কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

উমাপদ কর



কবিতার কালিমাটি ১০০



কারেন্ট আফেয়ার্স


(২২)


কেউ কি ডাকছে?
    ডোরবেল বাজল না-তো!
        খটখট শব্দও নয়,
কে ডাকছে, কোত্থেকেই বা!

ডাকলে সাড়া দিতে হয়
      ভালোবাসা সে-কথাই বলে
     পা স্থির, কণ্ঠে এক দলা কফ

সাড়া না-পেয়ে চলে যেতে পারে বটগাছ
      সঙ্গে প্রচুর অক্সিজেন এনেছিল
               রেখে গেল হয়তো বা--

দুধওয়ালা বাইরে থেকে, পত্রিকা নীচ থেকে,
       সংস্পর্শের বাইরে থেকে যোগান
          বাজার-ফেরত ছেলে সটান স্নানঘরের গান
       বাঁচাচ্ছি লড়াই, বাঁচিয়ে রাখছি আয়ু

ঘুম সাড়ে-তিন ঘণ্টা, জমিন সাড়ে-তিন হাত
        কেউ বলে যথেষ্ট; কেউ-- নিতান্তই কম,
        আমি যে কী বলি! প্লিজ, শুনতে চেয়ো না

চাহিদা কমে আসে, চাহিদা বেড়ে চলেছে জেনে—
      ঘুমকে বড়ি খাওয়াতে ভুলে যাই
          কত দিন ঘুমোয় না গণ-কোয়ারেন্টাইন

ব্যালকনি থেকে দেখি, ঝুরি সমেত ফিরে যাচ্ছে বটগাছ
      ফিরে ডাকতে ভুলে যাই যেমন, ভুলে যাই টাটা করতেও
             বলতে পারতাম— বন্ধু হাসপাতালের দিকে যাও

পা-দিয়ে ঝুরি গভীরে, হাত থেকে ঝুরি মাটি-ছোঁওয়া, কণ্ঠের ঝুরি বাতাসে দুলছে
            স্থির আমি, কেউ ডাকছে, আসতে বা যেতে বলতে পারছি না…



(২৪)


শরীর, পিত্ত-বায়ু-কফ মহম্মদ-আলি-বিন 
      প্রাবল্যের হেরফের, তো তুঘলক
          রাজধানি বদল যখন-তখন

একে রামে রক্ষা নেই সুগ্রীব দোসর
      কফে জুড়েছে করোনার কলোশাস্‌
             শ্লেষ্মা ফুলে-ফেঁপে বড়লোক 

নাকি চীন বাজার-দখলের দং
      ভাইরাস পরিবেশন করেছে প্লেটে প্লেটে
           হতেও পারে ধরে নিয়ে দৌড়োচ্ছে ইঁদুর
      মারিকা-চেতাগ্নি কবেই বা যুদ্ধ খেলেনি!

সৎকারে কেউ নেই, নিয়ম মেনে দাহ কিংবা দাফন
      মুখাগ্নি নেই, মাটি দেওয়া নেই, ভিজতে পারত শুকনো চোখের
               উঁকি-ঝুকি নেই
      শরীর-বিলাস বিনাশ

পিত্ত-নাশের খাবার উড়ে যে কোথায়!
      বায়ু-চাপ, বায়ু-বৃদ্ধি, বায়ু গড়ের মাঠ
            কফ কিনেছে নতুন পোশাক
                  কণ্ঠে পেঁচানো শাড়ি
                     ফুসফুস হিপোপোটমাস

শরীর, সুখে নেই তোমার রাজ্যপাট
      মন্ত্রী-ঘোড়া-গজ, এমনকি নৌকোও বলে কত জল!
      সান্ত্রীরা শুধু গুড়িগুড়ি পায়, একবার বেরোয় একবার ঢোকে
                  নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস
      শরীর, তুমি বেঁচে আছ
          পিত্ত-বায়ু-কফের দোলনায়
                শরীর, তুমি কার?
                    হয়তো আমার, হয়তো তোমার নিজেরই…


(২৫)


আজ ভোর-বৃষ্টি
    আজ একটা গ্রাফ আঁকব

দিন-সরণ অনুভূমিক, লম্বে আক্রান্ত

এসব নিয়েই আছি কত দিন যে!
     ঘোরাতে চাই মন, ফেরে না
         চুইন-গাম দাঁতে আটকে থাকে

টমেটোগুলো বালতির জলে ডুবে-ভেসে আমাকে দ্যাখে
        আমি ওদের।
          ঘুমের মধ্যে ওদের আক্রান্ত হতে দেখি

আজ বৃষ্টি-টা কন্টিনিউ করবে
      আজ দাড়ি কাটব
          আট দিন খুব একটা কম সময় নয়

আজ দুধের প্যাকেট হাতে দরজার গোড়ায় দাঁড়াবে ফটিক
        জিজ্ঞাসা করব এত ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে না-তো!
                 রেন-কোট-টা গায়ে চাপানো উচিত ছিল

ভাবছি, বৃষ্টিকেও জিজ্ঞাসা করব সে কিছুটা সুরাহা
               করছে কি?
       নাকি, পড়তে হয়, পড়ে যাচ্ছে
                 বোরো-ধান নষ্ট করছে মাঠে!

আজ ভোর-বৃষ্টি
        কনটিনিউ করবে
             পাখিদের খাবার কমে আসছে
        পারুলদের বাড়ি দানা আছে কিনা জানা নেই
              আজ একটা গ্রাফ আঁকব

বাড়তে-থাকা আক্রান্ত আড়ে, সংখ্যা-মৃত্যু লম্বে, খাড়াই…


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন