কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩

০২ অলোকপর্ণা

অদিতিকে সব্বাই চায়
অলোকপর্ণা



অদিতিকে সবাই চায়। ঈশান অদিতির সমস্তটা দু’ হাতের মুঠোয় পুরে রাখতে চায়, মৃন্ময় অদিতিকে ছায়ার মতো সেঁটে নিতে চায় নিজের সঙ্গে, আর রাহুল চায় অদিতির ভিতরে অবিরত আনাগোনা করতে। অদিতি এসব জানে। অদিতি জানে প্রতিটা মানুষের ভিতরের নদীর কথা। কারোর পার ভাঙে, কারো বুকে জমে থাকে চরা, যা সে ওগরাতে পারেনি কখনো কারও কাছে। তেমনই এক নদী নিয়ে অদিতি উত্তমের পারে এসে দাঁড়ায়। উত্তম তখন বিছানায় পাঁজরের হাড়গোনা বুক মেলে শোওয়া। অদিতি রায় উত্তমের উপর উঠে পড়ে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে উত্তমের। আর অদিতির উত্তেজনা বেড়ে যায়। উত্তমের মুখে জিভ ঢোকাতেই সুইট কর্নের দানাটা তার মুখে চলে আসে, ডিনারে যা চামচে তুলে উত্তম তাকে বলেছে বিগ ব্যাং-এর আগে তার সমস্ত দুনিয়া ওইটুকু ভুট্টাদানার মধ্যে আটকানো ছিল। সেই ভুট্টাদানা এখন উত্তমের মুখ থেকে চলে এসেছে অদিতির মধ্যে। অদিতি তাকে উত্তমের জিভে চালান করে আবার। খানিকক্ষণ নিজেদের দুনিয়াটা নিয়ে চাপানউতোর চলে ওদের মধ্যে। তারপর একসময় আর থাকতে না পেরে অদিতি উত্তমের বারমুডাটা একটানে নামিয়ে দেয়।

উত্তম কি বলছিল আজ, কৃষ্ণ গহ্বরের কথা, -- অদিতি মন দেয়নি উত্তমে। বেশির ভাগ বিকেলে সে যখন নদীতীরে সূর্যাস্ত দেখে, তখন উত্তমের কোনো কথাই তার কানে ঢোকে না। উত্তম তখন জলে এক পা ডুবিয়ে দাঁড়ানো বক বা রেশ ফেলে রেখে দূরে মিলিয়ে যাওয়া জেলে ডিঙা ছাড়া আর কিছুই নয়। অদিতি রায় সবাইকে এরকম ব্লারি দেখতেই পছন্দ করে। তাই এখন উত্তমের যাবতীয় শীৎকার গৌণ হয়ে ওর বুকের কৃষ্ণ গহ্বরটা বিরাট হয়ে ওঠে অদিতির কাছে। অদিতি মুখ ডুবিয়ে দেয় তাতে, -- আঃ জল! শান্তি মেলে না, অদিতি হাত রাখে, উফ্‌ জল!-- স্বস্তি মেলে না, উত্তমের বুকে এ কী তৈরি হলো! অদিতি কান পাতে, জলের গভীরে কোনো এক কৌ্টোবন্দী ভোমরারর মতো উত্তমের অতিদ্রুত কিন্তু ক্ষীণ হার্টবিট শোনা যায়। সে সেই গহ্বরে ডুবিয়ে দেয় নিজের বুকদুটো, বুদ বুদ উঠে আসে। আপ্রাণ কে যেন অদিতির সমস্তটা টেনে নিচ্ছে ওর থেকে। অদিতির চোখে ঝাপসা হয়ে ওই গর্ত ছাড়া বাকি সব, এমনকি সে নিজেও উধাও হয়ে যায়। কেবল অপার টানে অদিতি নিজের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে ঢুকে যেতে থাকে উত্তমের বুকের অন্ধকার গর্তের মধ্যে। উত্তমের শীৎকার বাড়তে থাকে, আর অদিতি চুপ।

অদিতি রায় জলের উপর শুয়ে থাকে। অনেক নিচে লাল নীল মাছ চলে যাচ্ছে, জলজ গুল্মে ফুটে আছে শত পাঁপড়ি মেলা নীলপদ্ম। জলের উপর, ফেনার মতো ভাসছে অদিতি, ফেনা হয়ে ভাসছে সে। জল থেকে মুখ তোলে সে। তার ভেজা চুল থেকে টপ টপ জল পড়ে উত্তমের গলায়, আর তারা হয়ে খসে পড়ে উত্তমের কাঁধ বেয়ে তার বুকে, প্রবল টানে, কৃষ্ণ গহ্বরের মাঝে। অদিতি অনেক কষ্টে গহ্বর থেকে নিজেকে পৃথক করে নেয়, আর দেখে, উত্তমের বুকে কালো গর্ত থেকে জেগে আছে অদিতির মুখ, অদিতিরই দিকে তাকিয়ে।

টেনে নিজেকে বিছানায় নামিয়ে আনে অদিতি, উত্তমকে হাত দিয়ে ঠেলে আবছা করে দেয় বিছানার কোনো এক প্রান্তে। নিজের বুকে উঠে আসে অদিতি রায়, দুই হাতে খামচে ধরে নিজের বুকদুটো। দুই হাতে আঁজলা ভরে সে তুলে আনতে চায় নিজের সমস্তটা। নিজের মুখে নিজেকে পুরে জিভ থেকে জিভে সেই ভুট্টা দানার দুনিয়া খুঁজে ফেরে সে। অদিতির একটা হাত প্রবেশ করে অদিতির মধ্যে, তার মুখের ভিতর এক ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হতে থাকে। মহাশূন্যে অদিতি নিজেকেই হাতড়ায়, -- এক সময় পায় তল। আঃ শান্তি! নিজের সঙ্গে নিজেকে সাপটে নেয় অদিতি, আঃ স্বস্তি! অনবরত নিজের ভিতর থেকে বাইরে আনাগোনা করতে থাকে সে। নিজেকে ছাড়া অদিতি রায়ের আর কিছুই বোধ হয় না। আঃ...

উত্তম উঠে বসে, দেখে, -- অদিতি নীল পদ্মের মতো ফুটে উঠছে বিছানায়। এক একটা পাঁপড়ি মেলার সাথে সাথে শীৎকারে ভরে যাচ্ছে সমস্ত ঘর। অদিতি রায় নিজেকে চাইতে শুরু করছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন