কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

০১) সুভাষ ঘোষ


দিয়া



মূল কাহিনী - শোভা দে                 নাট্যরূপ - সুভাষ ঘোষ

বি.জে.পার্ক মর্ণিং ওয়াকার্স অ্যাসোসিয়েশান, সল্ট লেক, কলকাতা পরিবেশিত শ্রুতিনাটক (২০০৬)

(চরিত্র : বুড়িমা – আধা বাংলা জানা, হিন্দি-ভাষী,  বয়স ষাট বৎসরবাবু – বছর চল্লিশের বাঙালি।) 
                      
[ছোট মফঃস্বল সহর, ঘিঞ্জি পরিবেশ, বাজারের বাইরে -- চলাপথের পাশে। নানা                                                                                                                                                হকারের  ফিরি করার আওয়াজ, নানা শব্দ, মানুষের গুঞ্জন আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়। শুধু বুডিমার গলা শোনা যায় -- দূর থেকে হাঁক দিচ্ছে -- শব্দ ক্ষীণ থেকে স্পষ্ট হয়--]


বুড়িমা- দিয়া লিবে, দিয়াআআআআআ! মিট্টি কা দিয়াআআ! সস্তাওয়ালে মিট্টি কা দিয়া। দিয়া লিবে, দিয়াআআআআআ--  
বাবু বাঃ বুড়িমা! এবারও তোমার সঙ্গে দেখা হলোকেমন আছো?
    বুড়িমা- হাপনাকেতো পহচানলাম না  
বাবু না,না, আমাকে তোমার চেনার কথা নয়, আমি তো এখানে থাকি নাআজ কয়েক বৎসর ধরে দেওয়ালীতে এখানে বেড়াতে আসি। তোমাকে দেখে মনে হলো আগেও দেখেছিতুমি আমার অনেক দিনের চেনা
বুড়িমা-তো দিয়া খরিদেন্! রূপয়া মে পাঁচ--
বাবু আরে আমি প্রদীপ নিয়ে কী করব? আমার কি এখানে বাড়ি?
বুড়িমা-তো ফির আতে কাহে হো? হর সাল কেনো আসেন? কুথায় আসেন?
বাবু আমার এক আত্মীয়র বাড়ি বেড়াতে আসি - জায়গাটা আমার খুব ভালো                                                                                   লাগে।
বুড়িমা-তো উয়াদের বাড়িতে রোশনাই জ্বালাইবেন লেন বাবু, বিস পচ্চিশ টাকার দিয়া লিয়ে যান - ভালো দিয়া আছে - তেল শুষবে না। ভালো মাটির দিয়া।
বাবু ওরা বড়লোক, মাটির দিয়া জ্বালায় না
বুড়িমা-কিয়া আমীর, কিয়া ফকির, আজকাল কোইভি মাটির দিয়া জ্বালাতে চায় না                                                                                                  বাবু! সোবাই টুনি জ্বালায় ইলেট্রী বত্তি জ্বালায়
বাবুসব জেনেও তো তুমি মাটির প্রদীপই বিক্রি করছ!
বুড়িমা-বাবুজী, বুতাম দাবিয়ে মিট্টি কা দিয়া জ্বোলে নাপ্যারসে, ইক ইকটা কোরে জ্বালতে হোয় - দিয়ার রোশনাই দিল্ আলো কোরে বাবুজী। বাকী সোব তো চোখে ভিল্কি দিখায় - দিয়া জ্বোলে, তেল পুড়ে - মায়ের বুকে প্যার পয়দা হোয় - আঁখ সচ্চা দিখতে শিখে - ইন্সানের মোনের হিন্সা জ্বোলতে জ্বোলতে রাখ হয়ে যায় - ছাই হোয়ে যায়
বাবুহাঃ,হাঃ,হাঃ,হাঃ - বুড়িমা তুমি তো বেশ ভা্লো ভালো কথা বল - তোমার কথা শুনতে আমার বেশ ভালোই লাগছে - কিন্তু এবার তো আমাকে যেতে হবে।
বুড়িমা-(স্বগতোক্তি) যানে তো সবকো পড়েগা - আজ ইয়া কল
বাবু আরে না, না, ঠিক আছে - এখুনি যাচ্ছি না; অমন করে হাত ধরে আটকাতে হবে না। আচ্ছা বেশ, যাওয়ার আগে বিশ পঁচিশ না পারি, পাঁচ দশ টাকার  দিয়া আমি নিশ্চয়ই কিনে নিয়ে যাব।                                                                        
বুড়িমা-না না দিয়া লিবার কোথা বোলছি না বাবুজী; ইকটা কোথা পুছবো বাবুজী?
বাবুবল না, এত দ্বিধা কেন? কী এমন কথা?
বুড়িমা-(খুব আস্তে) তুমার কাছে মুবাইল আছে?
বাবু(মৃদু হেসে) এই জানার জন্য এত দ্বিধা! আছে আমার কাছে মোবাইল আছেকিন্তু, মানে... তোমার কী দরকার বল তো?  
বুড়িমা-না না, হামি লিব না - হামি লিব না। মতলব তুমাকে সাওধান কোরে দিচ্ছি। ই জগহ বহোত খতর্নক্ আছে - চোর-চোট্টা - বদমাশ সোব ঘুরে বেড়ায় - মওকা মিলতে হী চুরাই লিবে - সম্ভালকে রখনা --
বাবু ও, তাই বলো; ঠিক আছে, এবার আমি যাই - দাও আমাকে পাঁচ টাকার প্রদীপ দাও – একি, আবার কী হলো, আরে আরে! আবার হাত জড়িয়ে ধরছ  কেন - আহা, আমাকে তো যেতে হবে -- কিনা!
বুড়িমা-বাবুজী, তুমার মুবাইলটা হামাকে দিবে?
বাবু মানে! এই যে বললে তুমি নেবে না! কী করবে তুমি আমার মোবাইলটা দিয়ে?                                                                                              
বুড়িমা-না, লিব না - হাতে লিয়ে ইট্টু দেখবো - ফির তুমাকে ওয়াপস্ কোরে দিব।
বাবু তাই বল, শখ হয়েছে - ঠিক আছে, এই নাও, দেখ।
বুড়িমা-সোন্দর, বহোত সোন্দর, বহোত বঢ়িয়া, কিতনা শানদার - ওনেক দাম আছে, তাই না বাবুজী?
বাবু উমম্, তা একটু পয়সা তো লাগবেই - যন্ত্র তো; তবে তোমার প্রদীপগুলোও                                                                                                                            সুন্দর, যখন আলো দেয় তখন আরও সুন্দর লাগে 
বুড়িমা-ক্যা বোলে? ইয়ে মিট্টি কা দিয়ে? কৌন পুছতা হ্যায় আজকাল! সভী কো মুবাইল চাহিয়ে ...লো, তুমহারা মুবাইল লো বাবুজী।
বাবু থ্যাঙ্ক য়ু বুড়িমা, দাও দাও আমায় প্রদীপ দাও এই দ্যাখো আবার হাত ধরে আটকাচ্ছো কেন ? কী মুশকিল - আরে তুমি কি পাগল হয়ে গেলে?
বুড়িমা-বাবুজী হামাকে ইক্টা মুবাইল লাগিয়ে দিবে?
বাবু বুঝলাম না।
বুড়িমা-তুমার মুবাইলে বাত কোরতে দিবে? হামি কথা বুলবো-
বাবু(অট্টহাস্যে) তুমি কথা বলবে? কার সঙ্গে কথা বলবে? স্বামীর সঙ্গে?
বুড়িমা-(অট্টহাস্যে) উ তো ভাগল বা মুঝে ছোড়কে ভাগ গয়ে।
বাবু(ব্যথিত) তোমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে?  
বুড়িমা-(অট্টহাস্যে)মোরে ভূত হোয়ে গেছে - হাঃ,হাঃ,হাঃ,হাঃ (ব্যথিত) আনেক দিন আনেক দিন বিছড় গেছে - ইয়াদ ভী নহী হ্যায় খ্যার ছোড়ো উওসব বাঁতে দো ন বাবুজী একবার বাত করনে!                                                                                                                                                                                                                                                                           
বাবুকার সঙ্গে কথা বলবে তা তো বল - ছেলের সঙ্গে? ছেলে আছে তো?
বুড়িমা-হাঁ হাঁ বাবুজী হামার ছেলে আছে। ভালো আছে -                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 কিন্তু উয়ার মা নাই।মা মর গয়ী
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                    বাবু-কী যে হেঁয়ালি করে কথা বল! তোমার ছেলে আছে বলছ, আবার বলছ ওর   মা নেই - কী ব্যাপার বল তো?
বুড়িমা-(কান্নার স্বরে) হামি উর কাছে মোরে গেছি বাবুজী-
বাবুএ ভাবে বলছ কেন? সন্তানের কাছে মা কখনো মরে?
বুড়িমা-গরীব মা ছেলের কাছে মোরে যায় বাবুজী - ছেলে গরীব মাকে চায় না।
বাবু(হেসে) বুঝেছি, ছেলের ওপর তোমার রাগ হয়েছে।
বুড়িমা-(আর্তস্বরে)না না, বেটার উপোর হামার কৌন রাগ নাই - উ ভালো আছে,  ভালো থাক। ভটভটিয়া চোড়ে ঘুরে বেড়াক - হামি গরীব মা, হামি নিজেই মোরে যেতে চাইলম।
বাবুকেন ছেলে তোমাকে দেখে না? খেতে পরতে দেয় না?
বুড়িমা-হামি নিজেই ছেলের ঘোরে খাবা ছেড়ে দিলম বাবুজী - উর পোয়সা হোয়েছে, মাকে নোকরাণী সমঝতে লেগেছে - উর খানা তো হারামির খানার বরাবর।
বাবু তোমার কষ্ট হয় না? এই বুড়ো বয়সে?
বুড়িমা-হোয় তো জরুর পর ইমান তো বেচতে পারি না! জোখন সোয়ামী  মোরলো তোখন গতোরে খেটে বাচ্চাকে বোড়ো কোরেছি বাবুজী - (কান্নার স্বরে) আজ বুঢ্ঢী হোয়েছি আর গরীব বোলে আপুন পেটের ছ্যেলে হামার গায়ে হাথ দিবে-?(একদম ভেঙ্গে পড়ে) তুমরা হোবে মাকে ইজ্জত না দাও বাবুজী, হামি দিই - মা পুকার হামার কাছে বহোত ইজ্জতদার আওয়াজ বাবুজী! মেরী ভি মা থী, ঔর ম্যায় ভী মা হুঁঔর মা হী রহুঙ্গী ।
বাবু কিন্তু এ ভাবে প্রদীপের দোকান দিয়ে তুমি বাঁচতে পারবে?
বুড়িমা-দুকান! দুকান কোথায় দেখলে বাবুজী? দুকান তো ক্যই সাল পহলে খত্ম হো চুকা বাবু বাবুজী - এক ফটা হুয়া বোরী মে পড়া হুয়া হ্যায় মেরী সারী সামান।
বাবু কিন্তু তোমার তো বেশ বড় সড় মাটির জিনিসের দোকান ছিল- 
বুড়িমা-(দুঃখের হাসি) হাঁ ছিল, দুকান ছিল, তোখন হামিও ছিলাম - এখোন দুকান নাই - হামি ভী থাওকবো না।
বাবু কিন্তু কেন এমন হলো?
বুড়িমা-দুনিয়া বদলে যাচ্ছে বাবুজী। লোক বেড়ে যাচ্ছে - গাড়ী, রিক্সা, ঠেলা, টেম্পো, -এই ছোট বাজারে ভিড় হোয়ে গেলো, ঔর কি হলো - পেটের জন্য মানষের লোড়াই ভী বহোত বেড়ে গেলো-। কি জানো বাবুজী, কভী কভী  লোগ হামার মিট্টির দিয়া পায়ে মাড়িয়ে ভেঙ্গে দিয়ে যেত - বোলছি না জানবুঝকে ভাংছে - যাওয়া আসার রাস্তা নাই তো বুঢ়ীর দুকানের উপর দিয়ে যাও-(হেসে) বুঢ়ীর তো লোড়াই করার ছমতা নাই, মোরতে হোয় তো বুড়ীই মোরুক।
বাবুতুমি কিছু বল না?
বুড়িমা-কাখে বোলব? ভগোয়ান শুঞ্ছে না, তো ইন্সান কি শুওনবে? হামার মারকুট্টা  ছেলে দুকান হাটায়ে টুনির দুকান লাগালো, বাজীর দুকান লাগালো, পিলাষ্টিকের দুকান লাগালো-
বাবু হ্যাঁ, এখন মানুষের অভাব এত বেড়ে গেছে, যে যে ভাবে পারে
বুড়িমা-আভাব হর দিন ছিল বাবুজী - হামার বিশওয়াস রামজীকে টাইম মে ভী ছিল। জোন্টা বেড়েছে, সেটা হলো ইন্সানিয়তের আভাব - মানষের জন্য মানষের ধীরজের আভাব - বিশওয়াসের আভাব, তমীজের আভাব।
বাবু (বিস্ময়ের সঙ্গে) অবাক লাগছে, অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে করতেও তোমার এই সমাজ-চেতনা; বেদনাবোধ!
বুড়িমা-এ বাবুজী; ক্যা সোচ রহে হো? হামাকে মুবাইল দিবি না?
বাবু ওঃ হো, কথায় কথায় একদম ভুলে গেছি। বল কাকে ফোন করবে বল।... আরে বাবা, তোমার ওই কাগজখানার অবস্থা তো তোমার থেকেও বেহাল - কার নম্বর লেখা এটা--
বুড়িমা-(সহাস্যে) হামার ভাইয়ের লাগা লাগা নম্বর লাগা কিতনে সাল পহলে উও মুঝে নম্বর দিয়া - পর মুঝে মুবাইল কাঁহা সে মিলেগা - তু বহোত আচ্ছা আদমি হ্যায় - লগা লগা লগা দে নম্বর!
বাবু দিচ্ছি রে বাবা! রিং হচ্ছে এই নাও!  
বুড়িমা-হাঁআআ, আওয়াজ দিচ্ছে - আওয়াজ দিচ্ছে - হ্যালো, হ্যালো- (আকুল হয়ে) হ্যালোওওও... (কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)বাবুজী, উয়ো  ভি শায়দ মুঝসে বাত করনে মে নারাজ হ্যায়-
বাবুনা না, তা কখনো হয়! নিজে তোমাকে নম্বর দিয়েছে - হয়তো গাড়ির আওয়াজে বা হট্টগোলে শুনতে পারছে না।
বুড়িমা-না না বাবুজী, না - ও শুনেছে, হামি বুঝলাম ও শুনেছে - ওর আওয়াজ পেলাম, ও হামার সাথে কথা বলতে নারাজ। হামার কথা শুনলো না-(কান্না মেশানো গলায়) ভাবল, হামি ওর কাছে পয়সা মাঙ্গবো 
বাবু বেশ তো, আমি আর একবার লাগিয়ে দিচ্ছি, তুমি কথা বল - তুমি তোমার কান্নাটা তো থামাও!
বুড়িমা- (চোখে জল, মুখে হাসি) হামি কাঁদি না রে, শায়দ জমা হুয়া পুরানা পানী নিকল আয়া - ফিক্র না করো বাবুজী-। হামার বেটা ভাবল, বুঢ়ী মা পালতে  ওর বোঝ হয়ে যাবে - ও হামাকে পিটালো, পর না হামার হাড্ডি টুটলো, না দিল টুটলো-(কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে) পর আজ হামার মায়ের পেটের ভাই হামার কলিজা টুটিয়ে দিল বাবুজী!
বাবুতোমার মাটির দিয়াগুলিও তো তোমার দিল - ওগুলো যখন লোকে পায়ে মাড়িয়ে ভাঙ্গে, তখন কি তুমি কাঁদ?... বুড়ীমা-
বুড়িমা-বোল বেটা-
বাবুতোমার মেরুদন্ড লোহা দিয়ে তৈরি - কার সাধ্য তোমার মেরুদন্ড ভাঙ্গে!
বুড়িমা-আজ হামার নিজের উপর বিশওয়াস টুটলো রে - হামার কোথা শুনবার জন্য দুনিয়ায় আর কোই নাহী চাহতা
বাবু তাই কখনো হয়, এই তো আমি শুনছি, দুনিয়ায় কত কত মানুষ, কেউ না কেউ তোমার কাছে আসবেই, তোমার কথা শুনবেই।
বুড়িমা-তু তো হামার বেটা আছিস - কি নাম রে তোর?
বাবু আমার নাম কিরণ, কিরণ দত্ত।
বুড়িমা-(উচ্ছ্বসিত হাসি) না, তুই হামার বুধন আছিস, বুধন-  
বাবু তাই সই, আমি তোমার বুধন - দুনিয়ায় তোমার হাজারো বুধনের মধ্যে আমিও এক বুধন। কিন্তু এবার তো আমায় যেতে হবে, অনেক দেরী হয়ে গেল, ওরা ভাববে।
বুড়িমা-হাঁ, যা অব, তোহার ঘরওয়ালে তোহার জন্য ভাব্বে - ফির আওসবি তো?
বাবুকাল সকালেই আমি চলে যাব, আবার পরের বছর আসব - তোমার কথা শুনব – চলি - ওহোঃ, ভুলেই গিয়েছিলাম - দাও আমাকে পাঁচ টাকার দিয়া দাও-
বুড়িমা-হাঁ, হাঁ লিয়ে জা, থৈলা নিকাল - লিয়ে যা-
বাবু আরে আরে, এত দিচ্ছো কেন?
বুড়িমা-এতো মিট্টি কা দিয়া আছে - কিমত কি আছে বল - পর যদি জ্বালাতে পারিস- হাঁ...
বাবু কিন্তু এত কে জ্বালাবে?
বুড়িমা-তুমি জ্বালাবে - সোবাই কি দিয়া জ্বালাতে পারে বাবুজী - সোবার বুকের ভিতর
বাবু উঁহু, বুধন, বাবুজী না, বুধন
বুড়িমা-ও হাঁ হাঁ, বুধন, বুধন
বাবুমনে থাকবে তো-
বুড়িমা-হাঁ হাঁ, মোনে থাকবে, বুধন বুধন।
বাবু ভুলে যাবে না তো?
বুড়িমা-না, না ভুলে যাব না বুধন, হামার বুধন...(ফোঁপাতে শুরু করে)বুধন
বাবু বুড়িমা, বুড়িমা - আবার...!  
(বুড়িমা ফোঁপায়)
বাবু বুড়িমা, তুমি হেরে যাবে? তুমি হেরে গেলে যে মানুষ হেরে যাবে - তুমি যে বজ্র - মনুষ্যত্বের লড়াইয়ে দধীচির হাড় দিয়ে তৈরি বজ্র
বুড়িমা-তাই তো তোখে বলছি লিয়ে যা - আনেক আনেক দিয়া লিয়ে যা - হর জঘহ দিয়া জ্বালা, হর ঘর মে দিয়া জ্বালা - সোবার বুকের মোধ্যে তো মাচিস থাকে না - তুহার মোধ্যে আছে তুই পারবি--
বাবুকিন্তু বুড়িমা, এতগুলো প্রদীপের কত দাম হবে
বুড়িমা-তোহার কাছে কি হামি পোয়সা মাঙ্গলাম! পারলে দিয়া জ্বালা, না পারলে পায়ে দাবিয়ে তোড় দে, তোড় দে - মিট্টি কা দিয়া মিট্টি মে মিলা দে-
বাবু কিন্তু তোমাকেও তো বাঁচতে হবে, খেতে হবে
বুড়িমা-হামার আছে রে - আখির দম তক লোকের কাছে ভিখ মাংবো - দিয়া লো, দিয়া লাও... (হঠাৎ সম্বিত ফেরে) যা, যা তু যা - ঘর যা-(আর কথা না বলে বুড়িমা পথ চলতে শুরু করে) দিয়া লিবে, দিয়াআআআআআ-!  মিট্টিকা দিয়াআআ! সস্তাওয়ালে মিট্টি কা দিয়া। দিয়া লিবে, দিয়াআআআআআ- (আস্তে আস্তে শব্দ দূরে সরে যায়)
বাবু তোমাকে প্রণাম বুড়িমা, মাটির প্রদীপ এত উজ্জ্বল হতে পারে, আগে ভাবিনি
বুড়িমা-দিয়া লিবে, দিয়াআআআআআ-
বাবুঈশ্বর তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুন বুড়িমা, ঘরে ঘরে দিয়া জ্বালাতে পারব কিনা জানি না, কিন্তু আমার প্রাণের প্রদীপ আমি বার বার জ্বালিয়ে নেব তোমার কাছে এসে।
বুড়িমা-দিয়া লিবে, দিয়াআআআআআ-! মিট্টি কা দিয়াআআ সস্তাওয়ালে মিট্টি কা দিয়া। দিয়া লিবে, দিয়াআআআআআ- (আস্তে আস্তে শব্দ দূরে সরে যায়)




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন