কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

০৬) ইন্দ্রনীল ঘোষ

ইউরিনালের হোমো ভুত



-- কী যা তা বকছিস? ভুতে বিচি টেপে?

-- সিরিয়াসলি টেপে। ইনফ্যাক্ট টিপতে টিপতে ব্যথা ক'রে দিয়েছে।

-- ভরদুপুরে গাঁজা খেয়েছিস?

দেবা রেগেমেগে ফোন রেখে দেয়। কিছুক্ষণ মোবাইলটার দিকে থতমত তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবি, যাচ্চলে, কোথায় আমার কথা বিশ্বাস করল না ব'লে, আমারই রাগ করা উচিত, তা না উলটে নিজেই গোঁসা দেখিয়ে ফোন কেটে দিল। অদ্ভুত! শালা, নিজের বিচি হলে বুঝতে, সারাক্ষণ যন্ত্রণায় ঢিপঢিপ। সর্টসটা একটু নামিয়ে, হাত বোলাই। বেচারা এখনও গোলাপি।

বাড়ির বাথরুমে কোমডটায় জল পাস করছিল না, আদ্ধেক দিনই বিশ্রী কাণ্ড। শেষে প্লাম্বার বাবুলালকে ডেকে কাজটা দিই। সে অমনি, হ্যাঁ হচ্ছে, এই তো হলো ব'লে, যেটুকু ছিল সেটুকুও ভেঙে উপড়ে, দোকানে গেল, কয়েকটা জিনিস দরকার, এক্ষুনি আসছি। ও মা, তারপর, এক-ঘণ্টা কাটে দু'-ঘণ্টা কাটে -- বাবুলাল বেপাত্তা। শেষমেশ ফোন করায় জানতে পারলাম, দেশ থেকে খবর এসেছে, মায়ের নাকি যায় যায় অবস্থা, বাবুলাল স্টেশনে, এক সপ্তা'র মধ্যেই ফিরে আসবে।

হায় রে! কোথায় এক সপ্তা'! সেই যে গেল, আজ নয় নয় ক'রেও পঁয়তাল্লিশ দিন! এমনকি মোবাইলটাও সুইচড অফ। অন্য কোনও প্লাম্বারও পাচ্ছি না। বাথরুমের ভগ্নস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে যখন দুর্দান্ত গালাগাল দিতে ইচ্ছে করছে বাবুলালকে, তখনই মনে হয়, আহারে, আমার তো তবু বাথরুমের ওপর দিয়ে গ্যাছে, ও বেচারার যে মা নিয়ে টানাটানি! কী করব বুঝতে না পেরে কান্না পায়। এ' পরিস্থিতিতে কান্নাটাই একমাত্র উপায়, আমার ভাঙা বাথরুম আর বাবুলালের ভাঙা মা, দু' ক্ষেত্রেই মানানসই।



মেন গেটের ডানদিকে একটা পরিত্যক্ত বাথরুম ছিল – ইন্ডিয়ান স্টাইল পায়খানা, আর পাশে স্নান পেচ্ছাপ করার মতো একটু স্পেস। বাড়ির মালিক সম্ভবত লেবারদের বা বাইরের থেকে আসা উটকো লোকের কথা ভেবে এটা বানিয়েছিলেন। মূল বাড়ির থেকে আলাদা। এতদিন কাজে না লাগায় স্টোর-রুম হয়ে পড়েছিল। এখন অগত্যা সেখানে জ’মে থাকা নানারকম শিশি বোতল, প্যাকেট, কাঠের তক্তা সরিয়ে সেটাকেই কাজে লাগানোর বন্দোবস্ত করলাম। বাল্বও লাগালাম একটা। তারপর সেখানেই স্নান-টান সেরে দিব্য অফিস গেলাম। ফিরে এসে হাত-পা ধুতে যাব, সেই শুরু হলো গণ্ডগোল। সবে হাতে জলের মগটা তুলেছি, বাল্বটা গেল কেটে। ওইভাবেই, কোনোরকমে হাত-পা ধুয়ে, আবার দোকান, আবার বাল্ব। কী আশ্চর্য, লাগানো মাত্র ফিউজড! যাচ্চলে! লাইনে কোনও একটা গড়বড় হচ্ছে না কি? কাল ইলেকট্রিসিয়ান ডাকতে হবে। এই ভাবতে ভাবতে হিসি করার জন্য অন্ধকারেই নুনুটা বার করেছি সবে, সাথে সাথেই কে যেন সজোরে বিচিদুটো টিপে দিল। যন্ত্রণায় চিৎকার ক’রে উঠলাম প্রায় – বাবা গো!

– লাগল?

যাঃ শালা এটা আবার কে বলল?

আমি এদিক ওদিক তাকাই। যেটুকু আলো আসছে, বাইরে থেকে, তাতে কোনও মানুষ লুকিয়ে থাকলে তো দেখতে পাওয়ার কথা। তবু আমি পকেট থেকে দেশলাইটা বার ক’রে জ্বালাই, বাথরুমের বাইরেটাও দেখি। নাহ, কোত্থাও কেউ নেই। পেচ্ছাপ মাথায় উঠে গেছে। নুনুর হাত ধোওয়ার সাহসটাও হলো না।



এই গেল প্রথম প্রস্থ। দ্বিতীয় ধাক্কা খেলাম রাতে, মদ খাওয়ার সময়। তিন পেগ পেটে ঢালার পর সাহস আর মুত দুটো একসাথে পেয়ে বসল। মনকে বোঝালাম, ধুর, কেউ হয়তো রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে কারও সাথে কথা বলছিল, কী বেকার চিন্তা করছি এত! বোঝালাম বটে, কিন্তু আশপাশের বাড়িগুলোর আলো ততক্ষণে নিভে গেছে, মেন গেটের কাছে যেতেই, ঘুরঘুট্টি অন্ধকার ওই ইউরিনালটা দেখে হার্ট-বিট তড়াক ক’রে স্ট্যান্ড-আপ। কোনোক্রমে দৌড়ে, এক হ্যাঁচকায় প্যান্টের চেন খুলে শুরু। আহ... সেই কখন থেকে হয়নি। মনের আনন্দে তিন পেগ মুতে চলেছি, আচমকা যেন একটা খসখসে হাত কেউ বিচিতে বোলাতে শুরু করল। ব্যাপারটা ঠিক কী ঘটছে? চোখ কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করি, তখনই...

– খুব লেগেছে?

বাবাগো মাগো করতে করতে ঘরে। প্যান্টের চেনটাও বন্ধ করা হয় না। দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে, খিল লাগিয়ে, আরেকবার ভালো ক’রে দেখি, লাগানোটা ঠিকঠাক হলো কি না।

সে রাতে ঘুম আসতে চায় না কিছুতেই। অনেকটা মদ পেটে ঢেলে কোনও রকমে। সকাল ওই দশটা নাগাদ চোখ খুলতেই দেবাকে ফোন। এর আগে ও বেশ কিছু সমস্যাতে আমায় খুব হেল্প করেছিল। শালা ও এবার ডিচ করল।

– আমি তোকে ডিচ করিনি।

– আমি তো বলিনি অলোক যে, তুই আমায় ডিচ করেছিস!

– কিন্তু আমার নাম নিয়ে গল্প লেখা, সেটা ফেসবুকে দেওয়া, এর কী মানে হয়? তুই গে-রাইটস নিয়ে মুভ করছিস কর, খামোখা আমায় জড়াচ্ছিস কেন? আমার ফ্যামিলি আছে। এটা বোঝ।

– কী অদ্ভুত, আমার গল্পে ক্যারেকটারের নাম অলোক হলে লোকজন তোকে সন্দেহ করবে!

– করতেও তো পারে। স্কুলে সবাই জানতো, তোর সাথে আমার রিলেশন নিয়ে। তাছাড়া যদি স্রেফ একটা নামের দরকার হয়, অলোক কেন? অনির্বাণ রাখ, অখিল রাখ, অসীম রাখ। অলোক কেন?

– এই নামটা আমায় একটা ফিল দেয়। অলোক আমার জীবনের প্রথম কিস। জীবনে প্রথম ব্লো-জব দিয়েছি আমি অলোককে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখে সেই গন্ধ নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। গন্ধটাকে ছুঁয়েছি, আদর করেছি। তুই বুঝিস না?

– আমার যে গিল্টি ফিল হয়। যখন দেখি, তুই এই সব নিয়ে কথা বলছিস, এর সমর্থনে নানা মানুষের সাথে তর্ক করছিস, ঝক্কি সামলাচ্ছিস, মিছিলে নামছিস, আর আমি নিশ্চিন্তে বউ মেয়ে নিয়ে সংসার করছি, আমার যে গিল্টি ফিল হয় তোর জন্য, এটা তুই কেন বুঝিস না?

ঘড়ির কাঁটা বেকার ছেলের মতো ঘুরে বেড়ায়। আমার দাঁত মাজা মুখ ধোওয়া কিছুই হয় না। কী যে করি, কাকে যে বলি... বাবুলালকে ফোন লাগাই কয়েকবার, যথারীতি সুইচড-অফ। এক সময় জেদ চেপে বসে – যা হবে দেখা যাবে, এরকম ভয় পেয়ে কোনও লাভই নেই, সামলাতে হবে বিষয়টাকে। তোয়ালে ব্রাশ নিয়ে আমি বাথরুমের দিকে এগোই।



দাঁত মাজতে মাজতে মনে পড়ল, আরে, দিনের বেলা তো কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কাল অফিস যাওয়ার আগে এই বাথরুমেই তো স্নান সারলাম, কই কোনও ঝামেলা তো হয়নি! কথাটা ভেবে বেশ ফূর্তি আসে মনে। যাক অন্ধকার নামার আগে অবধি আমি সেফ। সবে তো বারোটা, সন্ধে হতে এখনও ছ’ ঘণ্টা। ততক্ষণ নো টেনশন। তারপর না হয় একটা কিছু ভাবা যাবে। আনন্দে সার্ট প্যান্ট খুলে, এক বালতি ঠাণ্ডা জল, স্নান শুরু করি। সব টেনশন ধুয়ে যাও ভাই, ছ’ ঘণ্টার একটা ফ্রেস বিরতি পাওয়া গেছে।

ঠিক দু’ মগ জল ঢালার সাথে সাথেই, গলাটা আবার, আজ একটু অভিমানে, ভাববাচ্যে,

– আমায় দেখে ভয় পাওয়ার কী কারণ?

যাচ্চলে! দিনের বেলাতেও! থতমত খেয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম,

– দেখতে আর কোথায় পেলাম? দেখতে পাচ্ছি না বলেই তো ভয়।

– যা কিছু দেখা যায় না, সব কিছুকেই ভয় পাওয়া হয় কি?

শালা, ভাববাচ্য দেখো, শ্বশুর-ভাদ্রবউ না কি? একটু গম্ভীর হয়ে বলি,

– তুমি কে?

– ভূত।

– ভূত?

আমার গলা শুকিয়ে যায়। কী বলব খুঁজে পাই না। আর ঠিক তখনই পেন্ডুলামের মতো, নুনুটা দু’দিকে দুলতে শুরু করে। কেউ যেন আঙুল দিয়ে দোলাচ্ছে। মানে? ভূতে নুনুও দোলায়?

– আমি কি কিছু করেছি? ভয় দেখিয়েছি? আমি এলেই ওর'ম পালিয়ে যাওয়ার কী মানে?

ভয় আর যৌন অনুভূতির মাঝখানে দাঁড়িয়ে এরকম পরীক্ষা বেচারা নুনুটিকে কখনও দিতে হয়নি। সে কনফিউজড হয়ে কিছুক্ষণ ভাবে, কী করবে। তারপর ধুত্তেরি ব’লে লম্বা হতে শুরু করে। ভূত কোনও কথা বলে না। এটা ভালো। কথা না বললে, ভূত যে আছে, সেটা ভাবার কোনও দায়ও আমার থাকে না। আমি খোলা মনে শিরশিরানি খেতে থাকি। লোম খাড়া হয়। নুনু শক্ত হতে হতে, একসময় মাল প’ড়ে যায়। দেখি মগখানা নিজে নিজেই জল ভরল, উড়ে এসে ধুয়ে দিল। তারপর তোয়ালের খুঁটটা মাথা বাড়িয়ে মুছে গেল। এতসব কিছু হয়ে যাওয়ার পর ভূত মুখ খোলে।

– কাল খুব লেগেছিল না?

– না। ঠিকাছে।

– আসলে অনেক বছর কারও টিপি না তো। কাল তাই তোমারটা দেখে উত্তেজনা সামলাতে পারিনি। একটু বেশি জোরে হয়ে গেছিল। সরি।

ভূত বিচিতে হাত বোলায়।

– বললাম তো ঠিকাছে।

– তোমার সাইজটা দারুণ।

আমি সৌজন্যের হাসি হাসলাম। প্রশংসা করলে এরকম হাসি হাসাটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস। প্রায় প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মতো হাসার পরেই মজা লাগে। শালা, ভূতকে জানাচ্ছি সৌজন্য, তাও কি না, নুনুর প্রশংসায়!



এই ভাবে ভয়টা কেটে যাচ্ছিল, ধীরে ধীরে। রোজ স্নানের আগে ভূত আমায় মাস্টারবেট করিয়ে দেয়, ছুটির দিন ছাদে তেল মালিশ ক’রে দেয়। আমরা একটু একটু ক’রে একে অন্যকে জানতে থাকি। ভূতের ভালো স্বভাব হলো, কাজের সময় সে কথা বলে না, কাজ শেষ হলে তার গল্প। ফলে আমিও ভয় ভুলে যৌন অনুভূতিতে মন দিতে পারি, নারী-পুরুষের ভাবনা মনে আসে না, একটা পুরুষ ভূত নুঙ্কু টিপছে ভেবে গা ঘিনঘিন করতে হয় না।

– তুমি হোমো, এটা কবে বুঝলে?

আমার প্রশ্নে ভূত হাসে।

– এতে হাসার কী হলো?

– যারা হোমো নয়, তাদের অনেককেই দেখেছি এই প্রশ্নটা করতে। বোঝাবুঝির আবার কী থাকে গো? ছোটবেলায় তো ছেলে-মেয়ে দু’দলের জন্যই আমাদের নুঙ্কু অপেক্ষা করে, তারপর বড় হতে হতে নানা ঘটনা-টটনার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে আমরা দুয়ের মধ্যে কোনও একটার ওপর বেশি ঝুঁকে পড়ি। আমি ছেলেবেলায়, মানে ওই তেরো চোদ্দ বছর বয়েসে, তো মেয়েদের সাথেও চুম্মাচাটি করেছি, ওই হয় না, মামাতো জাঠতুতো ভাইবোনে... ওইরকম। আবার আরও ছোটবেলার কথা মনে আছে, ওই ধরো চার-পাঁচ, বাবুদা কোলে নিলেই দারুণ লাগতো, ওর ঘামের গন্ধ ভীষণ টানতো আমাকে, কাছে কাছে ঘুরতাম।



“The conception which we gather from this long known anatomical fact is the original predisposition to bisexuality, which in the course of development has changed to monosexuality, leaving slight remnants of the stunted sex.

It was natural to transfer this conception to the psychic sphere and to conceive the inversion in its aberrations as an expression of psychic hermaphroditism.”

Innate bisexuality... পড়েছিলাম। ফ্রয়েড। কিন্তু সে তো বহু পুরনো মত। তারপর তো অনেকেই বলেছেন, সমকামিতা জন্মগত ব্যাপার। নানা স্টাডি, রিসার্চ পেপার আছে এর ওপর। এমনকি L.G.B.T এক্টিভিস্টদের অধিকাংশ এই দ্বিতীয় মতকেই মানেন। ভূত যা বলছে, তা তো দেখতে গেলে, সেসবের উলটো। কে জানে? এই নিয়ে কোনও শেষ কথা হয়তো এখনও বলা যায় না। আমাদের জীবন নানা আলোর ম্যাজিক। মাথা, জিন – আমরা অনেকটাই তৈরি হয়ে আসি জন্মের আগে, নির্ধারিত হয়ে আসি। জন্মের পর সে’ সবের সাথে যখন পরিবেশ এসে মেশে, সবসময় ঠিক ক’রে বলা যায় কি, কে কাকে গড়ছে, ভাঙছে? ভূত নিজেই তো একটু আগে বলছিল, চার-পাঁচ বছরে ছেলেদের ঘামের গন্ধ টানতো ওকে। এমনও তো হতে পারে যে, জন্মগতভাবে সে সমকামী। বয়েস বাড়ার সাথে সাথে সমাজে বাকি সমবয়েসিদের দেখে শুনে সেও মেয়ের সাথে প্রেম সেক্স ট্রায় করে, কিন্তু শেষ অবধি টান না পেয়ে আবার ফিরে আসে তার মূল প্রকৃতিতে।



এ’ কনফিউসনের কোনও সোজা উত্তর নেই। আমি কথা ঘোরাই।

– কাজ কী করতে?

– চায়ের দোকান ছিল।

– কোথায়?

– হাওড়া স্টেশনে। প্রথমে পাঁচ নম্বর প্লাটফর্মে ঠেলা নিয়ে বসতাম। তারপর নতুন প্লাটফর্মগুলো হওয়ার পর ওদিকটায় উঠে যাই।

– তা আমার ইউরিনালে এসে উঠলে কোত্থেকে?

– মরার পর থেকেই আমি একটা ইউরিনাল খুঁজছিলাম, ভিড়-ভাড় নয়, একটু ফাঁকা, যেখানে আরামসে থাকা যাবে, মাঝে মধ্যে দু’এক জন এলে তাদের সাথে মস্তি করা যাবে।

– তুমি তো বড়ো আজব হে! ভূতেরা তো শুনেছি বেলগাছ, পোড়ো বাড়ি এইসবে থাকে। ইউরিনালে থাকে, এর’ম ভূতের কথা তো বাপের জন্মে শুনিনি!

ভূত একটু অভিমানের সুরে বলে,

– তুমি শোনোনি এমন অনেক কিছুই হয়। হাওড়া স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে যে ইউরিনালটা আছে, সেটাতে গেছ কখনও?

আমি একটু অবাক হই,

– হ্যাঁ গেছি হয়তো। কেন?

– দেওয়াল দিয়ে দু’ভাগ করা ইউরিনালটা। ভেতরেরটাতে যেও কখনও, রাত সাড়ে নটা, দশটার পর। তুমি জানো না, ভাবতেও পারো না, এমন অনেক কিছু দেখতে পাবে।

– কী?

– চোষা, লাগানো সব... খুল্লামখুল্লা... অন্য সময়ও চলে, তবে চোর-ছ্যাঁচোড় পুলিশের ঝামেলা আছে ব’লে একটু সামলে সুমলে, রাতের দিকটায় একদম ওপ্পেন...

কী মারাত্মক! বলে কী! এ’ তো এইডসের উৎসব!

– কন্ডোম লাগায় না?

– ধুর। ওসব জায়গায় আবার কেউ কন্ডোম টন্ডোম লাগায় না কি? রোজ রাতে বাড়ি ফেরার আগে যেতাম। একবার তো এক রাতে টানা আট জনের সাথে। সবাই গোল ক’রে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে, মধ্যে আমি একে একে চুষে দিচ্ছি। গেটের কাছে আবার একজন নজরও রেখেছে বাইরে, যাতে হঠাৎ কেউ এলে সিগন্যাল দেয়। সাতজনের চুষে দিলাম, আর শেষে যে গেটে ছিল, সে ঢোকালো... প্যান্ট-ট্যান্ট টেনে হিঁচড়ে, সে কী কাণ্ড। উহ...!

ভূতের আনন্দ দেখে আমি থ। কী বলব, ভেবে পাই না। ও ব’লে চলে,

– একবার বোধহয় কেউ একটা কন্ডোমের মেশিন লাগিয়ে গেছিল, ইউরিনালের দেওয়ালে, ওই হয় না, এক টাকা দিলেই কন্ডোম বেরোবে। কিন্তু কোনোদিনও সেটা দিয়ে কোনও কিছু বের হতে দেখিনি। আমরা করার সময় ওই মেশিনটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। পরলে যদি ফুল পুণ্য হয়, তাকালে অন্তত কিছুটা তো হবে। কি?

ভূত হাসতে থাকে।

– অত ভেব না গো, অত ভেব না। শুধু হাওড়া স্টেশন একা নয়, এরকম হাজার হাজার ইউরিনাল, পার্ক, সিনেমা-হল আছে, যেখানে কন্ডোম না পরেই সব কাজ চলে। আমাদের তো তবু ওই কন্ডোমের মেশিনটা দেখার সুযোগ ছিল। ওদের সেটাও থাকে না।



“The arrest of four people on charges of homosexuality and running an online gay club in northern India has triggered criticism by NGOs and the United Nations’ AIDS body, UNAIDS.

Police in Lucknow, the capital of Uttar Pradesh state, said the young men arrested last week had dozens of members in their secret Internet club.

Homosexuality is illegal in India but is prevalent undercover. Many night clubs in New Delhi and other cities even host secret gay and lesbian nights. But if convicted, homosexuals face at least 10 years in jail.

UNAIDS says making homosexuals criminals increases the stigma and discrimination they face, hindering the battle against HIV/AIDS.

...

“We’re concerned at the arrest of a number of men who have sex with men in Lucknow,” Denis Broun, UNAIDS India coordinator, told Reuters on Wednesday, adding there was a need to repeal “archaic” 19th century laws banning homosexuality.

“Criminalisation of people most at risk of HIV infection may increase stigma and discrimination, ultimately fuelling the AIDS epidemic.”

India has 5.1 million people with HIV/AIDS but UNAIDS and non-government organisations (NGOs) say the numbers are much more. The country is second only to South Africa in the number of HIV cases. ...”

পুরনো কাগজগুলো বিক্রির জন্য নামিয়েছিলাম। প্রায় কিলোখানেক কাগজ জ’মে ছিল স্টোর রুমে। বিদায় করলাম। আজ রোববার। আমার তেল-মালিশের দিন। অথচ সকাল থেকে ভূতের দেখা নেই। ভাবছিলাম। আর সাথে সাথেই গলা।

– কী করছ?

– এই... স্টোর রুমটা হাল্কা করছিলাম।

ভূতের কোনও সাড়া-শব্দ পাই না। হঠাৎ মনে হয়, সে আমার হাতটা ধ’রে দাঁড়িয়েছে। হ্যাঁ, দিব্য বুঝতে পারছি।

– কী ব্যাপার বল তো?

– আজ আমার জন্মদিন, গিফট দাও।

আমি হাসি।

– আরে গ্রেট। হ্যাপি বার্থ-ডে

– গিফট?

– কী নেবে বল?

ভূতের কোন্‌ জিনিস প্রয়োজনে লাগে, সেটা টের পাওয়া আমার পক্ষে একটু চাপের।

– একটা জিনিস চাইবো, রাগ করবে না তো?

– না না, বল।

– কেক কাটব...

ভূতের গলাটা খুবই আদুরে হয়ে যায় শব্দ দুটো বলার সময়। ‘কাটব’-তে একটা লম্বা ঝোঁক দেয় সে। আমি হেসে বলি,

– একদম। পাক্কা। আজ সন্ধেয় পার্টি।



সন্ধেবেলা সাকচি থেকে দু বোতল ওয়াইন তুললাম। তারপর কেক। কিনে বিল মেটাতে যাব, দেখি কেকের সাথে মোমবাতি ফ্রি। দোকানদার ছেলেটি জিগ্যেস করল, “কত বয়েস?”

এই রে! সেটা তো জানি না। তাছাড়া ভূতের বয়েস কীভাবে মাপা হয়? তার মারা যাওয়ার দিন থেকে, না মানুষ হিসেবে জন্মেছিলো যেদিন সেদিন থেকে; এটাও তো জানি না। পড়লাম মহা ধাঁধায়। শেষে ফ্রি আর নেওয়া হলো না। তার পরিবর্তে মুদির দোকান, এক প্যাকেট ছোট মোম।

আয়োজন দেখে, ভূত খুব খুশি হয়েছিল সেদিন। বারবার নানা কথায় জানাচ্ছিল। আর আমি ম্যাজিক দেখছিলাম। চাকু শূন্যে উঠে কেক কেটে ফেলল, মোমবাতি নিভে গেল, তারপর এক পিস কেক যখন হাওয়ায় আমার মুখের কাছে ভেসে আসছে, জন্মদিনের নয়, জাদুর মজাতে হাততালি দিতে দিতে বললাম - হ্যাপি বার্থ-ডে।



ঘরে সাদা আলোগুলো বন্ধ ক’রে টেবিল-ল্যাম্পটা জ্বালানো। এই আলোয় ওয়াইন খেতে আমার ভালো লাগে। ওয়াইনের রঙ, দানা দানা ঝরতে থাকা সেডিমেন্ট, সবটাই নেশার অংশ মনে হয়। ভূতকে বলি, “মদ খাওয়ার সময়, তুমি আমার পিছনে ব’সো”। ভূত বলল,

– কেন?

– দ্যাখো কিছু মনে ক’রো না। তোমার সাথে কথা বলতে, তোমার আওয়াজ শুনতে আমার ভালোই লাগে। কিন্তু মদ খেতে খেতে ওই শূন্যে গ্লাস উঠে যাওয়া দেখলে, আমার নেশাই হবে না। একটা ভিস্যুয়াল ইরিটেশন হতে থাকবে ক্রমাগত।

ভূতের কি অভিমান হলো? বললো,

– আমি ভূত না হলেও তোমার সেটা হতো।

– মানে?

– মানে, আমি যখন ধরো বেঁচে ছিলাম, তখনও অনেকে এর’ম বলত, কী মেয়েলি হাবভাব কর তুমি, চোখে নেওয়া যায় না... এইরকম কত কথা।

– আরে চটছো কেন? আমি তো সেভাবে কিছু বলিনি!

– না না। ঠিকাছে। আমি পেছনেই বসছি।

ভূত কোনও কথা বলে না এরপর। সেটা অবশ্য যে খুব খারাপ লাগছিল, তা না। ভূত তো আর মানুষ নয়, দৈর্ঘ্য প্রস্থ আয়তন কিচ্ছু নেই, তাই তার ভালো-মন্দ লাগা নিয়ে সবসময় অতো না ভাবলেও চলে। আমি মদ চালাতে থাকি। প্রথম গ্লাস শেষ হওয়ার পর ভূত নিজের থেকেই কথা বলে, গলার স্বরে নেশাটা ধরেছে।

– তুমি খুব ভালো, জানো?

– কেন? তোমায় পিছনে বসতে বললাম ব’লে?

– আরে না না। সেটা বাদ দাও। ছোটবেলায় একবার এক বন্ধুর জন্মদিনে কেক কাটা দেখেছিলাম, আমাদের সবার নেমতন্ন ছিল ওইদিন ওদের বাড়িতে। খুব মজা হয়েছিল। সেই থেকে ভীষণ ইচ্ছে করত আমার জন্মদিনেও কখনও ওর’ম কেক কাটা মোম নেভানো হবে। কিন্তু কোনোদিনও হয়নি। সুমিত একবার বলেছিল, ঘটা ক’রে এবার তোর জন্মদিন করব দেখিস। কিন্তু তারপর আর হয়নি।

– সুমিত?

– আমার প্রথম...

– বয়ফ্রেন্ড?

– হুম। বলতে পারো। ও অবশ্য বলত, ওর নাকি মেয়েদের দিকেই টান। আমাকে বন্ধু ভাবে খালি। অথচ করার সময় সব করত। মাঝে মাঝে খুব রাগ হতো, জানো? ভাবতাম ধুর, এমন একজনের সাথে সম্পর্ক রাখার কী মানে হয়, যে সম্পর্কটাকে মানতেই চায় না। আবার পরে ভাবতাম, আমি তো সম্পর্কটা টের পাচ্ছি, সেটাকে ভালোবাসছি, বড় করছি, এটাই আমার কাছে সব। আসলে খুব টানতো ও আমাকে।

– তা জন্মদিন পালন হলো না কেন?

– আমার বিয়ে হয়ে গেল তার আগেই। বিয়ের পর ওর সাথে বেশি কথা হতো না আর।

– বিয়ে!

গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে চমকাই।

– তুমি হোমো, সেটা বোঝা জানার পরেও বিয়ে করেছিলে?

ভূত একটু ঘাবড়ে যায়।

– আমি চাইনি। আমি মানা করেছিলাম। সত্যি। বাড়ির লোকজন কীভাবে সুমিতের ব্যাপারটা জেনে গেছিল। সবাই খুপ চাপ দিচ্ছিল। মা বলল, সবাই বিয়ে করে, প্রথম প্রথম সবারই একটু অসুবিধে হয়, তারপর মানিয়ে নেয়। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কী করব। সুমিতও শুনছিলাম, কোনো একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছে, বিয়ে করবে। ভাবলাম, হয়তো মায়ের কথাই ঠিক, এটাই স্বাভাবিক। বিয়ের পরে প্রথম প্রথম তো রাতে বুঝতেই পারতাম না কী করব, কোনও সাড় পেতাম না। তারপর ধীরে ধীরে কিছু বছর বাদে একটা মেয়েও হলো। সে বড় হলো। কিন্তু কোনোদিনই যে স্বাভাবিকের কথা মা বলেছিল, সেটা পেলাম না। আড়ষ্ট লাগত বউয়ের পাশে শুতে। চেষ্টা করতাম যাতে ওর ভালো লাগে। কিন্তু পারতাম না। সাড় পেতাম না। আর বারবার মনে হতো, আমার এই না পারা, এই চেষ্টা, যেন মাধবী ধ’রে ফেলছে। লজ্জায় শেষ হয়ে যেতাম রোজ।

– মেয়েটা তাহলে হলো কী ক’রে?

– জানি না। কখন কীভাবে কী যে হয়ে যায়! সব জা’গায় তো আলো পড়ে না গো।

– থামো। বড় বড় কথা ব’লো না। দু’ দুটো মানুষের জীবন নষ্ট করেছ। ছিঃ...

আমার বকুনিতে কেঁদে ফেলে ভূত। শরীরহীন তার গোঙানির আওয়াজ মিউজিকের মতো ঝুলতে থাকে আমার আলো-অন্ধকার ঘরে। হঠাৎ কেমন যেন, চারপাশের সমস্ত, এই ঘর রাত ওয়াইনের বোতল, এমনকি নিজের থাকাটুকুও অশরীরী হয়ে যায়।

– আমি তো সবকিছু সামলাতেই চেয়েছিলাম, সবকিছু। অথচ কী ক’রে যে ছোটর থেকে আমার প্রত্যেকটা কাজ মানুষের কাছে ভুল হয়ে যায়, আমি জানি না। সুমিত বলত, ভারতে এসব হয় না, ফরেনে হয়। মা বলত, এ’দেশে বিয়ে না করলে, জ্ঞাতিগুষ্টি পাড়া-পড়শি সবাই আড়ালে হাসি ঠাট্টা করবে। ভাবতাম, দেশ ব’লে কথা, সে কি আর ভুল হতে পারে? আমিই ভুল... আমিই...

Ayisha-sultan Begim whom my father and hers, i.e. my uncle, SI. Ahmad Mirza had betrothed to me, came (this year) to Khujand^ and I took her in the month of Sha'ban. Though I was not ill-disposed towards her, yet, this being my first marriage, out of modesty and bashfulness, I used to see her once in lo, 15 or 20 days. Later on when even my first inclination did not last, my bashfulness increased. Then my mother Khanim used to send me, once a month or every 40 days, with driving and driving, dunning and worrying.

In those leisurely days I discovered in myself a strange inclination, nay! As the verse says, ‘I maddened and afflicted myself’ for a boy in the camp-bazar, his very name, Baburi, fitting in. Up till then I had had no inclination for any-one, indeed of love and desire, either by hear-say or experience, I had not heard, I had not talked. At that time I composed Persian couplets, one or two at a time; this is one of them:

“May none be as I, humbled and wretched and love-sick;

No beloved as thou art to me, cruel and careless.”

From time to time Baburi used to come to my presence but out of modesty and bashfulness, I could never look straight at him; how then could I make conversation (ikhtildt) and recital (hikdyat) ? In my joy and agitation I could not thank him (for coming); how was it possible for me to reproach him with going away? What power had I to command the duty of service to myself? One day, during that time of desire and passion when I was going with companions along a lane and suddenly met him face to face, I got into such a state of confusion that I almost went right off. To look straight at him or to put words together was impossible. With a hundred torments and shames, I went on. A (Persian) couplet of Muhammad Salih's came into my mind:

“I am abashed with shame when I see my friend;

My companions look at me, I look the other way.”

[Babur-nama / translated by: Annette Susannah Beveridge / Page: 120]

ভূতের ফোঁপানি আর বন্ধ হয় না। পাশে শুয়ে একা একা ফুঁপিয়েই চলে। আমি বলি,

– ওঠো, আর কাঁদতে হবে না। আমার ভুল হয়েছে। সরি।

ও আমার ঊরুতে হাত রাখে।

– তুমি আমার জন্য অনেক করেছ। আরেকটা উপকার ক’রে দেবে? এটাই শেষ। এরপর আর কোনোদিনও কিছু চাইব না। এটা হলেই, আমি মুক্তি পাব, তারপর এই ভূত ছেড়ে... দেশ ছেড়ে... কি মজা! ভুল নেই, লজ্জা নেই... জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের মধ্যে বারবার ডিগবাজি নেই। করে দেবে?

– কী?

– আমায় একবারটি চুষতে দেবে?

– ব্লো-জব?

আমি থতমত খাই।

– কতদিন... কতদিন করিনি তুমি জানো না। জীবনের শেষ তিরিশ বছর, গোটাটাই খাঁ খাঁ... কেউ নেই... জানো? ইউরিনালেও বয়েস বেশি ব’লে আদ্ধেকের ওপর ছেলে নাক সিঁটকে চ’লে যায়। করতে দিত না, ধরতে দিত না। আমি পাগলের মতো ভুল ক’রে বেড়াতাম, বউয়ের সাথে মেয়ের সাথে ইউরিনালের ওই ছেলেগুলোর সাথে দেশের সাথে, ভুল ক’রে বেড়াতাম, তবু কাউকে পেতাম না, যারটা একটু চুষে দিই। দেবে?

স্কুল কলেজে যাওয়ার সময় ট্রেনে বাসে, হঠাৎ প্যান্টে হাত, টিপছে... এ’ অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই। অধিকাংশই বয়স্ক। হেটেরোসেক্সুয়ালদের মতো যে কোনো বয়েসে মেয়েদের পিছনে নুনু লাগিয়ে দেওয়ার মতো নয়। অস্বস্তি হতো। আবার এটাও ভাবতাম, একজন মানুষ যৌন-জীবনে কতটা অসহায় হলে এখানে এসে পৌঁছোয়! মায়া হতো। আমার কোনও ক্ষতি তো ও করছে না, করুক না, ওর যদি একটু ভালো লাগে, করুক।

একবার খুব মজা হয়েছিল। অমিত আর আমি জামশেদপুর থেকে হাওড়া যাচ্ছি। ট্রেনে। গেটে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ হিজড়ে। আমার কাছে আসতেই, আমি টাকা পয়সা কিচ্ছু না দিয়ে, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে লাগলাম। ব্যাস। হয়ে গেল। আমায় আর টাকা দিতে হলো না। পরিবর্তে হিজড়েটি আমার প্যান্টের জিপারের কাছে টিপতে টিপতে গেটে দাঁড়ানো বাকিদের থেকে উসুলি নিতে থাকল। এই দৃশ্যে অমিতের হলো থতমত অবস্থা। সে হাঁ ক’রে একবার আমার মুখের দিকে একবার আমার জিপারের দিকে। এতটাই অবাক যে, কারও প্যান্টের জিপারে ওরকম চোখ গোল গোল ক’রে তাকিয়ে থাকাটা যে মোটেও সভ্য-ভদ্রোচিত নয়, সেটা তার মাথা থেকে গায়েব।



যাই হোক। ওই সময়গুলোতে একটা কথা বারবার মনে হতো, এ-ও এক ধরনের ভিক্ষে। যৌন-ভিক্ষে। সব দেশের ভিক্ষে তো এক হয় না!

পরবর্তীকালে অর্ঘ্যর (দত্ত বক্সী) এক ফেসবুক আপডেটে এই যৌন-ভিক্ষে শব্দটা প্রথম পড়ি। ভীষণ ভালো লেগেছিল।



– মরলে কীভাবে?

ভূত চুপ ক’রে থাকে। কিছুক্ষণ পর জবাব দেয়।

– ছাড়ো না। কী হবে?

আমার ভয় হয়, AIDS কেস নয়তো? একটু জোর করি এবার। বেশ কিছুটা সময় পর বলতে শুরু করে সে।

– ডিসেম্বর মাস ছিল, আমি তাই তাড়াতাড়ি দোকানের পাট মিটিয়ে, ঝাঁপ নামিয়ে বাড়ির জন্য রওনা দিই। প্লাটফর্ম ফাঁকা প্রায়। ঠাণ্ডাটাও যেন একটু বেশি পড়েছিল ওই দিন। রোজকার অভ্যাস মতো, যাওয়ার আগে একবার ইউরিনালে ঢুঁ মারি। বেশি লোক ছিল না। মাত্র তিনজন। তাদের মধ্যে একজন দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে ইশারাও করছে। ভাবলাম, আহা আজ কী ভাগ্য, কতদিন বাদে কেউ আমায় ইশারা দিল! আমিও কাজে লেগে গেলাম। এতটা ডুবে গেছিলাম, খেয়ালও করিনি, কখন আরও কিছু লোক এসে দাঁড়িয়েছে আমার পিছনে। এত রাতে ওখানে যারা আসে, তারা সবাই-ই প্রায় হোমো, তাই খুব বেশি দেখার দরকারও পড়ে না। লোকটার হয়ে-টয়ে যাওয়ার পরে থুতু ফেলে, মুখ ধুতে যাব, ওমা দেখি যে ছেলে চারটে দাঁড়িয়ে আছে, আমারই পাড়ার, কাকা কাকা বলে। লজ্জায় ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসি। কীভাবে মুখ দেখাবো বুঝতে পারি না। তাড়াতাড়ি পালিয়ে যাব ভাবছি, ঠিক তখনই ওরা বেরিয়ে আসে। বলে, কি কাকা আমাদেরটা না ক’রে দিয়েই চ’লে যাচ্ছ? লজ্জায় মাথা হেঁট ক’রে দাঁড়িয়ে থাকি। কী করব, কী বলব, কিছুই ভেবে পাই না। মাথার ভেতরটা প্লাটফর্মগুলোর মতোই ফাঁকা আর ঠাণ্ডা হয়ে আসতে থাকে। ওরা বলে, আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন, কাকা-ভাইপোতেও তো হয়, না-কি? তারপর প্রায় জোর ক’রে আমায় ট্রেনে ওঠায়। খুব যে খারাপ ব্যবহার করছিল তা নয়। কিন্তু আমার ভীষণ ভয় করছিল, যদি কিছু হয়, সোরগোল করে পাড়ায় গিয়ে! ওরা সের’ম কিচ্ছু করল না কিন্তু। চুপচাপ আমায় নিয়ে ক্লাবে গেল। আমি বললাম, ক্লাবে কেন? তাতে ওরা জানালো, ক্লাবে এখন কেউ নেই। তারপর ওদের মধ্যে একজন চাবি দিয়ে দরজা খুলল ক্লাব ঘরের।

– তারপর?

– আমার প্যান্ট খুলে উইকেট ঢোকাতে লাগলো পিছন দিয়ে। রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করছি দেখে একজন ধমক দিল। আরেকজন বলল, আরে শুধু পোঁদে ঢোকালে কি কাকার শান্তি হয়, কাকার মুখে চাই, মুখে। সবাই হাসতে লাগল ওর কথায়, আর সাথে সাথেই একটা উইকেট মুখে ঢুকিয়ে চাপ দিতে লাগল।

– থাক, আর বলতে হবে না।

– আমার দাঁত ভেঙে গেছিল, জানো? সেটা দেখেও ওরা থামেনি। আমার মাথাতেও মেরেছিল।

– থাক, বললাম তো!



কিছুক্ষণ চুপচাপ। ওয়াইন-এর বোতলটা শেষ হয়ে গেছিল। আমি শুয়ে পড়ি। ভূত প্যান্ট খুলে দেয়। জাঙিয়া নামায়। তারপর নুঙ্কুটা কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতে করতে মুখের মধ্যে পোরে। একটা অদ্ভুত সাকসান যেন ওপর নিচ করছে লিঙ্গ বরাবর। শিহরণ বাড়তে থাকে। ভূতকে যদি দেখতে পেতাম এই মুহূর্তে! একটা হাত ওর চুলে রাখতে ইচ্ছে করছিল। আমি হাতটা শূন্যে বাড়িয়ে রাখি। এটা আমার যৌন সম্পূর্ণতা, ভূতের মাথায় এ' হাত হয়তো কোনোদিনও পৌঁছবে না, হয়তো ভূতের কোনও শরীরই নেই, তবু...

একসময় মাল প'ড়ে যায়। উত্তেজনা কমে। ভূতের সাড়া পাই না। উধাও হয়েছে। মনে মনে হাসি - আমার বীর্যপাতে এক আত্মার মুক্তি হলো আজ, এ-ও কি এক ধরনের জন্ম-দেওয়া নয়? হাসতে হাসতে জাঙিয়াটা টেনে ওঠাই। কিন্তু এ' কি! আমার লিঙ্গ ছোট হচ্ছে না কেন? যাচ্চলে! নেড়েচেড়ে দেখি, নাহ, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, কোনও রকম কোনও উত্তেজনা তো নেই! অথচ সাইজ এখনও আট ইঞ্চি! মোটা। মুক্ত হয়ে ভূত কি তবে আমার লিঙ্গে গিয়ে ঢুকলো?



সেই থেকে, সেই রাত থেকে আমার যা-তা অবস্থা। জাঙিয়া পরতে পারি না, প্যান্ট পরতে পারি না, শুধু লুঙ্গি। তাও সে যেন লুঙ্গি ফুঁড়ে মাথা বার ক'রে আছে, এক প্রতিবাদের মতো। যেন এক্ষুনি তার আগায় একটা পতাকা লাগিয়ে দিলেই স্বাধীন হয়ে যাবে সব-কিছু। দেবা এসেছিল, আমার বাকি বন্ধুরাও। পাড়া-পড়শি, আত্মীয়-স্বজন সবাই এসে দেখে গেছে। কেউ কেউ অধিক কৌতূহলে টিপেও দিয়েছে। আমার লিঙ্গ যে-কে-সেই। ডাক্তার ওষুধ কতো কী! কাল থেকে বোধহয় আমায় হসপিটালাইজড করা হবে। শুনেছি, দেশের বড় বড় ডাক্তাররা জড়ো হবেন সেখানে। আমায় নিয়ে একটা সেমিনার হবে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। এরকম অদ্ভুত ঘটনা এর আগে কেউ দেখেনি। দীর্ঘশ্বাস পড়ে আমার। কত সহজে নর্মাল থেকে এব-নর্মাল হয়ে যাওয়া যায়!

এক স্বাভাবিক ভূতের অস্বাভাবিক যৌন-প্রতিবাদ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার লিঙ্গ।

1 কমেন্টস্: