কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

ময়ূরিকা মুখোপাধ্যায়




কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪


শাটার



‘কনর্ফাম বুকিং’
বাটনটা প্রেস করে এয়ারপোর্টের ক্যাফেটেরিয়া থেকে একটা কফি অর্ডার করলো  ইরা। প্রথম চুমুক দিতে না দিতেই বেজে উঠলো ফোন।
ওহ্… আপনি এসে গেছেন? হ্যালো…
হ্যাঁ গেট থ্রি।
ওকে।
এই হচ্ছে, অনভ্যেস। মুম্বাই-এর ট্রাফিকটা যে কলকাতায় এখনও থাবা বসায়নি, বোঝা উচিৎ ছিল। কফিটা না নিলেই ভালো হত।

প্রায় দু’বছর পর ইরার কোলকাতায় ফেরা। অবশেষে বড়া-পাও ছেড়ে ভাত-শুক্তো।
বন্ধুরা ভাবে, প্রদীপ সরকারের প্রোডাকশনে কাজ করি মানে, বোধহয়  রোজ রোজ ওহ ক্যালকাটাতে খেতে যাই। মোটেই ওরকম নয়।

আচমকা একটা বাজের আওয়াজে ইরার সম্বিত ফিরে এল। অসময়ের বৃষ্টি। দীর্ঘশ্বাসে অনেকটা পিছিয়ে গেল ইরা। শেষবার এসেছিল দুর্গাপূজোয়, যাতে বাবার ঝাড়টা কম খেতে হয়।

“ছেড়ে দিয়েছি সমানে… বেটার কোনও জায়গায় পেয়েছিস নাকি? তা ভালো তো…
“না, মানে ওই একটা কোর্স করেছিলাম অনলাইনে, ফিল্ম এডিটিংএর,
পি. এস ফিল্মস্এ অ্যাপ্লাই করেছিলাম… ওই যে পরিণীতা করেছিল না, তারই প্রোডাকশন হাউস। মা বলো না… সঈফ আলি খান, শর্মিলার ছেলে, বিদ্যা বালান…

সামহাউ বাবার রিঅ্যাকশানটা সেসময় ধামাচাপা পড়ে গেছিল। বেশী রিস্ক না নিয়ে, ইরাও নাড়ু সমেত ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন।

তারপর অ্যাসিটেন্ট ডিরেক্টরের কাজ করছি শুনে, কনফিউসনটা একটু বোধহয় কেটেছিল। যতই হোক, মলয় লাহা-র থেকে শিবপ্রসাদের নাম বেশী শোনা…

ইরার আবার হুঁশ ফিরল, ফোনের মেসেজে। ক্যামেরার লাস্ট ই.এম.আই।
“যাক বাবা! মিটল…”
বৃষ্টিটাও একটু শুরু হয়েছে।  প্রায় পাঁচবছর হল, ইরার মুম্বাই বাস। এখন সাগর পাড়ের পাঠ ঘোচাতেই, কোলকাতায় ফেরা।


“দাদা, গাড়ীটা একটু সাইড করবেন প্লিজ!”
গাড়ী থেকে নামল ইরা। সামনে সুসজ্জিত ইলেকট্রনিক্স-এর দোকান।
“এইট তো…”
একটা সময় কলেজ থেকে ফেরার পথে, সিগন্যালে বাসটা প্রায়দিনই এই জায়গায় দাঁড়াতো। একদিন চোখ চলে গেছিল কাচের শো-কেসটার ওপারে। একভাবে তাকিয়ে থাকার মধ্যে এতটা তৃপ্তি থাকতে পারে, আগে জানা ছিল না।
“এতদিন পর ক্যামেরাটা এখনও ওইভাবেই রাখা। আশ্চর্য!” ইরা ভাবল… পথের পাঁচালী বানানোর কাহিনীটা তখন পিটুইটারি গ্রন্থির দখল নিয়েছে… সিনেমার চেয়ে মেকিং ভিডিয়ো বেশী টানছে আর কলেজে, অয়ন, সাত্যকিরা রীতিমত মাসে একটা করে শর্টফিল্ম বানাচ্ছে…
খুব মনে হত ওই একটা ক্যামেরা পেলেই অস্কার, দাদাসাহেব সব একেবারে হুলুস্থুলু করে দেবে। সারাদিনের মধ্যে, ওই সিগন্যালের টাইমটুকুই ছিল আরামের। অসম্ভব রকমভাবে চাইতো ছুঁতে…
কি যে একটা অদ্ভূত ঘোর কাজ করতো
ওয়াইড…
লং…
ক্লোজআপ…
বাকী সময়টা ইউ টিউবের ভিডিওতে চলতো হোমওয়ার্ক
বৃষ্টির একটা বড় ফোঁটাকেও ফ্রেম ভেবে নিত ইরা, যদি না ক্যাবের ড্রাইভারটা হাঁকডাক শুরু করে দিত…

গাড়ীতে বসলো ইরা। পাশে NIKON D5600...

আর, হেডফোনে তখন-

মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে

একদিন কত করে ডেকেছি!

আজ হায় রুবি রায় ডেকে বল আমাকে

তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি!’









0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন