কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

সুবল দত্ত

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৪


হ্যালোইন মিলন       


এশিয়ান ও ইউরোপিয়ান মার্কেট প্লেস থেকেও পাকা কুমড়ো হাপিস। তাহলে কি আলাস্কার ওই রূপোলী চুলের বে নামের বরফ সাদা ছেলেটার ভূত সাজা হবে না? ছেলেটা নিরেট সরল, সাত চড়ে রা নেই। আর সত্যিই ও বোবা। ওর খুব শখ কুমড়ো মুখোশ পরে লোককে ভয় দেখাবে। একহাতে নরমুন্ড অন্য হাত বাড়িয়ে চকলেট চাইবে লোকের কাছে। ট্রিক্স এন্ড ট্রিট। তিরিশ অক্টোবরের রাত। রেডমণ্ড ভিলেজের ঘরগুলোর সামনে রঙবেরঙের টুনিবাল্ব লাগিয়েছে। গোলাপী হলুদ বাসন্তীরঙের ম্যাপলগাছে কালো সাদা ঝাঁটা ঝোলানো। কুমড়োতে চোখ ও দাঁত সাইজের ফুটো দিয়ে লাল আলো ধকধক জ্বলছে। আগামীকালের ভূতপরবের প্রস্তুতি। বছর দুই আগে আলাস্কা থেকে এসে ডগ পার্কে বসে থাকতো বে। নিঃসঙ্গ বেকার। খাবার জুটতো না কিন্তু মুখ ফুটে কারো কাছে চাইত না। লেকে একদিন এমন অদ্ভুত কায়দায় কয়েকটা কুকুরকে সাঁতার শেখালো যে তার জীবিকার অভাব রইলো না। দিনকয়েক পর দশমাইল দূরে রেইনার পর্বতের পাদদেশে কুকুরদের শ্লেজগাড়ি টানার প্র্যাকটিস করিয়ে চট জলদি টাকা ও নাম অর্জন করেছে। একটা আশ্চর্য গুণ আছে ওর, পাইড পাইপার অফ হ্যামলিনের মত ও বাঁশি বাজিয়ে দিলে দূরে ছড়িয়ে খেলতে থাকা কুকুরগুলো সব ছুটে তার কাছে এসে যায়। সত্যিই এটা গবেষণার বিষয়।

অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। নভেম্বর অব্দি ডে লাইট সেভিংস-এর জন্যে আগেই  হুড়মুড়িয়ে সন্ধে নামছে। বের দুগাল বেয়ে অশ্রুধারা চিকচিক করছে। পরনে সাদা পোশাক সাদা শ্যু। হ্যালোইন পরবের জন্যে আজ তাড়াতাড়ি ঘর ফিরতে হবে। কিন্তু কেউ নড়ছে না। অনেকে কুমড়োর বদলে রক্তচোষা বাদুড়ের হাঁ-মুখ, ড্রাকুলার পোশাক, পিনহেড, ঘোস্টফেস, মনস্টার ওকে কিনে দিতে একপায়ে খাড়া। কিন্তু ওর কুমড়ো চাইই। এই অদ্ভুত আব্দারের কি মানে হয়? হ্যালোইনের সন্ধ্যেয় বহুলোকের দরজার সামনে কুমড়ো রাখা। সেগুলোকে হ্যালোইন বানানো হয়েছে। বেশ কয়েকজন সেগুলোই ওকে দিতে চাইলো। তার এক গোঁ, নো কাটিং। আই নিড ফ্রেশ। যেটার ভিতরে দুটো মাথা অনায়াসে গলে যায়।

রাত বাড়ে। সিকিউরিটি অনেক অপেক্ষা করে শেষমেষ চলে যায়। জনপ্রাণীহীন ঘুটঘুটে অন্ধকার পার্ক। ঘাসের উপর আলো হয়ে বসে নিশ্চল বে। হঠাৎ অন্ধকার থেকে আরো ঘন এক আঁধার এসে বে এর কাছে বসল। ফিসফিস কিছু কথা, অনুযোগ, স্বান্তনা তারপর খি খি হাসি। ঠিক এইসময় ফ্ল্যুট বাজতেই জোনাকীর ঝাঁক এসে পরিবেশ আলো করল।

বিকেল হতে না হতেই কুকুর পার্কে মনোহারি ভূতের ভিড়। নানারকমের ভুতুড়ে গানবাজনা। ভূতেরা দর্শকের কাছে আসছে, ভয় দেখাচ্ছে, কোলাকুলি করছে আর হাত বাড়িয়ে ট্রিট চাইছে। হঠাৎ সবার চোখে পড়ল পার্কের বেঞ্চে রাখা একটা বিশাল সাইজের হ্যালোইন কুমড়োর ভিতর দিয়ে দুটো কালো সাদা হাত। যেন অতলে তলিয়ে যেতে যেতে বাঁচার আকুতি। সবাই ব্যগ্র হয়ে টান মেরে কুমড়ো সরিয়ে দিতে ভিতর থেকে বেরলো ফর্সা বে ও এক কৃষ্ণাঙ্গী মেয়ে, ঠোঁটে ঠোঁট আলিঙ্গনবদ্ধ।   

 

     

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন