কবিতার কালিমাটি ১২৮ |
প্রত্ন উচ্চারণ
উড়ছ কোথায়
উচ্চারণ, একটু নেমে এসো
বোসো এই শাখাতে,
এই কোটরের কাছে
এই যে তোমার
ছই-নৌকো, শাপলা পদ্ম বনে
মেঠো আলোয়
তেমনই তো, দেখেছ আনমনে
আকাশ কবে প্রান্ত
মানে, ডানাওয়ালা মেঘ
আবেগ ভরা সমুদ্র
জানে, অনন্ত উদ্বেগ
তবু যে কোন
ঘূর্ণিঝড়ে বাংলা ভাষার দেশ
উড়ছ কোথায়
উচ্চারণ, খড়কুটোকে চেনো
নদীর পারে বাজছে
বাঁশী, মন দিয়ে তো শোনো
সব আলপথ মুছে
যায়নি, সব নাঙলের গান
সব কি আর ঢাকতে
পারো, বিরহের আপ্রাণ
একুশ এক গোপন
জিহ্বা, স্বপ্ন সাধ বিষাদ
উড়ছ কেন বিড়ম্বনায়,
এতো দ্বন্দ্ব দীর্ণ খাদ
আন্তর্জাতিক
সুবর্ণ ধোঁয়াশায়, দ্বিধান্বিত তুমি
উড়ছ কোথায়
ময়ূরপঙ্খী, দেখো নিচে মাতৃভূমি।
ডানা
ভেবেছি, প্রতিটিই
চরম শক্ত, গিঁট তো
মোটা তাঁবু,
মাটি ছাড়বে না কোনো দিনও
মায়া মেখে
মেখে, দিয়েছি খেতে, দুহাতে
জীবনের কাছে
যত যত বার্তা দিয়েছি
সে-ই বিস্মৃত
দেখি, সেই ক্ষুদ্র সর্বপ্রথমে
কয়েকটি গিঁট
-- উজাড় বক্ষ দিয়ে বাঁধা
রক্ত, হৃদয়,
প্রত্যয়ে প্রতিপাক তার বোনা
উদ্বিগ্নতার
টানে, টানটান করে ধরে রেখে
দুর্যোগকে যেন
দুচ্ছাই বলে বলে ঘন হাসা
ভেবেছি, মৃত্যুকে
আর মোটে তো মানব না
নাড়ীর নহবতে
জড়াজড়ি এতো ঘরবাড়ি
সহবাসের আবাসে
এতো যে বাসাবাসি
হাজার মানুষের
ভিড় পথ ভেঙে ভেঙে
প্রতিশ্রুত
আঙুলে মোহ মধ্যাহ্ন অভিযানে
এর চেয়ে শক্ত
আর কী কোনো আছে গিঁট
আরও কিছু হয়
নাকি দৃঢ় ও ঋজুতর সুতো
হয়তো হয়,
হয়তো আমার নিমিত্ত হলো না
শেষে খুলে খুলে
তবু, উড়িয়ে দিয়েছে তাঁবু
চারদিক এতো
গেছে খুলে, খুলেই ছিল কিনা
জানা নেই বলে
জানতে চাইনি, জানা হবে না
রাজকীয় ঘুড়ি
এই -- কোথাও লাটাই যে নেই
কোথাও যে নেই
বিকেল পেরিয়ে সন্ধের ভয়
ভেবেছি সবই
শক্ত গিঁট, প্রকৃতপক্ষে তো নয়।
বলতে হবে বলে
এক নিঃশ্বাসে
সব বলে ফেলতে নেই,
এমনও হতে পারে,
শ্রোতারই শ্বাস-ব্যাঘাত
শ্রবণযন্ত্র
পিছিয়ে রয়েছে কয়েক দিন
স্নায়ুর কাজকর্ম
স্থাণুবৎ, অথচ বলা হয়ে গেল সব
এক নিঃশ্বাসে
সব বলে ফেলতে নেই,
হতে পারে, আঘাতের
আগে খসে গেল
অপুষ্ট শব্দেরা,
ভাবের সঙ্গে হলো না দেখা
'বলা হয়ে গেল'
বলে -- রোগা আনন্দ হলো ঠিকই
মনের কাজকর্ম
-- বিরতি নিয়ে খুঁজতে বসল
কারণ
এক নিঃশ্বাসে
সব বলে ফেলতে নেই,
কথা ও কবিতার
মিল এবং অমিল এখানেই
রাস্তার ও রাজভবনের
আলোর যেমন তফাৎ
মেঘ ও মেট্রোর
গতি তুমিও তুলনা করো না
মনে করো যদিও
-- কথারা মন ও মননের
একমাত্র মধ্যস্থতাকারী।
পরিচয়
আমার মধ্যে
ততবার তোমাকে ছুঁই
তুমি মানে একটি
আইডিয়া, আইডি নয়
সীমান্ত মানে
তো কাঁটাতার, ভূগোল নয়
শরণার্থীর কাছে
দেশ জিজ্ঞাসা কোরো না
ফকিরের কাছে
জৈবনিক প্রীতি, প্রেম
গাড়িতে মাঠ
পেরোতে শুনে যাও রাখালের গান
নগরের মধ্যে
উঠোন, অথচ স্বতন্ত্র সদর তার
আমার মধ্যে
তোমাকে ছুঁয়ে বাঁচা যায় যেমন
ধারণাকে ধারণ
না করলেই, মুক্ত তেমন
সবচেয়ে বড়
দ্বন্দ্ব -- রাখা রাখি অপরিসর
অসঙ্কুলান মানুষের
মধ্যে অন্য মানুষ
তবু এক বোধ
ছুঁই, নির্বোধ বেমানান
যতবার খুঁজে
পাই না বাইরে, ততবার
আমার মধ্যে
তোমাকে ছুঁই, অর্ধেক আমি
ঠিকানা সহ কোনো
আইডি নয়, আইডিয়া
ভুল হলেই সবটা
মিথ্যে নয়, স্বতন্ত্র ঠিক
নিজেকে দেখার
মধ্যে লুকোনো থাকে থাক
অস্তিত্বের
ধারণা সত্যি, হোক আইডি সংকট।
অতিথি
ছুটি পেলে,
বেড়াতে আসুন এখানে
মুগ্ধ গল্পের
এক অবকাশ রিসর্ট
কাঁচা দিগন্তের
দিকে নরম ঝর্ণাজল
দেখে মনে হবে
তুলতুলে সূর্যটা কাঁদছে
কাছে এসে দাঁড়াবে
হরিণ, শৃঙ্গ ছুঁয়ে দিন
নখে ছিঁড়বেন
বলে ঝাউপাতারা কাঁপছে
ছুটি পেলে বেড়াতে
আসুন এখানে
জোছনা ও শিশির
রসে বন্যতা মেখে
কাঠ-আগুনে সেঁকে
ধোঁয়ার স্বাদ নিন
মনে হবে, পাথর
অরণ্য শুধু আদর নিয়ে
হাজার জন্ম
ধরে বসে আছে নিবেদনে
ছাড়বে না যেন
কিছুতে, আপনাকে পেলে
ছুটি পেলে,
বেড়াতে আসুন এখানে
ছুটি শেষ হলে
ফিরে গিয়ে ভ্রমণ-গল্প লিখুন
একটি নির্জন
উপত্যকা ও পাইন গাছেদের কথা।
খুব ভালো সব কটি কবিতা
উত্তরমুছুনবেশ ভালো লাগল কবিতাগুচ্ছ..
উত্তরমুছুন