কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

অঞ্জন সেনগুপ্ত

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

 

রূটম্যান




 

(১৫)

 

তোমারে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে

আমাদের রাজ্যের সীমান্তবর্তী গ্রামাঞ্চলগুলো সব সময় কর্মমুখর থাকে। কাগজওয়ালাদের মাঝে মাঝেই এসব গ্রামে ঢুঁ মারতে দেখা যায়। এরা কেউ কাগজ বিক্রি করতে আসেন না। বরং এরা আসেন খবর কিনতে। বিভিন্ন মশলাদার খবরের সুলুক সন্ধান করাই হল এদের রুজি-রুটির অঙ্গ। সব সময় যে একেবারে এক ব্যাগ খবর নিয়ে যেতে পারেন, তাও নয়। কারণ হাজার হোক শহুরে বাবুদের দেখলে বিশেষ করে খবরের কাগজের বাবুদের দেখলে ইদানীং গ্রামবাসীরাও মুখে কুলুপ এঁটে দেয়। মজার কথা শুনলেও কেউ হাসে না। হাজার হোক বাতাসেরও যে কান আছে তা সবাই বিশ্বাস করে। তাই যতটুকু বলে তাও আবার রেখে ঢেকেই বলে। নিজের প্রাণের ভয় তো সবারই আছে। কাজেই তারাও ইদানীং ভাববাচ্যে গল্প বলা শিখে গেছে! কিছুটা ধরি মাছ, না ছুঁই পানির মতো ।

যে কোন গ্রামেই এখনও মাস্টারমশাইদের বেশ কদর। তা তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অথবা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, যাই হন না কেন! পাঁচজনে তাঁদের কথা শোনে। অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত সমস্যায় সেই শিক্ষকদের কাছেই ছুটে যায় দুটো ভালো উপদেশের জন্য বা পঞ্চায়েতে একটা দরখাস্ত লেখানোর কারণে। তেমনি এক উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন সতীশ দাস। গ্রামের প্রায় সবাই তাকে পন্ডিত স্যার বা শুধুই মাস্টার বলেই সম্বোধন করে থাকে। এখন তাঁর হাতে অফুরন্ত সময়। আজীবন প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েই স্কুলে যাতায়াত করেছেন। সদ্য সদ্য অবসর নিয়েছেন বলেই আজো তাঁর শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভালই আছে। আজো বেশ কর্মঠ। আজো নিজে ঠায় আলের উপর ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থেকে নিজের জমিতে মুনিষ খাটান। নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করেন। আর বিকালের দিকে গিয়ে বসেন মাচায়। সে সময় তার সম বয়সীরাই মূলত আসেন। দিব্বি তাসের আড্ডা জমে যায়। কেউ আবার লুডোও খেলেন।

দুপুরের দিকে যে কোন গ্রামের রাস্তাও সুনসান হয়ে যায়। ঘরে ঘরে তখন দুপুরের খাওয়া দাওয়ার তোড়জোড় চলে। এসবের পাট চুকে গেলে সাধারণত ছাগল-গরুকে জল খাওয়ান ছাড়া গৃহস্থদের আর তেমন কাজ থাকে না। তাই কেউ গড়িয়ে নেয়। আবার কেউ দাওয়ায় বসে পাট দিয়ে তকলি কাটে। দড়ি বানায়। গরুর মুখের জাল তৈরি করে। এভাবেই সূর্য এক সময় পশ্চিমে ঢোলতে শুরু করে। আর তখনই অবলারা একে একে বাড়ি ফিরে আসে। আর যারা চরের জমিতে তখনও থেকে গিয়ে মনের আনন্দে ঘাস খেয় চলে তারা জানেও না এর পর তাদের অদৃষ্টে কি অপেক্ষা করছে! আর সূর্যটা যখন একেবারে নদীর জলে টুপ করে ডুবে যায় তখন থেকে সারা গ্রাম জুড়েই শুরু হয়ে যায় আর এক ধরনের নৈশ দাপাদাপি। অথচ জানলেও কারোর টু শব্দটি করার উপায় নেই! প্রতিবাদ করা তো দূরের ব্যাপার! তখন  শিশুরাও যেন কাঁদতে ভুলে যায়। শুধু পায়ের শব্দ আর ফিস ফিস কথাবার্তা বাড়ির পাশের গলিতে ক্রমশই প্রকট হতে থাকে। আজন্মকাল থেকেই এমন সব শব্দ শুনতে শুনতে গ্রামবাসীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অবশ্য মাঝে মাঝে যে বাজি ফাটার মতো আওয়াজ হয় না, তা নয়! তখন সবারই চিন্তা হয় যারা তখনও বাড়ি ফেরেনি তাদের জন্য। খবর নিলে জানা যাবে যে এভাবে সীমান্তবর্তী গ্রামে দুই পক্ষের বাজির মাঝে হঠাৎ চলে আসায় বহু নিরীহ লোকেরও প্রাণ গেছে। তাই এমন শব্দকে গ্রামবাসীরা কার্গিলের যুদ্ধের সাথে তুলনা করে থাকে। আর সকালেই পরিচিত মুখের খোঁজে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে পরে। কারণ তাদের বাড়ির যে লোকটির রাতে ফেরার কথা ছিল সেই লোকটি তো রাতে বাড়ি ফেরেনি!

সতীশ মাস্টার শহুরে সাংবাদিককে মাচায় বসে এসেবের গল্প বলছিলেন। এখানে মাচা বলতে কোন উঁচু টং নয়। গ্রামের শিব মন্দির লাগোয়া অশ্বত্থ-বটের নীচে একটা জায়গা জুড়ে যৎ সামান্য উঁচু বাঁশের মাচায় গ্রামের প্রবীণ লোকেরাই আড্ডা দেয় বিকালের দিকে। আর সকালে এই মাচা গ্রামের উঠতি ছেলেদের দখলে চলে যায়। পাশেই রয়েছে নিতাইয়ের চায়ের দোকান। বেশ চালু ব্যবসা। গ্রামে সবার বাড়িতে চায়ের পাট নেই। দুএকজনের বাড়িতে থাকলেও চায়ের ঠেকে যাওয়ার নেশাটা কিন্তু সাংঘাতিক। যারা এমন নেশার কবলে একবার পড়েছে তারা হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও একবার করে নিতাইয়ের চায়ের দোকানে না এসে পারে না। তা বাড়িতে যতই অশান্তি হোক না কেন!

সেই মাচায় এতক্ষণ সতীশ মাস্টার বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন শহর থেকে আসা সাংবাদিককে। আর সেই সাথে দিব্বি নিতাইয়ের চায়ের দোকানের চা-সিগারেটের সদব্যবহার চলছিল। সিগারেটে একটা বেদম টান দিয়ে সতীশ মাস্টার বললেন- তাহলে আপনাকে একটা শ্লোক শোনাই। সংস্কৃত ভাষায় লেখা। একে প্রবাদও বলতে পারেন। এসব এরা বুঝবে না বলে বলি না। জানি আপনি শিক্ষিত বলেই বুঝবেন। আমাদের সংস্কৃত ভাষাটা বড়ই মধুর। তাতে বলছে- “মাসমেকং নরো যাতি /দ্বৌ মাসৌ মৃগ-শূকরৌ / অহিরেকদিনং যাতি / অদ্য ভক্ষ্যো ধনুর্গুণঃ। সতীশ মাস্টার সাংবাদিকের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন যে এই শ্লোকটির অর্থ হয়তো সাংবাদিক বুঝলেও বুঝতে পারবে কিন্তু এর যে অন্তর্নিহিত মানে রয়েছে তার রসাস্বাদন সে নিশ্চয়ই করতে পারেনি। তাই সতীশ মাস্টার তার হাতের সিগারেটে একটা অন্তিম টান দিয়ে তা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আবার বললেন- আসলে এই সব শ্লোক তো পন্ডিতেরা এমনি এমনি লিখে যাননি। এর পেছনে একটা করে শিক্ষণীয় ভাবার্থও থাকে। যেমন এখানে বলা হচ্ছে একজন ব্যাধ একদিন গভীর অরণ্যে শিকার করতে গিয়ে সে একটা হরিণকে শিকার করে বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় সেই ব্যাধ দেখতে পায় যে তার নাগালের মধ্যেই একটি বরাহ দিব্বি তার খাবার খেতে ব্যস্ত রয়েছে। এমন সুযোগ বারবার আসেও না। আর তাই কখনই হাত ছাড়া করা উচিত নয়। সে এক মুহূর্ত দেরি না করে শূকরটির উদ্দেশে বাণ নিক্ষেপ করে। আর সাথে সাথে সেই বিশাল শূকরটিও দ্রুত বেগে ব্যাধের দিকে ধেয়ে এসে তার বিশাল দাঁত দিয়ে তাকেও বধ করে। আর ঠিক এদের পাশ দিয়েই সেই সময় একটি সাপ যাচ্ছিল। সেও ব্যাধ আর শূকরটির বিশাল দেহের নীচে পড়ে মারা যায়। কি অদ্ভুত ঘটনা দেখুন। পর পর চারটি প্রাণী একে অপরের মৃত্যুর কারণ হয়ে গেল। শেষ মুহূর্তে একটি শৃগাল সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় এক সাথে এতগুলো খাবার দেখতে পেয়ে ভাবতে বসে যে সে বোধ হয় সারা জীবনের খাবার এক সাথেই পেয়ে গেছে। কিন্তু সে ভীষণ হিসেবি। সে ভাবে, যে মৃত ব্যাধটি রয়েছে তাকে খেতে তার প্রায় এক মাস সময় লাগবে। আর মৃগ এবং শূকরে তার দিব্বি দুমাস চলে যাবে। সেই সাথে সাপটি খেলে তার এক বেলা হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে তার ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য আপাতত ব্যাধের ধনুকে লাগানো চামড়ার ছিলাটিই যথেষ্ট। কাজেই সে প্রথমেই ধনুকের ছিলাটিকে তার সূক্ষ্ণ দাঁতের সাহায্যে যেই না ছিঁড়তে গেল অমনি তা ছিঁড়ে গিয়ে ধনুকের একটি দিক সরাসরি শৃগালের বুকে এসে লাগল। ফলে সেখানেই তার পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটল। আর এই হচ্ছে গল্পের সারাংশ। এবার একটু চুপ করে থেকে আবার সতীশ মাস্টার মৃদু হেসে বললেন- কেন আপনাকে এত বড় একটা আখ্যান শুনালাম জানেন। সমস্ত প্রাণীর মধ্যেই রয়েছে লোভ। এবং তা একেবারেই সীমাহীন। শুনেছি সিংহদের নাকি পেট ভরা থাকলে তারা কোন প্রাণীকেই তাড়া করে না। কিন্তু বাঘ নাকি ঠিক এর উলটো স্বভাবের। পেট ভরা থাকলেও সে তার খাবারকে বধ করে। এর মূলেই হল মাত্রাতিরিক্ত লোভ। তবে এই বৃহৎ প্রাণী জগতের মধ্যে সব থেকে লোভী কিন্তু মানুষই। আপনি যতই অর্থের মালিক হন না কেন, আপনার চাহিদার কিন্তু কোনদিনই শেষ হবে না। অর্থের চূড়ায় উঠে গেলেও না। আপনি নিজের দেশের মধ্যে সব থেকে ধনী হয়েও আপনার সাধ অপূর্ণ থেকে যাবে। আপনি চাইবেন পৃথিবীর মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হতে। সবাই যেন তাকে সমীহ করে। আর তাতেই তার পরম শান্তি। কিন্তু ধন দৌলত অতি সহজ উপায়ে হয় না। ব্যবসার স্বার্থে কিছুটা কূট বুদ্ধি ও অসৎ হতেই হয়। হয়তো সেই ধনীর কাছে তা মোটেই অসৎ কাজ নয়। কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিতে অধস্তনদের সুখ-সুবিধা থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত করে ধনীরা তাদের সম্পদের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত বিএসএফ জওয়ানদের সাথে লড়াইয়ে যে কজন লোক মারা গিয়েছে তারা কেউ ধনী ঘরের লোক ছিল না। তারা সবাই ছিল রুটম্যান বা লাইনম্যান জাতীয় নিরীহ গ্রামবাসী। একটু বেশি অর্থের আশায় তারা এই পথে আসে। মৃত্যুকে হাতে নিয়ে রাতের অন্ধকারে বা জওয়ানদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবলাদের পাচারে সহায়তা করে। তবে এমনটা ভাববেন না যে সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের সবাই এই সব দুর্নীতির সাথে যুক্ত। বেশির ভাগ লোকই আজ পরিযায়ী। মাঝে তারা করোনার সময় এসেছিল নিজের নিজের বাড়িতে। কিন্তু লকডাউনে তেমন ভাবে পাচারের কাজ হয়নি। তারা আবার পরিযায়ী হয়ে গেছে। কাজেই যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তারা যে তিমিরে ছিল তার থেকে খুব একটা কি মাথা তুলতে পেরেছে! আমার সন্দেহ হয়! অথচ দেখুন অবলা পাচারকারীই বলুন বা কালো হীরে পাচারকারীই বলুন অথবা বালি খাদানের মূল চক্রান্তকারীই বলুন, তারা কিন্তু দিব্বি সারা রাজ্য জুড়েই এক একটা প্রাসাদ বানিয়ে ফেলেছে। তারা কবে যে কোথায় থাকে তা কেউ জানে না। এদের কারোর কঠোর শাস্তির ভয় নেই। তারা নিজেরা ভোগ করুক বা না করুক তাদের সন্তানেরা করবে। আসলে আপনি যদি জানেন যে আপনার মাথার উপরে বিশাল আশীর্বাদের হাত রয়েছে তাহলে আপনার সাহস দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। দীর্ঘদিন জেল খাটলেই বা কী হবে। একদিন ঠিক তারা আপনার চোখের সামনে দিয়েই ঘুরে বেড়াবে বুক টান করে। আসলে কি জানেন এই সমাজটাতেই ঘূণ ধরে গেছে। ভীষণ ভাবেই জাতপাতের লড়াই  শুরু হয়ে গেছে। যারা দশ-পমের বছরে এই রাজ্যটাকে আরো কুড়ি কুড়ি বছর পিছিয়ে নিয়ে গেল তারা কখন যে কোন ভাগাড়ে যাবে তা ভবিষ্যতই বলবে। আবার নতুন করে কত কত যুবকের লাশ পড়বে, কত মা সন্তানহারা হবে তাও ভবিষ্যতই বলবে। আমি একজন সাধারণ মাস্টার মশাই হয়ে মনে করি, যদি কোনদিন জাতপাতের নিরিখে এই রাজ্যের মানুষেরা ভাগ হয়ে লড়াইয়ে মেতে ওঠেন তাহলে সেদিন হবে সারা রাজ্যের পক্ষে চরম দুর্ভাগ্যের দিন। আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই একটা গান রয়েছে ‘আহা আমরা কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’। এতো আজ ক্রমশই স্বপ্নাতীত হয়ে যাচ্ছে তা বোধ হয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আমি আবার সংস্কৃততে ফিরে গিয়ে বলছি- “অঙ্গারঃ শত ধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি। কেন্দ্র রাজ্য যুগপৎ ভাবেই এই অবলা-কয়লা-বালি খাদান এসবের জন্য দায়ি। এর পরেও কোনদিন মানুষ কি এদের ক্ষমা করবে? গ্রামের লোকেরা কেন বুঝতে পারছেন না যে রাজ্যে জগদ্দল পাহাড়কে উৎখাত করতে গেলে হিন্দুত্ববাদীদের দিকে এগিয়ে যাওয়া নয়। তেমনটা হলে তা হবে আত্মবলিদানের সামিল! আর সেটা হবে আরো ভয়াবহ!

এখন বটতলা নিশ্চুপ! নিতাইয়ের চায়ের দোকানের ঝাপ পড়ে গেছে অনেক আগেই। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো এখন গভীর ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেলেও অনেক উটকো পায়ের চলাচল, অনেক ফিসফিস কথা অভ্যস্ত কান এড়িয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু এতে আর মানুষের ঘুমের কোন ব্যাঘাত হয় না। সবটাই আজ গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। তবু ঘরের লোক ঠিক মতো ঘরে না ফিরলে সবাইকেই মৃত্যু ভয় তাড়া করে। আর শিশুরাও রাতে প্রাণ খুলে কাঁদতে ভয় পায়!

অনেকক্ষণ ধরে সাদা পাতার সামনে কলম খুলে বসে রয়েছে সাংবাদিক। সারাদিনের সংগ্রহ করে আনা সম্পদগুলোকে একে একে গেঁথে তুলতে হবে আগামী দিনের জন্য। কিন্তু শুরুটাই ঠিক মনে ধরছে না। এদের দুর্বৃত্ত, দুরাত্মা, সমাজবিরোধী বলবে কিনা তাও ঠিক বুঝতে পারছে না। কত বিশেষণেই যে এদের ভূষিত করা যায় তা ওরা নিজেরাও জানে না। অবশ্য ‘হতশ্রী ছাড়া এদের জন্য আর কোন বিশেষণ অবশিষ্ট নেই।

সিগারেটের পর সিগারেট শেষ হয়ে যাচ্ছে তবু কেন যে একটা শব্দও কলম দিয়ে বের হচ্ছে না তা কিছুতেই  সাংবাদিকের বোধগম্য হচ্ছে না! আজ প্রায় কুড়ি বছর ধরে সে তো একই কাজ করে চলেছে। অথচ কলমে কোন সম্পূর্ণ বাক্যবন্ধ তো দূরের কথা সামান্য শব্দের দেখাও নেই! শব্দ ভান্ডারের এমন দুর্ভিক্ষ যদি সত্যিই দীর্ঘায়িত হয় তাহলে বোধ হয় আর চাকরিটা থাকবে না। কাগজের মালিক হাতে লন্ঠন ধরিয়ে দেবে! তখন কি তাকেও পাচারকারিদের দলে নাম লেখাতে হবে! এটা ভেবেই সে ভয়ে কেঁপে ওঠে! চোখ বন্ধ করে সে ভাবতে থাকে একবার শুরুটা করতে পারলে আর তার কলমকে থামানো যাবে না। সে তখন দুর্বার গতিতে এক ঘন্টায় চার কলম লেখা লিখে ফেলবে। এখন শুধু মুখরাটাই দরকার।

(ক্রমশ)


1 কমেন্টস্:

  1. তোমার লেখার যে অংশটি পড়লাম তা অসাধারণ। লেখকের মনস্তত্ব বিশ্লেষণ অনবদ্য। যে বিষয়ে লিখছো তা নতুন না হলেও নতুন দিক তুলে ধরতে চেয়েছো।

    উত্তরমুছুন