কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

সুবল দত্ত

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৮


যমজ সংস্কৃতি     

                    

দরজা খুলেই আমি আঁতকে উঠলাম। মাথা শূন্য হয়ে গেল। এ কীকরে সম্ভব? মুখ থেকে বেরিয়েও গেল, কী ই ই? মড়া তো নিচে? উনি ঘঁক ঘঁক করে কেশে কফটা গিলে নিতেই বুঝলাম ইনি ডুপ্লিকেট। একহাতে মোটা ফাইল, অন্য  হাতের লাঠি দিয়ে আমাকে সাইড করিয়ে সোফায় বসে হাঁফাতে লাগলেন। একটু বেশিই ক্রুদ্ধ।

-তোমাদের বেসমেন্টে কে না কে একটা মড়া ফেলে রেখেছে মাঝ রাস্তায়! আমাকে তো ডিঙ্গে আসতে হল।

আমার নজর তখন ওনার পাছার দিকে। প্যান্টের জিপ খোলা। সেখান থেকে একটা পাইপ বেরিয়ে কোমরের পিছনে একটা প্লাস্টিক পাউচে ঢুকেছে। সেখান থেকে তরল লিক করে আমার সোফার পাশে ওনার সেই ফাইল ভেজাচ্ছে।

-বোসদা, ওখানে আপনার যমজ ভাইয়ের মৃতদেহ রয়েছে।

-ও মনে পড়েছে। আরে হ্যাঁ? আমারই তো মায়ের পেটের ভাই। আমাকে তো আসতেই হবে নাকি? হুঁ হুঁ বাবা, মরলো তো উদ্ধার পেল। খুব ভুগছিল। অত বয়েসের লোকের কি বেশিদিন বাঁচা উচিত। চুরানব্বুই পার। ভাবা যায়? যাঁকে নিয়ে ওদের বছরের পর বছর বৈঠক, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম, সাহিত্য বাঁচাও আন্দোলন,সেই অতদিন টেকেনি তো ও কোন ছার।

আমি ইতস্ততঃ করছিলাম। উনি তেড়ে এলেন, -বুঝতে পারোনি? ওরে আজকালকার মাথামোটা অপসংস্কৃতির মানুষ। ওরই এখানকার নজরুল সাহিত্য পরিষদের কথা বলছি। ভাই তো ওখানের প্রেসিডেন্ট। ওই শুরু ওই শেষ।

-বোসদা আপনার ফাইল আর আমার সোফা যে ভিজে যাচ্ছে? আপনার ক্যাথিটার পাউচ সামলান।

উনি মুত্রথলিটি কোলে রাখলেন। তাতে যত্ন করে একটা রুমাল বেঁধে দিলেন। উদাস গলায় বললেন

-আমার জীবনটাই ভিজে গঙ্গা হয়ে গেছে। একজন অভিশাপ দিয়েছিল, রাজনীতি করবি না, আমাদের পার্টিতে যোগ দিবি না, এই করে তুই তো মরবি না, গুয়ে মুতে থাকবি। আমি কি দোষ করেছি বল? সারাজীবন? এই খেরো খাতাটা বারোবছর থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি। প্রায় প্রতি রবীন্দ্র পাঠচক্রে আমি একপাতা করে রচনা লিখেছি এই একবছর আগে অব্দি। খাতার হাজার পৃষ্ঠা ভর্তি। কতজন দুপাতা লিখে ডক্টর ফক্টর হয়ে গেল। কি হল? সাহিত্য সংস্কৃতির কি হল? মুত্র মুত্র মৃত্যু মৃত্যু।

-বোসদা, আপনার ভাই অসুস্থ ছিলেন, ওসব রচনা ফচনা লেখেননি। উনিও কি?

-ওহ। এইযে আমার কাঁধের ঝুলি। ভুলেই গেছিলাম। এতে আমার মতনই একটা হাজার পৃষ্ঠার খাতা আছে। নজরুল বিষয়ক রচনা। আমার যমজ ভাই ওদের ‘নজরুল সাহিত্য পরিষদ’ সংঘে মাসে একটা করে রচনা লিখতো আর পাঠ করতো। আচ্ছা ভাই। আজ আসি। আমাকে আবার আমার ভাইয়ের এপার্টমেন্টে যেতে হবে। জানো তো? ও আজ মারা গেছে। আমাদের আর ওদের গোষ্ঠী কোন্দল তো রয়েইছে। তবুও তো ও আমার ভাই।

-কিন্তু... কিন্তু উনি তো এই বিল্ডিং এ থাকতেন? নিচে তো ওনার শবদেহ রাখা আছে। তো ওনার এই খেরো খাতা কি করবেন? ছাপতে দেবেন বুঝি?

-না। ওর চিতায় এই দুই সংস্কৃতির দাহ হবে আজ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন