কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১৩৩

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১৩৩

বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

প্রণব চক্রবর্তী

 

সমকালীন ছোটগল্প


কামানো-কেষ্ট ও কিসমিস কেলোয়াতি

সেই সদাশয় মানুষটির নাম ভ্রমরকেষ্ট। জাতে বাঙালি, কর্মে কামালি মানে কামানো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি কামান? সবকিছুই কামাতে পারেন যেমন লোম থেকে যৌনকেশ এবং ঢেঁকিশাক থেকে মুরগির পালক। প্রয়োজন শুধু বায়নার। অর্ডারমাফিক কাজ। সেবার তো মেয়েছেলে লাশের গা থেকে দুটো ঠোঁট এবং দুটো স্তন নিখুঁত কামিয়ে অর্ডারয়ালার হাতে ধরিয়ে দিয়ে, ঝ্যাকাঝ্যাক কড়কড়ে নোটের বান্ডিল ঝোলায় ঢোকাতেই শাগরেদ ন্যালাভামের জিভ থেকে জল ঝরে ঝরে পড়ছিলো। বান্ডিল থেকে একটা পাঁচশোর নোট নিয়ে ন্যালাভামের হাতে ধরিয়ে ভ্রমরকেষ্ট ধাঁ। এসব থ্যাবরা-প্যাঁচরাদের কোনও পাত্তাই দেয় না সে। কাজে মাঝে মাঝে দরকার হয়, তাই। কখনও বেআইনি কাজে বসলে বাইরে পুলিশ আসছে কিনা হিস্যা খেতে, এরা নজর রেখে সিগন্যাল দিয়ে দেয়, কখনও আবার আজকের মত কেসে হাতও লাগাতে হয়। কাজ শেষ, পয়সা নে, কেটে পড়। তার কাছে প্রতি সেকেন্ডেরও একটা বিক্রয়মূল্য আছে। পুরোটাই কামানোর জন্যে নিবেদিত। কিন্তু কামিয়ে যে বিপুল রোজগার তা দিয়ে ভ্রমরকেষ্ট কি করে কেউই জানে না। শুধু সবাই যেটা জানে, তার এলাকার গন্ধপল্লীতে সপ্তাহে একদিন করে কামানোর জন্যেই তাকে যেতে হয় আর সেখান থেকে সেদিনের যে রোজগার, সেই টাকা দিয়েই সেখানকার গরম গরম চুল্লীতে সে তার শরীরের মস্তিযন্ত্র তাতিয়ে পিটিয়ে খুঁচিয়ে শান দিয়ে নিয়ে আসে পরবর্তী একসপ্তাহ গরম থাকার জন্য। তার ক্লায়েন্টরা সবাই জেনে গেছে এ দিনটাতে হাজার লোভ দেখালেও তাকে পাওয়া যাবে না। যদি কেউ খুপরিতে নল ঠেকিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়, তবে অন্য কথা। সুতরাং ভ্রমরকেষ্ট ছুটিকেও কেনাবেচায় সফলতার সঙ্গেই উদযাপিত করে বা করতে জানে। তো এই কামানো ও কামাইয়ের সরল জীবনেও একটা বাঁক এসে ভ্রমরের কেষ্টটাকে প্রায় ঘাবলা কোরে দিচ্ছিলো, সেটা বুঝতে পেরে ভ্রমরকেষ্ট বাঁকটাকেই কামিয়ে দিয়েছে নিপুণ দক্ষতায়। আর আজকের এই আনুষ্ঠানিকভাবে সেজেগুজে বসে যে গল্প খোঁচানোর কাজটায় ঝরিয়ে ফেলছি কিছুটা বেঁচে থাকা, তার উদ্দেশ্য ভ্রমরকেষ্টের জীবনের সেই বাঁকটাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরা।

সন সঠিক মনে না পড়লেও ক্ষতি নেই, কারণ, ভ্রমরকেষ্টের কামানোর খ্যাতি তখন মধ্যগগনে। গলা থেকে হাত পেরিয়ে কোমড়ে ঝোলানো এক ঝোলা ব্যাগ, সেটাই তার যাবতীয় যন্ত্রপাতির ঝোলা। ক্ষুর, ব্লেড ম্যাজিকের মত চলে, শুধু কামানোর পর দেখা যায় আগে যে ঝোপঝাড় গলাফলা যেখানে যা ছিল, এখন নেই। শব্দহীন সমাধি বোধহয় একেই বলে। তো এই হাতের যাদু দেখাতে গিয়েই ভ্রমরকেষ্ট খুবলে দিয়েছিল এক অষ্টাদশীর হৃদয়পঞ্জর। বড়লোকের বয়ে যাওয়া মেয়ে, বাজি ধরে বান্ধবীদের বলেছিল ভ্রমরকেষ্টর সাথে যদি আমি শুতে না পারি একরাত, মুখে জুতো নিয়ে রাস্তায় হাঁটবো। বাজারে চাউর ছিলো, ভ্রমরকেষ্ট কামানেয়ালা, ঘরগেরস্থালির মেয়েদের ঘেন্না করে, তাই বিয়েসাধি করবেই না। এ তার 'অন্দর কি বাত'। লোম বাল যাই চাঁছো, টাকা দাও কামিয়ে দেবে, কিন্তু সম্পর্ক কভি নেহি। এ কথাটা সবাই যেমন জানতো তার সঙ্গে এটাও জানতো যে তার বিপুল টাকা ব্যাঙ্কে ডিম পাড়লেও তার কোনও দেখানোর ব্যাপার নেই।

বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডার মাঝখানে যেদিন হঠাৎই ভ্রমরকেষ্টের প্রসঙ্গ ঢুকে পড়ে, কথায় কথায় এমন একটা 'পিতিজ্ঞে' কোরে বসে কলেজপড়ুয়া কিসমিস। এ নামেই বান্ধবীরা স্বচ্ছন্দ তাকে সম্বোধনে, বন্ধুরা খুব প্রয়োজন নাহলে তাকে একেবারেই ঘাটায় না। বোম্বাবাবুর, একমাত্র কন্যা, যিনি এক সুবিখ্যাত চালের আড়তদার। যেমন টাকা, ভুঁড়িটাও সেভাবে বেড়েছে একেবারে সুমো-ফাইটার। ৭৩ জন কর্মচারী সকাল থেকে রাত ব্যবসা চালাতে একেবারে ঘেমেনেয়ে খাবি খাওয়ার মত অবস্থা। আপাতত বাবা মানে বোম্বাবাবুর প্রসঙ্গে এখন ঢুকব না, সে আর এক গল্প। তো সেই বাবার মেয়ে কাজরী থেকে কিসমিস। কারণ, বয়স আঠেরো হলে কি হবে, এর মধ্যেই তার পুকুরে সাঁতার খেলিয়ে পাছায় লাথি মেরে ভাগিয়েছে গোটা তিনেক পুং-শৃগাল। একেবারে গণিকা কায়দায়। আয়, হাসিতামাশা কর, খাওয়াদাওয়া কদিন জমিয়ে, তারপর হোটেলবাজি কিংবা সেই যুবককে কোমড়ে বেঁধে বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া সমুদ্র নয়তো পাহাড় কিংবা অরণ্যে কম ভিড়ের জায়গায়। ব্যাস, নিরন্তর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এতগুলো যুবতীর চাপাচাপিতে বন্ধুটির বা পরিচিত যুবকটির পৌরুষ-বেলুন ফুস হবার আগেই তার পশ্চাদে লাথি। 'তরোতাজা' ছেলেটি যেন মুক্তির বাতাস পেয়েছে ভেবে পারলে গোলার্দ্ধও পেরিয়ে যেতে পারে লম্বা দৌড়ে। কথিত আছে, এসব যুবকদের দু-একজন নাকি কলেজ ছেড়ে অন্য শহরের কলেজে গিয়ে নানান রকম খরচাপাতি, পার্টি দাদাদের কাছে মুচলেকা দিয়ে, ভর্তি হয়ে গেছে। তো সেই কাজরী ওরফে কিসমিস নামক এক ইলেক্ট্রিক চুল্লী পিতিজ্ঞে করেছে ভ্রমরকেষ্টকে গবায় ঢোকাবেই। 

কথামাফিক কাজ। একদিন সকালে ফোনে এক মেয়েলিকন্ঠে ভ্রমরকেষ্টর কাছে কামানোর এপয়েন্টমেন্ট ফিক্সড। ঠিকানা আড়তদার বোম্বাবাবুর বাড়ি। বোম্বাবাবু তার পুরোনো ক্লায়েন্ট, কাজেই অসুবিধে নেই, বহুবার ভুঁড়ি ছাড়া অনেক কিছুই কামিয়ে এসেছে। যদিও ভুঁড়ি কামানোর প্রোপোজাল সে নিজে থেকেই দিয়েছিলো কিন্তু বোম্বাবাবু রাজি হয়নি মানে সাহস পায়নি। আজ তার মেয়ে।

ভ্রমরকেষ্ট জানে না তার কটা মেয়ে, তবে গন্ধপল্লীর মেয়েদের কাছে বোম্বাবাবুর মেয়েকে নিয়ে "শহুরে মেয়েদের কেচ্ছা" শীর্ষক আলোচনায় যে তুমুল মস্করা, সেটা সে নিজের কানেই শুনেছে ও নিজেও হাসিতামাশায় অংশ নিয়েছে কখনও। বেশ রসালো এক গল্প। এ গল্পের আমোদ তাদের মধ্যে যে নিজেদের কাজের নিষিদ্ধ- অহঙ্কারকে বেশ একটা বৈধতা দেয়, নিজেরাও তেড়েফুড়ে ওঠে নিজেদের খরিদ্দার সামলাতে, ভ্রমরকেষ্ট সেটুকু বুঝতে সময় নেয় না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফোনটা কে করলো-- সেই বেশ্যাদের গল্পের নায়িকা নাকি বড় মেজো সেজো কেউ? যাই হোক, ভাবার সময় ভ্রমরকেষ্টর না-থাকায় টেক-একশন কুইক। ঝোলা কাঁধে সময়মতো কামানেয়ালা হাজির। বাইরের দরোজার ঘন্টা বাজাতে তাকে যে রিসিভ করলো সে এক অষ্টাদশী। বেশ লড়ে যাওয়া ভঙ্গীতে ইশারার মাধ্যমে ভ্রমরকেষ্টকে নিয়ে সরাসরি তিনতলার এক অতি চকচকে ঘরে ঢুকিয়ে মেয়েটি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ কোরে দিলো। এ-ব্যবস্থা ভ্রমরকেষ্ট চেনে। তলা-ওপর কামাতে কামাতে তার অভিজ্ঞতায় এ ধরণের মেয়েলী ডাকে তেমন নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, পুরুষ- কামালির হাতে প্যান্টি নামিয়ে জঙ্গল ছাঁটাতে আগ্রহ দেখানো মেয়ে বা মহিলার সংখ্যা খুবই কম। যারা রাখঢাক না কোরেই একটা ব্যাটাছেলের সামনে ঢাকনা খুলে দেয় অবলীলায়, বলাবাহুল্য তারাও সামাজিকক্ষেত্রে ব্যতিক্রমীভাবে বিশেষ মহিলা বা যুবতী, যাদের পয়সা আছে উদবৃত্ত ও বদনাম নিয়ে কোনও ম্যানিয়া নেই। লজ্জা-ফজ্জার উল্লেখ তো অবান্তর, তাদের কাছে লজ্জা হচ্ছে মধ্যবিত্ত মেয়েলী মূল্যবোধের ব্যাধী। মোক্ষ হচ্ছে বিনোদন, নিজেকে হরবখত গরম রাখা। ভ্রমরকেষ্ট-র কামানো জীবনের এ এক দিব্যদর্শন।

মেয়েটি ঘর থেকে বেরিয়ে হঠাৎই ঘরে ঢোকে একগ্লাস ফলের রস হাতে। একটা টুল টেনে এনে ভ্রমরকেষ্টর সামনে গ্লাসটা রেখে বেশ প্রায় আদেশের ভঙ্গিমায় বলে, 'খেয়ে নিন, সময় নষ্ট করা যাবে না'। ঝোলাটা সোফায় নামিয়ে রেখে গ্লাসটা তুলে একটা চুমুক দিয়ে সে জিজ্ঞেস করে 'কার কামাতে হবে?' 'কেন, আমার কি কামানোর বয়স হয়নি?' 'না না, সেটা ঠিক আছে'। গ্লাসটা শেষ করতে যেটুকু সময়, এর মধ্যেই দেখে সেই যুবতী একটা তোয়ালে জড়িয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে। তারপর যুবতী একদম দেরী না কোরে কিছুটা এগিয়ে এসে তার প্রায় নগ্ন বাঁ-পাটি ভ্রমরকেষ্টর একেবারে গা ঘেঁষে সোফায় তুলে দেয়। তোয়ালের ফাঁক দিয়ে যেটুকু ঝলক পাওয়া যায়, ভ্রমরকেষ্ট বোঝে তোয়ালের নীচে কোনও অন্তর্বাস নেই।

-- আগে লোম কামাবেন, পরে পরেরগুলো।

-- এখানেই?

-- না। যন্ত্রপাতি নিয়ে আমার সঙ্গে আসুন।

ভ্রমরকেষ্ট বোঝে এ ঘরের নির্জনতা থেকে আরও বেশি নির্জন কোনও ঘরের জায়গায় তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে পৌঁছে দেখে, একটা প্রশস্ত স্নানঘর। ঘরটির একপাশের দেয়ালজুড়ে কালো পাথরের লম্বা প্রায় কোমড়-উঁচু এক বেদী। নিচে একধাপ সমান লম্বা সিঁড়ি। ওপরের ধাপটি কিছুটা চওড়া, নিচের ধাপ ততোটা নয়। ঘরের মাঝখানে বেশ দশাসই সাদা পাথরের বাথ-টাব। যুবতী গিয়ে সোজা কালো পাথরের বেদীতে চিৎ হয়ে শুয়ে ভ্রমরকেষ্টের উদ্দেশ্যে আদেশের ভঙ্গীতেই বলল, কাজ শুরু করুন। ভ্রমরকেষ্টও প্রায় একই তৎপরতায় তার যন্ত্রপাতি বাগিয়ে বেদীতে উঠে যুবতীর একটা একটা কোরে পা নিজের জানুতে তুলে চেঁছে দেয় অতিসূক্ষ্ম লোমসকল। যুবতী হাত তুলে বোগল নির্দেশ করতেই নিমেষেই ভ্যানিশ হয়ে যায় বোগলগহ্বরে লুক্কায়িত কিঞ্চিৎ গন্ধময় কৃষ্ণ গুল্মসকল। যুবতী মানে সেই কিসমিস মেয়ে এবার উঠে বসে পেছনের দেয়ালে পিঠ রেখে। হঠাৎই বলে বসে--

--তুমি এত ভালো কেন ভ্রমর! অন্য কেউ হলে কতটা সময় নিয়ে এ কাজ করতো। কিন্তু আমি তোমার হাতের ছোঁয়াটাই বুঝতে পারলাম না। তুমি তো একজন শিল্পী গো!

শ্রীযুক্ত ভ্রমর যেন আকাশ থেকে পড়ছে, সে ভাবতেই পারছে না মেয়েটার ব্যবহারের এই আকস্মিক পরিবর্তন। এমন মিষ্টি করে তাকে ভ্রমর বলে সম্বোধন, তুমি ডেকে ওঠা, তাকে শিল্পী ভাবা-- সবটা জুড়েই বিস্ময়ের এক ঘোরে কেমন ভ্যাবলা হয়ে যায় ভ্রমরকেষ্টের মত এক কামানো পুরুষ। মেয়েটা কত ছোট তার থেকে কিন্তু কেমন অন্তরঙ্গ কাজের এই স্বীকৃতি! নিমেষেই বয়সের দূরত্ব মুছে দেয়া সম্বোধন! জীবনে এই প্রথমবার কোন মেয়েকে তার আত্মীয় মনে হচ্ছে!

-- ভ্রমর, তোমার হাতে আমার সব লজ্জা আমি তুলে দিতে পারি।

মেয়েটা আবার পূর্বের মত করেই শুয়ে পড়ে এবং তোয়ালেটা জানুসন্ধি উন্মুক্ত করে তুলে নেয় নাভির কাছাকাছি। ভ্রমরকেষ্টর পেশাদারী চোখ একঝলক দৃষ্টি ফেলেই বুঝে নেয় ক্লায়েন্ট কি চাইছে। নিমেষেই নিপুণ দক্ষতায় তার হাতের ক্ষুর অন্ধকার নিংড়ে ফেলে এনে দেয় চামড়া স্বচ্ছতা। এবং দ্বিতীয়বার না তাকিয়ে, সে উঠে যন্ত্রগুলো ধুয়ে ঝোলায় ভরে নেয়। চোখবন্ধ তখনও সেই যুবতী সে ভাবেই শুয়ে আছে দেখে ভ্রমরকেষ্ট তার তোয়ালেটা নীচে নামিয়ে ঢেকে দেয় যোনীরেখা। মেয়েটা চোখ বন্ধ করেই বলে বসে,

--ব্যাস, এইটুকু? এবার চোখ খুলে বলে, আপনি কি গে?

--একথা বলছো কেন?

কথা বলতে বলতেই আবারও একটা বেপরোয়া মেজাজে উঠে বেদী থেকে পা ঝুলিয়ে কিসমিস বলে ওঠে-

--তা না হলে, হাতের ওপর এভাবে এক অষ্টাদশী তার যোনীমুখ মুক্ত করে দেয়ার পরেও একজন পুরুষ মানুষ কিভাবে নির্লিপ্ত থাকতে পারে! অন্তত কিছুক্ষণ কাজের অছিলায় সে নেড়েচেড়ে টেনে পিষ্ট কোরে যুবতী শরীরে একটু আগুন তো জ্বালিয়ে দিতে পারতো! আপনি এমনই নপুংসক, আঙুল দিয়ে একটু স্পর্শ কোরে দেখলেনও না সেটা মৃত নাকি জীবন্ত কোনও মানুষী অঙ্গ। কেবল ক্ষুরের ডগায় ঝরিয়ে দিলেন কালো শৈবাল। আশ্চর্য! বন্ধুরা ঠিকই বলে। এখন বুঝতে পারছি কেন বিয়ে না করতে আপনার ধনুক-ভাঙা পণ! নপুংসক বলেই আপনি বিয়েতে যেতে চান না।

এতক্ষণ চোখ গোলগোল কোরে মেয়েটির অনর্গল কথাগুলো কামানেয়ালা শুনে যাবার পর, খুব সহজ ভংগীতেই প্যান্টের জীপারটা খুলে ফেললো। খুব সংযত কন্ঠে বললো,

--তোয়ালেটা খুলে তবে আর একবার শুয়ে পড়ুন। পৌরুষের পরীক্ষাটা দিয়েই যাই, কারণ আপনার চাহিদা মতো ব্যাটাছেলের লিঙ্গ-সক্ষমতাই আপনার কাছে পৌরুষের প্রতীক।

--তাই নাকি! লিঙ্গ-অক্ষমতা নিয়েও পুরুষ হওয়া যায়?

--হ্যাঁ যায়। আমি একজন প্রফেশনাল সেভিং-ম্যান। আপনাকে একা ও ন্যাংটো পেয়ে কি আমার ধর্ষণ করা উচিত ছিলো পৌরুষ দেখানোর জন্য? নাকি, আমার কাজের প্রতি বিশ্বস্ততায় সংযম নিয়ে সংযত থাকাটাই এক্ষেত্রে পৌরুষ বলে বিবেচিত হওয়া উচিত! আপনার কিঞ্চিত শিক্ষিত মেধা এ ব্যাপারে কোনটাকে প্রেফারেন্স দেবে?

কথাগুলো বলতে যেটুকু দেরী, বেদী থেকে ছিটকে নেমে এসে মেয়েটি সপাটে জড়িয়ে ধরে ভ্রমরকেষ্টকে। তীব্র সে আলিঙ্গনেও ভ্রমরকেষ্ট অবিচল। ঘটনার আকস্মিকতায় তার হঠাৎ মনে হয় সে আজ এক পাগলীর পাল্লায় পড়েছে, কি করে বেরোবে এখান থেকে জানে না।

-- তোমাকে আমি কিছুতেই হারাবো না। কিছুতেই না।

ভ্রমর তথাপি সংযত। মেয়েটি অল্পবয়েসি। আবেগপ্রবণ। হয়তো কোথাও মেয়েটি খুব ক্ষুধার্ত হয়ে আছে। সেটা ভালোবাসার হতে পারে, সেটা শরীরী ক্ষুধার তীব্রতা হতে পারে কিংবা এমন কিছু। ভ্রমরকেষ্ট আপন মনে বলে ওঠে "তুমি ভুল করছো, আমি তোমার প্রেমিক নই"। কথাটা কানে যেতেই মেয়েটি তোয়ালেটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। "আমাকে সঙ্গম দাও। আমি ভুল ঠিক কিচ্ছু বুঝিনা, তোমাকে বুঝি ভ্রমরকেষ্ট, তুমি এক যাদুকর, তোমার হাত আমাকে লুট করেছে। আমি তোমার।" কথাটা বলেই পটপট কোরে ভ্রমরের জামার বোতাম সব খুলে দেয়। বেল্ট থেকে ছিন্ন করে প্যান্ট। অযাচিত এই শরীরী উপহার পেয়ে এতক্ষণ নিজের সঙ্গে লড়াই করা ভ্রমর কামানেয়ালা বেরিয়ে আসে তার প্রফেশনাল খাপ থেকে এক বন্য মানুষ। দুহাতে পাঁজাকোল মেয়েটাকে তুলে বেদীতে শুইয়ে শুরু হয় কাঠচেরাই। পরতে পরতে যেন খুলে যেতে থাকে এক অষ্টাদশীর, এক বড়লোক বাবার বয়ে যাওয়া মেয়ের প্রতিটি শ্বাস ও প্রশ্বাস। সে এক তুমুল মন্থন যা গণিকাপল্লীর পাতায় পাতায় খুদিত হয় সকাল বিকাল। শেষ হয় প্রস্রবণের ক্ষীপ্র আধিপত্যে। ভ্রমরকেষ্ট উঠে নিজেকে পরিষ্কৃত করে জামা প্যান্টে ঢুকে যায়। মেয়েটি যেন ব্যথায় অসাড়। স্পষ্ট তার রক্তক্ষরণের চিহ্ণ।

ভ্রমরকেষ্ট বেরোবে, কিন্তু তার ফীজ? মেয়েটি মেটায় নি। কিংবা মিটিয়েছে তার শরীর দিয়েই। ব্যাগ কাঁধে ফেলে সে যাবার উদ্যোগ করতেই মেয়েটি বলে, তোমাকে তো টাকা দেয়া হয়নি? দাঁড়াও, আসছি। মেয়েটা ব্যথা লুকিয়েই উঠে পড়ে। তোয়ালেটা দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে ফিরে পায়ে পায়ে তার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়, পেছনে ভ্রমরকেষ্ট। কত টাকা তার প্রাপ্য, সে সব জিজ্ঞেস না করেই বেশ কিছু নোট তুলে ভ্রমরকেষ্টর প্যান্টের পকেটে সে গুঁজে দেয়। কিন্তু ভ্রমরের কাজের একটা এথিক্স আছে। সে ভিক্ষে করতে আসেনি, কাজ করে টাকা রোজগার করা তার জীবিকা। পকেটের টাকাগুলো বার করে নিজের প্রাপ্যটুকু নিয়ে বাকিটা ফেরৎ দেয় যুবতীর হাতে। মেয়েটি অবাক হয়ে টাকাগুলো হাতে নিয়ে ভ্রমরের দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকে। মুহূর্তেই হুঁশ ফিরে পেয়ে সে বলে, বাকি টাকাগুলো আমাকে যে আনন্দ দিলে তার জন্য।

-- দুখিঃত, আমি পুরুষ বেশ্যা নই। এ টাকা নিতে পারবো না।  মেয়েটি কথাটা শুনে কেঁদে ফেলে। ভ্রমরকেষ্ট কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই যুবতীর সামনে দাঁড়িয়ে তার ভেঙে পড়া অহঙ্কার দেখে মুগ্ধ হয়। অতঃপর বেরিয়ে আসবার আগে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, প্রয়োজন হলে ডেকো আবার।

সেদিনের থেকে পাঁচদিন পরে বোম্বাবাবুর ফোন আসে। "ফাঁকা আছো? চলে এসো"। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে সেদিন সকাল থেকেই অনেকগুলো এপয়েন্টমেন্ট নেয়া ছিলো ভ্রমরকেষ্টের। বাধ্যত সে বলে, দাদা, আজ যে খুব ব্যস্ত! দুপুরের পর গেলে আপনার সময় হবে?

--ঠিক আছে, তাই এসো। একটু সময় নিয়ে এসো। কিছুটা বসতে হতে পারে!

--ঠিক আছে, দাদা। আসবো।

বোম্বাবাবু নিজেই ফোন কেটে দেন। যথারীতি সে তারপর নিজের কাজে বেরিয়ে যায়। দুপুর একটা পাঁচ মিনিটে শেষ কলটা এটেন্ড করেই সে ছোটে বোম্বাবাবুর বাড়ি। গেটে দাঁড়িয়ে ডাক-বাজনা বাজিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবার পর দরোজা খোলে। পূর্বপরিচিত পথে বোম্বাবাবুর ঘরের দিকে এগোতেই সামনে সেই গতদিনের কামরাঙা যুবতী লাল অর্ধন্যাংটো পোষাক পরে সামনে এসে বলে--

--কি ব্যাপার এতবেলায়? বাবা ডেকেছে বুঝি?

--আজ্ঞে হ্যাঁ। তিনি কোথায়?

--তিনি এখন চাল-মিলে। সাড়ে তিনটে-চারটের আগে ঢুকছে না।

-- আমায় যে আসতে বললো?

-- আমার জন্যে।

-- মানে?

-- মানে সহজ। আমিই তাকে বলেছিলাম, কামানোকেষ্টকে একবার খবর দিতে। কথা না বলে আমার সঙ্গে চলো। আমি থাকতে পারছি না। তুমি আমাকে সেদিন পাগল করে দিয়ে গেছো।

-- কিন্তু কেউ যদি জানতে পারে?

-- সে ভাবনা আমার।

এবার অত্যন্ত তাড়াহুড়োয় ভ্রমরকেষ্টর হাতটাকে ধরে প্রায় টানতে টানতেই নিয়ে যায় তার ঘরে। দরজা ভালো করে এঁটে দিয়ে ছুটে এসে আছড়ে পড়ে ভ্রমরের বুকে ঠোঁটে। ভ্রমরও নারীদেহের এই অযাচিত প্রাপ্তিটুকু চেটেপুটে খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আঠেরোর বেগ তাকে মাতাল করে দেয়। সামনে পেছনে কিছু আর না ভেবে মেয়েটার গায়ের খোলামেলা লাল ঢাকনা টেনে হিঁচড়ে খুলে আজ তাকে উপুড় করে চিৎ করে নানান ঢঙে পুরো খুবলে দিতে থাকে অভিজ্ঞ বেশ্যাসিক্ত স্বেচ্ছাচারিতায়। মেয়েটা গোঙায়, ব্যাথায় কঁকিয়ে ওঠে, চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে নামে জলের ধারা। ভ্রমরকেষ্ট এই মেয়েটাকে আক্ষরিক অর্থে ধর্ষণ করে। কারণ মেয়েটা উপযাচক হয়ে তাকে বাধ্য করেছে বিভ্রান্ত হতে। আজকের পরে যেন আর তাকে ডাকে না কখনও কাছে পেতে। তাকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিয়ে সে তার ব্যাগ গলায় ঝুলিয়ে বেরোনোর আগে আলতো কোরে শুধু বলে, আমি কামানেওয়ালা, এর পর আমাকে ডাকলে কিন্তু আমার হাতের ক্ষুর শিল্পীর ক্ষুর না হয়ে হানাদারের ক্ষুর হয়ে যেতে পারে। আমি বেশ্যাসঙ্গ করি, আমাকে আর প্রশ্রয় দিও না।

মেয়েটা কোনক্রমে উঠে বসে বলে—

-- তুমি জানোয়ার একটা। আমাকে তুমি রেপ করেছো, তোমাকে ঘেন্না করি। কোনদিন আমার কাছে আসবে না আর।

-- তোমার কাছে আসিনি আমি, এসেছিলাম তোমার বাবার কাছে। হাত ধরে তুমিই আমাকে ঘরে এনে ঢুকিয়েছো।

মেয়েটা দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে ‘ছিঃ, কি নোংড়া একটা লোক’।

ভ্রমরকেষ্ট এসব কথা, কান্নার কোনও গুরুত্ব না দিয়ে দরোজাটা খুলে নীচে নেমে একদম গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়। চরম ক্ষুধায় কোনদিকে আর না তাকিয়ে সোজা বাড়ির দিকে এগোতে থাকে আর ততজোরে তার কানে বাজতে থাকে ‘ছিঃ কি নোংড়া একটা লোক’। হ্যাঁ, সে নোংড়া লোক, আর সে জন্যেই বাড়ির মেয়ে-বউদের প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই, কাজ ছাড়া। আর এ কারণেই সে বিবাহ করবে না ঠিক করে নিয়েছে। নোংড়া বলেই যে কোন রকম কামানোকেই তার জীবিকা করে নিয়েছে। জ্যান্ত কিম্বা মৃত, যেকোন অবস্থার মানুষ-মানুষী অর্ডারমাফিক তার কাছে ক্ষুরের খাবার। লোম হোক বা গলার নলী, শরীরের চামড়া বা পাকস্থলী, পয়সা পেলেই ক্ষুরের ডগায় খুবলে নেবে সে। সে নোংড়া বলেই তার জীবনে মেয়েছেলের প্রয়োজন থাকলেও কোনও বউয়ের প্রয়োজন নেই। শরীরের প্রয়োজন তাই সে পয়সা ফেলে মিটিয়ে নেয় গন্ধপল্লীর নোংড়া মেয়েদের কাছ থেকেই। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্ত নিতেও তার ভুল হয় না যে, বোম্বাবাবুর এই অষ্টাদশী মেয়ে তার থেকেও অনেক বেশি নোংড়া। একটা আদ্যন্ত তলাখোলা মেয়ে, নিজেও ছটফট করছে পরবর্তী শিকার সন্ধানে। পয়সার জোরে নিজের বাপের পয়সায় বাড়ীতে বসে মজা মারছে এবং তারপরেও সে সমাজের মেইন-স্ট্রীমের  সামাজিক সুবিধাগুলো খাচ্ছে চেটেপুটে। আর যৌনপল্লীর মেয়েগুলো ভাত খাওয়ার পয়সা জোগাড় করতে, পরিস্থিতির শিকার হয়ে শরীর বিক্রী করতে বাধ্য হচ্ছে বলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এক লালবাতি এলাকার বাসিন্দা। বোম্বাবাবুর মেয়ে কাজরী থেকে খুব বেশি হলে কিসমিস বলে পরিচিত হয়, কিন্তু লালবাতি এলাকার বাসিন্দাদের একটাই পরিচয়-- কোথাও বেশ্যা, গণিকা, খানকী, রেণ্ডী এবং এককথায় যৌনকর্মী। ভ্রমরকেষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, এর পরেও যদি ওই নিম্ফোম্যানিয়াক মেয়েটি তাকে আবার ডাকে, সে দেখা করবে বাইরে কোথাও এবং ছেলেপিলে জোগাড় কোরে গ্যাঙ্গরেপড করিয়ে মুখে ফেনা তুলিয়ে ছেড়ে আসবে ভাঙা মন্দিরের শেয়ালমোতা গাছের জঙ্গলের ধারে। কামিয়ে ফেলার এই বন্দোবস্তটি ছাড়া এই মুহূর্তে ভাববার ক্ষমতা তার নেই কারণ পেটে তার খিদে এবং বাড়ি ফিরে বানাতে হবে খাবার।

খবরে প্রকাশ, সেদিন দুপুরের পর সাতমাস তেইশ দিন অতিক্রান্ত হলেও সেই মেয়েলীকণ্ঠের কোন ফোন আর ভ্রমরকেষ্ট পায়নি, যদিও বোম্বাবাবু আগে থেকে বুক করিয়ে এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার নিজেকে কামিয়ে নিয়েছেন অর্থাৎ বিশুদ্ধ ব্যাবসায়িক ডিল। এবং এই বাড়ীতে যাতায়াতের পথে কখনও কোনও মেয়ে বা মহিলার সঙ্গে তার আর কোনও সাক্ষাৎ হয়নি।

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন