কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

সুনন্দ অধিকারী

 

সমকালীন ছোটগল্প


প্রথম অথবা শেষ গান

 

জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে

বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে…

সুপ্রভাত মেসেজ না পাঠিয়ে, বদলে প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপে গান পাঠায় নির্মাল্য। অন্য কোনো গান নয়। কেবল রবীন্দ্রসঙ্গীত।

পৃথা জানে। সাতটা, বড় জোর সাড়ে সাতটার মধ্যে গান আসবেই। অন্যথা হলে কোনো সমস্যা নির্ঘাত। তখন সে ফোন করে নির্মাল্যকে। তাদের আলাপ প্রায় বছর পাঁচেক হল। মানে কমবেশি আঠারশ পঁচিশ দিনে একদিনও ব্যাতয় ঘটেনি এর।

আসলে অকস্মাৎ স্ত্রী বিয়োগের অভিঘাতে নির্মাল্যর যখন টালমাটাল অবস্থা। ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে অবসাদের চোরাবালিতে। তখনই সাইকোলজিস্ট হিসেবে পৃথার প্রবেশ নির্মাল্যর জীবনে। ক্রমে তা পেশাদারিত্বের গণ্ডী অতিক্রম করে পর্যবসিত হয়েছে গভীর বন্ধুত্বে। আজ দু’জনে পরস্পর প্রকৃত বন্ধু তো বটেই, তারা একে অপরের সুহৃদ ও মঙ্গলাকাঙ্ক্ষীও।

অবশ্য এই পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যতিক্রম ঘটেছিল দু’বার। সেই দু’দিন সকালে পৃথার ফোন পাবার পর গান পাঠিয়েছিল নির্মাল্য। আর সেই দুটোই ছিল শনিবারের সকাল। উইক এন্ডে আপিস ফেরত বন্ধুদের সঙ্গে পানভোজনের মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়ায় সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেছিল নির্মাল্যর। তারপর অবশ্য যা বকা খেয়েছিল পৃথার কাছে হ্যাংওভার ও ঘুম দুটোই ছুটে গিয়েছিল একলপ্তে।

ল্যান্ড লাইন ডিসকানেক্ট করে দেবার পর চব্বিশ ঘন্টাই মোবাইল খুলে রাখে নির্মাল্য। এ’ব্যাপারে তার যুক্তি অকাট্য। “চেনাজানার ভেতর রাতবিরেতে কারও যদি কোনো বিপদ ঘটে তখন সে যোগাযোগ করবে কেমন করে?” ছেলে নীহারও প্রথমে আপত্তি করলেওশেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছে বাবার যুক্তি।

সেদিনও শনিবার। সাড়ে সাতটা কেন, আটটাও বেজে গেছে ঘড়িতে। নির্মাল্য তখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। গতকাল সে  রাত করে বাড়ি ফিরেছিল ঠিকই, তবে তার কারণ অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখতে যাওয়া।

নীহার উঠে পড়েছে সকাল সকাল। আজ সে তার ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের সঙ্গে সারাদিনের আউটিংএ বেরোবে। চানটান করে সম্পূর্ণ রেডি হয়েও সে দেখল নির্মাল্যর তখনও ঘুম ভাঙেনি। তাই একরকম বাধ্য হয়েই ডাকতে হল তাকে-

“বাবা বাবা..আ ও বাবা..আ…”

এরকম করে আরও দু’তিনবার ডাকল সে। কিন্তু তাতেও ঘুম ভাঙল না নির্মাল্যর। তাই একরকম বাধ্য হল ঠেলে ওঠাতে। আর তখনই নির্মাল্যর গায়ে হাত পড়তেই চমকে উঠল সে!

“একি এত ঠাণ্ডা কেন বাবার গা!” স্বগতোক্তি করে ওঠে নীহার।

এখন প্রথম কাকে জানাবে সে এ’খবর? হ্যাঁ। পৃথা আন্টিকেই প্রথম জানানো উচিত খবরটা।

মাথার বালিশের পাশ থেকে নির্মাল্যর মোবাইলটা তুলে নেয় নীহার। নেট অন রয়েছে ফোনে। বাবার পাসওয়ার্ডও সে জানে। ফোন আনলক করতেই দ্যাখে, একটা মেসেজ রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করে নীহার। দ্যাখে পৃথা আন্টি একটা অডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন বাবাকে।

হ্যাঁ। এই পাঁচবছরে নির্মাল্যকে কোনোদিন কোনো গান পাঠায়নি পৃথা সান্যাল। সেইদিন কী মনে করে জীবনে প্রথম গান পাঠিয়েছে সে।

নীহার চালিয়ে দ্যায় গানটা।

 

 

 

 


1 কমেন্টস্: