গ্রুপফটো
অচিন্ত্য দাশ
ধর্মতলার মোড়ে শুভ্রর সঙ্গে হঠাৎ দেখা। “অ্যাই শুভ্র, না দেখে চলে যাচ্ছিস্ যে...”
- “আরে তুই! বিলেত থেকে কবে এলি”
- “গত সপ্তাহে, এ মাসটা আছি”
দু-একটা কথা হবার পর শুভ্র বলল, “শোন, আমার তাড়া আছে একটু। তুই আজ সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে চলে আয়, একটা গেট-টুগেদার মতো আছে”।
গেলাম। গিয়ে দেখি শুভ্রর ছোট মেয়ের জন্মদিন। শুভ্রদের বাড়িটা ঠাকুরদাদার আমলের, অনেকটা ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’ প্যাটার্নের। এক হাঁড়ি না হলেও, এক ছাদের পরিবার। খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো ভাইবোনদের হুল্লোড় আর খাওয়াদাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল, এক ছাদের এই পরিবারটি হয়তো আরও কিছুদিন টিকে থাকবে।
সে সময় বিদেশে ডিজিটাল ক্যামেরা জিনিসটা সবে বাজারে উঠেছে। এদেশে তেমন করে সবার হাতে হাতে তখনও দেখা যেত না। তাই ক্যামেরা বার করে পটাপট্ ছবি তুলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছিলাম। এমন সময় আমার পিঠে কার যেন হাত পড়ল। ফিরে দেখি শুভ্রর ঠাকুমা। “তোমার এটাতে দেওয়ালে টাঙাবার বড় ছবি হয়?”
- “হ্যাঁ, কেন হবে না! এইখানে যা দেখছেন, তা বড় করে কাগজে ছাপিয়ে নেওয়া যায়”
- “তাহলে বাবা, সব্বাইকার একসঙ্গে একটা ছবি তুলে দেবে... তারপর বড় করে...”
শুভ্র পাশেই ছিল। বলল, “বড় ছবি নিয়ে কী করবে তুমি ঠাকুমা”
- “কেন রে, এই দেওয়ালে টাঙানো থাকবে। আমি নয় আর বেশিদিন থাকব না, এইরকম বিশেষ দিনগুলোতে তোরা সকলে আজকের মতো হৈ চৈ করবি, ছবিটা দেখবি...”
গ্রুপফটো তোলা হলো।
বিদেশে থাকলে দেশে অনেক কাজ থাকে। গ্রুপ ফটোটা সেবার আর বড় করে ছাপানো হয়ে ওঠেনি।
পরের বার কলকাতায় এলাম বছর তিনেক পরে। ফটোটার কথা কিন্তু মনে ছিল। ছবিটা বড় করে ছাপালাম, দেওয়ালে টাঙাবার ফ্রেমও করিয়ে নিলাম। শুভ্রর ল্যান্ডলাইন নম্বরে ফোন করে পেলাম না -- বলল এই নম্বরের অস্তিত্ব নেই, ইত্যাদি। মানে নম্বর পালটে গেছে। এক রবিবার সকালে ছবিখানা নিয়ে চললাম শুভ্রদের বাড়িতে, ও না থাকলে অন্য কারুকে দিয়ে আসব। গিয়ে কিন্তু বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। বাড়ি নেই। ভেঙে মাঠ করে দিয়েছে। ছড়িয়ে থাকা ভাঙা ইঁট আর রাবিশের মধ্যে একটা কপাট বিহীন দরজা কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে শুধু। বুঝলাম সব এখন প্রমোটারের হাতে। এখানে এবার চার-পাঁচতলা ফ্ল্যাট বাড়ি গজাবে।
ছবিটা নিয়ে কী করি? শুভ্রর ঠাকুমা কী আছেন এখনো...? ঠিকানা খুঁজে দিয়ে আসব? কিন্তু দিয়েই বা কী হবে, যে দেওয়ালে ছবিটা টাঙাবার কথা ছিল, সে দেওয়ালটাই তো আর নেই এদের!
ধর্মতলার মোড়ে শুভ্রর সঙ্গে হঠাৎ দেখা। “অ্যাই শুভ্র, না দেখে চলে যাচ্ছিস্ যে...”
- “আরে তুই! বিলেত থেকে কবে এলি”
- “গত সপ্তাহে, এ মাসটা আছি”
দু-একটা কথা হবার পর শুভ্র বলল, “শোন, আমার তাড়া আছে একটু। তুই আজ সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে চলে আয়, একটা গেট-টুগেদার মতো আছে”।
গেলাম। গিয়ে দেখি শুভ্রর ছোট মেয়ের জন্মদিন। শুভ্রদের বাড়িটা ঠাকুরদাদার আমলের, অনেকটা ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’ প্যাটার্নের। এক হাঁড়ি না হলেও, এক ছাদের পরিবার। খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো ভাইবোনদের হুল্লোড় আর খাওয়াদাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল, এক ছাদের এই পরিবারটি হয়তো আরও কিছুদিন টিকে থাকবে।
সে সময় বিদেশে ডিজিটাল ক্যামেরা জিনিসটা সবে বাজারে উঠেছে। এদেশে তেমন করে সবার হাতে হাতে তখনও দেখা যেত না। তাই ক্যামেরা বার করে পটাপট্ ছবি তুলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছিলাম। এমন সময় আমার পিঠে কার যেন হাত পড়ল। ফিরে দেখি শুভ্রর ঠাকুমা। “তোমার এটাতে দেওয়ালে টাঙাবার বড় ছবি হয়?”
- “হ্যাঁ, কেন হবে না! এইখানে যা দেখছেন, তা বড় করে কাগজে ছাপিয়ে নেওয়া যায়”
- “তাহলে বাবা, সব্বাইকার একসঙ্গে একটা ছবি তুলে দেবে... তারপর বড় করে...”
শুভ্র পাশেই ছিল। বলল, “বড় ছবি নিয়ে কী করবে তুমি ঠাকুমা”
- “কেন রে, এই দেওয়ালে টাঙানো থাকবে। আমি নয় আর বেশিদিন থাকব না, এইরকম বিশেষ দিনগুলোতে তোরা সকলে আজকের মতো হৈ চৈ করবি, ছবিটা দেখবি...”
গ্রুপফটো তোলা হলো।
বিদেশে থাকলে দেশে অনেক কাজ থাকে। গ্রুপ ফটোটা সেবার আর বড় করে ছাপানো হয়ে ওঠেনি।
পরের বার কলকাতায় এলাম বছর তিনেক পরে। ফটোটার কথা কিন্তু মনে ছিল। ছবিটা বড় করে ছাপালাম, দেওয়ালে টাঙাবার ফ্রেমও করিয়ে নিলাম। শুভ্রর ল্যান্ডলাইন নম্বরে ফোন করে পেলাম না -- বলল এই নম্বরের অস্তিত্ব নেই, ইত্যাদি। মানে নম্বর পালটে গেছে। এক রবিবার সকালে ছবিখানা নিয়ে চললাম শুভ্রদের বাড়িতে, ও না থাকলে অন্য কারুকে দিয়ে আসব। গিয়ে কিন্তু বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। বাড়ি নেই। ভেঙে মাঠ করে দিয়েছে। ছড়িয়ে থাকা ভাঙা ইঁট আর রাবিশের মধ্যে একটা কপাট বিহীন দরজা কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে শুধু। বুঝলাম সব এখন প্রমোটারের হাতে। এখানে এবার চার-পাঁচতলা ফ্ল্যাট বাড়ি গজাবে।
ছবিটা নিয়ে কী করি? শুভ্রর ঠাকুমা কী আছেন এখনো...? ঠিকানা খুঁজে দিয়ে আসব? কিন্তু দিয়েই বা কী হবে, যে দেওয়ালে ছবিটা টাঙাবার কথা ছিল, সে দেওয়ালটাই তো আর নেই এদের!
দারুন।
উত্তরমুছুন