কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

১২) পবিত্র আচার্য্য

রামবাবু এবং গণিত


“খুব বড়সড় ইডিয়ট। একটা সাধারণ অংক মেলাতে পারিস না। জীবনে কিচ্ছুটি হবে না।” – এই ভাবেই ছোট থেকে গণিতকে চিনেছি জীবনে কিছু হওয়া না হওয়ার হিসেবে। রামবাবু একটা সত্যিকারের জিনিয়াস। অংকের অধরা হাত পাগুলোও রামবাবু করায়ত্ত করেছেন অনায়াসে। আসলে রামবাবু ছাড়া গণিত আর গণিত ছাড়া রামবাবু, এটি ভাবাই যেন বোকামি!

কিছু হলেই রামবাবু বলতেন, জীবনটাই একটা অংক। যতক্ষণ না ঘুমিয়ে পড়া যায়, আমাদের শ্বাস চলতে থাকে অনবরত, একটা আগুপিছু অংক চলতে থাকে গতির সাথে সাথে। জীবনে সম্ভাবনার যত বাঁক, তার হিসেব জীবন থেকেই করতে হবে। অংক তখন জলের মতো সোজা মনে হবে। “লাইফ ইজ ফুল অফ পসিবিলিটিস। একটা নিরেট প্রোবাবিলিটি।”

রামবাবু লুডোর ছক্কা, তাসের বিজ্ঞান আর হার জিতের অংকতে জীবনকে টেনে আনতেন। আমরা বোঝার চেষ্টা করতাম সম্ভাবনার ফর্মুলা, বাইরে থেকে যতটা চেনা যায় একটা জীবনকে। খুবই কঠিন ছিল সেই দিন। আজও ‘প্রোবাবিলিটি ইজ অ্যা হরোর টু মি’।

রামবাবুও একদিন রাস্তায় নামলেন। শহরের গণভোটে। আমরা খানিকটা অবাক হলাম। অংকের দরজা এবার বুঝি কলুষিত হতে চলেছে। মানুষটি নিশ্চিত নোংরা হতে চলেছে। অন্তত এই জমানায় লাভ ক্ষতির হিসেব ছাড়া কেই বা এই গাণ্ডীব ধনুক ওঠাতে চায়? শেষে রামবাবুও!

বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটাই কল্পনা। এই সময়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসক দলের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। রামবাবু এবারে অংক কষায় নিশ্চিত ভুল করেছেন।

“স্যার আপনিও ভোটে? খুব শক্ত লড়াই নিশ্চিত। কতটা প্রোবাবিলিটি আপনার জয়ের?”

রামবাবু মাথা চুলকাতে লাগলেন। এই প্রথম খানিকটা অংক কষার ব্যাপারে রামবাবুকে ইতঃস্তত করতে দেখলাম। যেন একটা দুর্বোধ্য অংকের গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন।

রামবাবু ঠাণ্ডা মাথায় বললেন, “সব ঠিক থাকলে হার জিতের প্রোবাবিলিটি অংকে 0.৫। কিন্তু আমার দেশের এই একটি ক্ষেত্রে অংক মেলানো হয় অংকের হিসেব ছাড়াই। এখানে বাঘ আর হরিণের এক ঘাটে জল খাবার সময় বাঘের হরিণ, আর হরিণের জল তৃপ্তির বিষয়ে হার জিতের সম্ভাবনার একটা অলিখিত সমীকরণ থাকে।”

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন