কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

০১) অমিতাভ প্রামাণিক



চারানা আটানা



১০)
নববর্ষ ১৪২১


জানালায় চুপি চুপি উঁকি মারছে নতুন বছরের রোদ। অভিমানী গলায় গান গাইছে – কখন বসন্ত গেল এবার হলো না গান। সুনীলদা লিখে গেছেন, কেউ কথা রাখেনি। সত্যিই রাখে না কেউ। যে মর্যাদা প্রত্যাশিত, তার ধারে কাছে পাচ্ছে না এবারের নতুন বছর।

অথচ বছরে তো একবারই আসে সে। গরমটা এবারও বেশ, কিন্তু কোনোবার কম হয়? হ্যাঁ, দোকানে দোকানে গণেশকে সোজা করে রাখা হয়েছে, ধূপধূনোও যে পায়নি, তা নয়। ধারবাকি অন্যান্য বারের মতো এবারেও যথাসম্ভব মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। হালখাতার বন্দোবস্তও উঠে যায়নি একেবারেই। মোবাইল ফোনের কল্যাণে ক্যালেন্ডারের হ্যাপা এখন অনেক কমে গেছে। মা দুর্গা, মা কালী, মা লক্ষ্মীর ফটোর চেয়ে রাগিনী এসেমেস টু-র পোস্টার অনেকে বেশি করে চাইছে দেওয়ালে ঝোলাতে। সময়ের সঙ্গে রুচি তো অল্পবিস্তর পাল্টাবেই! আগের মতো গপগপিয়ে ডজন ডজন লুচি খেতে কি চায় এখনকার পোলারা?


বসন্ত চলে গেল। চুপিসাড়ে। সে চলে গেল, বলে গেল না – টাইপ। আমের বাগানে অলির গুঞ্জরণ ছিল, কেউ খেয়াল করেনি। আম তো এমনি এমনি ফলে না! তার জন্যে অলিকে বারবার ফিরে আসতে হয়।

অথচ আমাদের অর্থাৎ আম আদমিদের ভাগ্যাকাশে কী আম নাচছে, তার জন্যে সেজে উঠেছে গোটা দেশ। অনেক লেখাজোখা হয়েছে এ নিয়ে। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের দাবীতে লড়ছে সবকটি দল। তাদের প্রার্থীতালিকায় অবশ্য সেই একই মুখ। মানে গতকাল যারা দুর্নীতির অভিযোগে দায়ী ছিল, আজ তারাই সচ্চরিত্র প্রশাসক হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে – রোটি-কাপড়া-মকান জোগাবে দেশের মানুষকে। বারবার ফিরে আসা অলির দল না তো কী? স্টেজে উঠলে পাগলা দাশুর মতোই বলতে হবে – আবার সে এসেছে ফিরিয়া!

নববর্ষ নিয়ে তাই নতুন কিছু লেখার নেই। হ্যাঁ, টিভিতে কিছু প্রোগ্রাম হবে। লালপাড় সাদা শাড়িতে কিছু সুবেশা তরুণী নাচবে – এসো হে বৈশাখ এসো এসো-র সঙ্গে। ট্রাফিক সিগন্যালে বাজবে – নব আনন্দে জাগো আজি নব রবিকিরণে। মধ্যাহ্নের প্রবল গরমে হাঁসফাস করতে থাকা আধহাত জিভ বের করা কুকুরটা ছায়ায় বসে থাকবে, তাকে দেখে বোঝা যাবে – ‘প্রখর তপনতাপে আকাশ তৃষায় কাঁপে’ কী বস্তু। দীর্ঘ দগ্ধ দিনের দারুণ অগ্নিবাণ নিয়ে সে প্রতি বছরই আসে, এবারও তার ব্যত্যয় হবে না। 


এবার আকাশ বাতাস মুখরিত ভোটরঙ্গে। আগের সংখ্যায় এর কিছু খন্ডচিত্র তুলে ধরেছিলাম গদ্যে। কিন্তু এই অনির্বচনীয় কান্ডটি – পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের ৮৪ কোটি লোকের ভোটদানের মাধ্যমে কেন্দ্রে সরকার গড়ার পেছনে যে সুবৃহৎ আলাপ-আলোচনা – তা দাবি করে অন্তত কয়েক লাইন ছড়া। তা থেকে আপনাদের বঞ্চিত করলে আমি মহাপাতক হব না?

এ নিয়ে মহাকাব্য লেখা যায়। তবে গরমে কিনা মাথার ঠিক নেই, তাই মাত্র কয়েক স্তবকে এর কিছু ছাপ থাক।

এ যে ঘোর কলি! ফুঁসছে নাগিনী
ঢালবে কোথায় বিষ তাহার!
প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে
রাস্তায় হাঁটে ইস্তাহার।

বটগাছতলে মন্দির হবে,
দাদারা বাঁধিয়ে দিলেক শান –
দিদিরা বলল, পেঁয়াজি পেয়েচো?
সামনে এখন ইলেকশান!

পুলিশমন্ত্রী কমিশনারকে
বললে, ভরুন ফ্রেশ টোটা
বন্দুকে সব। এ বাজারে হিট
সুপাঠ্য ম্যানিফেস্টো তার।

সবাই নাচছে উদ্দাম নাচ!
একজনই ছিল যাও বা ধীর,
বেফাঁস একটা কোশ্চেন করে
তকমা পেয়েছে মাওবাদীর!

শীত চলে গেছে। গরম বাড়ছে।
বাড়ে মখমলি গদির ওম –
পরবে কি লোকে গান্ধীর টুপি?
না কি ওতে হবে মোদির হোম?

কাল দিয়েছিলে কচুপোড়া খেতে,
দেবে নাকি তবে আজ মা ওল?
মায়াদিদি নাকি ডোনেশনে তার
কেনাবেচা করে তাজমহল!

আমসত্ত্বটা বাঁদরে খেয়েছে
পড়ে আছে শুধু বয়াম মা’র!
শাড়ি ও পাদুকা রাখবেন বলে
দিল্লীটা চাই জয়-আম্মার!

হানাহানি ছেড়ে শান্তির বারি
ছিটাই, হৃদয়ে দি বুলায়ে?
যাদবাধিপতি কৃষ্ণের কাজ
কে করবে, লালু? কি মুলায়েম?

নীতীশ-নবীন কর্মঠ লোক
গদিতে বিহার উড়িষ্যায়।
বোঝে না দাদা না দিদি হবে সেফ
তাই উঠে পড়ে দু’রিকশায়!

এরা যে কী খেয়ে দেশ চালাবেন
পাচ্ছে না রাজজোটক থৈ –
ডিশে আছে তিন মূলি কা পরাঠা
একটু আচার, ও টকদই!

এসব খেয়ে কি দেশ চলে ভায়া?
তাই নেওয়া হাত পা টিপিয়ে –
সারাদেশ জুড়ে কচিকাঁচা পার্টি,
দলিত-গলিত বা সিপিয়েম!

বেদ ঝাড়ে কেউ, কেউ আম্বেদ,
কেউ কোট করে অমর্ত্য –
দু-পাঁচটা সীট কোনোমতে পেলে
আউটসাইড সমর্থন!

পিএম বলবে, আর জ্বালিও না,
রাখবো কোথায় এলবো, বোন?
বোন গোঁসাঘরে খিল দেবে, চেয়ে
আরও কিছু পোস্ট, রেলভবন।

মা বলবে ডেকে, তুই গোমুখ্যু,
বৃথাই ঝামেলা পোয়ালি, সন –
দরকার ছিল পাগলের সাথে
জোট বেধে এই কোয়ালিশন?

তামিল-তেলুগু-মাল্লুরা নাচে
বাংলা-মরাঠী-হিন্দী আর
গুজরাতি-পঞ্জাবী ও ওড়িশি –
ইনক্রেডিব্‌ল্‌ ইন্ডিয়া!

তামাশা দারুণ, আমাশাও বাড়ে
গরমে, তাই তো শোক সবার –
এ ভোটরঙ্গে, সবার সঙ্গে
চলো ভোট দিই, লোকসভার।

এ লেখা যখন আপনারা পড়ছেন, তখন বেশ কিছু অঞ্চলে ভোট হয়ে গেছে। বেশ কিছু অঞ্চলে ভোট হওয়া বাকিও। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে আপনার মূল্যবান ভোটটি দিতে ভুলবেন না। হ্যাঁ, এবারে পছন্দের প্রার্থীর তালিকায় ‘নান অফ দি অ্যাবাভ’ও আছে।

স্বাধীনতার পর সাতষট্টি বছর হতে চলল। এখনও ভোটের ইস্তাহারে ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর প্রতিশ্রুতিকেও হাস্যকর মনে হয়। কেউ কথা রাখেনি। কেউ কথা রাখে না। আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা আমাদের নিজেকেই করে নিতে হয়। অবহেলিত হয় আমাদের যৌথ প্রয়াস, আমাদের সমাজ, আমাদের রাজ্য, আমাদের দেশ। বারোভূতে লুটেপুটে খাওয়ার জন্যেই যেন এদের সৃষ্টি।

এ বিষয়ে কিছু বলার মতো যথেষ্ট প্রজ্ঞা আমার নেই। ছেলেমেয়েদের গায়ে একটা নতুন সুতির জামা উঠুক এই পয়লা বৈশাখে, একটু মিষ্টিমুখ হোক, ছুটিতে একটু দার্জিলিং-নৈনিতাল-সিমলা হোক। এটুকুই।

সবাইকে নববর্ষের আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন