ভেঙে যায় মুখচ্ছবি, বারবার
আমরা তখন এক অপূর্ণ বৃত্ত সাজিয়ে বসে থাকি।
রুমা বলে তার হবে হবে বিয়ের কথা। বিয়ের পর সে ‘সেটল’ করতে চায় সিডনিতে। আরতি বিয়ে নিয়ে রুমাকে ‘লেগপুলিং’ করতে থাকে। সন্ধ্যা তার স্বভাবসুলভ আঁতলামি ঠোঁটের কোণায় ঝুলিয়ে হাতে ধরা বইয়ের পাতা উলটে চলে। চোতের দুপুরে তখন, রোদে ঝিলিক দিয়ে একটা প্লেন ছোট থেকে আরও ছোট হতে থাকে। একটা কচি সবুজ ঘাস দাঁতে ধরে এসব দেখতে দেখতে আমি ভাবি আমরা যে যার মতো পূর্ণ বৃত্ত এঁকে যাব।
-তারপর?
তাকিয়ে দেখি আকরাম হাত থেকে চায়ের কাপটা নামিয়ে টেবিলে রাখছে। সন্ধ্যা নামার পর বারান্দায় যতটা ছায়ার মায়া তারও বেশি হারানো মুখের ছবিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এক এক করে ঢেউ আসছে। বুকের ভেতর আছড়ে পড়ছে।
তারপর, আসলেই তো তারপর কী?
মৌনতা ভেঙে আকরাম বলে, বারান্দায় নেমে আসা সন্ধ্যা বরাবর তাকে নিঃস্ব করে দেয়। তখন কেবল ভাঙন। সেসব সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এলে অবসন্নপ্রায় আকরাম তার বাড়ির বাগানে কখনও রাতভর নগ্ন হয়ে বসে থাকে। প্রগাঢ় অন্ধকারে তার হাত দুটো পাখির ডানা হয়ে গেলে সে বাগানময় উড়ে বেড়ায়।
আমরা যে যার ভাঙন নিয়ে ভাবি। বারান্দায় অন্ধকারে হঠাৎ খুঁজি স্বপনের চিঠি। নীল নীল খামে ভরা তীব্র আবেগের চিঠি। আকরাম চুপ করে যায়। হয়তো সে খুঁজে বেড়ায় এক বিন্দু রক্তের উৎস। তারপর হঠাৎ কথা বলে, বাবা চলে যাবার পর সব কেমন ওলোটপালোট। মা তখন ছেচল্লিশে দাঁড়িয়ে...
আমি আকরামের দিকে তাকাই, সামান্য বিষাদের ছায়া মুখে। মাথার চুল কমে এসেছে। একের পর এক সিগারেট ওর ভেতরের পুড়ে যাওয়াকে একটু একটু করে সামনে নিয়ে আসে।
সামান্য অপেক্ষার পর বলি, বল...
আকরাম সিগারেট ছুঁড়ে আচমকা উঠে এসে আমার কোলে মুখ রেখে কাঁদে। ওর কান্না দেখে কষ্টের বদলে আমার বন্ধ দরজা সামান্য খুলে যায়। ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে এক ঝলক হাওয়া। আকরাম কাঁদতে কাঁদতে বলে, মা তখন চা বাগানে বাবার সঙ্গে। আমি শহর থেকে এক দুপুরে সেখানে গেলাম। মা বিছানায় পড়ে আছে। ভয়ানক শরীর খারাপ। কেউ কিছু বলে না. ..স্নানঘরে দেখি এক বিন্দু রক্ত জমাট বেঁধে আছে...
আকরাম আবার কাঁদে। আমার ভালো লাগে। ওর মাথায় হাত রাখি। ওকে দেবার মতো কিছুই আমার নেই, তা জেনেও আকরাম বারবার আমার কাছে ছুটে আসে মৃতপ্রায় এক জলরেখা ছুঁয়ে থাকার অবিশ্রান্ত চেষ্টায়। বারবার নতজানু হয়। ওকে যত এড়াতে চাই, তত বেশি করে আমাকে আঁকড়ে ধরে।
সিডনিতে এখন সময় কত? রুমা কি এখন তার ভরা সংসারের নিভৃতে... আরতি বা সন্ধ্যা, কে যে কোন্ গোলার্ধে এখন সময়কে ওড়াচ্ছে, হাতের মুঠো খুলে হাওয়ার তালে উদ্দাম, কে ছুঁতে পেরেছে আকাশ, জানি না। নাকি আমি একা নই! আমার সাথে সেই অপূর্ণ বৃত্তকে পূর্ণ করতে ওরাও আমারই মতো খাবি খাচ্ছে, কে জানে!
আমার বারান্দা জুড়ে এখন থমকে আছে সময়। আমার বারান্দায় ঝরঝর ঝরছে ম্যাপল রঙা বিষাদ।
আকরাম এখন আর কাঁদছে না, চুপচাপ মুখ গুঁজে আছে আমার কোলে। ওর মাথায় রাখা হাতটা আস্তে সরিয়ে নিতে চাই। আচমকা আকরাম উঠে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। আমার কী যে হয়... বুকের গভীর থেকে উঠে আসে একের পর এক প্রবল ঢেউ। সে ঢেউয়ের তোড় আমাকে ভাসিয়ে নিতে চায়। আধখোলা দরজা দু’হাতে সটান খুলে ঢুকে পড়তে চায় ঝোড়ো হাওয়া। সজোরে আকরামকে সরিয়ে দিতে চাই।
আমার আজন্ম শুকনো ঠোঁটদুটো হঠাৎ প্লাবনে ভিজে গিয়ে বোবা চিৎকারে বাষ্পসমেত উড়ে যেতে থাকে বাতাসে।
আমরা তখন এক অপূর্ণ বৃত্ত সাজিয়ে বসে থাকি।
রুমা বলে তার হবে হবে বিয়ের কথা। বিয়ের পর সে ‘সেটল’ করতে চায় সিডনিতে। আরতি বিয়ে নিয়ে রুমাকে ‘লেগপুলিং’ করতে থাকে। সন্ধ্যা তার স্বভাবসুলভ আঁতলামি ঠোঁটের কোণায় ঝুলিয়ে হাতে ধরা বইয়ের পাতা উলটে চলে। চোতের দুপুরে তখন, রোদে ঝিলিক দিয়ে একটা প্লেন ছোট থেকে আরও ছোট হতে থাকে। একটা কচি সবুজ ঘাস দাঁতে ধরে এসব দেখতে দেখতে আমি ভাবি আমরা যে যার মতো পূর্ণ বৃত্ত এঁকে যাব।
-তারপর?
তাকিয়ে দেখি আকরাম হাত থেকে চায়ের কাপটা নামিয়ে টেবিলে রাখছে। সন্ধ্যা নামার পর বারান্দায় যতটা ছায়ার মায়া তারও বেশি হারানো মুখের ছবিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এক এক করে ঢেউ আসছে। বুকের ভেতর আছড়ে পড়ছে।
তারপর, আসলেই তো তারপর কী?
মৌনতা ভেঙে আকরাম বলে, বারান্দায় নেমে আসা সন্ধ্যা বরাবর তাকে নিঃস্ব করে দেয়। তখন কেবল ভাঙন। সেসব সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এলে অবসন্নপ্রায় আকরাম তার বাড়ির বাগানে কখনও রাতভর নগ্ন হয়ে বসে থাকে। প্রগাঢ় অন্ধকারে তার হাত দুটো পাখির ডানা হয়ে গেলে সে বাগানময় উড়ে বেড়ায়।
আমরা যে যার ভাঙন নিয়ে ভাবি। বারান্দায় অন্ধকারে হঠাৎ খুঁজি স্বপনের চিঠি। নীল নীল খামে ভরা তীব্র আবেগের চিঠি। আকরাম চুপ করে যায়। হয়তো সে খুঁজে বেড়ায় এক বিন্দু রক্তের উৎস। তারপর হঠাৎ কথা বলে, বাবা চলে যাবার পর সব কেমন ওলোটপালোট। মা তখন ছেচল্লিশে দাঁড়িয়ে...
আমি আকরামের দিকে তাকাই, সামান্য বিষাদের ছায়া মুখে। মাথার চুল কমে এসেছে। একের পর এক সিগারেট ওর ভেতরের পুড়ে যাওয়াকে একটু একটু করে সামনে নিয়ে আসে।
সামান্য অপেক্ষার পর বলি, বল...
আকরাম সিগারেট ছুঁড়ে আচমকা উঠে এসে আমার কোলে মুখ রেখে কাঁদে। ওর কান্না দেখে কষ্টের বদলে আমার বন্ধ দরজা সামান্য খুলে যায়। ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে এক ঝলক হাওয়া। আকরাম কাঁদতে কাঁদতে বলে, মা তখন চা বাগানে বাবার সঙ্গে। আমি শহর থেকে এক দুপুরে সেখানে গেলাম। মা বিছানায় পড়ে আছে। ভয়ানক শরীর খারাপ। কেউ কিছু বলে না. ..স্নানঘরে দেখি এক বিন্দু রক্ত জমাট বেঁধে আছে...
আকরাম আবার কাঁদে। আমার ভালো লাগে। ওর মাথায় হাত রাখি। ওকে দেবার মতো কিছুই আমার নেই, তা জেনেও আকরাম বারবার আমার কাছে ছুটে আসে মৃতপ্রায় এক জলরেখা ছুঁয়ে থাকার অবিশ্রান্ত চেষ্টায়। বারবার নতজানু হয়। ওকে যত এড়াতে চাই, তত বেশি করে আমাকে আঁকড়ে ধরে।
সিডনিতে এখন সময় কত? রুমা কি এখন তার ভরা সংসারের নিভৃতে... আরতি বা সন্ধ্যা, কে যে কোন্ গোলার্ধে এখন সময়কে ওড়াচ্ছে, হাতের মুঠো খুলে হাওয়ার তালে উদ্দাম, কে ছুঁতে পেরেছে আকাশ, জানি না। নাকি আমি একা নই! আমার সাথে সেই অপূর্ণ বৃত্তকে পূর্ণ করতে ওরাও আমারই মতো খাবি খাচ্ছে, কে জানে!
আমার বারান্দা জুড়ে এখন থমকে আছে সময়। আমার বারান্দায় ঝরঝর ঝরছে ম্যাপল রঙা বিষাদ।
আকরাম এখন আর কাঁদছে না, চুপচাপ মুখ গুঁজে আছে আমার কোলে। ওর মাথায় রাখা হাতটা আস্তে সরিয়ে নিতে চাই। আচমকা আকরাম উঠে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। আমার কী যে হয়... বুকের গভীর থেকে উঠে আসে একের পর এক প্রবল ঢেউ। সে ঢেউয়ের তোড় আমাকে ভাসিয়ে নিতে চায়। আধখোলা দরজা দু’হাতে সটান খুলে ঢুকে পড়তে চায় ঝোড়ো হাওয়া। সজোরে আকরামকে সরিয়ে দিতে চাই।
আমার আজন্ম শুকনো ঠোঁটদুটো হঠাৎ প্লাবনে ভিজে গিয়ে বোবা চিৎকারে বাষ্পসমেত উড়ে যেতে থাকে বাতাসে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন