কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

অশোক তাঁতী



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪



লক ডাউনের সব্জি


বেশ খুশী মনে বারান্দায় বসে সব্জিগুলো মাজছিলাম। লক ডাউনের পর বাজারে গেলেই এটা এক রকম রুটিন।

আশপাশে কি হচ্ছে সেদিকে নজর দেওয়ার কথা এখন মনেই নেই। তবে ব্যাকগ্রাউন্ডে বসন্ত বৌরী, কোকিল, দোয়েল এসব বাজছে। সত্যি বলতে বসন্ত বৌরী, দোয়েল এসব পাখির ডাক জম্মেও শুনিনি। মেয়ে নেট ঘেঁটে ঘেঁটে ছবি আর ডাক শোনালো। লক ডাউন না হলে এ সব জানাই হতো না।

যেমন জানতে পারতাম না সব্জি কখনো এমন সস্তা হতে পারে! কদিন আগে যা চল্লিশ ছিল এখন তা পনেরো কুড়ি। আর এখন পাইকারি বাজার উঠে বাড়ির অনেকটা কাছের মাঠে। বেশী কিনতে হয় তবে দাম অনেক কম, দশেও পাওয়া যাচ্ছে। বউ একটু দূরে বসে ডিরেক্সান দিচ্ছে। গোটা সাড়ে তিন কিলো কুমড়োটা বালতির ডিটারজেন্টের জলে তখন সাঁতার কাটছে।

আহা কী দৃশ্য! এর পর একে একে আড়াই কেজি পটল, তিনটে এঁচোর, আড়াই কেজি নধর সজনে ডাঁটা, গোটা পনেরো ঝিঙে, তিনটে তরমুজ ইত্যাদি প্রভৃতির পালা। দশ কেজি আলু এক কোণে তিনদিন পড়ে থাকবে। হাত না দিলেও চলবে। সব মিলিয়ে বেশ খুশী খুশী পরিবেশ। বউ জিগেস করল, সব একশোতে হয়ে গেল?
আমি বললাম, মামার বাড়ি!
তবে একথা শোনার পরেও ঘরে কোনও উত্তেজনা নেই।

এমন সময় শোনা গেল সবজীই…  সবজীই…। একটু থেমে আবার। সবজীই…।
বউের হাঁটুর ব্যাথা থাকলেও মোড়া থেকে সাবধানে নেমে মেঝেতে বসে পড়ে। বারান্দায় গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আমার মাথাটা দেখা যায়। বারান্দার ট্যাপ বন্ধ করে মাথা নিচু করে থাকি। সবজীই…

তেরো বছরের ছেলেটা আমাদের পাড়াতেই থাকে। মিশ্রজী বলেছিলেন ওর বাবা পিগ আয়রন কারখানাতে কাজ করতো। এখন বন্ধ। ছেলেটা ক্লাস এইটে উঠবে এবার। বাড়িতে একটা ছোটবোনও আছে। খুব ভালো ছেলে। সবজীই…

ওকে বলেছিলাম রোজ আমাদের সব্জি দিয়ে যাবি। গত দুদিন সকালে বৃষ্টি। নিম্নচাপ। আসেনি। এখন খুব সস্তায় দু’সপ্তার সব্জি বারান্দার মেঝেতে গড়াগড়ি খাছে। কুমড়োটা বালতি থেকে চুপচাপ দেখছে। সবজীই…

আমি টুল থেকে নেমে বারান্দার মেঝেতে বসে মাথা নিচু করে অপেক্ষা করি ‘সবজীই’ ডাকটা যতক্ষণ না দূরে সরে যায়।  
    


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন