কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

নিকানোর পাররা




প্রতিবেশী সাহিত্য



নিকানোর পাররা’র কবিতা        

(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী) 




পরিচিতি : জন্ম চিলের সান ফাবিয়ন শহরে ১৯১৪ সালে। অ্যান্টি পোয়েট্রি জনক হিসাবেই সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ তিনি। কিন্তু বিশের শতকের চিলে দেশটি পৃথিবীকে বহু সাহিত্যিক রত্ন উপহার দিয়েছে - পাবলো নেরুদা, গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল প্রমুখ, তাঁদের অন্যতম পাররা। নোবেল পদক পান নি, তবু তিনি চিরকাল দ্বিমুখী ভাবমূর্তি লালন করেছেন। স্বৈরাচার বিপ্লব বিভিন্ন  সময়ে দুই মতকেই সমর্থন করেছিলেন। নেরুদার প্রয়াণের পরে তাঁর তুল্য জনপ্রিয় কেউ ছিলেন না সে দেশে। তিনি প্রয়াত হন ২০১৪ সালে।



Ejercicios respiratorios (শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম)

যেহেতু আমার স্বাস্থ্য দুর্বল,
যেহেতু বুদ্ধিগত কাজকম্মোগুলোর কঠোরতা এড়াতে পারি না,
যেহেতু আমার ভাবনাচিন্তা অস্থিরীকৃত এবং যেহেতু অন্ততঃ
আমার ভুল হয় বিজ্ঞানের সত্যতা ও শিল্পের ইন্দ্রজাল বিষয়ে
উচ্চ ধারণা পোষণ করায়,
যেহেতু নিজের সম্পর্কে আমি উদাসীন,
যেহেতু রোজ রোজ চান করি না,
আর যেহেতু আমার চুল ও নখ যেমন খুশি বাড়তে থাকে,
যেহেতু আমার সম্পত্তি ফুঁকে দিয়েছি তাদের জন্য যারা
আত্মার দিক থেকে গরীব,
যেহেতু অসুস্থদের জন্য যা এক্কেবারে ঠিকঠাক ও প্রয়োজনীয় তার চেয়েও
বেশী কিছু করেছি,
যেহেতু একটা লম্বা সময় কাটিয়েছি আমি সমাধিস্থলগুলোয়
চাষাভুষো পাগানদের মত মৃতের প্রতি পবিত্র নীরবতা ও
একাকীত্বকে আমি উপভোগ করি,
যেহেতু হতাশা ও গর্বের মুহূর্তে 
উপাস্যদের মুখে থুতু ছিটিয়ে থাকি,
যেহেতু আমি মদ খেয়ে মন্দিরে যাই আর চৌমাথার বা
ট্রামের বেঞ্চিগুলোয় পড়ে পড়ে ঘুমোই,
এবং যেহেতু যৌবন বয়সটা বেকার ঘোরাঘুরি আর অদরকারী
পড়াশোনায় খরচ করেছি। 
(Poemas Y Antipoemas বই থেকে)



SOLILOQUIO DEL INDIVIDUO (একক মানুষের স্বগতকথন)

আমি একজন একক মানুষ।
প্রথমে আমি পাহাড়ের ওপর থেকেছি
(সেখানে কিছু ছবি তুলে রেখেছি)।
আমি একজন একক মানুষ।
আমাকে প্রথমে খাবারের ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হয়েছিল
মাছ, পাখী এসব খোঁজা, কাঠ খোঁজা,
(বাকী ব্যাপারগুলো নিয়েও আমি উৎকণ্ঠায় থাকতাম)।
কুটো জড় করে আগুন জ্বালানো,
কাঠ কাঠ, কোথায় একটুকরো কাঠ পাই,
কুটো জ্বালাতে কিছু কাঠ লাগবে,
আমি একজন একক মানুষ।
সেই সময়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছি,
আমি ছিলাম বাতাস ভরা একটা নরক বিশেষ,
একটি কন্ঠ আমায় উত্তর দিয়েছিলঃ
আমি একজন একক মানুষ।
তারপর নিজেকে অন্য পাহাড়ে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম,
সেখানেও কিছু ছবি তুলে রাখলাম,
একটা নদী, মোষ,
সাপের ছবিও তুললাম
আমি একজন একক মানুষ।
কিন্তু না। যেসব কাজ করছিলাম সেসব একঘেয়ে লাগল আমার,
আগুন দেখলে বিরক্ত লাগত,
আমি আরো কিছু দেখতে চাইতাম,
আমি একজন একক মানুষ।
একটা নদী ধোয়া উপত্যকায় নেমে এলাম আমি,
সেখানেই দেখা পেলাম যা যা জিনিষ প্রয়োজন সেগুলোর,
একটা বন্য জনপদের দেখা পেলাম,
একটা উপজাতি,
আমি একজন একক মানুষ।
দেখলাম সেখানে ওরা কিছু কাজ করছিল,
পাহাড়ে ওরা ছবিগুলো তুলছিল।
আগুন জ্বালাচ্ছিল। ওরা আগুনও জ্বালাচ্ছিল!
আমি একজন একক মানুষ।
আমায় জিজ্ঞেস করল কোথা থেকে এসেছি,
উত্তর দিলাম আমার কোন স্থির পরিকল্পনা নেই এ ব্যাপারে,
বললাম না, সেখান থেকে আগে এগোব
বেশ।
নদীতে একটা পাথরের টুকরো দেখতে পেয়ে কুড়িয়ে নিলাম
আর অন্য একটা পাথর নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম
ওটা পালিশ করতে শুরু করলাম,
সেখানে থেকেই আমার জীবনের একটা অংশ করলাম।
কিন্তু এটা বড্ড বেশীই দীর্ঘ।
জলে ভাসবার জন্য কটা গাছ কাটলাম,
মাছ খুঁজতে লাগলাম,
অন্যান্য বিভিন্ন জিনিষ খুঁজতাম
(আমি একজন একক মানুষ)।
যতক্ষণ না নতুন করে আবার আমার একঘেয়ে লাগতে শুরু করল।
আমার একঘেয়ে লাগত ঝড়েদের,
বাজগুলোকে, বিদ্যুতের চমকানিগুলোকে,
আমি একজন একক মানুষ।
বেশ। একটু ভাবতে বসলাম,
মাথার মধ্যে বোকা বোকা প্রশ্ন আসতে লাগল।
নকল সব সমস্যারা।
তখন উদ্দেশ্যহীন কোন জঙ্গলে ঘুরতে শুরু করলাম।
একটা গাছের কাছ থেকে আর একটা গাছে;
একটা ঝরনার কাছে পৌঁছলাম,
একটা গর্তের কাছে এসে দেখলাম কতগুলো ইঁদুরকেঃ
এইখানে এসেছি আমি, তখন বললাম,
এখানে কোন উপজাতি দেখেছেন আপনারা?
কোন বুনো জনপদ যারা আগুন জ্বালায়?
এভাবে অন্য প্রাণীদের সঙ্গে সঙ্গে
আমি পশ্চিমদিকে সরে গেলাম,
কিংবা আরো ভাল করে বললে একাই।
এটা দেখবার জন্য বিশ্বাস করা জরুরী, ওরা আমায় বলত,
আমি একজন একক মানুষ।
অস্পষ্টতায় যে সব মূর্তিগুলো দেখতাম,
হয়ত মেঘ হতে পারে তারা,
হয়ত মেঘ দেখতাম, বিদ্যুৎ চমক দেখতাম,
বহুদিন ধরে এসব কিছুই চলেছিল,
আমার মনে হত মরে যাই,
কিছু মেশিন আবিষ্কার করে ফেললাম,
ঘড়িগুলো বানালাম,
অস্ত্রশস্ত্র, গাড়িঘোড়া,
আমি একজন একক মানুষ।
আমার মৃতদেহগুলোকে কবর দেবার মত সময়ও ছিল না,
বীজ রোপন করবার সময়ও ছিল না,
আমি একজন একক মানুষ।
অনেক বছর পরে ক’টা ব্যাপার আয়ত্বে এসেছিল  
কিছু মূর্তি,
সীমারেখা পার হয়ে গেছিলাম
আর কুলুঙ্গির ভেতরে পাকাপাকি ঘাঁটি গাড়লাম,
ওটা একটা জাহাজ ছিল চল্লিশ দিন ধরে যে ভেসেছিল,
চল্লিশ রাত,
আমি একজন একক মানুষ।
তারপর এল কিছু খরা,
কিছু যুদ্ধও এল,
উপত্যকায় বিভিন্ন ধরনের রঙ এল,
কিন্তু আমাকে এগিয়ে যেতেই হত,
উৎপাদন করতেই হত।
বিজ্ঞান উৎপন্ন করলাম, অপরিবর্তনীয় সবুজ,
তানাগ্রা* উৎপন্ন করলাম,
লক্ষ পাতাওয়ালা বইয়ের জন্ম দিলাম,
আমার মুখ ফুলে গেছিল।
গ্রামোফোন তৈরী করলাম,
সেলাই যন্তর,
প্রথম দিককার গাড়িগুলো তৈরী হতে শুরু করল,
আমি একজন একক মানুষ।
গ্রহগুলোকে কেউ আলাদা করে রাখল,
আলাদা আলাদা গাছেরা!
তবে আমি আলাদা করলাম যন্ত্রপাতিগুলোকে,
আসবাবপত্র, লেখার জিনিষপত্তর,
আমি একজন একক মানুষ।
একটা তালার দিকে চাইলাম।
হ্যাঁ, দেখলাম, বললাম কি, আমি দেখলাম,
আমার সন্দেহ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চাইলাম,
কিছু পর্দার পেছন থেকে চাইলাম,
আমি একজন একক মানুষ।
বেশ।
ভাল হয়, হয়ত সেই উপত্যকায় ফিরে আসা,
সেই পাহাড়টায় যেটা আমায় ঘর দিয়েছিল,
আর নতুন করে ছবি তুলে রাখতে শুরু করলে হয়,
সেখান থেকে এগিয়ে যাবার জন্য ছবি তোলা
দুনিয়াটাকে উল্টোতে যাওয়া
কিন্তু না। জীবনটার কোন অর্থ নেই।
(Poemas y artefactos বই থেকে)

(তানাগ্রা* - গ্রীক টেরাকোটা মূর্তি)   



5 কমেন্টস্: