কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

চিরশ্রী দেবনাথ




কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪


মিঃ জন আলি


খুব রোদ।  তাকানো যাচ্ছে না। তিনদিন হলো তৃণাঙ্কুর এই গণ্ডগ্রামে কাটাচ্ছে। এখানে কারো বেড়াতে আসার কথা নয়। সে একটি বিজ্ঞাপন এজেন্সিতে কাজ করে। খুবই নগণ্য চাকরি। কাজকর্ম না পেলে বেকার অবস্থায় ব্যস্ত থাকার  চেষ্টা। বাড়িতে যত কম থাকা যায় ততই ভালো। পারলে সকালের খাবার খেয়ে, রাত দশটার পর ফেরা হলে খুব সুবিধে, এতে বাবার বকা খাওয়ার রিস্ক কম। হাতখরচ জুটে যায়। তৃণাঙ্কুর জানে জীবনে তার কিছু হবার নয়। তাই দিন দিন আরোও তীব্র বাউন্ডুলে হওয়ার চেষ্টা তার। বাড়িতে খেতে বসলে চেষ্টা করে সবচেয়ে বাজে তরকারি দিয়ে তৃপ্তি করে ভাত খাওয়ার। এভাবে কৃচ্ছতা অভিমুখে যেতে  হবে। এই পাহাড়ি গ্রামটিতে একটি গুহা আছে। একজন সন্ন্যাসী জাতীয় লোক থাকে সেখানে। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। একটি শিঙে আছে আর ঝোলা। কয়েকদিন পর পর শহর থেকে ভিক্ষে করে আনে। ঘটনাচক্রে এর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তৃণাঙ্কুরের। তারপর থেকে ও খুব এক্সাইটেড। 

এখন দুপুরবেলা। কারেন্ট নেই এখানে। মোবাইলের চার্জ শেষ। একটি পাথরের ওপর বসে ছবি আঁকছে। সন্ন্যাসী ভাইকে সে জিজ্ঞেস করেছিল, কী নাম? উত্তরে  সে বলেছে তার নাম জন আলি। তারপর মুচকি হেসেছে। তৃণাঙ্কুরও মুচকি হেসেছে। জন আলি বলেছে, নো কিউরিসিটি ব্রাদার। তৃণাঙ্কুর আরোও কিউরিয়াস হয়েছে। তারপর গিলে ফেলেছে। জন আলি রান্না বসিয়েছে, পাথরের চুলা। ভাত রান্না হবে আর পাহাড়ি বেগুন পোড়া। কাল তৃণাঙ্কুরকে খাবার জোগাড় করতে হবে। রান্নাও করতে হবে। এটাই এই গুহা এবং জন আলির নিয়ম।

তৃণাঙ্কুর খুব উল্লসিত  জন আলিকে পেয়ে, সেইসঙ্গে এই গ্রাম এবং গ্রামের শেষে   গুহাটি, একদম মনের মতো তার। হয়তো জন আলি বেশিদিন এখানে থাকবে না। যদি সে সন্ত্রাসবাদী অথবা গুপ্তচর হয় তবে যাবার সময় তৃণাঙ্কুরকে খুনও করে যেতে পারে। আপাতত সে তা ভাবছে না।

জন আলিকে আঁকছে, আগুন জালাচ্ছে সে, সে জন আলির মাথার চারপাশে দিব্য জ্যোতি আঁকল। জন আলি উঠে দাঁড়ালো, তৃণাঙ্কুরের ছবির দিকে তাকালো, মুখে একটু দুঃখ ফুটে উঠেছে, বলল, চলো ভাত খাও। সবকিছুতেই ধোঁয়ার গন্ধ, দু’বার মনে হলো পেট থেকে উঠে আসছে সব, তবুও তৃণাঙ্কুর তৃপ্তির ভাব করে  সব খেয়ে নিল। খাবার শেষে জন আলি গুহায় গেলো, একটি প্যাকেট নিয়ে এলো সেখান থেকে। একটি ক্ষীরের ছাঁচ বের করে তৃণাঙ্কুরকে খেতে দিল। খুব  নির্বিকার, নির্লোভ তৃণাঙ্কুরের মুখে অজান্তেই হাসি বেরিয়ে এলো। জন আলিও হাসল সশব্দে, এখন আমাকে কি মনে হচ্ছে ব্রাদার? ভগবান?
তুমি এখনও তত শক্ত হওনি হে, এই গুহা তোমার হোক, জন আলি তোমাকে একটি গুহা দিল, বেরিয়ে এসো অন্য পৃথিবীতে। তৃণাঙ্কুর ভাবতে লাগলো, কোথা  থেকে বেরিয়ে আসবে সে, কোথায় ছিল সে? তার ছবিটি আঁকতে, জন আলিকে আঁকতে কত নির্বিকার হতে হবে তাকে...



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন