কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

অচিন্ত্য দাস



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪



গ্রীস থেকে গড়িয়াহাট



গ্রীসে তখন অনেক রাজ্য ছিল, তার একটায় আমি রাজকুমারী ছিলাম। তখন বলতে অবশ্য সেই যীশুর জন্মের শ’তিনেক বছর আগে। সব মনে আছে মানে  মনের ভেতর রয়ে গেছে আর কী! ওই ডি-এন-এ ধরনের ব্যাপার-স্যাপার হবে বোধহয়।

সারাদিন সাজগোজ নিয়ে থাকতাম, সখী ছিল অনেকগুলো। বলতাম, “কী রে, আজ কেমন লাগছে রে?” সকলেই বলত, “খুব ভালো লাগছে তোমাকে। মিশরদেশের সোনালী কাজলটায় চোখটা তোমার – ওহ, অপূর্ব…!” আমি বলতাম, “ভারতদেশ থেকে গয়না আনাচ্ছি, মানাবে রে আমাকে?”
-“মানাবে না আবার। আর জানো তো, ভারতদেশের গয়না এ তল্লাটে কারুর নেই”।
শুনে আমি আরও খুশি হয়ে উঠতাম।
বাবাকে বললাম, “ তুমি তো নিজের ছবি আঁকালে, আমারও ওরকম ছবি আঁকিয়ে দাও”।

বাবা একটু চিন্তায় পড়ল কারণ ছবিটা এঁকেছিল এক ছোকরা শিল্পী। মেয়ের বেলায় তাকে তো আনা চলবে না! একজন বুড়ো আঁকিয়েকে নিয়ে এল বাবা। সে কাজ  শুরু করল। ও বাবা, আমি তো ছবির জন্য ওর সামনে রোজ দাঁড়াই আর মনে মনে খুব হাসি। বুড়ো হলে কী হবে, টসটস করে দেখে আমাকে… হি হি… তা সে আমার  ভালোই লাগত।  ছবিটা বুড়ো ভালো এঁকেছিল। সখীদের বললাম, “কেমন হয়েছে রে?” ওরা বলল, “খুব ভালো”। শুধু একজন বলল, “ইস, এ তো তোমার থেকেও সুন্দর!”
আমার একটু রাগ হয়ে গিয়েছিল। ছবি আমার থেকেও সুন্দর হয়ে গেছে? তা যাক গে! ভেবেছিলাম ছবিটা হয়তো থেকে যাবে, কত লোকে দেখবে আর আহা আহা  করবে।

কিছুই কিন্তু থাকে না। আমাদের ওই অত বড় প্রাসাদ, সব ভেঙেভুঙে শেষ। তিনটে থাম, একটা গেট আর ক’টা দেয়ালই যা বাকি আছে। গাদাগাদা ট্যুরিস্ট এসে তাই  বোকার মতো মনোযোগ দিয়ে দেখে। আরে সে প্রাসাদ যদি তোরা দেখতিস!
তারপর কত জন্ম কেটে গেছে, সারা দুনিয়ায় কত দেশে কত পরিবারে জন্মালাম।

এখন আমাদের বাড়ি গড়িয়াহাট বাজারের কাছে। কলেজে সেকেণ্ড ইয়ার চলছে আমার। সেদিন ছোটকাকা এসেছিল… প্যান্টালুনে গিয়ে আবদার করে একটা নীল জিনস আর ইট-রঙা লাল টপ নিয়েই ছাড়লাম। দারুণ মানিয়েছে। কলেজে তো ফার্স্ট টু ফাইনাল ইয়ার সব ক’টা ছেলে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছিল। সেলফিটা যেই  ফেসবুকে দিয়েছি, কত যে ‘লাইক’ পেলাম তার ঠিক নেই। আর আজকে সন্ধেবেলায় ছাদে গিয়ে চুল খুলে এমন একটা সেলফি নিয়েছি না, কী বলব!  এইবার পোস্ট করব, দেখি ক’টা বুড়ো আঙ্গুল মানে লাইক পাই।

ওসব ইতিহাস-ফিতিহাস চিরদিন যেমন চলে এসেছে তেমনি চলুক। সমাজব্যবস্থা দিনে দিনে পাল্টায়, তা পাল্টাক। টেকনোলজিতে ছেয়ে যাচ্ছে দুনিয়া, যাক। এসব ব্যাপারে আমি কী করতে পারি? নিজের ছবি অন্যরা দেখে ‘লাইক’ দিলে  কী যে দারুণ ভালো লাগে! তোমরাই বল, ভাল লাগে কি না? গ্রীস থেকে গড়িয়াহাট –  আমি বাবা পাল্টাইনি। পাল্টাবোও না কোনোদিন।

2 কমেন্টস্: