংখ্যার নীল আইলাইনারে পাখি এসে বসে। সে লন্ঠন সন্ধ্যের কথা ভাবতে ভাবতে সুগন্ধের বর্গমূলে ঢুকে যায়।

একদিন যখন  হাতের উপর হাতের ফাঁকি অথবা কথার ভেতর কথার শব, তখন সংখ্যা মধ্যবয়সী সুপ্রভাতের সামনে এসে বসে। দেখে এক বিরহী ভাগশেষ তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে ধকধক বিলুপ্তির খিদে।

 

সাফাই

 

ফুরসত পেলেই গল্পের তোরঙ্গ খুলে দিত মন্দির। বাড়িটা সব শুনতো মন দিয়ে। নিজের গার্হস্থ্যকথাও জুড়ে দিত  ফাঁকফোঁকরে।  মানুষের কত নিবেদন, ইচ্ছেপুরণের বাসনা, নিয়মনিষ্ঠা, রুজি রোজগার কত সফলতার ছটা মিশে থাকতো সেইসব কথায়। নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথাও ওরা বলতো। পঞ্চাশ বছর ওদের এই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা। মাঝখানে একটা দুফুটের গলি। সেও ভিড়ে ঠাসা। মন্দিরের গেট আর বাড়িটির দরজা যেন জুড়ে রাখতো মানুষের শরীর। কত ব্যস্ততা ছিল দুজনের। মন্দির আজ আগের চেয়ে অনেক বেশী ব্যস্ত। মানুষের ভিড় বেড়েছে প্রায় দশগুন। মন্দির চত্বর পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে সরকারি উদ্যোগে।

বাড়ির দরজাটা আর নেই। ভাঙার কাজ প্রায় শেষ। শুধু একটা দেয়াল এখনও দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালে লেপ্টে আছে তিনটে তাক আর হু হু শূন্যতা। তাকের উপরের পেরেকে ঝুলছে বহু পুরনো এক নবদম্পতির বাঁধানো ছবি। মানুষ ডিঙিয়ে মন্দিরটা বারবার এসে দাঁড়াচ্ছে। কেঊ কোন কথা বলছে না। ভাঙার শব্দে চমকে উঠছে দুজনেই।

আরও একটা ভিড়ের সকাল। মানুষ আর মানুষ। কত গল্প। কত বিনিময়। শুধু মন্দিরটা প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। ওর ঝকঝকে চূড়ায় সোনার বধিরতা। দেয়ালে দেয়ালে মূক অতীত। গলিতে এখন শুধুই আলো।   

 

বর্ষারঙ ‘না’গুলো    

 

এ বছর কদম দেখিনি। গন্ধ এসেছিল। নিরীহ প্রস্তাব নিয়ে বসে ছিল কৌশলের কিনারে। জলকাচা আকাশ তখন নরম পর্দায়। সাদা ঘর। পুরনো জট খুলে ছড়িয়ে পড়ছে পূর্বস্মৃতি। বিগত বৃষ্টির গন্ধে ঢুকে গেল ভেজা কদম। বর্ষা স্মারকে থৈ থৈ তাকের জ্যামিতি। সংকলনে সজল হাঙ্গামা। প্রতিদিন বদলে যায় স্নান, ভঙ্গিমা। লক্ষ্যসিদ্ধির পর যেমন অপ্সরার ফিরে যাওয়া তেমনি কিছু বিদায় দৃশ্যের  মায়াটুকই সম্বল। দোলনাচাঁপারা জানে ডেটল জলে ভেজানো আছে আমাদের বর্ষাকাল। জিটি রোডে মানুষের শুকনো রক্তের পাশে থ্যাতলানো কদম দেখে ঘরে ফিরি। সাদা ঘর। জলকাচা আকাশ। আরও রহস্যময় এই অন্ধকার খামচে  ঝুলে থাকা। পূর্বাভাস ছিল, তবু কেন যে --

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন