কবিতার কালিমাটি ১২৮ |
জখম জানোয়ারের আত্মজীবনী
এই দেখা
যায়
এই বিলুপ্ত
তারপরই
দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ঘুরপাক রাস্তা
আবার
হারিয়ে যায় পাহাড়ের বাঁকে।
আমার বুকের
বাঁ দিকটা খামচে ধরে তুমি বলতে
রাস্তা যে
আমাদের ছেড়ে চলে গেল সখা
ফেরার উপায়
নেই।
পাহাড়
চূড়াতেই আমরা বন্দি হলাম আজীবন।
পাহাড়ি
রাস্তার দু'পাশে প্রত্যেক বাঁকে ঢালাও সৌন্দর্য
কোথাও
রংবেরঙের ফুল
কোথাও কাঁকর
মাটি বাদামি
ছোট মেজ গাছ
ভীষণ সবুজ
মাটিতে পড়ে
থাকা ঝরাপাতা, ঝরা ফুলের গালিচা।
প্রকৃতিকে
সারা জীবন ভালোবেসেছ তুমি
সে তো মানুষের মতো পুরনো, একঘেয়ে হয়ে যায় না।
তোমার চোখের
প্রলম্বিত মুগ্ধতা ছিঁড়ে গেল।
আহত একটা
জানোয়ার
ভীষণ ভাবে
জখম
হাঁচর পাঁচর
করে কোনমতে
পাহাড়ি
রাস্তা দিয়ে নেমে যাচ্ছে।
রক্তে ভেসে
যাচ্ছে তার বুক
আর ভেসে
যাচ্ছে নিচের দিকে নেমে যাওয়ার ঘুরপথ।
তোমার ডান
পাশে তখন আমি নেই।
মাতৃত্বের আত্মত্যাগ - সর্বভূতেষু
লেক্স
জানত...
স্টেগোমায়াকে
নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে
দুমড়েমুচড়ে
ফেলে দেওয়া হয়েছে তার মৃত শরীর।
কিন্তু তার
জন্য দায়ী তো স্টেগোমায়ার লোভ,
কাঁচা
আদ্রতার জন্যে তার লোলুপতা, রূধিরতৃষ্ণা।
রেক্সের
বারণ সে শোনেনি কখনো।
সারাদিন তারা
থাকত তারা প্রকৃতির বুকে, কী সুখে
পবিত্র জল,
নির্মল বাতাস, মিষ্ট রস, মিষ্টতর রমন্যাস।
কেবল
রাতটুকু পরাশ্রয়ী হয়ে কাটাতে হতো, সাবধানে।
কিন্তু তখনই
স্টেগোমায়া হয়ে উঠত শোণিত লোলুপ।
সেই লোভে
পাপ, পাপে মৃত্যু। প্রণয়িনীর জীবনাবসান।
লেক্স জানত
না...
স্টেগোমায়ার
গর্ভে থাকা ডিম্বাণুদের পুষ্টির জন্যই
সে জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে রক্ত খুঁজেছে, করেছে পান।
নিভৃত
জলাশয়ে প্রসব করে এসেছে শতাধিক ফলপ্রসূ সম্ভাবনাময় ডিম্ব।
সেই সব
অণ্ডোদ্গত শূককীট থেকে অচিরেই
একঝাঁক
শক্তিশালী রক্তবীজের ঝাড় জন্ম নেবে, আর
মশক বংশ
করবে বিস্তার।
কোন নৃশংস
চক্রান্ত বিলুপ্তির অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারবে না
চিরকালীন
মাতৃত্বের প্রতিভূ স্টেগোমায়ার সন্তান-সন্ততিদের।
সন্তানসম্ভবা
নারী যদি জীবনের ঝুঁকি না নেয়,
হে দম্ভী
পুরুষ,
তোমাদের
বংশরক্ষা, বংশবৃদ্ধি হবে কি করে!
লও এ নগর
অবশেষে
তোমার প্রেমেই পেয়েছি আশ্রয়
আভিজাত্যের
শ্বাসরোধী কুহক পার হয়ে,
অদক্ষতা
হয়তো আছে, নেই তবু সংশয়
এতকালের
ধ্যান-ধারণা? কাটবে রয়ে সয়ে।
এই মীমাংসা
তোমায় এবং কর্ষণ ভালবাসতে
শ্বেতসার
চূর্ণ, পূর্ণ যৌবনের ভরা শস্য,
অস্ত্র অমার
লাঙ্গল, অরাজনৈতিক কাস্তে
জননশক্তি,
অবুঝ প্রেম, সবুজ সামঞ্জস্য।
কালত্রয়ের
গরহাজিরি, পাথুরে মাটি কাটা
নিসর্গজ
তোমার রূপে সরল প্রেমের ধোঁয়া
দিশা খোঁজার
প্রণোদনা, তোমার পানে হাঁটা
বন্ধুর পথে
বন্ধু তোমার অনুরাগের ছোঁয়া।
ঘাম ঝরাবো
তোমার বুকেই, কষ্ট হবে জানি
কখনো খরা
জ্বালাময়ী, কখনো বানভাসি
রজস্বলা
মৃত্তিকা দেয় জীবনের হাতছানি।
একটু
দাঁড়াও, নগরটাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন