পুরী সিরিজ
রাতের পুরী এক্সপ্রেস
জগন্নাথ এক্সপ্রেসের কামরার ঝাপসা আলোয়
তুমি ছিলে কোনো বয়সী বালকের হাতে
আদুরে খেলনা – জাপানী গুড়িয়া...
পুরী ছাড়িয়ে রাতের গাড়ির ঘুম-বার্থে তোমাকে দেখেছি –
সে তো বিশ্বশান্তি স্তুপের মহাপরিনির্বাণ মুদ্রা নয় –
ভারতীয় রেলের নৈশ নীল আলোয়
জেগে রইলো তোমার উদয়গিরি-খন্ডগিরি
এবং অদূরে তোমার কাঞ্চনজঙ্ঘা...
জেগে রইলো তার চোখের সামনে,
যে মুখও ফেরাবে না, আবার থাবাও মারবে না!
অবশেষে গিরিচূড়ায় উদয় হলো ভোরবেলার –
খড়গপুর পেরোলেই সালোয়ার-কামিজের খোলস কেটে
কেমন অনায়াসে তুমি বঙ্গললনা হয়ে গেলে!
প্লেজার ট্রিপ
মেয়ে জামাই আর নাতনির সাথে বেড়াতে এসে
ট্যুরিস্ট বাস থেকে নেবে কেমন অনায়াসে
আপনি হাওয়া হয়ে গেলেন...
কেদারগৌরীর কোনো গাছতলায় বসে আপনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন,
আপনার স্ত্রী-কন্যা-জামাতা সবাই দেখেছিল --
তারা ফিরে এসে দেখলো আপনি চলে গেছেন,
অর্থৎ কিনা এ জগতে আপনি আর নেই...
তারপর...
তারপর ট্যুরিস্ট বাসে শুয়ে আপনি ফেরত এলেন।
নির্বান্ধব হতভম্ব পরিজনেরা ধার করে তুললো
আপনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ,
স্বর্গদ্বারের বালিয়াড়িতে যেখানে যবন হরিদাসকে
বালুসমাধি দিয়েছিলেন স্বয়ং মহাপ্রভু, --
হয়তো তার ধারে কাছেই হলো আপনার শেষকৃত্য;
সাক্ষী রইলো হলিডে হোমের কেয়ারটেকার আর
সহবাসিন্দা ব্যাঙ্ককর্মী কোনো দাদা!
বেড়াতে এসে কেমন অবলীলায় গাড়িবদলের মতো
আপনার পুরনো সঙ্গীর পাকাচুলের সিঁদুর মুছে দিয়ে
বিদায় নিলেন আপনি ‘টা-টা’ পর্যন্ত না বলে –
যেন এ-ও আর একটা প্লেজার ট্রিপ!
একান্ত স্নান
যেখানে প্রমোদলোভী ভ্রমণার্থী ভিড় করে থাকে,
হোটেলের, দোকানের উপচে পড়া ভিড়ের তলানি
যেখানে সাগর-ফেরা মেছো নৌকাগুলোকে ঘিরে থিকথিক করে,
কাঁধে ক্যামেরা ঝোলানো ভাড়াটে ফোটোশিকারীরা
যেখানে শৌখিন স্নানের ছবি তোলে,
হাওয়া-টায়ার-চড়া বঙ্গললনার বাহু আঁকড়ে ধরে ঝাঁপ দেওয়া
নুলিয়ার মাথায় সাদা চোঙা যেখানে সূর্যের ছোঁয়া লেগে চকমক করে,
তার থেকে দূরে, কিছু একান্তে, ঝাউবন ঘেঁষে
সে স্নান করছিল জন্মপোশাকে –
নোনা হাওয়ার ঝাপটা স্পর্শ করেছিল তার দেহের প্রতিটি বিন্দুকে,
তার তেত্রিশ বছরের যৌবনকে –
অদূরে বালির বুকে পড়েছিল তার খয়েরি পাতলুন, নীল ফতুয়া –
তার জাগতিক সংস্কারের তুচ্ছ বাঁধন যত কিছু,
সর্বাঙ্গ দিয়ে সে আলিঙ্গন করেছিল অতীতের চৈতন্যের মতো
শঙ্খক্ষেত্রের সেই উচ্ছ্বসিত তরঙ্গভঙ্গকে,
তার নিতম্বের নম্র বক্রতা, তার কুন্ঠিত যৌবনসম্পদ,
তার কেশবাহার, তার ঈষৎ-ভুঁড়িতে পিছলে পড়েছিল ম্লান রোদের ঢেউ,
এর ছবি তোলার জন্য ভারী ক্যামেরা হাতে ছিল না কোনো ফোটোগ্রাফার!
এ তো কোনো শৌখিন প্রমোদস্নান নয়, ধর্মীয় অবগাহনও নয়...
আপনার পাঁচশ বছরে
আপনার জন্মের পাঁচশো বছরে আমরা আপনার নীলাচলে এলাম...
কল্পনা করার চেষ্টা করলাম এই মন্দিরের চারপাশে আপনার নৃত্যগীত, পরিজনমন্ডলী...
মানস-চোখে দেখলাম ভেঙে পড়ছে পান্ডাদের সমান্তরাল প্রশাসন
আপনার ভাববন্যার আন্দোলিত তরঙ্গে।
আপনার পাঁচশো বছর পরে শ্রীক্ষেত্রের পান্ডারা দেখালো –
এই দ্বার দিয়ে আপনি নাকি মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন।
দেখলাম এই দরজার ওপর ঝুলে আছে অসংখ্য বাদুড়...
পান্ডারা গল্প শোনালো, এখানকার পিন্ডপ্রত্যাশী অতৃপ্ত পিতারা
নাকি বাদুড় হয়ে আছেন!
মন্দিরের অভ্যন্তরে গড়ুরস্তম্ভের গায়ে আপনার আঙুলের ছাপ দেখা গেল,
মনে হলো, গর্ভগৃহে ওরা আপনাকে ঢুকতে দেয়নি বলেই
এখানে দাঁড়িয়ে আপনাকে বিগ্রহদর্শন করতে হতো!
স্বয়ং রাজা আপনার আনুগত্য মেনে নিলেও আপনি এই
ধর্মধ্বজীদের বশ করতে পারেননি –
এমন কাঁটাঝোঁপও তো থাকে, যেখানে ঢুকতে পারে না প্রখর সূর্যকর!
এই মন্দিরের কোথাও আপনাকে পাওয়া গেল না-
পেলাম না গম্ভীরা নামক জাদুঘরেও,
যেখানে আপনার পাদুকা-কমন্ডলুর পাশে জ্বলছে অনির্বান শিখা...
যেদিন আপনি এখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান, সেদিন থেকেই নাকি জ্বলছে!
রাতের পুরী এক্সপ্রেস
জগন্নাথ এক্সপ্রেসের কামরার ঝাপসা আলোয়
তুমি ছিলে কোনো বয়সী বালকের হাতে
আদুরে খেলনা – জাপানী গুড়িয়া...
পুরী ছাড়িয়ে রাতের গাড়ির ঘুম-বার্থে তোমাকে দেখেছি –
সে তো বিশ্বশান্তি স্তুপের মহাপরিনির্বাণ মুদ্রা নয় –
ভারতীয় রেলের নৈশ নীল আলোয়
জেগে রইলো তোমার উদয়গিরি-খন্ডগিরি
এবং অদূরে তোমার কাঞ্চনজঙ্ঘা...
জেগে রইলো তার চোখের সামনে,
যে মুখও ফেরাবে না, আবার থাবাও মারবে না!
অবশেষে গিরিচূড়ায় উদয় হলো ভোরবেলার –
খড়গপুর পেরোলেই সালোয়ার-কামিজের খোলস কেটে
কেমন অনায়াসে তুমি বঙ্গললনা হয়ে গেলে!
প্লেজার ট্রিপ
মেয়ে জামাই আর নাতনির সাথে বেড়াতে এসে
ট্যুরিস্ট বাস থেকে নেবে কেমন অনায়াসে
আপনি হাওয়া হয়ে গেলেন...
কেদারগৌরীর কোনো গাছতলায় বসে আপনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন,
আপনার স্ত্রী-কন্যা-জামাতা সবাই দেখেছিল --
তারা ফিরে এসে দেখলো আপনি চলে গেছেন,
অর্থৎ কিনা এ জগতে আপনি আর নেই...
তারপর...
তারপর ট্যুরিস্ট বাসে শুয়ে আপনি ফেরত এলেন।
নির্বান্ধব হতভম্ব পরিজনেরা ধার করে তুললো
আপনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ,
স্বর্গদ্বারের বালিয়াড়িতে যেখানে যবন হরিদাসকে
বালুসমাধি দিয়েছিলেন স্বয়ং মহাপ্রভু, --
হয়তো তার ধারে কাছেই হলো আপনার শেষকৃত্য;
সাক্ষী রইলো হলিডে হোমের কেয়ারটেকার আর
সহবাসিন্দা ব্যাঙ্ককর্মী কোনো দাদা!
বেড়াতে এসে কেমন অবলীলায় গাড়িবদলের মতো
আপনার পুরনো সঙ্গীর পাকাচুলের সিঁদুর মুছে দিয়ে
বিদায় নিলেন আপনি ‘টা-টা’ পর্যন্ত না বলে –
যেন এ-ও আর একটা প্লেজার ট্রিপ!
একান্ত স্নান
যেখানে প্রমোদলোভী ভ্রমণার্থী ভিড় করে থাকে,
হোটেলের, দোকানের উপচে পড়া ভিড়ের তলানি
যেখানে সাগর-ফেরা মেছো নৌকাগুলোকে ঘিরে থিকথিক করে,
কাঁধে ক্যামেরা ঝোলানো ভাড়াটে ফোটোশিকারীরা
যেখানে শৌখিন স্নানের ছবি তোলে,
হাওয়া-টায়ার-চড়া বঙ্গললনার বাহু আঁকড়ে ধরে ঝাঁপ দেওয়া
নুলিয়ার মাথায় সাদা চোঙা যেখানে সূর্যের ছোঁয়া লেগে চকমক করে,
তার থেকে দূরে, কিছু একান্তে, ঝাউবন ঘেঁষে
সে স্নান করছিল জন্মপোশাকে –
নোনা হাওয়ার ঝাপটা স্পর্শ করেছিল তার দেহের প্রতিটি বিন্দুকে,
তার তেত্রিশ বছরের যৌবনকে –
অদূরে বালির বুকে পড়েছিল তার খয়েরি পাতলুন, নীল ফতুয়া –
তার জাগতিক সংস্কারের তুচ্ছ বাঁধন যত কিছু,
সর্বাঙ্গ দিয়ে সে আলিঙ্গন করেছিল অতীতের চৈতন্যের মতো
শঙ্খক্ষেত্রের সেই উচ্ছ্বসিত তরঙ্গভঙ্গকে,
তার নিতম্বের নম্র বক্রতা, তার কুন্ঠিত যৌবনসম্পদ,
তার কেশবাহার, তার ঈষৎ-ভুঁড়িতে পিছলে পড়েছিল ম্লান রোদের ঢেউ,
এর ছবি তোলার জন্য ভারী ক্যামেরা হাতে ছিল না কোনো ফোটোগ্রাফার!
এ তো কোনো শৌখিন প্রমোদস্নান নয়, ধর্মীয় অবগাহনও নয়...
আপনার পাঁচশ বছরে
আপনার জন্মের পাঁচশো বছরে আমরা আপনার নীলাচলে এলাম...
কল্পনা করার চেষ্টা করলাম এই মন্দিরের চারপাশে আপনার নৃত্যগীত, পরিজনমন্ডলী...
মানস-চোখে দেখলাম ভেঙে পড়ছে পান্ডাদের সমান্তরাল প্রশাসন
আপনার ভাববন্যার আন্দোলিত তরঙ্গে।
আপনার পাঁচশো বছর পরে শ্রীক্ষেত্রের পান্ডারা দেখালো –
এই দ্বার দিয়ে আপনি নাকি মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন।
দেখলাম এই দরজার ওপর ঝুলে আছে অসংখ্য বাদুড়...
পান্ডারা গল্প শোনালো, এখানকার পিন্ডপ্রত্যাশী অতৃপ্ত পিতারা
নাকি বাদুড় হয়ে আছেন!
মন্দিরের অভ্যন্তরে গড়ুরস্তম্ভের গায়ে আপনার আঙুলের ছাপ দেখা গেল,
মনে হলো, গর্ভগৃহে ওরা আপনাকে ঢুকতে দেয়নি বলেই
এখানে দাঁড়িয়ে আপনাকে বিগ্রহদর্শন করতে হতো!
স্বয়ং রাজা আপনার আনুগত্য মেনে নিলেও আপনি এই
ধর্মধ্বজীদের বশ করতে পারেননি –
এমন কাঁটাঝোঁপও তো থাকে, যেখানে ঢুকতে পারে না প্রখর সূর্যকর!
এই মন্দিরের কোথাও আপনাকে পাওয়া গেল না-
পেলাম না গম্ভীরা নামক জাদুঘরেও,
যেখানে আপনার পাদুকা-কমন্ডলুর পাশে জ্বলছে অনির্বান শিখা...
যেদিন আপনি এখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান, সেদিন থেকেই নাকি জ্বলছে!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন