কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

সোনালি বেগম



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪



দিশার যাপনকথা


প্রতিটি সচেতন পদক্ষেপ এগিয়ে দিচ্ছে আরও একটু সামনের দিকে। তখন খুশির বন্যায় আপ্লুত দিশা। দিশা সেই মেয়ে যে মনে করে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে চলায় পতন অনিবার্য। পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণায় নারীর  দৈনন্দিন যাপনচিত্র আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। দিশা ভাবে।

পিতৃতন্ত্রের পরিবেশে তার জন্ম, সেই আবহেই লালিত পালিত হয়ে এই কথাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক বলে মনে  হয় যে, এই তন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। কখনও কখনও দিশার মনের ভেতর ভিন্ন স্বরের অভিঘাত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন সে ভাবে যে, নারী যখন পিতৃতন্ত্রের ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে স্বর তোলে তখন তা শুধু তন্ত্র-সমর্থক পুরুষের ওপরই পড়ে না, অপর নারীর কাছেও বেমানান ঠেকে, এমন কি তা নিজের কাছেও বেমানান লাগে। যখন পিতৃতন্ত্রে মানবিকতা নজরে আসে তাকে বলা হয় পিতৃসুলভ আচরণ। যাইহোক, পিতৃতন্ত্র আত্মীকরণের ফল অনুভবে মিশে গেছে তার। 

পিতৃতন্ত্রের মতো প্রাচীন ইমারত নিয়ে ভাবনাটা দিশাকে বেশ ভাবাচ্ছে  আজকাল। তার ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসছে ফাটল। সেই ফাটলের সংস্কার করে মেরামত করার চেষ্টা করে চলেছে সে। যতটা পারা যায় লিবারাল হওয়ার  চেষ্টা করছে সে। এই যে প্রতিটা দিন দিশার ভাসুরের শালীর ছেলেটা অশ্লীল মেসেজ করছে, নানান নম্বর থেকে ফোনে উত্ত্যক্ত করছে, ছেলেটি বলছে যে তার ভাসুর এই কাজটি তাকে করতে বলেছেন, দিশার স্বামী এ ব্যাপারে উদাসীন। তিনি কোনো কথা শুনতে নারাজ। কারণ তিনি তাঁর বড়দাদার প্রতিটা কাজকে উচিত কাজ বলেই মনে করেন।

দিশার রবীন্দ্রনাথের ‘সবলা’ কবিতার সেই পংক্তি বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে, ‘শুধু  শূন্যে চেয়ে রব? কেন নিজে নাহি লব চিনে / সার্থকের পথ?’           


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন