কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

মৌসুমী মুখোপাধ্যায়

 

ধারাবাহিক উপন্যাস   

 

দিগন্তসেনা




অনঙ্গ মনে মনে ভাবল দিনকাল বদলেছে। তাই সে এবার নিজেকে বদলে ফেলবে, ভাবল। আগে যেগুলো অপছন্দ করে নাক সিঁটকোত, এখন সেগুলোই তার কাছে পারিবারিক স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে দাঁড়াল। আর লোকজন ধরে ধরে বড় গলায় তার পারিবারিক সুখ্যাতি রটনা করে রীতিমত আনন্দের সঙ্গে প্রচুর পরিমানে গর্বও অনুভব করতে থাকে। মানময়ী দেখল যে যে সব কারণের জন্যে তার মেয়ের কপালটা পুড়ল, মেয়েটা একা আর সঙ্গীহীন থেকে গেল চিরকালের মত, সেই সেই কারণগুলোই তার পরবর্তী অথবা পরবর্তীর পরবর্তী প্রজন্ম কি সহজে আর হৈ হুল্লোর করে তাদেরই জীবনে যাপন করছে। সবারই সব কিছু হল, শুধু মেয়েটাই একা থেকে গেল শুধু তার সময়ের আগে তার ভাবনা আর ধ্যান ধারণয়াগুলো দৌঁড়বার কারণে। ফলে যেটা আশীর্বাদ হতে পারত, সেটা অভিশাপ হয়ে গেল শুধু নয়, একটা মানুষ জীবনের উষ্ণতা কী জিনিস সেটা একেবারে জানতেই পারল না। এমনকি তার একটা কোন সঙ্গীও জুটল না। সামান্য ক’জনের কত সুপ্রচুর ত্যাগের মধ্যে দিয়েই যে আসে ভবিষ্যতের কত সৌভাগ্য তা নিজে চোখেই মানময়ী দেখতে পাচ্ছে। অনঙ্গ চিরকালই ঝাঁকের কই, তাই সে তার ঝাঁকে মিশে থাকতেই ভালোবাসে। পরিস্থিতি যখন যেদিকে, যার পক্ষে, অনঙ্গ তখন সব সময়ই সেখানে থাকতে পছন্দ করে। তার নিজস্ব কোনও কাঠামো বা মেরুদন্ড কোনও দিনই ছিল না, আজও থাকে না। তাই শ্যামাঙ্গীকে নিয়ে নাচানাচি করতেও তার কোনও বিবেকের দংশনও অনুভূত হয় না। মানময়ী খানিকটা রেগে উঠে ভেংচে বলে, ‘ছাড় তো! মানুষটা চিরিকালই ওই রকম। সেকেলে অথচ সময় বিশেষে বড্ড একেলে। একেবারে আধুনিক যেন খুব’।

(১৫)

দিগন্তসেনাতে রাষ্ট্রপতি হলে হবে কি, মূল ভূখন্ডে রাজনৈতিক লড়াইটা লড়বার জন্য  শ্যামাঙ্গীকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে তার  যাত্রা শুরু করতে হয় আর সেটা সে করেও ফেলে বিনা দ্বিধায় এবং কোনও রকম স্বাচ্ছন্দের এক ফোঁটা তৃপ্তি আশা না করেই। দলের সেনানায়ককেই যখন এরকম একটা ত্যাগ ও কৃচ্ছসাধনের মধ্যে দিয়ে কাজ করতে আর লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে দেখে অন্যরা, তখন নিজেরাও তারা সমস্ত আরাম ও সু্যোগ সুবিধে ত্যাগ করে অতি অনায়াসেই। দলের অবস্থান ঘোষণার পরে প্রথমেই ছিল পৌর নির্বাচন। তাই নবদিগন্তউন্মোচনহিসেব-এর তরফ থেকে সিদ্ধান্ত হয় সেই সব পৌর নির্বাচনেই তাদের প্রার্থী দাঁড় করানো হবে। পৌর নির্বাচন সবচেয়ে প্রথম যেখানে শুরু হয় সেটা দক্ষিনের দিকের কয়েকটা  রাজ্যে যেখানে তেমন ভাবে নবদিগন্তউন্মোচনহিসেব দলের কাজকর্ম  বা পরিচিতি ছিল না। তবু সেখানকার  বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে কিছু কিছু প্রার্থী ঠিক করা হল যারা দাঁড়াবে আর তাদের সপক্ষে প্রচারে নামল শ্যামাঙ্গী, সুদাম, শকুন্তলা, উপত্যকা, ভ্যালেন্তিনা ইয়েব্রা, চৈতি চট্টোপাধ্যায়, রামিরেজ পালমা, কারলোস ফিয়েররো, আদ্রিয়ানা আলারকা, জোয়ে আবদেরজাক, আরনো বোসার ও দিগন্তসেনার মন্ত্রীসভার অন্যান্য মন্ত্রীরা। সাফল্য এল শুধুমাত্র প্রচারের হাত ধরে আর সেটা গুটি কয় জায়গাতেই শুধু। দলের ভেতরে আলোচনা শুরু হল সাংগঠনিক বাড়বাড়ন্ত নিয়ে। অন্য কোথাও তক্ষুণই নির্বাচন না থাকলেও দলের শাখা বিস্তার ও কর্মসূচী গ্রহনণ ও রূপায়নের ব্যাপারে ওরা যতটা সম্ভব  এগানোর  চেষ্টা করল। সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণাংশের বিজিত কেন্দ্রগুলোতে যারা দায়িত্বে আছে, তাদের কাজকর্ম যাতে মানে উন্নত হয় তার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে চাপ বাড়ানো হতে থাকল। ফলে পরিস্থিতিটা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে হয়ে দাঁড়ালো গোদের ওপর বিষফোঁড়া। কেননা সেইসব জায়গাগুলোতে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা ফেরাবার জন্য রাস্তাগুলোকে দু খেপে মোটা প্লাস্টিকের সিট দিয়ে পরত দিয়ে তার ওপর খোয়া দিয়ে তার ওপর আরও একটা পরত দিয়ে  তারপরে রাস্তা তৈরীর বাদবাকি মালমশলাগুলো দেওয়া হল। এতে রাস্তা যেমন ঊঁচু আর উত্তল হল যার ফলে সেখানে বর্ষার জল না দাঁড়িয়ে রাস্তার পাশের জমি বা নর্দমায় নেমে যেতে পারল, ঠিক তেমনই দীর্ঘস্থায়ী হল। বড়, মাঝারি, ছোট সব রকমের নালা-নর্দমার সংস্কার করা হল আর সেই সঙ্গে আঞ্চলিক আবর্জনাগুলো পূনর্বৃত্তায়নিক পদ্ধতির জন্য বিশেষ একটা জায়গায় জমা করার ব্যপারে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হল। রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখারও যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হল। সকলের ঠিকঠাক পানীয় জল পাওয়ারও সুনিসচিন্তিকরণ হল। কিন্তু তবু কিছু কিছু ইচ্ছাকৃত অসহযোগিতার কারণে গোটা ব্যপারটাকে খুব বেশি উঁচুমানে নিয়ে যাওয়া গেল না সবক্ষেত্রে। কেননা যেসব ক্ষেত্রে পুরসভায় বোর্ড গঠন করেছে অন্যদল, সেখানে নবদিগন্তউন্মোচনহিসেব দলের প্রার্থী জিতেও খুব বেশি কিছু কাজ করতে  পারল না স্রেফ অসহযোগিতার কারণে। ফলে বাকবিতন্ডায় চাপানো উতোরের সময় ওদের দলের কাউন্সিলর যখন চেয়ারম্যানকে বা ভাইসচেয়ারম্যানকে বরাদ্দ অর্থপ্রাপ্তি না ঘটার জন্য দোষারোপ আর চেঁচামিচি করল, তারা কেবল একটু হেসে বলল যে সেটা তো তারা তার ভালোর জন্যেই করেছে। অর্থপ্রাপ্তির ফলে তার খাটুনি বেড়ে গিয়ে সে বিছানা নিলে, সেদিনের সেই মিটিঙে এসে সে তার বক্তব্য পেশ করার সু্যোগ পেত না। তার ফলে তাদের মুখ দেখাদেখি কতকাল বন্ধ থাকত। সেটা অনন্তও হতে পারত, যদিও দু প্রান্তের বাকযোদ্ধারাই পুংলিঙ্গের দলে পড়ে। সে যখন বলল আপনার মুখ দেখাটা তার কাজ নয়, তখন তারা বলল যে সেটা যে নয় সে ব্যপারে শত শতাংশই নিশ্চিত, তবু পারস্পরিক মাসকাবারি এই সাক্ষাৎটুকুই তাদের সংযোগ সেতু যেটা আসলে  আরও মনোযোগ দাবি করে, তখন  কাউন্সিলর অর্থ না পাওয়ার অভিযোগটাকে গৌণ বলে বাকযুধদ্ধটাকে মুখ্য ধরে নেবার জন্যে তিরস্কার করলেও ভাষাগত ব্যবধান না থাকা স্বত্বেও চেয়ারম্যান বা  ভাইসচেয়ারম্যান কাউন্সিলরকে তাদের পুরস্কৃত করার জন্যে ধন্যবাদ জানায়। ব্যপারটা প্রায় একই পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যে সব ক্ষেত্রে নবদিগন্তউন্মোচনহিসেব দলটি বোর্ডে আছে আর কাউন্সিলর রক্ষণশীল সমাজ দল বা উদারনৈতিক দলের। কেননা সেইসব  জায়গায় দেখা গেল রাস্তাঘাট বা নর্দমা তৈরীর জন্যে বালি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বালি উবে যাচ্ছে কর্পূরের মত দ্রুতগামীতায়, খোয়া, সিমেন্টের ব্যপারেও ওই  একই ঘটনার ঘনঘটা দেখা গেলে প্রথমবার, দ্বিতীয়বারে বরাদ্দ অর্থটাই আর দেওয়ার সদিচ্ছে দেখাল না সেইসব চেয়ারম্যান বা ভাইসচেয়ারম্যানরা। ফলে সমস্যাটা গোড়াতেই নির্মূল করে দিতে পেরেছে বলে ভেবে তারা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে শুরু করে আর অন্য পক্ষকে কাঁচকলা দেখায়  আর নিজেদের দলের কাউন্সিলরদের নিত্যনৈমিত্তিক পরীক্ষানিরীক্ষা ও এলাকা উন্নয়নের তুফান বইয়ে দিতে, দিয়ে যায় অতি-অতিরিক্ত অর্থ।

খেলাটা এভাবে চলতেই থাকে আর নবদিগন্তউন্মোচনহিসেব দলটা দক্ষিণাংশের উদাহরণ টেনে দেশের অন্যান্য অংশেও সংগঠন বানিয়ে ফেলে। এর ফলে ওদের কাজকর্মের একটা নতুন ধারার পাশাপাশি মানুষের কাছে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষণাবেক্ষণেরও একটা আশা তৈরী হতে শুরু করে। যে সব রাজ্যে সরাসরি বিধানসভার নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়, সেখানেও তারা প্রার্থী দিয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করে ও জিতে ফেরে যার ফলস্বরূপ কোন কোন রাজ্যে নবদিগন্তউন্মোচনহিসেব  দলটি সরকার গঠনও করে ফেলে, সেখানে তাদের যোগ্যতম জয়ী প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী হয়। একটা বিন্দু দিয়ে শুরু হওয়া ব্যপারটা শেষ পর্যন্ত বহুরৈখিক হয়ে যায়। নবদিগন্তউন্মোচোনোহিসেব দলটির  অবিসংবাদী নেতা  বা নেতৃ হিসেবে কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী বা শ্যামাঙ্গী চট্টোপাধ্যায় একধরনের মাদকতা নিয়ে অগণিত মানুষের কাছে এক ঐন্দ্রজালিক আনুগত্য আদায় করে নেয়। তারপর এমন একটা সময় আসে যখন তার অধীনে থাকে পনেরটির বেশি রাজ্য। তারা সকলেই তাকে প্রশাসনের হাল ধরার মত কোনও একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখতে চায়। কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গী অবশ্য তার চরিত্রের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় অন্যদের কাছে, এমনকি তার নিজের কাছেও। কেননা আসলে সে একজন যোদ্ধা আর সেই পরিচয়ের অস্তিত্বেই সবচেয়ে তৃপ্তি ও উৎসাহী বোধ করে সে নিজেও। তার যুদ্ধ যেমন অহেতুক আলোর বিরুদ্ধে, তেমনি অন্ধকারেরও বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে আগ্রাসন আর ক্ষোভের বিরুদ্ধেও। আবার ঋপুর অহেতুক দংশনের বিরূদ্ধেও। তাই তার আসল ও সবচেয়ে খাঁটি পরিচয় – যোদ্ধা। কিন্তু মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে শত্রুপক্ষ তার জন্যে ফাঁদ পেতে রাখে। মূল ভূখন্ডের এইরকম এক সন্ত্রাসবাদী দলের আত্মঘাতি হামলায় পুরোনো পদচিন্থ অনুসরণ  করার জন্যই ওর অস্তিত্ব নাকি তার উল্টোটা – এইরকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে এক সময় দেখা যায় দিগন্তসেনার বেতার আর দূরদর্শনে ক্রমান্বয়ে প্রচারিত সংবাদ থেকে জানা গেল তিনটি মেট্রো স্টেশনে অতর্কিত হানায় বন্দুকের গুলিতে প্রায় সাতাশ জন নৃশংসভাবে মারা গেছে। আহত হয়েছে শতাধিক ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি আত্মরক্ষার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে। তিনটি  স্টেশনই রীতিমত রক্তাক্ত। খবরটা প্রথম গোচরে আসে অনঙ্গের। কেননা এখন সে সারাদিনই বাড়ির মধ্যে খবর আর নানারকম ব্যপার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাইরে একেবারে বেরায় না বললেই চলে। আর নিজের ছেলেমেয়েদের  একটা নতুন ও অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে বেশির ভাগ সময়েই দিগন্তসেনার খবর শুনতে আর দেখতে ব্যস্ত থাকে। তাই ঘটনা বা দূর্ঘটনা যাইই হোক না কেন, সবার প্রথম সেইই জানতে পারে আর পারা মাত্রই সে শ্যামাঙ্গীকে সেটা জানিয়ে দেয় দূরভাষ যন্ত্র মারফত আর তার সঙ্গে সঙ্গেই শ্যামাঙ্গী মূল ভূখন্ডে থাকা অন্যদের জানাতে থাকে শুধু নয়, সেখানকার বেতার আর দুরদর্শনেও খবরটা বারবার প্রচারিত হবার দরুন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনসাধারণও সেটা নিয়ে রীতিমত চর্চা ও কাটাছেঁড়া করতে থাকে। এইভাবে ক্রমান্বয়িক আদান প্রাদানের ফলে অনেক খুঁটিনাটি ব্যপারেও জানা হয়ে যেতে থাকে। শ্যামাঙ্গী  সঙ্গে সঙ্গেই দিগন্তসেনায় ফিরে যায়। অন্যরাও যে যেভাবে পারে নিজেরা নিজেদের মত করে পৌঁছাবার ব্যবস্থা করে ফেলে।  সকলেই পৌঁছে দেখে বিশেষ করে ওই তিনটি স্টেশন চত্তর এখনও রক্তাক্ত আর মৃত্যুরোলের পরবর্তী স্তব্ধতায় থমকে আছে। শ্যামাঙ্গীকে যেখানেই পাওয়া গেল সেখানেই সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরতে লাগল আর সেও বিবৃতি দিতে থাকল পর্যায়ে পর্যায়ে তার অনুপস্থিতি ও সঠিক তথ্য অপ্রাপ্তি অথবা অপ্রতুলতার খবর জানিয়ে। বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকেও বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রীরা তাদের বিবৃতি দিয়ে জানাল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের নৈতিক বিন্দুগুলো যা থেকে একটা বক্ররৈখিক অবস্থানের ছবি সূচিত হল। বোঝা গেল গোটা পৃথিবীই দিগন্তসেনার পাশে আছে। দিগন্তসেনার প্রতিরক্ষাবাহিনীর ক্রমোচ্চ তদন্তে উঠে এল একটা শব্দ ‘অভিমানীপদব্রজাসংহার’। সাংবাদিকরাও লেগে পড়ল মূল ভূখন্ড ও দিগন্তসেনা দুজায়গায়ই। মূল ভূখন্ডের এক তান্ত্রিক গোছের লোকের ওপর গিয়ে পড়ল সাংবাদিকদের চোখ। অবশ্য চোখটা যে নতুন পড়েছে তেমনও নয়। বেশ ক’বছর ধরেই সে নানা ভাবে নানা মন্তব্য করে সংবাদের  শিরোনাম দখল করে নিয়েছিল। এবার সে বলল, ‘মেয়েমানুষকে গৃহকর্মেই সবচেয়ে ভালো মানায় এবং  তাতেই দেশ ও দশের মঙ্গল। সে যদি তার অবগুঠন উন্মোচন করে  পুরুষদের পদানত করার উন্মাদনায় মেতে ওঠে তাহলে বিপদ অনিবার্য। গোটা পৃথিবীটা তো সেই জন্যেই আজ এত অরাজকতায়  ভরা।‘ মূল ভূখন্ডের দূরদর্শণে সম্প্রসারিত এই অনুষ্ঠানটা দেখে শ্যামাঙ্গীর মাথায় বিদ্যুৎ ঝিলিকের মতই একটা তরঙ্গ কাজ করে যায়। সেটা হল প্রতিরক্ষাদপ্তর ঘোষিত সেই শব্দ ‘অভিমানীপদব্রজাসংহার’ ও এই লোকটির বক্তব্য দুটো কি কোনও একটাই সুতোয় গাঁথা নাকি তা নয়। শ্যামাঙ্গীর চেতন-অবচেতন-অন্তরাত্মা তাকে যেন কেবলই এই দিকেই এগিয়ে যাবার জন্য উস্কে দিতে থাকল। তার মনে হতে থাকল একটা দলের নাম ‘অভিমানীপদব্রজাসংহার’ আর তাদের বক্তব্যই আসলে ওই লোকটার বক্তব্য, শুধু তাইই নয়, দিগন্তসেনায় হামলাটা তারাই করেছিল। সে আরও বুঝে উঠতে থাকল ওই হামলাটার একাধিক তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য। খুব তাড়াতাড়িই সে এই সিদ্ধাতে পৌঁছালো, হামলাটা মনোযোগ ঘোরাবার জন্যই করা হয়েছিল আর বাকী সব তথ্য এই সাক্ষই বহন করছে যে এটা অন্য কোনও সংগঠন নয়। ব্যাপারটা ধর্মীয় এবং মূল ভূখন্ডএর সঙ্গে জড়িত। ও সমস্ত ঘটনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাল আর তার ফলে যে তদন্ত হল তাতে উঠে এল যা যা তার সবটাই বেতার ও দুরদর্শন ও অন্যান্য  গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে উন্মুক্ত করে দেওয়া হল দিগন্তসেনার তরফ থেকে।

‘এত দূর!’ বলে উঠল শ্যামাঙ্গী আর সকলে চমকে উঠে এ ওর দিকে ঘুরে তাকাল। ও আবার বলে উঠল,’দাঁড়া! তোদের মজা দেখাচ্ছি!’ কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই ঘোড়ার পিঠে চেপে শ্যামাঙ্গী বেরিয়ে গেল। অনঙ্গ মানময়ীর দিকে তাকাল, অলংকৃতা সুদামের দিকে তাকাল, সম্রাট বুঁচির দিকে তাকাল, চৈতি উপত্যকার দিকে তাকাল, শকুন্তলা রেঁনোয়া বত্তিচেল্লীর দিকে তাকাল আর পুপু ফেটে পড়ল গানের সুর দিয়ে মানুষের মনের ওপর চাবুকটাকে আছড়াতে আর রবার্ট জয়েস ব্যাস্ত হয়ে পড়ল তার চিত্রের ভেতরে তুলির আঁচড়ে মূর্ত করে তুলতে অপমানিত মানবাত্মাকে। কথাটা আর কাউকেই বুঝিয়ে বলে দিতে হল না ধর্ম নয়, রাষ্ট্র নয়, সমাজ নয়, সভ্যতাও নয়, আসলে সব কিছুর আড়ালে থেকে হামলাটা সেদিন কে করেছিল আর শ্যামাঙ্গীই বা কার ওপর রেগে গিয়ে সেদিন চাবকে ঊঠেছিল গলার স্বর দিয়ে। সকলেই যে যার অসমাপ্ত বা অর্ধসমাপ্ত কাজে আবার ফিরে গেল মূলভূখন্ডের কাজে যে যেখানে যে কাজ যে অবস্থায় রেখে এসেছিল সেইখান থেকে শুরু করে দিল। দিগন্তসেনার মন্ত্রীমন্ডলী সদাসতর্ক প্রহরায় থাকতে লাগল আরও কিছু ঘটে ওঠার আগেই তা যেন তাদের র‍্যাডারে ধরা পড়ে। দিগন্তসেনার প্রতিরক্ষা দপ্তর এবার বিভিন্ন রকম শক্তিশালী বোমা তৈরীতে মনো্যোগ দিল আর অর্থ দপ্তর থেকে অন্যান্য যে সমস্ত অস্ত্র এতদিন ব্যবহার করা হত সেগুলোর উন্নতিকল্পে যথেষ্ট মনোযোগ আর অর্থ দুটোই বরাদ্দ হল। সবাই বলতে লাগল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত খুব যে গুরুত্বপূর্ণ তাইই শুধু নয়, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ এবং এর মধ্যে দিয়ে দিগন্তসেনার জনসংখ্যাও আগের তুলনায় যে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেড়েছে সেটাও রাষ্ট্রটিকে শক্তিশালী করে তুলবে ভবিষ্যতে। ঠিক সময়ের এই বিন্দুতে দাঁড়িয়েই শ্যামাঙ্গী ফিরে গেল অতীতে যখন এই রাষ্ট্র তৈরীর ঊষা লগ্নে সে বলেছিল সন্তান ধারনের চাইতে সন্তান দত্তক নেওয়াটাকে ভালো নাগরিকত্বের মানদন্ড ধরা হবে। সময় তাকে বুঝিয়ে দিল যে ইচ্ছে থাকলেও সে উপায় থাকে না এবং কেন তা থাকে না।

শ্যামাঙ্গী ঠিক করল শুভেচ্ছাকে নিয়ে সে কিছুদিন কোথাও থেকে ঘুরে আসবে বা তার উল্টোটা। বিদেশে কোনও কাজ থাকলে শুভেচ্ছাকেও ও সঙ্গে নিয়ে যাবে। কেননা এখন সে বয়ঃসন্ধিকালের দোরগোড়ায়। ওদিকে ইলোরা আর যাজ্ঞসেনীর নিত্যনৈমিত্তিক ভেলকি বাজিতে শকুন্তলা আর চৈতি নাস্তানাবুদ। ইলোরা রেঁনোয়াকে নানারকম কায়দা কানুনে বশ করে তার জন্য একটা ঘোড়া কেনার ব্যবস্থা করে আর সেটা কিনেও ফেলে। তারপরই তার জন্য একজন বিশেষ ট্রেনারকে নিয়োগ করতে সে তার বাবাকে রীতিমত পটিয়ে ফেলে সে তার কাছ থেকে ঘোড়ায় চড়ার তালিম নিতে শুরু করে। যদিও সে বয়েস এবং অন্যদের তুলনায়  যথেষ্ট লম্বা, তবু ঘড়ায় চড়ার পক্ষে সে যে নিতান্তই ছেলেমানুষ সে কথাটা শেষ পর্যন্ত কেউই তাকে বুঝিয়ে উঠতে পারে না।  আর সে রোজ পরীদের মত পোশাক পরে ঘোড়ায় চড়ে সেই রাজ্য পরিদর্শনে বেরায় যেটার আসলে কোথাও কোনও অস্তিত্ব আদৌ নেই। তার ডান হাতে থাকে বাচ্চাদের খেলনার জন্য নির্মিত কোনও এক অচেনা ধাতব তলোয়ার আর বাঁ হাতে থাকে ঢাল।  সৈন্যবাহিনী, সেনাপতি আর মন্ত্রী বলতে তার পেছন পেছন যায় তার ট্রেনার তার বশ্যতা একেবারে রীতিমত স্বীকার করে নিয়ে, তবে সেটা বস্তুত তার প্রতিরক্ষার জন্য আরও অন্য একটি ঘোড়ায় চড়ে যাতে সে যাত্রার কোনও পর্যায়ে গিয়ে ঘোড়ার চলার ছন্দের সঙ্গে তাল না রাখতে পেড়ে উল্টিয়ে না পড়ে, সেইজন্য। রোজ বিকেলে চলে তার এই অভিযান। তারপর ফিরে এসে রাজ্যপাট সামলানো ও বাড়ি ভর্তি সমস্ত প্রজাদের শাসন করা। এগুলো শেষে শুরু হয় তার জ্ঞানচর্চা যা আসলে সকালের স্কুল থেকে ফিরে এসে সেইসব বই পড়া যা পরের দিন স্কুলের জন্য প্রয়োজন হবে। তার প্রসাধনী সামগ্রী এত যে যে কোনও রাজাও সেগুলো কিনতে গেলে দশবার ভেবে দেখত তার তত খরচ করা উচিত হবে কি বা রাজকোষে টান পড়বে কিনা। কিন্তু রেঁনোয়া ওসবের ধার ধারে না। বরং হুকুম তামিল করার জন্য এক পায়ে খাড়া সব সময়। কিন্তু শকুন্তলার ব্যপারটা একটু অন্য রকম। সে সব সময় চায় ইলোরা যাতে তার ভাইবোনেদের সঙ্গে তার ওই প্রজাসুলভ ব্যবহারটা না করে। অবশ্য ভাইবোন দাদা দিদিদের কিন্তু বিন্দুমাত্র অনীহা দেখা যায় না তার প্রজা বনে যাবার জন্য। কেননা রানী হিসেবে, ইলোরার এক অমোঘ আকর্ষনীয় শক্তির অস্তিত্ব তদেরকে সহজেই বশ্যতা স্বীকার করে নিতে স্বেচ্ছায় বাধ্য করে, যে শক্তিটা একমাত্র ইলোরারই আছে শুধু, অন্য কারুরই নেই তার দুই দাদাদিদি ও একচল্লিশ জনভাইবোনের মধ্যে।

কিন্তু যাজ্ঞসেনী এক সর্বংসহা মাতৃরূপের প্রতিমূর্তি। সংসারের যাবতীয় দায়ভার, ভাইবোনদের দেখাশোনা সব কিছু সে নীরবে করে যায় কোনও পুরস্কার বা প্রতিদান ছাড়াই। এর জন্য তার ত্যাগের অনন্ত সীমায় চৈতি ওর স্বাস্থ্য নিয়ে রীতিমত উদবিঘ্ন হয়ে পড়ে। চৈতি যখন ওকে বোঝায় যে ঠিক সময় খাওয়াদাওয়া করা ওর শরীরের পক্ষে কতটা জরুরী, তখন যাজ্ঞসেনী বলে খাওয়ার চেয়ে খাওয়ানোর দায়িত্বটা গোটা পরিবার আর সমজের পক্ষে কতটা জরুরী ঠিকঠাক পালন করাটা। উপত্যকা যখন ওকে একটা স্কুলে নিয়ে যায় গান শেখানোর জন্য, তখন ও সেখান থেকে ফিরে এসে তার সমস্ত শিক্ষা ওর অন্যান্য বন্ধুদের বিলিয়ে দেয়। গানের স্কুলের একজন যখন রীতিমত গলা তুলে গান গাইতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন যাজ্ঞসেনী তার গান সেখানোর ভার নিজের ওপর নেয় এবং ক’দিনের মধ্যে ছেলেটি স্বরক্ষেপন বিষয়ে এত অতিরিক্ত তথ্য জেনে ফেলে যে তার গানের গলার জন্যও সে নিজেকে চির ঋণী বলে যাজ্ঞসেনীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যদিও যাজ্ঞসেনী তার সবটাই ফেরত দিয়ে দেয় এই বলে যে জ্ঞানের দেওয়া বা নেওয়ার সঙ্গে কৃতজ্ঞতার কোনরকম যোগসাজস থাকাটা একেবারেই বাঞ্ছিত নয় এই কারণে যে তাতে আসলে দুপক্ষই সমানভাবে উপকৃত হয়। তারপর একদিন যখন  উৎসবের জোয়ারে ভেসে যাওয়া জনসাধারণের জন্য পথনির্দেশের একটা স্টলে লিপিকা বলে একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়, তখন তারা দুজনে খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। সব সময়ই তারা এক সঙ্গে থাকতে শুরু করে। ক্রমশ পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে তারা একে অপরকে ছাড়া কিছুই করে না। দুজনেই বাঁশি বাজায়। তবে একসঙ্গে নয়। একজন বাজালে অন্যজন চুপ করে তা শোনে। তারপর সে বাজালে অন্যজন শোনে। এভাবে কথাহীন এক নির্ভার জীবনে তারা দুজনেই মুক্ত হয়ে ঝুলে থাকে। ইতিমধ্যে যাজ্ঞসেনী প্রবল প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। যে কোনও বিষয়কেই কড়া সমালোচনা করে সে সব বিষয়ে কী কী হওয়া উচিত সেটা ঠিক করে আর কী কী হওয়া একেবারেই উচিত নয়, সেটাও সবাইকে নির্ভয়ে জানিয়ে দেয় যে সে ভবিষ্যতে আইন নিয়ে পড়াশুনো করবে আর বিয়ে সে একেবারেই করবে না। কারণ ততদিনে সে লিপিকাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে যদিও সেটা সে কাউকে জানায় না। বরং লিপিকাকে তার বাড়িতেই রাখার ব্যবস্থা করে তারই ঘরে। এভাবেই শুরু হয়ে যায় তার জীবনে এক নতুন অধ্যায়। 

দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলে শকুন্তলা এবার আবিস্কার করে ফেলে বার্ধক্যেও সবল ও সুস্থ থাকার একটা উপায় আর সেই উপায়টাকে কাজে লাগিয়ে সে বের করে ফেলে এমন একটা ট্যাবলেট যেটা খেলেই মানুষ যত বয়সেই হোক না কেন,  ফিরে পেতে পারে তার বল আর চলাফেরা করতে পারবে যে কোনও সুস্থ মানুষের মতই। শকুন্তলা এই আবিষ্কারের কারণে নিজেও যেমন প্রচুর অর্থ উপার্জন করে ফেলে, সেই সঙ্গে সঙ্গে দিগন্তসেনারও অর্থাগমের জন্য  নতুন দরজা খুলে যায়। সেই ওষুধের বিক্রিটা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকেই সেই ওষুধ কেনার অর্ডার আস্তে থাকে  যা দিগন্তসেনার আমদান রপ্তানিতে যে গভীর প্রভাবই শুধু ফেলে তাইই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য যাতে নতুন একটা  দরজা খুলে যেতে পারে ওদের সেই জন্য শকুন্তলা একটা বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ওষুধ খেলেই যে বার্ধক্য প্রতিরোধ করা যাবে,ব্যাপারটা আদৌ তেমন নয়। আসলে গোটা ব্যাপারটাই একটা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির অঙ্গ।  তাই ওষুধ কিনে সেই ফলটা পাওয়া যাবে না। পুরো ফলাফলটা পাওয়ার জন্য মানুষকে এখানে এসে এখানকার হসপিটালে ভর্তি হতে হবে এবং চিকিৎসা করাতে হবে। তাই এই ওষুধের কোনও রপ্তানি করে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না দেওয়ার একটা নৈতিক দায়িত্বজনীত কারণেই ইচ্ছুক রাষ্ট্রগুলোকে তাদের আগ্রহী ব্যক্তিদের এখানে পাঠাতে হবে। গোটা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকেই এত বেশি সংখ্যক লোক দিগন্তসেনায় চিকিৎসার জন্য আস্তে থাকে যে স্থান সংকুলানের অভাবজনীত কারণের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গোটা হাসপাতালের সব ক’টা বেড আর মেঝের সব ক’টা তলেই তাদের রাখতে রাখতে শেষ পর্যন্ত ছাদেও চিকিৎসা প্রার্থীরা থাকতে শুরু করে দেয় স্বেচ্ছায়। কিন্তু তারপরেও এত অসংখ্য লোক বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং বার বার করে তাদের ফিরে গিয়ে পরে আসতে বলার পরেও সেই লাইনের ভিড়টা এমনই অমোঘ হয়ে যায় যে রাতারাতি দিগন্তসেনায় বেশ কয়েকটা হাসপাতাল তৈরী করতে হয়। সেই সব জায়গায় ভর্তি করে স্রেফ মধু আর রসুন সহযোগে এমন একটা পাচন খাওয়ানো হয় যে তাতে তাদের মধ্যে রমণের উদ্রেক হয়। তারা সেটা জানানোর পর ডাক্তাররা তাদের বলে যে স্বমেহন অথবা সঙ্গম এই দুটোর যে কোনও উপায় অবলম্বনে মাসে একবার করে যদি তা চালিয়ে যাওয়া যায় ও পারিপার্শ্বিক খনিজ লবণ ও প্রোটিনের ঘাটতিটাও ওষুধের  মাধ্যমে শরীরে পৌঁছে দেওয়া যায় তাহলেই সেই জীবনীসুধা তাদের নাগালে এসে ধরা দেবে। ডাক্তাররা বলে, এখন অবিলম্বে তাদের বাড়ি ফিরে গিয়ে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। তখন তারা ফিরে যায় আর সেই জায়গায় অন্য একদল মানুষের ভর্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

দিগন্তসেনায় মোটা পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও জাতীয় আয় বাড়াতে এর ফলে শকুন্তলাও তার বসতবাড়িটা আরও আশেপাশের খানিকটা জায়গা জুড়ে  বাড়িয়ে ফেলে যে তার চুয়াল্লিস জন সন্তানের এক একটা বড় বড় দরজা জানালাওয়ালা বড়  শোয়ার একটা করে ঘর হওয়ার পরেও একটা সার্বজনীন বসার ও কমপক্ষে একশ জন খেতে বসতে পারে এমন একটা খাওয়ার বড় টেবিলের শ’খানেক চেয়ার থাকা বড় সড় খাওয়ার ঘরের ব্যবস্থাই থাকে শুধু নয়, ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ও একটি লাইব্রেরী সহ একটা বিশাল ঘরের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে দশজন আলাদা আলাদা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পুরুষ ও মহিলাদের শিক্ষাদান ও সামগ্রিক দেখভাবের জন্য রাখা হয়, যাতে ছেলেমেয়েদের সার্বিক বিকাশে কোথাও কোনও ত্রুটি না থেকে যায়। এর পরেও শরীর শিক্ষা ও খেলাধুলার জন্য দিগন্তসেনার ক্রীড়াদপ্তরের পরিচালনায় যে সব ব্যবস্থাগুলো আছে সেগুলোকেও কাজে লাগাতে হতে থাকে।

(ক্রমশ) 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন