কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

হরিদাসী



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪



লুইভিটো



শশা বেচিয়া প্যাংলার পিসি কিছু টাকা করিয়াছিলপিসি মরিলে প্যাংলা সেই টাকাগুলি হাতে পাইলপাইয়াই ভাবিল এইবার ধুম করিয়া দুর্গোৎসব করিতাহা হইলে লোকে একেবারে হাঁ হইয়া যাইবেকাগজে কাগজে ফলাও হইবেদেশে নাম ছড়াইবেবিদেশী ব্যাবসায়ী মনি ইনভেস্ট করিতে একলাফে ছুটিয়া আসিবেআরও কত কি হইবে তাহা ভাবিয়া প্যাংলার সর্ব্বশরীর শিহরিয়া উঠিলতাহার হাতে টাকা মুখে কথা সমান হইয়া গেলটেঁপিকে ডাকিয়া কহিল,  অ্যাই ট্যাঁপা ইদিকে শোন্… টেঁপি প্যাংলার ছয় বৎসরের কন্যা

আর বৎসর যাহারা মাঠে কাজ করিতে যাইত এ বৎসর তাহারা ভাবিল আমরাও বা কম কিসে? আর মাঠে যাইব নাআমরাও ধুম করিব, আমরাও টাকা উড়াইব!

মনি ইনভেস্টরওয়ালারা মনি লইয়া ছুটাছুটি লাগাইয়া দিলেনলোকে মরুভূমির বালুর নিম্নে সাতমহলা সুইমিংপুল খাড়া করিয়া হাতের পাঁচপায়ে, আর পায়ের জুতা বগলে দিয়া সহদেব নন্দীর উড়ে ঠাকুরকে কহিল, মু আর চলিতি পারিবুনি! পুলামানু কোঠী গলা? এঠা কুর টীকা জলদি কর!
বেচারা উড়ে বামুন ওবেলা হইতে ইভাবিয়া রাখিয়াছিল, কোনরকমে আজ ডালি-ভাতি রান্না শেষ করিয়া ম্যানেজমেন্ট টীমের নিকট হইতে সেলস্ আইডি লইয়া আসিবেআইডি পাইলেই লোকে ব্যবসায়ে বিশেষ উন্নতি প্রদর্শন করিয়া থাকেকোথা হইতে কোথায় কোম্পানীর নাম মুখে মুখে ছুটিয়া বেড়ায়তাহার পর নূতন ব্যবসা সামলাইতে সেলস্ফোর হিমসিম খাইয়া উঠেমাছের বাজার, জুতার দোকান, আলু-পটলের গুদামঘর, চিনির কারখানা, হার্ডওয়ারের আপিস, লঘু-গুরু জ্ঞান নাই এমন চালানদার কিংবা হাতি ঘোড়া বাঘ ভ্ললুকের উঠতি সাপ্লায়ারও মাঠে ময়দানে খাড়াইয়া আর একবার নিজের ভাগ্য গণনা করিবে কিনা মনে মনে তাহা ভাবিয়া লয়ভাবিয়া যদি কুল পায় তো উত্তম, নচেৎ ভূষুন্ডীর বাজারে সোজা নিজ নিজ কোম্পানীর পণ্য বেচিতে উধাও হইয়া যায়কার আগে কে বাজার ধরিতে পারে, কে আগে কত উচ্চমূল্যে মানুষ ঠকাইতে পারে বৎসরাধিক ধরিয়া তাহার অনির্দিষ্ট প্রতিযোগিতা চলিতে থাকেশুধু চলিতে থাকলেই না হয় একটা ব্যাপার ছিলকিন্তু চালাইবার জন্য রকম রকম ফন্দি  ফিকির, নানা প্রকার ডেটা জোগাড়, অ্যাসাইনমেন্ট সাধন ইত্যাদি উচ্চ পর্যায়ের মুলধনেরও প্রয়োজন পড়েযে এসব সুলভে যোগাইতে পারে দেশ ও দশের মাঝে উহার নামই স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হইয়া যায়

মৃণালসদৃশ মণিবন্ধে ঘড়িটি বাঁধিয়া টেপি ভাবিল উহার বাকি জীবন এখন সমস্তই পড়িয়াতাহা কি ও কেমন জানা নাইপৃথিবীও সমৃদ্ধ অথচ দরিদ্র, সামন্ততন্ত্র ও মৌ্লবাদবা জাতপাত ও পুঁজিবাদের মাঝামাঝি কোনো একস্থানে ঝুলিয়া…

ঘড়িটি টেপি একবৎসর পূজার সময় উহার পিতার নিকট হইতে উপহার পাইয়াছিল

………………………………………
লুইভিটো – ঘড়িপ্রস্তুতকারক ফরাসী কোম্পানী

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন