কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

০৬) রহুল মাহফুজ জয়

বাসস্ট্যান্ডে

কোথাও কোথাও মানুষের জন্য অপেক্ষারা বসে আছে, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে সেসব অপেক্ষার সঙ্গে গল্প করতে করতে ঝিমোচ্ছে ক্লান্তি। বাসস্টপে দেখেছি অপেক্ষাগুলো কীভাবে নাড়াচাড়া করে আর বোকা বোকা চাহনি নিয়ে এক সময় ক্লান্তিতাড়িত হয়ে সিগারেট ধরায়। মানুষ তখন অপেক্ষা আর ক্লান্তির দাস, খেলার পুতুল বা ইচ্ছেপূরণের দৈত্য। পনেরো নভেম্বর সন্ধ্যায় মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অনেকের ক্লান্তির সঙ্গে অপেক্ষার দেখা হয়ে গেল, ওরা ডেকে আনল মাথাব্যথাকে। ক্লান্তি, এসো মানুষের মস্তিষ্কে র গভীরে যাই, সব মাথাকে বানিয়ে দিই পিঁপড়েখামার! এসব বলে আহারে ব্যস্ত হয় মাথাব্যথা। হঠাৎ মারমেইডের ভঙ্গিতে আসে রঙিন বাস; গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যেতে যেতে দেখি, মারমেইডের সব রঙ ফাঁকা বেঞ্চিতে, যেখানে অপেক্ষা আর ক্লান্তিরা অনাগত দিনের গল্প করছে। আহা! জগতে মানুষই কেবল সুখি হলো না আজও...!



নাইটমেয়ার-২


এখন এ প্রান্তরে, আমারই স্বদেশে রাত নামলে ফর্সা রমণীর মতো আয়নার সামনে বসে থাকে অন্ধকার। মুখে পাউডার মেখে পথে বেরোয়, ককটেল ফাটলে বলে ওঠে, জিন্দাবাদ! সেসব শব্দে নারকেলের মতো শান্তি ফেটে গেলে রাত-দুপুরে মিষ্টি জল হয়ে জন্ম নেয় কতক কুকুরছানা। জেহাদের জন্যে জঙ্গি কৌশলে ওরা মাথায় বাঁধে আমারই পতাকা।

এসব দিনে কবিতার মৌসুম কুয়াশায় ফ্লাইওভার ধরে মিলিয়ে যাচ্ছে – পোড়াগন্ধের ভেতর নিয়ন আলো জ্বলতে পারে, শরীরে শামুক হতে পারে অন্য শরীর, ঠোঁটে জন্ম নিতে পারে খাজুরাহোর সমস্ত শিল্প - প্রেমে হৃদয় জমে হয় না পৌষালি ক্ষীর।

তবু ভালোবাসতে চাইছি নিজেকে, শান্তিকামী মানুষের অক্ষমতাকে অস্ত্র বানিয়ে তৈরি করছি নতুন দুর্গ। ফর্সা রমণীর মতো আয়নায় মুখ দেখা অন্ধকার ফিরবে বলে, চুপিসারে বসে আছে এক বিদ্রোহী কুকুর।



অ-প্রেম অ-সুখ

(১)

কাকতাড়ুয়ার হাসি হয়ে মাঠে মাঠে দাঁড়িয়ে আছি। হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে চলে আসছে মৃত পাখিদের পালক। তারাদের যতিচিহ্ন উড়ছে, খসে পড়ছে পৃথিবীর আয়ু। আমার যে ছায়াগুলোর অক্ষর হবার কথা ছিল, তারা আজ বিষণ্ন বিড়ালছানা। শাদা কালিতে যে আমার হাসি এঁকেছে, তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি কবিতারা সব সিসিফাস, শব্দের বদলে বয়ে বেড়াচ্ছে পাথর।

পাথরগুলোর নাম একাকীত্ব, চাপা পড়ার ভয়ে মাঠে মাঠে কাকতাড়ুয়ার হাসি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। তা দেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিশিপাখি, যার ডানায় আঁকা রয়েছে আমার গন্তব্য।

(২)

তোমাকে আমি তালাক দিয়েছি, একাকীত্ব! এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক, বাইন তালাক চিৎকার করে করে একদিন মরে গেছি। যে আমাকে দেখছ, এই আমি তোমার কেউ নই। আমার অগোছালো ঘর তুমি পাহারা দিও না, আমাকে প্রাচীন দেওয়াল ভেবে মাশরুম হয়ো না তুমি। খালি বিছানায় বহুকাল আমার আত্মার সাথে পুতুল খেলেছ; এবার ফিরে যাও। তোমার কোনো বংশধর পিতৃত্বের ঋণ নিয়ে যেন আমার কাছে না আসে –

এরপর একাকীত্বের সাথে আমার আর আলাপ হয়নি, এবার আমার প্রেমে পড়েছে ওর যমজ বোন নি:সঙ্গতা। কোনো এক ছুটির দিনে আমরা ডেটিংয়ে যাব। ও আমাকে হত্যা করে কাশবনে ফেলে এলে আমি হয়ে যাব পিঁপড়েদের খাজুরাহো মন্দির।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন