কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 


কালিমাটি অনলাইন / ১১৩ / একাদশ বর্ষ : তৃতীয় সংখ্যা




গত ২৪শে বৈশাখ আমি সস্ত্রীক গেছিলাম বোলপুর-শান্তিনিকেতন। আমার সহযাত্রী ছিলেন সপরিবার কবি অনিরুদ্ধ সুব্রত। যাবার কথা ছিল সস্ত্রীক বিমান মৈত্ররও। কিন্তু পারিবারিক কারণে তিনি শেষপর্যন্ত যেতে পারেননি। আমরা সবাই আমন্ত্রিত ছিলাম শান্তিনিকেতনের মুদ্রিত ও অনলাইন ‘ভুবনডাঙা’ পত্রিকার ২৫শে বৈশাখ সংখ্যা প্রকাশ ও কবিতা পাঠ এবং আলোচনার জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে। আমাদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছিলেন পত্রিকার পক্ষ থেকে আমিনুল ইসলাম এবং রুদ্র কিংশুক। আমরা খুবই উৎসাহিত ও উল্লসিত ছিলাম জীবনে এই প্রথম ২৫শে বৈশাখ শান্তিনিকেতনে একই দিনে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রজয়ন্তী ও ‘ভুবনডাঙা’ পত্রিকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য লাভ করে। আমি অবশ্য  ব্যক্তিগতভাবে নিতান্ত ছেলেবেলা থেকে শান্তিনিকেতনে যাবার ও থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার মায়ের এক মামা প্রয়াত যদুপতি বসু ছিলেন সেই রবীন্দ্রনাথের সময়কাল থেকে কলাভবনের শিল্পী ও শিক্ষক। বিখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজ সবাই ছিলেন আমার দাদুর বন্ধু ও সহকর্মী। আমার অস্পষ্ট মনে পড়ে, আমি ও মা দাদু-দিদার সঙ্গে সেই ছেলেবেলায় যেতাম ক্ষিতিমোহন সেন, নন্দলাল বসু, প্রবোধচন্দ্র সেন এবং আরও অনেকের শান্তিনিকেতনের বাসভবনে। বড় হয়েও বেশ কয়েকবার শান্তিনিকেতনে গেছিলাম বিভিন্ন সময়ে। রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনেও গেছিলাম। ড. ভবতোষ দত্তর বাসভবনেও। কিন্তু এতবার শান্তিনিকেতনে যাওয়া আসা সত্ত্বেও কখনও ২৫শে বৈশাখ যাওয়া হয়ে ওঠেনি।  এমনকি কখনও পৌষমেলাতেও যাওয়া হয়নি, শুধু একবার ভাঙামেলার দিনগুলিতে শান্তিনিকেতনে ছিলাম। যাইহোক যে জন্য এই সম্পাদকীয় লিখতে বসেছি, তাতে একইসঙ্গে আশা ও হতাশার কথা উল্লেখ করতে বাধ্য হচ্ছি। শুধু হতাশাই নয়, নিরাশার কথাও। ২৪শে ও ২৫শে বৈশাখ বোলপুরে অবস্থান করেও বোলপুরে এবং  শান্তিনিকেতনে কোথাও রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী পালনের কোনো অনুষ্ঠানের সন্ধান পাইনি। কানে ভেসে আসেনি এককলিও রবীন্দ্রসঙ্গীত। এমনিতে বিশ্বভারতীর দরজা তো বিশ্বের আমাদের মতো মানুষজনদের জন্য প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। আগে যতবার শান্তিনিকেতনে এসেছি, বিশ্বভারতীর প্রতিটি কোণে কোণে ঘুরে বেড়িয়েছি। মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আশ্রম রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে পরিণত হয়েছিল বিশাল মহীরুহে। বিশ্বের মানুষকে তিনি আমন্ত্রণ করে এনেছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ কী আশ্চর্য! সেই বিশ্বভারতীর দ্বার আজ রুদ্ধ বিশ্বের মানুষের কাছে। এবং যেহেতু রুদ্ধ, তাই এবছর বিশ্বভারতীর অন্দরে রবীন্দ্রজয়ন্তী কীভাবে পালিত হলো, অথবা আদৌ পালিত হয়েছে কিনা, কিছুই জানা হলো না, দেখা হলো না। তাই খুব স্বাভাবিক ও সঙ্গত কারণেই মনে প্রশ্ন জাগে, শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ কি ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে  পড়েছেন? তাঁকে আর প্রয়োজন নেই বিশ্বভারতীর? বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম জানতে পারছি, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকদের কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেছেন, রবীন্দ্রনাথের কোনো লেখা নাকি শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যসূচির সিলেবাসে থাকা আর জরুরি নয়! রবীন্দ্রভাবনা নাকি ক্রমশ তামাদি হয়ে গেছে! আমি খুবই সামান্য সাধারণ মানুষ, তাই এব্যাপারে আমার কোনো অভিমত প্রকাশ করা হয়তো সঙ্গত হবে না, কিন্তু মনের মধ্যে যে দুঃখ ও ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে উঠেছে, তা তো প্রকাশ করতেই পারি! বেশ কিছুদিন থেকেই শুনছি, শান্তিনিকেতনে আর শান্তি নেই। আর এবছর শান্তিনিকেতনে পৌঁছে আমার মনে হলো, শান্তিনিকেতনে আর রবীন্দ্রনাথও নেই।

তবে আমার মনের এই দুঃখ ও ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে, সোনাঝুরিতে আয়োজিত ‘ভুবনডাঙা’ পত্রিকার ২৫শে বৈশাখ সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে। সেই অনুষ্ঠানে আমি একইসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং কবিতা কেন্দ্রিক আলোচনায় ঋদ্ধ হয়েছি। অত্যন্ত আন্তরিক এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রশান্ত গুহ মজুমদার, তানিয়া গুহ মজুমদার, কৃশানু গুহ মজুমদার, মুরারি সিংহ, যূথিকা চৌধুরী, সৌরভ বর্ধন, নীপবীথি ভৌমিক, প্রকাশ ঘোষাল, হরিত বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় মুখোপাধ্যায়, স্বপন দত্ত, সোমা মুখোপাধ্যায়, সমরেন্দ্র রায়, দেবব্রত রায়, নিয়াজুল হক, মৌমিতা মিত্র এবং আরও অনেকে। অনুষ্ঠানস্থল ছিল মনীষা মিশ্রর শ্রমণা আর্ট গ্যালারি। আমিনুল ইসলাম ও রুদ্র কিংশুকের প্রতি জানাই আমার শুভেচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতা। আর খুব ভালো লেগেছে বিশ্বভারতীর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. উমাশঙ্কর মালিকের বাসভবনে গিয়ে। উমাশঙ্করবাবু, তাঁর স্ত্রী শিক্ষিকা পাপিয়া মালিক এবং কন্যা সাহিত্য গবেষণার ছাত্রী পৌলমী মালিকের সঙ্গে কয়েক ঘন্টা উপভোগ্য সময় কাটিয়েছিলাম।

সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন